অরুণিমা মুখার্জি
বাংলায় একদম আদিকাল থেকে দুর্গাপূজার চল ছিল, এমন কিন্তু নয়। শোনা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে দিনাজপুর অথবা মালদার জমিদারেরা বাংলায় দুর্গাপূজার সূচনা করেন। কিন্তু এ-ও শোনা যায়, মোঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই নাকি বাংলায় খুব ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হতো। আবার অনেকের মতে, জমিদার ভবানান্দ মজুমদার নাকি ১৬০৬ সালে বাংলায় প্রথম এই পূজার প্রচলন ঘটান।
তবে সেকালের দুর্গাপূজা যে মাতৃ-প্রতিমাকেন্দ্রিক ছিল, তেমনটা নয়। কোথাও পূজা মানে ছিল সামান্য ঘট পূজা, আবার কোথাও সেই শালগ্রাম শিলা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কোম্পানির হাত ধরেই বাংলার দুর্গাপূজা পরিণত হয় দুর্গোৎসবে। তখনো পাকাপাকিভাবে এ দেশীয়রা ইংরেজদের ঠিক প্রজা হয়ে ওঠেনি। ১৭৯২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ক্যালকাটা ক্রনিকল’ পত্রিকায় দুর্গোৎসবের প্রসঙ্গে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উঠে আসে। তার মধ্যে ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ, প্রাণকৃষ্ণ সিংহ, নারায়ণ মিত্র, রামহরি ঠাকুর, দর্পনারায়ণ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তিরা। ওই সময়ে দুর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোকে খুশি করে নিজেদের ব্যবসার উন্নতি সাধন করা। এই সব পূজামাত্রই ছিল কোম্পানির পূজা।
তবে সেই সময় যে কেবল বাঙালিরাই দুর্গাপূজা করতেন, তা নয়। কোম্পানির এক কর্মচারী দুর্গাপূজা করতেন নিজের টাকায়। তাঁর নাম জন চিপস, বীরভূমের জনপ্রিয় ‘চিকবাহাদুর’। ১৭৮২ সালে রাইটার হিসেবে তিনি বাংলায় পা রাখেন এবং কয়েকবছর পরেই শোনা যায়, তিনি কোম্পানির অডিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি নিযুক্ত হন বীরভূমের কমার্শিয়াল এজেন্ট হিসেবে।
তখন সেখানে কোম্পানির তুলা, রেশম, রং, লাক্ষা ইত্যাদির জমজমাট ব্যবসা। চিপস এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ক্রমে তিনিও নিজের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু বিশেষ লাভ করতে পারেননি। তখন তাঁকে শ্যামকিশোর পরামর্শ দেন, দেবী দুর্গার আরাধনা করার। কোম্পানির কুঠিতেই ধুমধাম করে শুরু হয় দুর্গাপূজা। পরে নাকি ব্যবসার বিশেষ উন্নতি হতে শুরু করে।
তবে তাঁর পূজা আর কলকাতার পূজার মধ্যে ছিল বিশাল ফারাক। চিপসের পূজায় সর্বসাকূল্যে খরচ হতো ৫০ টাকা। তার মধ্যে আবার পূজায় খরচ মোটে সতেরো টাকা। বাকি টাকায় তিনি গ্রামের লোকদের নতুন কাপড় দান করতেন।
এবার আসা যাক, খাস কলকাতার পূজার কথায়। বলা দরকার, কলকাতার পূজার উঠতি এবং পড়তি—দুটোই খুব প্রকটভাবে দৃশ্যমান। ১৮১৯ সালের ‘ক্যালকাটা জার্নাল’ থেকে সেকালের পূজার বিবরণ সম্পর্কে জানা যায়:
‘এই ভদ্রলোকেরা তাঁদের নিজ নিজ প্রাসাদকে হাস্যোজ্জ্বল উৎসব আর নানাবিধ বিনোদনের আসরে পরিণত করার জন্য যে ব্যবস্থাগুলো করেছেন, সেগুলো থেকে সর্বোচ্চ আনন্দের প্রত্যাশায় মগ্ন হওয়া যেতে পারে...।’
জমিদার বাড়িগুলোকে এভাবে সাজানোর মূল কারণ ছিল সাহেবদের নজরে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। যে ঘরগুলোতে ইউরোপিয়ানদের থাকার ব্যবস্থা করা হতো, তা ছিল প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে পরিপাটি করে সাজানো। কাশ্মীর ছাড়িয়ে ব্রহ্মদেশ থেকে আনা হতো সুন্দরী ও সুগায়িকা নর্তকীদের, সঙ্গে বিপুল খানাপিনা তো থাকতই।
দুর্গাপূজায় আরও একটি বিষয় পালিত হতো। বছরের এই সময় ঋণের দায়ে আটক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হতো। তখন এককালীন ঋণ মিটিয়ে দিলেই তাদের মুক্তি দিয়ে দেওয়া হতো। অনেক বাবুরা তো আবার নিজেদের সাধ্যমতো বন্দীদের মুক্তি দিতেন। ছাড় পেত বিশেষ করে ইংরেজ বন্দীরা। শোনা যায়, ঠিক পূজার আগে আগেই কোর্টে ভিড় লেগে যেত অধমর্ণদের।
কিন্তু এই রমরমা বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারল না কলকাতা। ১৮২৮ সালে কলকাতার পূজা পড়তে শুরু করে। ১৮৩২ সালে একেবারে তা তলানিতে এসে ঠেকে। সমাচার চন্দ্রিকার মতো পত্রিকা লিখেছে:
‘শ্রীশ্রীপূজার সময় যে প্রকার ঘটা কলিকাতায় হইত এক্ষণে তাহার ন্যূন হইয়াছে, কেননা গোপীমোহন ঠাকুর ও মহারাজা সুখময় রায় বাহাদুর ও বাবু নিমাইচরণ মল্লিক প্রভৃতির বাটীর সম্মুখে রাস্তায় প্রায় পূজার তিন রাত্রিতে পদব্রজে লোকের গমনাগমন ভার ছিল যেহেতুক ইঙ্গরেজ প্রভৃতির শকটাদির ও যানবাহনের বহুল বাহুল্যে পথ রোধ হইত।’
আগে যেসব বাড়িতে সাধারণ মানুষের ছাড়পত্র ছিল না, সেসব বাড়ির পূজার দরজা ক্রমে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে গেল। এই বিষয়ে ‘জ্ঞানান্বেষণ’ লিখেছে, ‘…সেই সকল বাড়ীতে ইতর লোকের স্ত্রীলোকেরাও স্বচ্ছন্দে প্রতিমার সম্মুখে দণ্ডায়মানা হইয়া দেখিতে পায় এবং বাইজীরা গলি গলি বেড়াইতেছেন তত্রাপি কেহ জিজ্ঞেসা করে নাই... এবং যাহাদের বাড়ীতে পাঁচ সাত তরফা বাই থাকিত এ বৎসর সেই বাড়ীতে বৈঠকিগানের তালেই মান রহিয়াছে...।’
এভাবেই কলকাতার পুজো হয়ে উঠলো সাধারণ জনগণের পুজো। তবে বাবুদের এই সাহেবদের তৃপ্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮২০ সালে ডিরোজিওর শিষ্যরা ঘোর বিরোধিতা করতে শুরু করেন। ফলে পূজাকে কেন্দ্র করে এক রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূচনা হয় এবং খুব অল্প পরিমাণেও হলে রাজশক্তির বিরুদ্ধে বিরোধীতা হতে দেখা যায় ইয়ং বেঙ্গলের হাত ধরেই। তবে কলকাতার পুজোয় সাহেবদের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ হবার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দেয় ধর্মীয় মতভেদ। গো-মাংস ভক্ষণকারী সাহেবদের পূজায় এরূপ অবস্থান অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। পরে অবশ্য দশের আইন আসায় নেটিভরা পরিণত হয় শোষিত প্রজায় এবং রাজার ধর্মের সঙ্গে প্রজার ধর্মের এই মিলন এক বৃহত্তর বিভেদে পরিণত হয়।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার এই দুর্গাপূজাকে ঢাল বানিয়ে বিল্পবীদের কার্যকলাপ অব্যহত রাখা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে মেদিনীপুরের একটি দুর্গাপূজার সূচনা হয় এই কারণেই। তিরিশের দশকে যখন গোটা দেশের নানাস্থানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে একাধিক বিপ্লবী সংগঠন, সেই সময় মেদিনীপুরের পর পর তিন বছর বিপ্লবীদের হতে প্রাণ হারান তিন অত্যাচারী ইংরেজ জেলাশাসক।
তৃতীয়বারের হামলার পর ইংরেজদের অবস্থা থরহরি কম্পমানের মতো। কোনো ইংরেজই আর এই অঞ্চলের দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। সেই সময় মেদিনীপুরে পাঠানো হয় অবসরপ্রাপ্ত অতি অত্যাচারী আধিকারিক পিজি গ্রিফিতকে। তিনি এসেই গোটা শহরকে এক কারাগারে পরিণত করেন এবং সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেড়ানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাই বিপ্লবীরা তাঁদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার ফন্দি হিসেবে এক নতুন পরিকল্পনা নেন। এই দুর্গাপূজাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেন ব্যারিস্টার বীরেন শাসমল, রাজা দেবেন্দ্র লাল খান, সাতকড়ি পতিয়ার, অতুল বসু প্রমুখ দেশপ্রেমিকরা। এভাবেই ৮৭ বছর আগে গ্রিফিতের চোখ এড়িয়ে মেদিনীপুরে চালু হয় বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই পূজা আজও আদি সর্বজনীন পূজারূপে খ্যাত। এই ছিল সেদিনকার দুর্গাপূজা।
বাংলায় একদম আদিকাল থেকে দুর্গাপূজার চল ছিল, এমন কিন্তু নয়। শোনা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে দিনাজপুর অথবা মালদার জমিদারেরা বাংলায় দুর্গাপূজার সূচনা করেন। কিন্তু এ-ও শোনা যায়, মোঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকেই নাকি বাংলায় খুব ধুমধাম করে দুর্গাপূজা হতো। আবার অনেকের মতে, জমিদার ভবানান্দ মজুমদার নাকি ১৬০৬ সালে বাংলায় প্রথম এই পূজার প্রচলন ঘটান।
তবে সেকালের দুর্গাপূজা যে মাতৃ-প্রতিমাকেন্দ্রিক ছিল, তেমনটা নয়। কোথাও পূজা মানে ছিল সামান্য ঘট পূজা, আবার কোথাও সেই শালগ্রাম শিলা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে কোম্পানির হাত ধরেই বাংলার দুর্গাপূজা পরিণত হয় দুর্গোৎসবে। তখনো পাকাপাকিভাবে এ দেশীয়রা ইংরেজদের ঠিক প্রজা হয়ে ওঠেনি। ১৭৯২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘ক্যালকাটা ক্রনিকল’ পত্রিকায় দুর্গোৎসবের প্রসঙ্গে কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উঠে আসে। তার মধ্যে ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ, প্রাণকৃষ্ণ সিংহ, নারায়ণ মিত্র, রামহরি ঠাকুর, দর্পনারায়ণ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তিরা। ওই সময়ে দুর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোকে খুশি করে নিজেদের ব্যবসার উন্নতি সাধন করা। এই সব পূজামাত্রই ছিল কোম্পানির পূজা।
তবে সেই সময় যে কেবল বাঙালিরাই দুর্গাপূজা করতেন, তা নয়। কোম্পানির এক কর্মচারী দুর্গাপূজা করতেন নিজের টাকায়। তাঁর নাম জন চিপস, বীরভূমের জনপ্রিয় ‘চিকবাহাদুর’। ১৭৮২ সালে রাইটার হিসেবে তিনি বাংলায় পা রাখেন এবং কয়েকবছর পরেই শোনা যায়, তিনি কোম্পানির অডিটর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি নিযুক্ত হন বীরভূমের কমার্শিয়াল এজেন্ট হিসেবে।
তখন সেখানে কোম্পানির তুলা, রেশম, রং, লাক্ষা ইত্যাদির জমজমাট ব্যবসা। চিপস এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ক্রমে তিনিও নিজের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু বিশেষ লাভ করতে পারেননি। তখন তাঁকে শ্যামকিশোর পরামর্শ দেন, দেবী দুর্গার আরাধনা করার। কোম্পানির কুঠিতেই ধুমধাম করে শুরু হয় দুর্গাপূজা। পরে নাকি ব্যবসার বিশেষ উন্নতি হতে শুরু করে।
তবে তাঁর পূজা আর কলকাতার পূজার মধ্যে ছিল বিশাল ফারাক। চিপসের পূজায় সর্বসাকূল্যে খরচ হতো ৫০ টাকা। তার মধ্যে আবার পূজায় খরচ মোটে সতেরো টাকা। বাকি টাকায় তিনি গ্রামের লোকদের নতুন কাপড় দান করতেন।
এবার আসা যাক, খাস কলকাতার পূজার কথায়। বলা দরকার, কলকাতার পূজার উঠতি এবং পড়তি—দুটোই খুব প্রকটভাবে দৃশ্যমান। ১৮১৯ সালের ‘ক্যালকাটা জার্নাল’ থেকে সেকালের পূজার বিবরণ সম্পর্কে জানা যায়:
‘এই ভদ্রলোকেরা তাঁদের নিজ নিজ প্রাসাদকে হাস্যোজ্জ্বল উৎসব আর নানাবিধ বিনোদনের আসরে পরিণত করার জন্য যে ব্যবস্থাগুলো করেছেন, সেগুলো থেকে সর্বোচ্চ আনন্দের প্রত্যাশায় মগ্ন হওয়া যেতে পারে...।’
জমিদার বাড়িগুলোকে এভাবে সাজানোর মূল কারণ ছিল সাহেবদের নজরে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করা। যে ঘরগুলোতে ইউরোপিয়ানদের থাকার ব্যবস্থা করা হতো, তা ছিল প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে পরিপাটি করে সাজানো। কাশ্মীর ছাড়িয়ে ব্রহ্মদেশ থেকে আনা হতো সুন্দরী ও সুগায়িকা নর্তকীদের, সঙ্গে বিপুল খানাপিনা তো থাকতই।
দুর্গাপূজায় আরও একটি বিষয় পালিত হতো। বছরের এই সময় ঋণের দায়ে আটক বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হতো। তখন এককালীন ঋণ মিটিয়ে দিলেই তাদের মুক্তি দিয়ে দেওয়া হতো। অনেক বাবুরা তো আবার নিজেদের সাধ্যমতো বন্দীদের মুক্তি দিতেন। ছাড় পেত বিশেষ করে ইংরেজ বন্দীরা। শোনা যায়, ঠিক পূজার আগে আগেই কোর্টে ভিড় লেগে যেত অধমর্ণদের।
কিন্তু এই রমরমা বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারল না কলকাতা। ১৮২৮ সালে কলকাতার পূজা পড়তে শুরু করে। ১৮৩২ সালে একেবারে তা তলানিতে এসে ঠেকে। সমাচার চন্দ্রিকার মতো পত্রিকা লিখেছে:
‘শ্রীশ্রীপূজার সময় যে প্রকার ঘটা কলিকাতায় হইত এক্ষণে তাহার ন্যূন হইয়াছে, কেননা গোপীমোহন ঠাকুর ও মহারাজা সুখময় রায় বাহাদুর ও বাবু নিমাইচরণ মল্লিক প্রভৃতির বাটীর সম্মুখে রাস্তায় প্রায় পূজার তিন রাত্রিতে পদব্রজে লোকের গমনাগমন ভার ছিল যেহেতুক ইঙ্গরেজ প্রভৃতির শকটাদির ও যানবাহনের বহুল বাহুল্যে পথ রোধ হইত।’
আগে যেসব বাড়িতে সাধারণ মানুষের ছাড়পত্র ছিল না, সেসব বাড়ির পূজার দরজা ক্রমে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে গেল। এই বিষয়ে ‘জ্ঞানান্বেষণ’ লিখেছে, ‘…সেই সকল বাড়ীতে ইতর লোকের স্ত্রীলোকেরাও স্বচ্ছন্দে প্রতিমার সম্মুখে দণ্ডায়মানা হইয়া দেখিতে পায় এবং বাইজীরা গলি গলি বেড়াইতেছেন তত্রাপি কেহ জিজ্ঞেসা করে নাই... এবং যাহাদের বাড়ীতে পাঁচ সাত তরফা বাই থাকিত এ বৎসর সেই বাড়ীতে বৈঠকিগানের তালেই মান রহিয়াছে...।’
এভাবেই কলকাতার পুজো হয়ে উঠলো সাধারণ জনগণের পুজো। তবে বাবুদের এই সাহেবদের তৃপ্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮২০ সালে ডিরোজিওর শিষ্যরা ঘোর বিরোধিতা করতে শুরু করেন। ফলে পূজাকে কেন্দ্র করে এক রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূচনা হয় এবং খুব অল্প পরিমাণেও হলে রাজশক্তির বিরুদ্ধে বিরোধীতা হতে দেখা যায় ইয়ং বেঙ্গলের হাত ধরেই। তবে কলকাতার পুজোয় সাহেবদের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ হবার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দেয় ধর্মীয় মতভেদ। গো-মাংস ভক্ষণকারী সাহেবদের পূজায় এরূপ অবস্থান অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। পরে অবশ্য দশের আইন আসায় নেটিভরা পরিণত হয় শোষিত প্রজায় এবং রাজার ধর্মের সঙ্গে প্রজার ধর্মের এই মিলন এক বৃহত্তর বিভেদে পরিণত হয়।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার এই দুর্গাপূজাকে ঢাল বানিয়ে বিল্পবীদের কার্যকলাপ অব্যহত রাখা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে মেদিনীপুরের একটি দুর্গাপূজার সূচনা হয় এই কারণেই। তিরিশের দশকে যখন গোটা দেশের নানাস্থানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে একাধিক বিপ্লবী সংগঠন, সেই সময় মেদিনীপুরের পর পর তিন বছর বিপ্লবীদের হতে প্রাণ হারান তিন অত্যাচারী ইংরেজ জেলাশাসক।
তৃতীয়বারের হামলার পর ইংরেজদের অবস্থা থরহরি কম্পমানের মতো। কোনো ইংরেজই আর এই অঞ্চলের দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। সেই সময় মেদিনীপুরে পাঠানো হয় অবসরপ্রাপ্ত অতি অত্যাচারী আধিকারিক পিজি গ্রিফিতকে। তিনি এসেই গোটা শহরকে এক কারাগারে পরিণত করেন এবং সন্ধ্যার পর রাস্তায় বেড়ানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাই বিপ্লবীরা তাঁদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার ফন্দি হিসেবে এক নতুন পরিকল্পনা নেন। এই দুর্গাপূজাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেন ব্যারিস্টার বীরেন শাসমল, রাজা দেবেন্দ্র লাল খান, সাতকড়ি পতিয়ার, অতুল বসু প্রমুখ দেশপ্রেমিকরা। এভাবেই ৮৭ বছর আগে গ্রিফিতের চোখ এড়িয়ে মেদিনীপুরে চালু হয় বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই পূজা আজও আদি সর্বজনীন পূজারূপে খ্যাত। এই ছিল সেদিনকার দুর্গাপূজা।
রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা আনতে চাইলে প্রথমে শাসন মসনদের নাম ও কাজের দায়িত্ব সঠিক হতে হবে। এই নীতির নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘ঝেংমিং’। যার বাংলা দাঁড়ায় ‘নামের যথার্থতা’। অর্থাৎ রাজা যেন সত্যিই রাজার মতো আচরণ করেন, পিতা যেন পিতার মতো দায়িত্ব নেন।
৫ ঘণ্টা আগেআজ ষষ্ঠী। শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ, সাদা কাশের বন আর বাতাসে ভেসে আসা ঢাকের বোল—এই সবই জানান দেয়, দেবী দুর্গা নিজ গৃহে ফিরে এসেছেন। শুরু হয়ে গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালিদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।
১ দিন আগেষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আজ শুরু হলো বাংঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজার কথা বললে দুই ধরনের পূজার কথা মাথায় আসে। বাড়ির পূজা এবং বারোয়ারি পূজা। যদিও প্রথমেই দুই ধরনের পূজা, অর্থাৎ বারোয়ারি আরবাড়িতে দুর্গাপূজার সূচনা হয়নি।
১ দিন আগেপ্রায় দুই হাজার বছর আগেকার কথা। তখনো কাগজ আবিষ্কার হয়নি। মিশরীয়রা তখন প্যাপিরাসে লিখত। সে সময় প্রাচীন মিশরের সেরাপিয়াস নামে এক নারী, প্যাপিরাসের এক টুকরোয় চিঠি লিখে পাঠালেন তাঁর জামাই এরমিনোসের কাছে।
২ দিন আগে