leadT1ad

ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী, পদে আছেন হত্যা মামলার আসামিও

কমিটিতে নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ আগে থেকে জানানো হয়নি, এমন তিন জন ছাত্রীর খোঁজ পেয়েছে স্ট্রিম। সমালোচনার মুখে একটি হলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কমিটি ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে একদল শিক্ষার্থী।

স্ট্রিম সংবাদদাতাজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৪৬
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৪৭
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রোকেয়া হল ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেয়েছেন কাজী মৌসুমী আফরোজ। অর্থনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁকে অংশ নিতে দেখা গেছে।

মৌসুমীর মতো নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটিতে পদ পেয়েছেন। আবার হল ছাত্রদলের সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে হত্যা মামলার আসামিকে। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলছেন, ‘ত্যাগী’ কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি বরং নিষ্ক্রিয় কর্মীদের পদ দেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বর্ধিত কমিটি ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সই করা কমিটিতে ৩৭০ সদস্যকে পদ দেওয়া হয়। একই দিন ১৭টি আবাসিক হল ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হয়। শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন বাবর ও সদস্যসচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক হল কমিটির অনুমোদন দেন।

এসব কমিটিতে ছাত্রলীগের কর্মীরা পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে অন্তত ৩০ জন ছাত্রদল নেতা-কর্মী শুক্রবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

বর্ধিত শাখা কমিটি ও হল কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম মোল্লাকে হত্যার মামলায় আসামিদের তিন জন এসব কমিটিতে পদ পেয়েছেন।

২০ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় হওয়া ওই মামলার এজাহারে আটজনের নাম উল্লেখ ছিল। অজ্ঞাত আসামি ছিলেন আরও ২০ থেকে ২৫ জন। এ ঘটনায় ওই আটজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারও করা হয়। ওই সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বিবৃতিতে দাবি করেছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

তবে এই হত্যা মামলার আট আসামির মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এদের মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সভাপতি ও বর্ধিত কমিটির সদস্য, রাজু আহমেদ শাখা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া সদস্য পদ পেয়েছেন।

জানতে চাইলে হামিদুল্লাহ সালমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত ছাড়াই মবের চাপে তড়িঘড়ি করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। এখন আমি নিয়মিত শিক্ষার্থী। ওই মামলা এখনো তদন্তাধীন। এ মামলার সঠিক তদন্ত হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।’

ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর ছাত্র হলের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ফিরোজ আহমেদ রিমন ও সহসভাপতি হয়েছেন সাইদুর রহমান সীমান্ত। তাঁরা দুজনেই ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী ছাত্রলীগের পদধারী না নেতা হলেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

এ ছাড়া শহীদ সালাম-বরকত হল ছাত্রদলের সভাপতির পদ পাওয়া সাইদুল ইসলাম ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের বিগত কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

না জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পদ

ছাত্রদলের হল কমিটির অন্তত তিনজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তাঁরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তবু তাঁদের পদ দেওয়া হয়েছে। ওই তিন জন হলেন বীর প্রতীক তারামন বিবি হলের যুগ্ম সম্পাদক পদ পাওয়া নোসিস মোকাররমা তেরেসা, রিফা নানজীবা হিয়া এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক উম্মে হাবিবা বেলী।

উম্মে হাবিবা বেলী বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের কোনো মিছিল-মিটিং করিনি। তারপরও আমার নাম কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। আমি ছাত্রদলের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে আমার নাম বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’

সমালোচনার মুখে এক হলের কমিটি বিলুপ্ত

হল কমিটি ঘোষণার দুই দিনের মাথায় সমালোচনার মুখে মওলানা ভাসানী হলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে শাখা ছাত্রদল। আজ রোববার শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (দপ্তরে নিযুক্ত) জহিরুল ইসলামের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মওলানা ভাসানী হল ছাত্রদলের কমিটিতে সভাপতির পদ পেয়েছিলেন ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান। তবে তাঁর ছাত্রত্ব ছিল না।

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়টি গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় ওই হল শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’

এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এরপরও বিতর্কিত কেউ থাকতে পারে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কাউকে না জানিয়ে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়নি। যাঁরা ছাত্রদলের ফরম পূরণ করেছিল তাঁদেরই পদ দেওয়া হয়েছে।’

হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে গতকাল শনিবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

এ সময় তাঁরা বিক্ষোভও করেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বিক্ষোভরতদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন।

উপাচার্যের কাছে আন্দোলনরতরা ছয় দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো সব হলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা, হলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও গণরুম-গেস্টরুমের মাধ্যমে ‘র‍্যাগিং’ সংস্কৃতিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক শাস্তির সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন, দ্রুত হল সংসদ গঠন করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক সংগঠনের উপহারসামগ্রী হল প্রশাসনের মাধ্যমে প্রদান ও এতে ওই সংগঠনের নাম বা চিহ্ন ব্যবহার না করা, হলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগতদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং হলের মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া।

এসব দাবি প্রশাসনিক সভায় উপস্থাপনের কথা জানান উপাচার্য।

এ ছাড়া ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার পর গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চালু হওয়ার আশঙ্কা করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে হল কমিটির প্রতিবাদও জানায় সংগঠনটি।

Ad 300x250

জুলাই হত্যার বিচারে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’-এর পুনরাবৃত্তি হবে না: প্রেস সচিব

শিবির উপস্থিত থাকায় উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট বামপন্থীদের একাংশের

এনসিপিসহ নতুন ১৬ দল নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক যাচাইয়ে উত্তীর্ণ

ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ কর্মী, পদে আছেন হত্যা মামলার আসামিও

উৎসবের ছোঁয়া লাগলেও অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় বাংলাদেশের জন্য এখনো কঠিন

সম্পর্কিত