মাহফুজ আলমের সাক্ষাৎকার-২
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি? এসব প্রশ্নের উত্তর উঠে এসেছে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা, বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সাক্ষাৎকারে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ৫ আগস্ট সাক্ষাৎকারটি প্রচার করেছে বিটিভি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পিআইবি’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। আজ থাকছে সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় পর্ব।
স্ট্রিম ডেস্ক
ফারুক: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন। তারপরও ওইদিন সকালের দিকে অনেক রক্তপাত হলো। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, গণভবন—পুরো অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ। এর আগে, আমরা দেখেছি—(একাত্তরের) ৭ মার্চের জনসভা…যেখান থেকে মানুষের একটা সংকল্প তৈরি হলো। কিন্তু ৫ আগস্টে ওরকম একটা বা তার থেকেও বড় একটা জমায়েত সারা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে চলে আসলো। কিন্তু সেখানে কেনো বড় ঘোষণা তৈরি করা হলো না। পাবলিকের যে ভিড়, তার যে আকাঙ্ক্ষা সেটা থেকে যদি কেনো ঘোষণা বা সরকারের রূপরেখা আসতো, তাহলে কি এই বর্তমান পরিস্থিতি আরো অন্যরকম হতো? তিন দিন পর অনেক ম্যাকানিজমের পরে, একটা জায়গায় বসে, জনগণের সামনে না, একটা ঘরের ভেতর থেকে ঘোষণা আসলো। এই যে ময়দান থেকে ঘোষণা না এসে একটা শলাপরামর্শের জায়গা থেকে এলো, এটার কারণে কি পরিস্থিতিটার পরিবর্তন হলো?
মাহফুজ: নাহিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল— তোমরা শাহবাগে থাকবা। নাহিদ, নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী; এই দুজন রাতে এক টিচারের বাসায় চলে গেলেন। তখন আমরা ঠিক করলাম, নাহিদ আর নাসীর ভাইকে বললাম, আমরা রাতে ড্রাফট রেডি করতেছি— কাল জনগণের সামনে কী ঘোষণা যাবে। শাহবাগ থেকে অথবা শহীদ মিনার থেকে সরকারের ঘোষণা করবো। আমরা কী রকম বাংলাদেশ চাই, কী রকম পরিবর্তন চাই, প্রাথমিকভাবে কী চাই— রাতব্যাপী সেসবের একটা ড্রাফট করেছি।
যেটা বললাম, ওই প্রক্রিয়ায় যেসব গ্রুপ আছে, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলে রেডি করলাম। আমি তখন আমার বন্ধু আসাদের বাসায় ছিলাম মহানগর প্রজেক্টে। ওখান থেকে সকাল ১১টায় বের হয়ে আমরা একটা সিএনজি ভাড়া করি। নাহিদ আর নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী আছে, আসিফ অন্য জায়গায় ছিল। আসিফ আর বাকের ছিল চানখারপুলের দিকে। কিন্তু নাহিদ ইউজুয়ালি যেহেতু ঘোষণা করে, আমরা ধরে নিছিলাম সেই করবে। নাহিদের সঙ্গে আমার মিটিংটা দরকার ছিল ১১টায়।
আমরা যখন বের হলাম, তখন বিএফডিসির সামনে সাতরাস্তা মোড়ে যে ক্রসিংটা আছে, সেখানে পুলিশ আমাদের থামাইলো। থামানোর পরে আমাদের ইন্টারোগেট করলো। সেখানে ২০-২৫ জন পুলিশ ছিল। কেনো গাড়ি যাইতে দিচ্ছে না। তখনো কারফিউ চলতেছে। পুরা ঢাকা থমথমে।
আমরা যখন পুলিশের হাতে পড়লাম, ওই সময়ও আমার ছবি ওইভাবে কোথাও প্রচার হয় নাই। হয়তো একটা রিপোর্ট আছে। আর আমার বন্ধু সে তখন একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে। সে কার্ডটা দেখায়ে বলল যে, আমি একজন প্রফেশনাল। আমার একটা ইমারজেন্সি আছে। মেডিকেল ইমারজেন্সিতে যাচ্ছি। আমার বন্ধু আমার সঙ্গে যাচ্ছে।
নাহিদ ও নাসীর ভাইয়ের সাথে আমরা যাইতে পারলাম না। দুপুর ২টার দিকে ঘোষণা হলো (শেখ হাসিনার পলায়নের)। তখন তারা শাহবাগে চলে আসল। শাহবাগের এই যে বিজয়ী জনতা, তারা দেখবেন– নাহিদ, আসিফসহ আরও অনেককে নিয়ে সংসদ ভবনের দিকে রওনা দিছে। দ্যাট ওয়াজ মিসফরচুন। কারণ আমার প্রস্তাবনা ছিল যে— আমরা ঘোষণা দিব। ৫ আগস্টের জন্য ঘোষণাপত্র, আমরা যেটি রাতে ড্রাফট করছি, সবার সঙ্গে মিলে সবার পরামর্শে।
আমরা রাতে ড্রাফটটা রেডি করি। পরের দিন দুপুরে… আসলে আমরা তো জানতাম না যে, এটাই হবে। কিন্তু রাতে একটা লেখা আসিফ লিখেছে, তাঁর ফেসবুক পোস্ট এখনো আছে। ওটা আমার লিখে দেওয়া। ওখানে ছিল যে, কী কী হবে। আসিফের পোস্ট এখনো আছে চার তারিখ রাতের। সেটা এলাবোরেট করে আমরা একটা ঘোষণাপত্র দিতাম। ঘোষণাপত্রটা খুবই ইন্টারেস্টিং…এই ঘোষণাপত্রে কিন্তু সবগুলো পক্ষ জড়িত ছিল। সামিনা লুৎফা ম্যাম বলেন বা এই যে মঞ্জুর আল মতিন ভাই বলেন, সবাই কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্সের ওখানে অপেক্ষা করতে চলেছে। আমরা বসবো শাহবাগে। বলা ছিল– তোমরা থাকবা। আমরা যাব। ক্যাম্পাসের ভেতরে বসে আমরা ডিসাইড করব কী ঘোষণাপত্র যাবে। দেন উই উইল কাম আউট, তুমি পাবলিকের সামনে বলবা। এইটা অনেকভাবে নষ্ট হইলো। যেমন নাহিদরা যখন চলে গেল। আমি মনে করি না, এটা কেনো ইচ্ছাকৃত জিনিস। জনগণ নেতাদের নিয়ে চলে গেল। নাহিদের সঙ্গে ওই যোগাযোগটা আবার এস্টাবলিশ করতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় লেগে গেল। ততক্ষণে মোমেন্ট শেষ, মানুষ রেভ্যুলেশনের ভায়োলেন্সে ব্যস্ত হয়ে গেছে…।
ফারুক: ভায়োলেন্সে কেউ বাড়ি ফিরে যাওয়া…
মাহফুজ: কেউ বাড়ি ফিরে গেছে। কেউ আনন্দ করছে। কেউ মিষ্টি বিতরণ করছে, সবকিছু করতেছে। ওই মোমেন্টামটা শেষ হয়ে গেল। নাহিদ-আসিফকে বা অন্য যারা ছিল; তাদের কাউকে আমি পাইলাম না।
ফারুক: কিন্তু রাতে তো তারা একটা (টেলিভিশন) চ্যানেলে (গিয়েছিলেন)। সকলেই এই ঘোষণাটা দেওয়া যে…
মাহফুজ: তখন আসলে এই ঘোষণা দেওয়ার সব ধরনের প্রায়োগিক সম্ভাবনাই শেষ হয়ে গেছে। তখন জাস্ট জাতিকে জানানো যে, আমরা এরকম সরকার করতে যাচ্ছি। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এই হচ্ছে অবস্থা। ঘোষণাপত্রের মতো একটা সোলেম জিনিস ঘোষিত হবে পাবলিকলি। ওই জিনিস, ততক্ষণে ওই মোমেন্টাম আমরা হারায়ে ফেলছি।…অবশ্যই সেটা আমাদের ভেবে দেখা দরকার, অন্য কী হইতে পারতো। আমি মনে করি, সবচেয়ে প্রবলেমেটিক জিনিস হয়েছে, সেটা হচ্ছে—দিস ভেরি কম্পালশন যে, ইউ টু মেক এ গভমেন্ট রাইট নাউ। আর দেরি করা সম্ভব না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে, কিলিং হচ্ছে, এই হচ্ছে সেই হচ্ছে। এই যে যত দ্রুত গভর্মেন্ট দেওয়ার নামে স্ট্যাবিলিটি, সো কলড স্ট্যাবিলিটি রক্ষার নামে দেখা গেল যে, আমরা ওই তিন দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমাইছি, মাত্র দুই ঘণ্টা। সারা দিন আমরা ঘুরতেছি। মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে গেলাম। আমরা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কথা বললাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বললাম। কার কী লিস্ট আছে, কথা বললাম। তারেক রহমানের সঙ্গে কথা হইলো। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, দেশের স্ট্যাবিলিটি রক্ষা করা।
ফারুক: অভ্যুত্থানের এক বছর পরে এসে আপনার ফিলিংটা (কেমন)। জুলাই অভ্যুত্থানের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা ছিল, সেটা পুরাপুরি বাস্তবায়ন…
মাহফুজ: সেটা ওই সময়েই নস্যাৎ হয়ে গেছে। ৮ আগস্ট রাত থেকে সচিবালয়ে যা হইছে, সচিব রদবদল থেকে শুরু করে, ডিসি রদবদল আমলাতন্ত্রে যা হইছে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যা হয়েছে, এগুলো কোনোটাই আসলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সার্ভ করে নাই।…
ফারুক: আপনারা অভ্যুত্থানের নেতা, অভ্যুত্থানের শক্তি, অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, আপনাদের সঙ্গে আপনাদের মতো এরকম আরও অজস্র মানুষ মিলে দিয়েছেন। যারা নতুন জেনারেশনের, যারা শাহবাগ পরবর্তী জেনারেশনে, যারা রাজনৈতিকভাবে সাবালক। আপনাদের যে এত পাঠচক্র, প্রত্যেকটা জিনিস আপনার স্টাডি করে এসেছেন, বোঝাপড়া তৈরি করেছেন। অভ্যুত্থান বিজয়ের পরে আপনারাই হয়ে গেলেন ছোট শক্তি। বড় শক্তি হয়ে গেলো তারা, যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনটা হয় নাই। যারা আন্দোলনের অংশীদার বটে কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল ছাত্র-তরুণদের হাতে। সেই বড় শক্তিই এখন হয়ে যাচ্ছে প্রধান নির্ধারক। এর কারণটা কী?
মাহফুজ: সেটার কারণ হচ্ছে সাংগঠনিক সক্ষমতা। যেমন এখানে আমি উদাহরণ টানি মাও সেতুংয়ের। তিনি ১৯২০ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত ছিলেন। উনারা যে আন্তপার্টি দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে গিয়ে, পার্টি লাইন থেকে শুরু করে সবকিছুকে ফার্নিশড একটা জায়গাতে নিয়ে গেলেন। এভাবে যে পার্টি লাইন দাঁড়ালো, সেই লাইনে চায়নার মুক্তি হবে। এখন এই লাইনকেই সবাই সফল বলে। কিন্তু ১৯২০ সাল থেকে মাও সেতুং ন্যাশনালিস্টদের সঙ্গে লড়াই করছেন। নিজের পার্টির ভেতরে, বিভিন্ন গ্রুপ অব পিপলের সঙ্গে লড়াই করছেন। এর পরে একটা পার্টি লাইনের ভেতর দিয়ে তাঁর পার্টি ক্যাডারেরা পুরা চায়নাব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।
বিপ্লবের একবারে সফলতম উদাহরণ হিসেবে আমি লেনিনকে মনে করি না ওই অর্থে। মাও সেতুং হচ্ছে যে, ধাপে ধাপে… অবশ্যই লেনিনও ধাপে ধাপে কাজ করছেন। কিন্তু মাও সেতুংয়ের ছিল বিপুল সাংগঠনিক শক্তি। ইরানি বিপ্লবেও আলী শরীয়তি একটা জেনারেশন তৈরি করেছিলেন। তেহরানে হোসাইনিয়া এরশাদ বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে বসে একটানা কয়েক বছর ইরানের একটা ইন্টেলেকচুয়াল কালচারাল ক্লাসকে তৈরি করছেন তিনি। যারা একটা বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। খোমিনির একটা আধ্যাত্মিক ডেমোক্রেটিক প্রভাব ইরানব্যাপী ছিল। ফলে জনগণ একটা ক্যাটাগরি। তরুণ প্রজন্ম একটা ক্যাটাগরি। জেনারেশন একটা ক্যাটাগরি। এই আকারে আসলে বিপ্লব করা সম্ভব। কিন্তু বিপ্লবকে ধরে রাখার জন্য তো সাংগঠনিক শক্তি লাগে। পলিটিক্যাল আউটরিচ লাগে। আমি যদি নিউ স্টাবলিশমেন্ট না আনতে পারি, আমার যদি সাংগঠনিক সক্ষমতা না থাকে, বিপ্লবী শক্তি না থাকে…বিপ্লবী শক্তি ছিল কিন্তু সাংগঠনিক বিপ্লবী শক্তি যদি না থাকে, আমি তো টেকওভার করতে পারবো না। এইজন্য তো আমরা টেকওভার করতে পারিনি। টেকওভার করার পরবর্তী সময়েও যে সম্ভাবনাগুলো ছিল, সেগুলো আমরা, ওই অর্থে ইস্তেমাল করতে পারি নাই। অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের কর্মী, ওরা কিন্তু একটা জেনারেশনাল এসপিরেশন দেখে আসছে। তরুণ নেতৃত্ব, সেই তরুণ নেতৃত্বের তো আবার তার প্যারেন্ট পার্টিতে ফিরে যাওয়ার কেনো দরকার ছিল না। সে তো অলরেডি তার প্যারেন্ট পার্টির চেয়ে বড় হয়ে গেছে। সাদিক কায়েমের কথা বলি, মেঘমল্লার বসু কিংবা অনিক রায়ের কথা বলি। অনিক রায় তো এখন এনসিপিতে আছে। এরকম আমি অনেক ছাত্রনেতার নাম বলব। এই ছাত্রনেতারা তো তাদের প্যারেন্ট পার্টির লিডারদের চেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু তারা সমর্পণ করে ফেলছেন। যেমন ছাত্রদলের নাসির ভাইয়ের কথা বলতে পারি। তাঁরা তো অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়া তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে, জেনারেশনাল বেনিফিট হিসেবে অনেক বড় নেতা হয়ে গেছেন। অনেক এমপির চেয়েও বড়। কিন্তু তাঁরা আবার একটা পার্টি ডেকোরামে চলে গেলেন। উমামার কথা বলি। উমামা তো ছাত্র ফেডারেশন করেছে। কিন্তু তারপরও বা আরও যারা আছে আমি ব্যক্তি ধরে আর না বলি। সবার কিন্তু এই সুযোগটা ছিল উপরে ওঠার।
আমরা মনে করি যে, এইখানে এখন যারা রাজনীতিতে আছে, তারা সবাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। তাঁরা সবাই প্রো-বাংলাদেশি ফোর্সেস। এখানে অবশ্যই প্রো-বাংলাদেশি ফোর্সেসকে একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে, নট অনলি ফর ফাইভ ইয়ার্স, একসঙ্গে থাকতে হবে। এবং একটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের ভেতর দিয়ে তাদের আগামী ১০, ১৫, ২০ বছর, অন্তত আমি ২০ বছর ধরতে চাই, একসঙ্গে এগোতে হবে।
একটা কমন বাংলাদেশ, একটা প্রসপারাস এবং ডিগনিফাইড বাংলাদেশের জন্য তাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। কিছু বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং একসঙ্গে থাকতে হবে। রাজনৈতিক রেশারেশি থাকবে, বিরোধ থাকবে। কিন্তু হোয়েন ইট কামস টু দ্য কোশ্চেন অব ন্যাশন, কোশ্চেন অব ন্যাশনাল সলিডারিটি, কোশ্চেন অব ফ্যাসিজম এবং এক্সপেনশনিজম বা ইম্পেরিয়ালিজম; যেটাই বলেন না কেন, যেই ক্রাইসিস আসুক না কেন, সেটাতে যেন আমরা অন্তত অভ্যুত্থানে যারা একসঙ্গে ছিলাম, তারা যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। ওই সময়টা যেন রিক্রিয়েট করতে পারি। ন্যাশনের যখন আমাদের দরকার, তখন যেন আমরা বিভাজিত না হই। ওই বিভাজন আমাদের মৃত্যু পরোয়ানা। ওই বিভাজন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভাজনের ফাঁক গলে ঢুকে পড়বে পরাজিত সব শক্তি। তখন আর কেউ বাঁচতে পারবে না।
বিএনপির হাজার হাজার কর্মী শহিদ হইছে। জামায়াতের শহিদ হইছে কয়েকশ’ কর্মী। ছাত্রদের বিভিন্ন সাধারণ ছাত্র, সাধারণ নাগরিক শহিদ হইছে; এটা আসলে একবারে নন-নেগোশিয়েবল একটা জায়গা। যেখানে আমরা আমরা আপস যেন না করি। এটা শুধু জুলাই সনদ বানানোর জন্য না, এটা তো জাস্ট একটা পেপারওয়ার্ক। কিন্তু এটাতে হচ্ছে সাইকোলজিক্যালি এবং পলিটিক্যাল ইডিওলজিক্যালি, ইভেন ডিসিশন নেওয়ার বিষয় যে—আসলে আমরা বাংলাদেশকে ধরে রাখতে চাই একসঙ্গে।
আওয়ামী লীগের বাইরেও যারা ফ্যাসিস্ট ফোর্সেস আছে এবং আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যারাই শক্তিশালী আছে বা যারাই আমার দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতেছে; তাদের সবার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।
ফারুক: আপনার তো একটা পর্যায় আছে, যেখানে আছে পাঠচক্র, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, চলচ্চিত্র আন্দোলন, লেখালেখি ও বুদ্ধিভিত্তিক কাজ। আরেকটা পর্যায়ে আছে ২০১৮ বা ২০২১ সাল থেকে অনেক বেশি করে এই অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা এবং কাজ। গত এক বছরের একটা বড় সময় আপনি অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন। এই সময়টাকে আপনি নিজের এবং এই সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মাহফুজ: সরকার তো আসলে মিনিস্ট্রিগুলো সামলে দায়িত্ব পালন করার জন্য আসে ক্ষমতা ত্রিভুজ, ট্রায়ারড পাওয়ার ইনটেক রেখে। এখানে দুনিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে যোগ্য প্রশাসক বসায়ে দেওয়া হোক, হি কান নট রান দিস কান্ট্রি, এনি কান্ট্রি। আমরা বলি যে সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি। সেকেন্ড হচ্ছে, মিডিয়া অ্যান্ড কালচারাল স্টাবলিশমেন্ট। থার্ড, করপোরেশনস অ্যান্ড অলিগার্ক। এই তিনটা জায়গায় সফল হইতে পারিনি। চেষ্টা করছি, প্রশাসন থেকে ফ্যাসিস্টদের ফার্জিং করার জন্য বা তাদের থেকে প্রশাসনকে মুক্ত করার জন্য। তারপরেও করপোরেশনস এবং অলিগার্কদের গায়ে আমরা আসলে হাত দিতে পারিনি।
…মিডিয়া কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট নিয়ারলি সেইম। এটা একটা দায় বলতে পারেন যে, মানুষ বলতে পারে—নাহিদ ইসলাম ছিলেন, আমি ছিলাম। আসলে অন্য দুইটা ব্যবস্থা অটুট রেখে, মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি, ইনট্যাক্ট করপোরেশনস অ্যান্ড অলিগারস ইনট্যাক্ট আপনি মিডিয়া বদলাইতে পারবেন না। কারণ মিলিটারি সিভিল ব্যুরোক্রেসি আর করপোরেশনস আর অলিগার্ক; এরাই হচ্ছে মিডিয়ার জন্মদাতা। এরাই মিডিয়াকে সাস্টেইন করে। এরাই মিডিয়া কালচার স্টাবলিশমেন্টকে টিকাই রাখে। এরা হচ্ছে এদের দুইটার মাউথপিস। ফলে আপনি যদি পাখনা ভেঙে না দেন, তাহলে আপনি বলতে পারবেন না আপনি মিডিয়া কালকেই বদলে দেন।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন অলিগার্করা। আপনি অলিগার্কদের কেন হাত দিতে পারছেন না? কারণ সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি চাচ্ছে না। সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসিতে কেন হাত দিতে চাচ্ছে না? মিডিয়া অলিগার্করা চাচ্ছে না। মিডিয়া আর করপোরেশন অলিগার্ক চাচ্ছে না। সো, এই ট্রায়াড যদি আপনি না ভাঙতে পারেন, এখানে আপনি আসলে সবচেয়ে যোগ্য প্রশাসক দিয়েও কিছু করতে পারবেন না।
কিন্তু এই সরকারের যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটা হচ্ছে এই সরকার জনগণের কাছে ট্রান্সপারেন্ট। মানুষ আমাকে কোশ্চেন করছে, জনগণ প্রশ্ন তুলছে। আমাকে উত্তর দিতে হবে। এটা আপনি গত ৫৪ বছরে কেনো সরকারে দেখেন নাই। আর দেখবেন কিনা, কে জানে। আমি চাই মানুষ দেখুক। মানুষের একবার একটা এক্সারসাইজ হয়ে গেল। মানুষ যাতে এই আকাঙ্ক্ষাটাই করে— যে গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিসটা থাকবে, যেন সরকারকে কোশ্চেন করা যায়। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের একেবারে নিম্নপদস্থ লোকটাও আমাকে অ্যান্সার করতে বাধ্য। আমি মনে করি, এটা একটা বড়-সড় অর্জন, অভ্যুত্থানের অর্জন, গণঅভ্যুত্থানের অর্জন। এমন একটা সরকার গঠন করা গেছে, যে সরকারটা একাউন্টেবল টু দ্য পিপল, ট্রান্সপারেন্ট টু পিপল এবং রেসপন্সিভ টু দ্য পিপল। প্রথম তিন-চার মাসে দেড়শো আন্দোলন হইছে, একবারে লিস্টেড…
ফারুক: অন্তর্বর্তী সরকারের…
মাহফুজ: এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম চার মাসে দেড়শো আন্দোলন রাজনৈতিক দলগুলোর ইন্ধন ছাড়াই হইছে—এটা বিশ্বাস করাটা অন্যায্য। তারপরও এই সরকার কিন্তু উইদাউট অ্যারেস্টিং, মানে ইনডিসক্রিমিনেট…
ফারুক: কোনো দমন পীড়নে না…
মাহফুজ: কোনো দমন পীড়নে না গিয়ে পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট এতগুলো আন্দোলন এইভাবে সামলাইতে পারতো না, এইভাবে রেসপন্সিভ হইতে পারতো না, এভাবে অ্যাকাউন্টেবল অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট হতে পারতো না। এরপরে যত আন্দোলন হয়েছে—যে আন্দোলনগুলো ন্যায্য, যেই বক্তব্যগুলো ন্যায্য, যেই দাবিগুলো ন্যায্য, সেগুলো কিন্তু সবগুলো মিট করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গুমের মত একটা জিনিস যেন আর কেনো সময় ফিরতে না পারে। গুম কমিশনের মতো একটা স্ট্রং একটা অর্গান রেডি করতে পারছে সরকার। যেটা এখনো কাজ করে যাচ্ছে। আমরা রেটিফাই করলাম সনদ।
আমি মনে করি, দ্রব্যমূল্য যে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব— এটা গত এক বছরে আমরা দেখাইতে পারছি। আমরা দেখাইতে পারছি, ঈদের সময়ে লিস্ট ক্যাজুয়ালটি সহকারে মানুষ দেশের বাড়িতে যাইতে পারে। এরকম অনেক ম্যাট্রিক্সে আমরা সফল। আমরা জাস্ট একটা এক্সাম্পল সেট করতে পারছি।
দেশের জনগণকে শত্রু হিসেবে দেখা; এটা আসলে কেনো রাজনৈতিক নেতার কাজ না। বরং ওই দেশের জনগণকে কীভাবে এড্রেস করে, কীভাবে তাদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রটাকে বানানো যায়; সেটাই হচ্ছে নেতার কাজ।
দেশের মানুষের বড় একটা অংশ, বড় অংশের স্টুডেন্ট গ্রুপস বা যারা আছে; তারা তো একটা সাধারণ সুন্দর দেশ চাইছিল। তারা অনেকে আন্দোলনে নামছে, মিডিয়ার বিরুদ্ধে গেছে বা এখানে-ওখানে অনেক আন্দোলন করতে গেছে। কিন্তু কেনো আন্দোলনে আমরাও কিন্তু সহিংসতার আশ্রয় নেই নাই। এটা অনেকের কাছে মনে হইছে, কেন এই সরকার সহিংস হইল না। এই যে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালানোর মনস্তত্ত্ব থেকে আমরা বের হইতে চাইছি। অবশ্যই কিছু ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ক্রিয়েট হইছে। রাস্তাঘাট হুট করে বন্ধ করে। আগে রাস্তাঘাট বন্ধ করলে কি করতো সরকার? গুলি করতো। এখন আমি তো আমার দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গুলি করতে পারব না। এটা আমার ম্যান্ডেট না…
ফারুক: এটা ভালো বলেছেন যে, আপনারা এই দৃষ্টিকোণ থেকে যে জনগণের ব্যর্থতার কারণে হলেও তাদের দমনপীড়ন না করা…
মাহফুজ: তাদের দমনপীড়ন না করা। বরং যে লোকগুলো আন্দোলন বা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আসছে, এদের ৯০-৯৫ শতাংশ মানুষ আসছে সদিচ্ছার কারণে।
ফারুক: বিশালসংখ্যক তরুণ, উঠতি মধ্যবিত্তের সন্তান এবং ঢাকা চট্টগ্রামের মতো শহরের শ্রমজীবী মানুষ; এরা তো একটা বিরাট রকম ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল…
মাহফুজ: এই মানুষগুলোকে ইন্টিগ্রেট করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ। আমার বক্তব্য হচ্ছে—রাজনৈতিক দলগুলোকেই এদের সাংগঠনিকভাবে আনতে হবে। কনশাসনেসের জায়গা থেকে এদের সঙ্গে নিতে হবে।
ফারুক: যারা আপনার সংগ্রামের সঙ্গে ছিল এবং যারা দূর থেকে আপনাদের ফলো করে তাদের উদ্দেশে আপনার এই মুহূর্তে কী বক্তব্য?
মাহফুজ: তাদের উদ্দেশে আমার বক্তব্য থাকবে—আমি মনে করি, পলিটিক্যাল কনশাসনেস আসা শুরু হয়েছে মাত্র। এর সাংগঠনিক রূপান্তরের দরকার আছে। এটাকে এক ধরনের স্ট্রিমলাইন করার বিষয় আছে। আসলে কী চায়, আসলে কোন ম্যানিফেস্টো, কোন বক্তব্যের ভিত্তিতে সে কোথায় গিয়ে পৌঁছাইতে চায়। মানে স্বতফূর্ত জনতাকে কীভাবে আপনি এডুকেট করবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাই। বাট আইম নট গোয়িং টু এডুকেট দেম। তাদের এডুকেট করা, তাদের লিটারেট করা, চৈতন্যের যে স্তরে তারা আছে, সেখান থেকে আমাদের একটা পরিবর্তন দরকার। এই দেশটাকে গোছানো দরকার, নতুন করে বদলানো দরকার।
ওই চৈতন্যের স্তর বদলানোর পথ প্রক্রিয়াতে তাদের কীভাবে ইনক্লুড করা যায়, এটা তো রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। আমি রাজনৈতিক নেতা, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল বা এডুকেটরদের আহ্বান জানাই। তারা যেন এখানে-সেখানে ছড়িয়ে গিয়ে বিপ্লবী এবং অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিদের এবং তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষদের চেতনার এই স্তর থেকে পরের স্তরে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায়, সে চেষ্টা করেন। কীভাবে দেশের রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে তাদের এনগেজ করা যায়, সেই খাতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশের জনগণকে গালিগালাজ করে লাভ নাই যে— ওরা খারাপ, ওরা মব করে, ওরা ধ্বংস করে; এটা-সেটা। করবে না কেন? করতেছে। কারণ হচ্ছে, কনস্ট্রাকটিভ কিছু তারা পাচ্ছে না। কনস্ট্রাক্টিভ কিছু দেওয়ার দায়িত্ব তো রাজনৈতিক নেতাদের।
(সংক্ষেপিত)
ফারুক: ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন। তারপরও ওইদিন সকালের দিকে অনেক রক্তপাত হলো। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, গণভবন—পুরো অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ। এর আগে, আমরা দেখেছি—(একাত্তরের) ৭ মার্চের জনসভা…যেখান থেকে মানুষের একটা সংকল্প তৈরি হলো। কিন্তু ৫ আগস্টে ওরকম একটা বা তার থেকেও বড় একটা জমায়েত সারা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে চলে আসলো। কিন্তু সেখানে কেনো বড় ঘোষণা তৈরি করা হলো না। পাবলিকের যে ভিড়, তার যে আকাঙ্ক্ষা সেটা থেকে যদি কেনো ঘোষণা বা সরকারের রূপরেখা আসতো, তাহলে কি এই বর্তমান পরিস্থিতি আরো অন্যরকম হতো? তিন দিন পর অনেক ম্যাকানিজমের পরে, একটা জায়গায় বসে, জনগণের সামনে না, একটা ঘরের ভেতর থেকে ঘোষণা আসলো। এই যে ময়দান থেকে ঘোষণা না এসে একটা শলাপরামর্শের জায়গা থেকে এলো, এটার কারণে কি পরিস্থিতিটার পরিবর্তন হলো?
মাহফুজ: নাহিদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল— তোমরা শাহবাগে থাকবা। নাহিদ, নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী; এই দুজন রাতে এক টিচারের বাসায় চলে গেলেন। তখন আমরা ঠিক করলাম, নাহিদ আর নাসীর ভাইকে বললাম, আমরা রাতে ড্রাফট রেডি করতেছি— কাল জনগণের সামনে কী ঘোষণা যাবে। শাহবাগ থেকে অথবা শহীদ মিনার থেকে সরকারের ঘোষণা করবো। আমরা কী রকম বাংলাদেশ চাই, কী রকম পরিবর্তন চাই, প্রাথমিকভাবে কী চাই— রাতব্যাপী সেসবের একটা ড্রাফট করেছি।
যেটা বললাম, ওই প্রক্রিয়ায় যেসব গ্রুপ আছে, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলে রেডি করলাম। আমি তখন আমার বন্ধু আসাদের বাসায় ছিলাম মহানগর প্রজেক্টে। ওখান থেকে সকাল ১১টায় বের হয়ে আমরা একটা সিএনজি ভাড়া করি। নাহিদ আর নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী আছে, আসিফ অন্য জায়গায় ছিল। আসিফ আর বাকের ছিল চানখারপুলের দিকে। কিন্তু নাহিদ ইউজুয়ালি যেহেতু ঘোষণা করে, আমরা ধরে নিছিলাম সেই করবে। নাহিদের সঙ্গে আমার মিটিংটা দরকার ছিল ১১টায়।
আমরা যখন বের হলাম, তখন বিএফডিসির সামনে সাতরাস্তা মোড়ে যে ক্রসিংটা আছে, সেখানে পুলিশ আমাদের থামাইলো। থামানোর পরে আমাদের ইন্টারোগেট করলো। সেখানে ২০-২৫ জন পুলিশ ছিল। কেনো গাড়ি যাইতে দিচ্ছে না। তখনো কারফিউ চলতেছে। পুরা ঢাকা থমথমে।
আমরা যখন পুলিশের হাতে পড়লাম, ওই সময়ও আমার ছবি ওইভাবে কোথাও প্রচার হয় নাই। হয়তো একটা রিপোর্ট আছে। আর আমার বন্ধু সে তখন একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে। সে কার্ডটা দেখায়ে বলল যে, আমি একজন প্রফেশনাল। আমার একটা ইমারজেন্সি আছে। মেডিকেল ইমারজেন্সিতে যাচ্ছি। আমার বন্ধু আমার সঙ্গে যাচ্ছে।
নাহিদ ও নাসীর ভাইয়ের সাথে আমরা যাইতে পারলাম না। দুপুর ২টার দিকে ঘোষণা হলো (শেখ হাসিনার পলায়নের)। তখন তারা শাহবাগে চলে আসল। শাহবাগের এই যে বিজয়ী জনতা, তারা দেখবেন– নাহিদ, আসিফসহ আরও অনেককে নিয়ে সংসদ ভবনের দিকে রওনা দিছে। দ্যাট ওয়াজ মিসফরচুন। কারণ আমার প্রস্তাবনা ছিল যে— আমরা ঘোষণা দিব। ৫ আগস্টের জন্য ঘোষণাপত্র, আমরা যেটি রাতে ড্রাফট করছি, সবার সঙ্গে মিলে সবার পরামর্শে।
আমরা রাতে ড্রাফটটা রেডি করি। পরের দিন দুপুরে… আসলে আমরা তো জানতাম না যে, এটাই হবে। কিন্তু রাতে একটা লেখা আসিফ লিখেছে, তাঁর ফেসবুক পোস্ট এখনো আছে। ওটা আমার লিখে দেওয়া। ওখানে ছিল যে, কী কী হবে। আসিফের পোস্ট এখনো আছে চার তারিখ রাতের। সেটা এলাবোরেট করে আমরা একটা ঘোষণাপত্র দিতাম। ঘোষণাপত্রটা খুবই ইন্টারেস্টিং…এই ঘোষণাপত্রে কিন্তু সবগুলো পক্ষ জড়িত ছিল। সামিনা লুৎফা ম্যাম বলেন বা এই যে মঞ্জুর আল মতিন ভাই বলেন, সবাই কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্সের ওখানে অপেক্ষা করতে চলেছে। আমরা বসবো শাহবাগে। বলা ছিল– তোমরা থাকবা। আমরা যাব। ক্যাম্পাসের ভেতরে বসে আমরা ডিসাইড করব কী ঘোষণাপত্র যাবে। দেন উই উইল কাম আউট, তুমি পাবলিকের সামনে বলবা। এইটা অনেকভাবে নষ্ট হইলো। যেমন নাহিদরা যখন চলে গেল। আমি মনে করি না, এটা কেনো ইচ্ছাকৃত জিনিস। জনগণ নেতাদের নিয়ে চলে গেল। নাহিদের সঙ্গে ওই যোগাযোগটা আবার এস্টাবলিশ করতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় লেগে গেল। ততক্ষণে মোমেন্ট শেষ, মানুষ রেভ্যুলেশনের ভায়োলেন্সে ব্যস্ত হয়ে গেছে…।
ফারুক: ভায়োলেন্সে কেউ বাড়ি ফিরে যাওয়া…
মাহফুজ: কেউ বাড়ি ফিরে গেছে। কেউ আনন্দ করছে। কেউ মিষ্টি বিতরণ করছে, সবকিছু করতেছে। ওই মোমেন্টামটা শেষ হয়ে গেল। নাহিদ-আসিফকে বা অন্য যারা ছিল; তাদের কাউকে আমি পাইলাম না।
ফারুক: কিন্তু রাতে তো তারা একটা (টেলিভিশন) চ্যানেলে (গিয়েছিলেন)। সকলেই এই ঘোষণাটা দেওয়া যে…
মাহফুজ: তখন আসলে এই ঘোষণা দেওয়ার সব ধরনের প্রায়োগিক সম্ভাবনাই শেষ হয়ে গেছে। তখন জাস্ট জাতিকে জানানো যে, আমরা এরকম সরকার করতে যাচ্ছি। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, এই হচ্ছে অবস্থা। ঘোষণাপত্রের মতো একটা সোলেম জিনিস ঘোষিত হবে পাবলিকলি। ওই জিনিস, ততক্ষণে ওই মোমেন্টাম আমরা হারায়ে ফেলছি।…অবশ্যই সেটা আমাদের ভেবে দেখা দরকার, অন্য কী হইতে পারতো। আমি মনে করি, সবচেয়ে প্রবলেমেটিক জিনিস হয়েছে, সেটা হচ্ছে—দিস ভেরি কম্পালশন যে, ইউ টু মেক এ গভমেন্ট রাইট নাউ। আর দেরি করা সম্ভব না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে, কিলিং হচ্ছে, এই হচ্ছে সেই হচ্ছে। এই যে যত দ্রুত গভর্মেন্ট দেওয়ার নামে স্ট্যাবিলিটি, সো কলড স্ট্যাবিলিটি রক্ষার নামে দেখা গেল যে, আমরা ওই তিন দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমাইছি, মাত্র দুই ঘণ্টা। সারা দিন আমরা ঘুরতেছি। মির্জা ফখরুল সাহেবের কাছে গেলাম। আমরা জামায়াতের আমিরের সঙ্গে কথা বললাম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বললাম। কার কী লিস্ট আছে, কথা বললাম। তারেক রহমানের সঙ্গে কথা হইলো। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, দেশের স্ট্যাবিলিটি রক্ষা করা।
ফারুক: অভ্যুত্থানের এক বছর পরে এসে আপনার ফিলিংটা (কেমন)। জুলাই অভ্যুত্থানের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা ছিল, সেটা পুরাপুরি বাস্তবায়ন…
মাহফুজ: সেটা ওই সময়েই নস্যাৎ হয়ে গেছে। ৮ আগস্ট রাত থেকে সচিবালয়ে যা হইছে, সচিব রদবদল থেকে শুরু করে, ডিসি রদবদল আমলাতন্ত্রে যা হইছে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যা হয়েছে, এগুলো কোনোটাই আসলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সার্ভ করে নাই।…
ফারুক: আপনারা অভ্যুত্থানের নেতা, অভ্যুত্থানের শক্তি, অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছেন, আপনাদের সঙ্গে আপনাদের মতো এরকম আরও অজস্র মানুষ মিলে দিয়েছেন। যারা নতুন জেনারেশনের, যারা শাহবাগ পরবর্তী জেনারেশনে, যারা রাজনৈতিকভাবে সাবালক। আপনাদের যে এত পাঠচক্র, প্রত্যেকটা জিনিস আপনার স্টাডি করে এসেছেন, বোঝাপড়া তৈরি করেছেন। অভ্যুত্থান বিজয়ের পরে আপনারাই হয়ে গেলেন ছোট শক্তি। বড় শক্তি হয়ে গেলো তারা, যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনটা হয় নাই। যারা আন্দোলনের অংশীদার বটে কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল ছাত্র-তরুণদের হাতে। সেই বড় শক্তিই এখন হয়ে যাচ্ছে প্রধান নির্ধারক। এর কারণটা কী?
মাহফুজ: সেটার কারণ হচ্ছে সাংগঠনিক সক্ষমতা। যেমন এখানে আমি উদাহরণ টানি মাও সেতুংয়ের। তিনি ১৯২০ সাল থেকে কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত ছিলেন। উনারা যে আন্তপার্টি দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে গিয়ে, পার্টি লাইন থেকে শুরু করে সবকিছুকে ফার্নিশড একটা জায়গাতে নিয়ে গেলেন। এভাবে যে পার্টি লাইন দাঁড়ালো, সেই লাইনে চায়নার মুক্তি হবে। এখন এই লাইনকেই সবাই সফল বলে। কিন্তু ১৯২০ সাল থেকে মাও সেতুং ন্যাশনালিস্টদের সঙ্গে লড়াই করছেন। নিজের পার্টির ভেতরে, বিভিন্ন গ্রুপ অব পিপলের সঙ্গে লড়াই করছেন। এর পরে একটা পার্টি লাইনের ভেতর দিয়ে তাঁর পার্টি ক্যাডারেরা পুরা চায়নাব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল।
বিপ্লবের একবারে সফলতম উদাহরণ হিসেবে আমি লেনিনকে মনে করি না ওই অর্থে। মাও সেতুং হচ্ছে যে, ধাপে ধাপে… অবশ্যই লেনিনও ধাপে ধাপে কাজ করছেন। কিন্তু মাও সেতুংয়ের ছিল বিপুল সাংগঠনিক শক্তি। ইরানি বিপ্লবেও আলী শরীয়তি একটা জেনারেশন তৈরি করেছিলেন। তেহরানে হোসাইনিয়া এরশাদ বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে বসে একটানা কয়েক বছর ইরানের একটা ইন্টেলেকচুয়াল কালচারাল ক্লাসকে তৈরি করছেন তিনি। যারা একটা বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। খোমিনির একটা আধ্যাত্মিক ডেমোক্রেটিক প্রভাব ইরানব্যাপী ছিল। ফলে জনগণ একটা ক্যাটাগরি। তরুণ প্রজন্ম একটা ক্যাটাগরি। জেনারেশন একটা ক্যাটাগরি। এই আকারে আসলে বিপ্লব করা সম্ভব। কিন্তু বিপ্লবকে ধরে রাখার জন্য তো সাংগঠনিক শক্তি লাগে। পলিটিক্যাল আউটরিচ লাগে। আমি যদি নিউ স্টাবলিশমেন্ট না আনতে পারি, আমার যদি সাংগঠনিক সক্ষমতা না থাকে, বিপ্লবী শক্তি না থাকে…বিপ্লবী শক্তি ছিল কিন্তু সাংগঠনিক বিপ্লবী শক্তি যদি না থাকে, আমি তো টেকওভার করতে পারবো না। এইজন্য তো আমরা টেকওভার করতে পারিনি। টেকওভার করার পরবর্তী সময়েও যে সম্ভাবনাগুলো ছিল, সেগুলো আমরা, ওই অর্থে ইস্তেমাল করতে পারি নাই। অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের কর্মী, ওরা কিন্তু একটা জেনারেশনাল এসপিরেশন দেখে আসছে। তরুণ নেতৃত্ব, সেই তরুণ নেতৃত্বের তো আবার তার প্যারেন্ট পার্টিতে ফিরে যাওয়ার কেনো দরকার ছিল না। সে তো অলরেডি তার প্যারেন্ট পার্টির চেয়ে বড় হয়ে গেছে। সাদিক কায়েমের কথা বলি, মেঘমল্লার বসু কিংবা অনিক রায়ের কথা বলি। অনিক রায় তো এখন এনসিপিতে আছে। এরকম আমি অনেক ছাত্রনেতার নাম বলব। এই ছাত্রনেতারা তো তাদের প্যারেন্ট পার্টির লিডারদের চেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু তারা সমর্পণ করে ফেলছেন। যেমন ছাত্রদলের নাসির ভাইয়ের কথা বলতে পারি। তাঁরা তো অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়া তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে, জেনারেশনাল বেনিফিট হিসেবে অনেক বড় নেতা হয়ে গেছেন। অনেক এমপির চেয়েও বড়। কিন্তু তাঁরা আবার একটা পার্টি ডেকোরামে চলে গেলেন। উমামার কথা বলি। উমামা তো ছাত্র ফেডারেশন করেছে। কিন্তু তারপরও বা আরও যারা আছে আমি ব্যক্তি ধরে আর না বলি। সবার কিন্তু এই সুযোগটা ছিল উপরে ওঠার।
আমরা মনে করি যে, এইখানে এখন যারা রাজনীতিতে আছে, তারা সবাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। তাঁরা সবাই প্রো-বাংলাদেশি ফোর্সেস। এখানে অবশ্যই প্রো-বাংলাদেশি ফোর্সেসকে একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে, নট অনলি ফর ফাইভ ইয়ার্স, একসঙ্গে থাকতে হবে। এবং একটা ডেমোক্রেটিক প্রসেসের ভেতর দিয়ে তাদের আগামী ১০, ১৫, ২০ বছর, অন্তত আমি ২০ বছর ধরতে চাই, একসঙ্গে এগোতে হবে।
একটা কমন বাংলাদেশ, একটা প্রসপারাস এবং ডিগনিফাইড বাংলাদেশের জন্য তাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। কিছু বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং একসঙ্গে থাকতে হবে। রাজনৈতিক রেশারেশি থাকবে, বিরোধ থাকবে। কিন্তু হোয়েন ইট কামস টু দ্য কোশ্চেন অব ন্যাশন, কোশ্চেন অব ন্যাশনাল সলিডারিটি, কোশ্চেন অব ফ্যাসিজম এবং এক্সপেনশনিজম বা ইম্পেরিয়ালিজম; যেটাই বলেন না কেন, যেই ক্রাইসিস আসুক না কেন, সেটাতে যেন আমরা অন্তত অভ্যুত্থানে যারা একসঙ্গে ছিলাম, তারা যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। ওই সময়টা যেন রিক্রিয়েট করতে পারি। ন্যাশনের যখন আমাদের দরকার, তখন যেন আমরা বিভাজিত না হই। ওই বিভাজন আমাদের মৃত্যু পরোয়ানা। ওই বিভাজন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভাজনের ফাঁক গলে ঢুকে পড়বে পরাজিত সব শক্তি। তখন আর কেউ বাঁচতে পারবে না।
বিএনপির হাজার হাজার কর্মী শহিদ হইছে। জামায়াতের শহিদ হইছে কয়েকশ’ কর্মী। ছাত্রদের বিভিন্ন সাধারণ ছাত্র, সাধারণ নাগরিক শহিদ হইছে; এটা আসলে একবারে নন-নেগোশিয়েবল একটা জায়গা। যেখানে আমরা আমরা আপস যেন না করি। এটা শুধু জুলাই সনদ বানানোর জন্য না, এটা তো জাস্ট একটা পেপারওয়ার্ক। কিন্তু এটাতে হচ্ছে সাইকোলজিক্যালি এবং পলিটিক্যাল ইডিওলজিক্যালি, ইভেন ডিসিশন নেওয়ার বিষয় যে—আসলে আমরা বাংলাদেশকে ধরে রাখতে চাই একসঙ্গে।
আওয়ামী লীগের বাইরেও যারা ফ্যাসিস্ট ফোর্সেস আছে এবং আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যারাই শক্তিশালী আছে বা যারাই আমার দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতেছে; তাদের সবার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।
ফারুক: আপনার তো একটা পর্যায় আছে, যেখানে আছে পাঠচক্র, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, চলচ্চিত্র আন্দোলন, লেখালেখি ও বুদ্ধিভিত্তিক কাজ। আরেকটা পর্যায়ে আছে ২০১৮ বা ২০২১ সাল থেকে অনেক বেশি করে এই অভ্যুত্থানের দিকে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা এবং কাজ। গত এক বছরের একটা বড় সময় আপনি অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন। এই সময়টাকে আপনি নিজের এবং এই সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মাহফুজ: সরকার তো আসলে মিনিস্ট্রিগুলো সামলে দায়িত্ব পালন করার জন্য আসে ক্ষমতা ত্রিভুজ, ট্রায়ারড পাওয়ার ইনটেক রেখে। এখানে দুনিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে যোগ্য প্রশাসক বসায়ে দেওয়া হোক, হি কান নট রান দিস কান্ট্রি, এনি কান্ট্রি। আমরা বলি যে সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি। সেকেন্ড হচ্ছে, মিডিয়া অ্যান্ড কালচারাল স্টাবলিশমেন্ট। থার্ড, করপোরেশনস অ্যান্ড অলিগার্ক। এই তিনটা জায়গায় সফল হইতে পারিনি। চেষ্টা করছি, প্রশাসন থেকে ফ্যাসিস্টদের ফার্জিং করার জন্য বা তাদের থেকে প্রশাসনকে মুক্ত করার জন্য। তারপরেও করপোরেশনস এবং অলিগার্কদের গায়ে আমরা আসলে হাত দিতে পারিনি।
…মিডিয়া কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট নিয়ারলি সেইম। এটা একটা দায় বলতে পারেন যে, মানুষ বলতে পারে—নাহিদ ইসলাম ছিলেন, আমি ছিলাম। আসলে অন্য দুইটা ব্যবস্থা অটুট রেখে, মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি, ইনট্যাক্ট করপোরেশনস অ্যান্ড অলিগারস ইনট্যাক্ট আপনি মিডিয়া বদলাইতে পারবেন না। কারণ মিলিটারি সিভিল ব্যুরোক্রেসি আর করপোরেশনস আর অলিগার্ক; এরাই হচ্ছে মিডিয়ার জন্মদাতা। এরাই মিডিয়াকে সাস্টেইন করে। এরাই মিডিয়া কালচার স্টাবলিশমেন্টকে টিকাই রাখে। এরা হচ্ছে এদের দুইটার মাউথপিস। ফলে আপনি যদি পাখনা ভেঙে না দেন, তাহলে আপনি বলতে পারবেন না আপনি মিডিয়া কালকেই বদলে দেন।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন অলিগার্করা। আপনি অলিগার্কদের কেন হাত দিতে পারছেন না? কারণ সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি চাচ্ছে না। সিভিল মিলিটারি ব্যুরোক্রেসিতে কেন হাত দিতে চাচ্ছে না? মিডিয়া অলিগার্করা চাচ্ছে না। মিডিয়া আর করপোরেশন অলিগার্ক চাচ্ছে না। সো, এই ট্রায়াড যদি আপনি না ভাঙতে পারেন, এখানে আপনি আসলে সবচেয়ে যোগ্য প্রশাসক দিয়েও কিছু করতে পারবেন না।
কিন্তু এই সরকারের যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটা হচ্ছে এই সরকার জনগণের কাছে ট্রান্সপারেন্ট। মানুষ আমাকে কোশ্চেন করছে, জনগণ প্রশ্ন তুলছে। আমাকে উত্তর দিতে হবে। এটা আপনি গত ৫৪ বছরে কেনো সরকারে দেখেন নাই। আর দেখবেন কিনা, কে জানে। আমি চাই মানুষ দেখুক। মানুষের একবার একটা এক্সারসাইজ হয়ে গেল। মানুষ যাতে এই আকাঙ্ক্ষাটাই করে— যে গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিসটা থাকবে, যেন সরকারকে কোশ্চেন করা যায়। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সরকারের একেবারে নিম্নপদস্থ লোকটাও আমাকে অ্যান্সার করতে বাধ্য। আমি মনে করি, এটা একটা বড়-সড় অর্জন, অভ্যুত্থানের অর্জন, গণঅভ্যুত্থানের অর্জন। এমন একটা সরকার গঠন করা গেছে, যে সরকারটা একাউন্টেবল টু দ্য পিপল, ট্রান্সপারেন্ট টু পিপল এবং রেসপন্সিভ টু দ্য পিপল। প্রথম তিন-চার মাসে দেড়শো আন্দোলন হইছে, একবারে লিস্টেড…
ফারুক: অন্তর্বর্তী সরকারের…
মাহফুজ: এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম চার মাসে দেড়শো আন্দোলন রাজনৈতিক দলগুলোর ইন্ধন ছাড়াই হইছে—এটা বিশ্বাস করাটা অন্যায্য। তারপরও এই সরকার কিন্তু উইদাউট অ্যারেস্টিং, মানে ইনডিসক্রিমিনেট…
ফারুক: কোনো দমন পীড়নে না…
মাহফুজ: কোনো দমন পীড়নে না গিয়ে পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট এতগুলো আন্দোলন এইভাবে সামলাইতে পারতো না, এইভাবে রেসপন্সিভ হইতে পারতো না, এভাবে অ্যাকাউন্টেবল অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট হতে পারতো না। এরপরে যত আন্দোলন হয়েছে—যে আন্দোলনগুলো ন্যায্য, যেই বক্তব্যগুলো ন্যায্য, যেই দাবিগুলো ন্যায্য, সেগুলো কিন্তু সবগুলো মিট করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গুমের মত একটা জিনিস যেন আর কেনো সময় ফিরতে না পারে। গুম কমিশনের মতো একটা স্ট্রং একটা অর্গান রেডি করতে পারছে সরকার। যেটা এখনো কাজ করে যাচ্ছে। আমরা রেটিফাই করলাম সনদ।
আমি মনে করি, দ্রব্যমূল্য যে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব— এটা গত এক বছরে আমরা দেখাইতে পারছি। আমরা দেখাইতে পারছি, ঈদের সময়ে লিস্ট ক্যাজুয়ালটি সহকারে মানুষ দেশের বাড়িতে যাইতে পারে। এরকম অনেক ম্যাট্রিক্সে আমরা সফল। আমরা জাস্ট একটা এক্সাম্পল সেট করতে পারছি।
দেশের জনগণকে শত্রু হিসেবে দেখা; এটা আসলে কেনো রাজনৈতিক নেতার কাজ না। বরং ওই দেশের জনগণকে কীভাবে এড্রেস করে, কীভাবে তাদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রটাকে বানানো যায়; সেটাই হচ্ছে নেতার কাজ।
দেশের মানুষের বড় একটা অংশ, বড় অংশের স্টুডেন্ট গ্রুপস বা যারা আছে; তারা তো একটা সাধারণ সুন্দর দেশ চাইছিল। তারা অনেকে আন্দোলনে নামছে, মিডিয়ার বিরুদ্ধে গেছে বা এখানে-ওখানে অনেক আন্দোলন করতে গেছে। কিন্তু কেনো আন্দোলনে আমরাও কিন্তু সহিংসতার আশ্রয় নেই নাই। এটা অনেকের কাছে মনে হইছে, কেন এই সরকার সহিংস হইল না। এই যে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র চালানোর মনস্তত্ত্ব থেকে আমরা বের হইতে চাইছি। অবশ্যই কিছু ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন ক্রিয়েট হইছে। রাস্তাঘাট হুট করে বন্ধ করে। আগে রাস্তাঘাট বন্ধ করলে কি করতো সরকার? গুলি করতো। এখন আমি তো আমার দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গুলি করতে পারব না। এটা আমার ম্যান্ডেট না…
ফারুক: এটা ভালো বলেছেন যে, আপনারা এই দৃষ্টিকোণ থেকে যে জনগণের ব্যর্থতার কারণে হলেও তাদের দমনপীড়ন না করা…
মাহফুজ: তাদের দমনপীড়ন না করা। বরং যে লোকগুলো আন্দোলন বা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আসছে, এদের ৯০-৯৫ শতাংশ মানুষ আসছে সদিচ্ছার কারণে।
ফারুক: বিশালসংখ্যক তরুণ, উঠতি মধ্যবিত্তের সন্তান এবং ঢাকা চট্টগ্রামের মতো শহরের শ্রমজীবী মানুষ; এরা তো একটা বিরাট রকম ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল…
মাহফুজ: এই মানুষগুলোকে ইন্টিগ্রেট করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ। আমার বক্তব্য হচ্ছে—রাজনৈতিক দলগুলোকেই এদের সাংগঠনিকভাবে আনতে হবে। কনশাসনেসের জায়গা থেকে এদের সঙ্গে নিতে হবে।
ফারুক: যারা আপনার সংগ্রামের সঙ্গে ছিল এবং যারা দূর থেকে আপনাদের ফলো করে তাদের উদ্দেশে আপনার এই মুহূর্তে কী বক্তব্য?
মাহফুজ: তাদের উদ্দেশে আমার বক্তব্য থাকবে—আমি মনে করি, পলিটিক্যাল কনশাসনেস আসা শুরু হয়েছে মাত্র। এর সাংগঠনিক রূপান্তরের দরকার আছে। এটাকে এক ধরনের স্ট্রিমলাইন করার বিষয় আছে। আসলে কী চায়, আসলে কোন ম্যানিফেস্টো, কোন বক্তব্যের ভিত্তিতে সে কোথায় গিয়ে পৌঁছাইতে চায়। মানে স্বতফূর্ত জনতাকে কীভাবে আপনি এডুকেট করবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাদের প্রতি আমি আহ্বান জানাই। বাট আইম নট গোয়িং টু এডুকেট দেম। তাদের এডুকেট করা, তাদের লিটারেট করা, চৈতন্যের যে স্তরে তারা আছে, সেখান থেকে আমাদের একটা পরিবর্তন দরকার। এই দেশটাকে গোছানো দরকার, নতুন করে বদলানো দরকার।
ওই চৈতন্যের স্তর বদলানোর পথ প্রক্রিয়াতে তাদের কীভাবে ইনক্লুড করা যায়, এটা তো রাজনৈতিক নেতাদের কাজ। আমি রাজনৈতিক নেতা, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল বা এডুকেটরদের আহ্বান জানাই। তারা যেন এখানে-সেখানে ছড়িয়ে গিয়ে বিপ্লবী এবং অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিদের এবং তরুণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষদের চেতনার এই স্তর থেকে পরের স্তরে কীভাবে নিয়ে যাওয়া যায়, সে চেষ্টা করেন। কীভাবে দেশের রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজে তাদের এনগেজ করা যায়, সেই খাতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশের জনগণকে গালিগালাজ করে লাভ নাই যে— ওরা খারাপ, ওরা মব করে, ওরা ধ্বংস করে; এটা-সেটা। করবে না কেন? করতেছে। কারণ হচ্ছে, কনস্ট্রাকটিভ কিছু তারা পাচ্ছে না। কনস্ট্রাক্টিভ কিছু দেওয়ার দায়িত্ব তো রাজনৈতিক নেতাদের।
(সংক্ষেপিত)
হ্যারি পটারের গল্পগুলো কোথায় ঘটে? অতীতে না ভবিষ্যতে? কিছুদিন আগেই একজন আমাকে বললেন, সপ্তম বইয়ের ক্লাইম্যাক্সেও হ্যারি মরে নি (এবং এই তথ্য নাকি খুব জরুরি!)। অথচ হ্যারি যে অসুস্থ ছিল এটাই তো আমি জানতাম না!
৩ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ। ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবি। কিন্তু এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি?
১ দিন আগেমোদির সাথে রিলেট করব, কোনোদিন ভাবি নাই। একজন জেনজি হিসেবে মোদি ট্রাম্পের থেকে যে দাগা খাইল, তার জন্য গভীর সিম্প্যাথি বোধ করলাম। এই রকম সিচুয়েশনে বা ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ বেঈমানির শিকার আমরা রেগুলার হই।
১ দিন আগেআমার প্রিয় গায়ক আসিফ একটা সাবধানী পোস্ট দিছেন ফেসবুকে। পোস্ট দেইখা আমি হাসতে হাসতে শেষ। দেইখা মনে হইলো, মুরুব্বি, মুরুব্বি উঁহু হু হু!
১ দিন আগে