leadT1ad

আজ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দিন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দিনে কী ঘটেছিল

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ওই দিন খ্যাতিমান আলোচিত্রী নাসির আলী মামুন ছিলেন তাঁর সঙ্গে। সম্প্রতি তিনি স্ট্রিমের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাভেদ হুসেন।

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

স্ট্রিম গ্রাফিক

জাভেদ হুসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নাসির আলী মামুন জানিয়েছেন, নোবেল পুরস্কার ঘোষণা থেকে শুরু করে তা গ্রহণ করা পর্যন্ত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছায়াসঙ্গী হিসেবে তিনি প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেছেন। ওই বছরের ১০ ডিসেম্বর নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি তাসলিমা বেগমের হাতে পুরস্কার তলে দেওয়া হয়েছিল। সেই বর্ণিল দিনগুলোর অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে সাক্ষাৎকারটিতে।

জাভেদ হুসেন: আজ এক বিশেষ দিন। আজকের তারিখেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই পুরো যাত্রাপথে, পুরস্কার ঘোষণা থেকে শুরু করে তা গ্রহণ করা পর্যন্ত, যিনি তাঁর ছায়াসঙ্গী হিসেবে প্রতিটি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেছেন, সেই কিংবদন্তী আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন আজ আমাদের সঙ্গে আছেন। মামুন ভাই, অনুষ্ঠানে স্বাগত।

নাসির আলী মামুন: ধন্যবাদ আপনাকে এবং সকল দর্শককে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর ভাই ড. জাহাঙ্গীর। সংগৃহীত ছবি
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর ভাই ড. জাহাঙ্গীর। সংগৃহীত ছবি

জাভেদ হুসেন: আপনাকে ‘ফটোগ্রাফির কবি’ বলা হয়। আপনি ড. ইউনূসের এমন অনেক মুহূর্তের সাক্ষী, যা ইতিহাসের অংশ। সেই নোবেল পুরস্কার ঘোষণার দিনের কথা শুনতে চাই। খবরটা প্রথম কীভাবে পেলেন এবং তারপর কী হলো?

নাসির আলী মামুন: দিনটা ছিল ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর। সকালবেলা। অসলো থেকে যখন নোবেল কমিটি শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা দিল, আমি তখন কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো অফিসে। খবরটা শুনেই আমরা সবাই চিৎকার করে উঠি—একটা অবিশ্বাস্য আনন্দ! মুহূর্তেই বুঝে ফেললাম, ড. ইউনুস পুরস্কার পেয়েছেন।

আমি সঙ্গে সঙ্গে অফিস ছেড়ে বাসায় যাই, ক্যামেরা দুটি নিয়ে ছুটে যাই গ্রামীণ ব্যাংকের দিকে। ইউনূস স্যারের বাসার সামনে পৌঁছে দেখি, শত শত মানুষ—সম্ভবত হাজারও—ভিড় করেছে। সাংবাদিক, টেলিভিশন ক্যামেরা, সাধারণ মানুষ—সবাই সেখানে। ভেতরে কেউ ঢুকতে পারছে না।

আমাকে দেখে কর্তৃপক্ষ দরজা খুলে দিলেন, কারণ আমি ১৯৭৮ সাল থেকেই ইউনুস স্যারের সঙ্গে কাজ করি। তখনও তিনি বিশ্বখ্যাত হননি, কিন্তু আমি তাঁর ভেতরে এক আলাদা দীপ্তি দেখেছিলাম।

ভেতরে ঢুকে দেখি, তিনি ক্লান্ত কিন্তু অত্যন্ত প্রাণবন্ত। একদিকে টেলিফোনে কথা বলছেন, অন্যদিকে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছুটোছুটি করছেন। আমি সেই মুহূর্তগুলো ক্যামেরায় ধরে রাখলাম। কিছুক্ষণ পর বিবিসির লাইভ সাক্ষাৎকারের জন্য তিনি বের হলেন। বাসা থেকে ব্যাংক ভবন পর্যন্ত যে পথ তিনি প্রতিদিন তিন মিনিটে হেঁটে পার হতেন, সেদিন তা পেরোতে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল।

মানুষ তাকে ঘিরে ফেলেছিল—হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, অভিনন্দন। এমনকি তাঁর বুক আর হাত ব্যথা করে গিয়েছিল, কিন্তু মুখে ছিল সেই অমলিন হাসি।

বিবিসি লাইভ সাক্ষাৎকার নেয়, তারপর তিনি ব্যাংক ভবনে ঢোকেন। তখনই আমার মনে হচ্ছিল—আমরা এত বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম এই খবরটির জন্য। সবাই ভেবেছিল তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পাবেন, কিন্তু শান্তিতে!—এটা সত্যিই এক ঐতিহাসিক সম্মান।

স্কাউট মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: উইকিপিডিয়া
স্কাউট মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: উইকিপিডিয়া

জাভেদ হুসেন: পুরস্কার ঘোষণার পর আপনারা তো বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়লেন। সেই যাত্রার শুরুটা কেমন ছিল?

নাসির আলী মামুন: নোবেল ঘোষণার কিছুদিন পরই আমরা বিশ্বভ্রমণে বের হই—প্রায় দশ বছর ধরে সেই ভ্রমণ চলেছিল। পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি সংস্থা, সিটি করপোরেশন, এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছ থেকেও তিনি সম্মাননা পেয়েছেন।

প্রথম সফর ছিল চীনে, বেইজিংয়ে। গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা ও আমি আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। ড. ইউনুস স্যার তখন সিওলে ‘সিওল পিস প্রাইজ’ গ্রহণ করছিলেন, সেখান থেকে তিনি বেইজিংয়ে এলেন। আমরা সবাই একই হোটেলে থাকলাম। আশ্চর্যের বিষয়, প্রতিদিন হোটেলের লবিতে শত শত মানুষ আসত—চীনারা, বিদেশি নাগরিক—শুধু তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে বা অটোগ্রাফ নিতে।

ড. ইউনুস স্যারও অবিশ্বাস্য ধৈর্য আর সৌজন্যের সঙ্গে সবার অনুরোধ রাখতেন। বেইজিংয়ের প্রায় সব টিভি চ্যানেল তাঁর সাক্ষাৎকার প্রচার করেছিল। রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন—সেই দৃশ্যও সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল!

চীনের পত্রিকাগুলোর শিরোনাম ছিল—‘একজন এশিয়ান নোবেল জয়ী!’ ওরা বাংলাদেশ বলছিল না—বলছিল, ‘আমাদেরই একজন।’ এই আন্তরিকতা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী।

বেইজিংয়ে একটি বিশেষ রিসেপশন হয়েছিল বিখ্যাত লাও শাউ রেস্টুরেন্টে—যে লেখক ‘রিকশাওয়ালা’ উপন্যাস লিখেছিলেন, সেটি আমি ছোটবেলায় পড়েছিলাম। আশ্চর্যের বিষয়, রেস্টুরেন্টের সামনেই ছিল একটি বাংলাদেশি রিকশা।

সেদিন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ড. ইউনুস বাংলায় বক্তৃতা দেন, সবাই মুগ্ধ হয়। পরে সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া—একটা উষ্ণ, আন্তরিক পরিবেশ।

পরদিন আমরা গেলাম চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে। তিনি নিজেই বাইরে এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। আমি ভেবেছিলাম চীনের মন্ত্রী হয়তো বিলাসবহুল পোশাকে থাকবেন—কিন্তু না, সাধারণ কোট, পুরোনো জুতা, নিখাদ সরলতা। পরে জানতে পারলাম, তিনি ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত পাহাড়ে হেঁটে চলেছেন, আলু আর শাকসবজি খেয়ে বেঁচে ছিলেন। প্লেনে ভ্রমণের সময় লেখালেখি করেন, কবিতাও লেখেন।

ড. ইউনুস স্যার তাকেও নিজের বই উপহার দেন। চীনের এই বিনয়, সরলতা আর আন্তরিকতা সত্যিই আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়।

হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংগৃহীত ছবি
হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংগৃহীত ছবি

জাভেদ হুসেন: চীনের এই আন্তরিক সংবর্ধনার পর আপনারা পশ্চিমে গেলেন। পশ্চিমা বিশ্বের অভ্যর্থনার সঙ্গে চীনের অভিজ্ঞতার কোনো পার্থক্য কি চোখে পড়েছিল?

নাসির আলী মামুন: অবশ্যই। পশ্চিমারা অনেক বেশি আনুষ্ঠানিক বা ফরমাল। তাদের আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি ছিল না, কিন্তু চীনের মানুষের আবেগের যে বহিঃপ্রকাশ, তা ছিল ভিন্ন। চীন তখনই এশিয়ার এবং বিশ্ব অর্থনীতির বড় শক্তি হিসেবে উঠে আসছিল। তাদের উষ্ণতা খুবই আন্তরিক ছিল—কারণ তারা এশিয়ার মানুষ, আমাদের অনেক বিষয় তারা সহজেই বুঝতে পারে। সাংস্কৃতিক মিল আছে, খাবারের অভ্যাসে মিল আছে। তারা ভাত, মাছ, চিকেন, শাকসবজি খায়—আমাদের মতো। যদিও রান্নার প্রক্রিয়া আলাদা, কিন্তু মনের দিক থেকে আন্তরিকতা এবং স্বাগতমের মান খুব উঁচু।

অন্যদিকে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক বেশি ফরমাল। তারা শুধু প্রয়োজন অনুযায়ী সময় দেয়, কথাবার্তা সীমিত, আনুষ্ঠানিক। আর এশীয় দেশগুলো বেশি আন্তরিক, সহজ। তাদের বক্তব্যে এবং আচরণে আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যায়।

কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে একটি মাইক্রোক্রেডিট সামিটে গেলাম। কনকনে শীত আর বরফের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষ এসেছিলেন স্যারের কথা শুনতে। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে। টেড টার্নারের ইউনাইটেড নেশনস ফাউন্ডেশনের একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলাম আমরা। সেখানে দেখি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটন সাধারণ মানুষের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ড. ইউনূসকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য! যখন তাদের পালা এলো, হিলারি তো ড. ইউনূসের হাত ধরে প্রায় নাচের ভঙ্গিতে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। কোনো প্রোটোকল বা অহংকার ছিল না, ছিল কেবলই সম্মান আর আনন্দ।

ওই সামিটে সারা বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ফজলে হাসান আবেদও ছিলেন। আবেদ সাহেবকে দেখেছি অনেকটা নীরব, যেমন একজন বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব হলেও ড. ইউনুসের উপস্থিতিতে তিনি নিজেকে সামলাচ্ছেন।

ড. ইউনুস যখন বক্তৃতা দিতেন, অডিয়েন্স পুরোপুরি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেত। প্রত্যেকবার তার বক্তৃতা নতুন, প্রাণবন্ত এবং শ্রোতাদের সম্পূর্ণভাবে দখল করে নিত। আমার মতে, পৃথিবীতে বড়জোর চার-পাঁচজন অরেটর আছে, যারা এমন ক্ষমতা রাখেন—ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাদের মধ্যে অন্যতম।

২০১০ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংগৃহীত ছবি
২০১০ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংগৃহীত ছবি

জাভেদ হুসেন: আপনি চীনের অভ্যর্থনা এবং কানাডা-ওয়াশিংটনের অভিজ্ঞতা কথা বললেন। এরপর আপনি আরও যেসব জায়গায় গেছেন, সেখানে কি মনে রাখার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে?

নাসির আলী মামুন: অবশ্যই। কানাডাতেও বাঙালিরা একটা রিসেপশন দিয়েছে, বাঙালি রেস্টুরেন্টে। মাছ ভাত খেতে গিয়েছিলাম। অবাক হয়েছিলাম যে ছোট্ট শহর হ্যালিফ্যাক্সে, যেখানে মাত্র ১০০ জনের মতো বাঙালি থাকে, তারা পরিবারের সঙ্গে হাজির হয়েছিল। সবাই ড. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করতে চাইছিল। আমরা প্রথম আলো থেকে স্যারের পোস্টার প্যাকেট করে নিয়েছিলাম, সবাইকে দিয়েছি, সবাই অটোগ্রাফ নিয়েছে। এক ধরনের উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছিল, আনন্দ প্রকাশে কোনো সীমা ছিল না।

এর আগে নিউইয়র্কে ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও রিসেপশন হয়েছিল। ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউনাইটেড নেশন্স ফাউন্ডেশনের আয়োজন, টেড টার্নারের হোস্টিংয়ে। সেখানে পৃথিবীর বহু নামকরা মানুষ উপস্থিত ছিলেন। লাইনে দাঁড়িয়ে ড. ইউনুসের সঙ্গে দেখা করতে প্রথমে ছিলেন বিল ও হিলারি ক্লিনটন। হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনুসের হাত ধরে আনন্দ প্রকাশ করলেন—এমন উচ্ছ্বাস দেখা খুব কম হয়। আমরা সবাই ছবি তুলেছিলাম, কোন প্রটোকল বাধা দেয়নি।

জাভেদ হুসেন: এরপর এলো সেই চূড়ান্ত মুহূর্ত—অসলোতে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ। আমরা তো শুধু টেলিভিশনে সেই অনুষ্ঠান দেখি। পর্দার আড়ালের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

নাসির আলী মামুন: সে এক স্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা। স্যারের এক বন্ধুর দেওয়া একটি বিশেষ বিমান ‘হামবুর্গ ইন্টারন্যাশনাল’-এ আমরা প্রায় ৭৩ জন অসলো গিয়েছিলাম, যার মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও স্যারের পরিবারের সঙ্গে একমাত্র বাইরের মানুষ ছিলাম আমি।

পুরস্কার প্রদানের আগের দিন মূল মঞ্চে একটি মহড়া হয়, যা ছিল হুবহু আসল অনুষ্ঠানের মতোই। আমি সেই মহড়ার ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলাম, যা পরদিন প্রথম আলোতে ছাপা হয় এবং এটি ছিল এক ধরনের এক্সক্লুসিভ।

নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইট থেকে
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইট থেকে

মূল অনুষ্ঠানে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের একজন সাধারণ ঋণগ্রহীতা তসলিমা বেগম ড. ইউনূসের সঙ্গে পুরস্কার গ্রহণ করলেন, তখন এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। যে নারী কোনোদিন প্লেনেই চড়েননি, তিনি রাজার সামনে দাঁড়িয়ে এত সাবলীলভাবে পুরস্কার নিলেন, যা ছিল অভাবনীয়। এটিই ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের আসল শক্তি ও সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।

পরে রাজকীয় ভোজে নরওয়ের রাজা ও রানির সঙ্গে দেখা হয়। রাজা সাধারণত এই ভোজে অংশ নেন না, কিন্তু সেবার ৭০ বছরের প্রথা ভেঙে তিনি এসেছিলেন। আমি তাঁর সঙ্গে স্যারের একটি ছবি তোলার জন্য এগিয়ে যাই এবং উত্তেজনায় ‘Your Highness’-এর বদলে তাঁকে ‘Your Excellency’ বলে ফেলি! রাজা অবশ্য হেসে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলেন।

জাভেদ হুসেন: এই দীর্ঘ যাত্রার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং বহু বছর পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। যে মানুষটিকে আপনি পুরস্কারের বিশ্বমঞ্চে দেখেছেন, তাঁকে যখন দেশের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নিতে দেখলেন, আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?

নাসির আলী মামুন: আমার কাছে এটা ছিল ইতিহাসেরই একটি স্বাভাবিক পরিণতি। ড. ইউনূস তাঁর কাজের মাধ্যমে আগেই বিশ্বনেতার আসনে ছিলেন। যখন দেশে সংকট তৈরি হলো, তখন ছাত্র-জনতা থেকে শুরু করে আপামর জনসাধারণ—সকলেই তাঁর মতো একজন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে চেয়েছিল। তিনি সেই ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমাদের নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্বের দেশের হাল ধরা—এটি বাঙালির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

জাভেদ হুসেন: নাসির আলী মামুন, আপনার এই অসাধারণ অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার ক্যামেরার মতো আপনার স্মৃতিও অমূল্য।

নাসির আলী মামুন: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত