leadT1ad

১৯৭২ থেকে ২০১৯: কেমন ছিল সেই সময়ের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসুর রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৮ বার (১৯৭৩ সালের ফলাফল স্থগিত হওয়া নির্বাচনসহ) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠন হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৮ বার। এসব নির্বাচনে কারা জয়ী হয়েছিল? কেমন ছিল সেসব নির্বাচন?

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৪৫
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১৬
স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ডাকসুর রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৮ বার (১৯৭৩ সালের ফলাফল স্থগিত হওয়া নির্বাচনসহ) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠন হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ বার হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র ৮ বার।

মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। সেবার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে। সবশেষ ডাকসু নির্বাচন হয় ২০১৯ সালে। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে নুরুল হক নুর নির্বাচিত হন সহসভাপতি (ভিপি) পদে। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন ছাত্রলীগের (অধুনা নিষিদ্ধ) গোলাম রাব্বানী।

ডাকসু নির্বাচনের অতীত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর প্রায় সব নির্বাচনে বিরোধী ছাত্রসংগঠনই সাফল্য পেয়েছে। যদিও ২০১৯ সালের নির্বাচন ছিল একমাত্র ব্যতিক্রম, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ২৩টি পদে জয়ী হয়।

১৯৭২ সালের ডাকসু নির্বাচন

মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালের ২০ মে। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় আটটি ছাত্রসংগঠন ভোটে অংশ নেয়। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে।

১৯৭২ সালের ডাকসুতে জয়ী হয় ছাত্র ইউনিয়ন। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
১৯৭২ সালের ডাকসুতে জয়ী হয় ছাত্র ইউনিয়ন। ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

ভোটার তালিকায় ছিল প্রায় ৯ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেয়। তবে নীতিগত দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়ায় বড় ধাক্কা খায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। বিপুল ব্যবধানে জয় পায় ছাত্র ইউনিয়ন।

ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদেও জয়ী হন একই সংগঠনের মাহবুব জামান।

ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন হলে। এ নিয়ে দুই প্রতিপক্ষ একে অপরকে দায়ী করে।

অন্যদিকে, ছাত্রলীগের দুটি অংশের মধ্যে শহীদ-মনির পরিষদ (শেখ শহীদুল ইসলাম ও মনিরুল হক চৌধুরী) একটিও পদে জয় পায়নি। আর শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন সিরাজপন্থী ছাত্রলীগের জিনাত-মোয়াজ্জেম প্যানেল (জিনাত আলী ও মোয়াজ্জেম হোসেন) ডাকসুর একটি সদস্যপদে নির্বাচিত হয়।

১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচন (ফলাফল স্থগিত)

পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। তবে ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হলেও শেষ পর্যন্ত ফল ঘোষণা হয়নি।

১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছবি: ৪ সেপ্টেম্বরের ‘আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নেওয়া
১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছবি: ৪ সেপ্টেম্বরের ‘আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নেওয়া

১৯৭২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নতুন কৌশল নিয়েছিল। তারা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যৌথভাবে জোট গঠন করে। এই জোটের প্যানেলে ভিপি পদে প্রার্থী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নূহ-উল-আলম লেনিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন ছাত্রলীগের ইসমত কাদির গামা।

অন্যদিকে, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাসদ ছাত্রলীগ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) আলাদা প্যানেল গঠন করে। তাদের ভিপি প্রার্থী ছিলেন মাহবুবুল হক এবং জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জহুরুল ইসলাম।

ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বিভিন্ন হলে। এ নিয়ে দুই প্রতিপক্ষ একে অপরকে দায়ী করে।

১৯৭৯ সালের ডাকসু নির্বাচন

বেশ কয়েক বছর বিরতির পর ১৯৭৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে কোনো পদেই তারা জয়ী হতে পারেনি।

১৯৭৯ সালের ডাকসু নির্বাচন। সংগৃহীত ছবি
১৯৭৯ সালের ডাকসু নির্বাচন। সংগৃহীত ছবি

এর আগে স্থগিত হওয়া নির্বাচনে একসঙ্গে থাকলেও এবার আলাদাভাবে মাঠে নামে ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। ডাকসুর ১৯টি পদে প্রার্থী হন মোট ৩৫৫ জন। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদেও প্রার্থী হন সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী। পাশাপাশি ১১টি হল সংসদে প্রার্থী ছিলেন প্রায় এক হাজার।

এই নির্বাচনে ৩ হাজার ২৩৭ ভোট পেয়ে ভিপি নির্বাচিত হন জাসদ ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না। একই প্যানেলের আখতারুজ্জামান ২ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ডাকসুর ১৯টির মধ্যে ১৫টি পদে জয় পায় তাদের প্যানেল।

এদিকে, হল সংসদ নির্বাচনে মোট ১৫১টির মধ্যে মান্না-সমর্থিত জাসদ ছাত্রলীগ জয় পায় ৮৯ পদে। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ (কাদের চুন্নু) জয়ী হয় মাত্র চারটি পদে। ভিপি পদে নিকটতম প্রার্থী ছাত্রলীগের ওবায়দুল কাদের (বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) পান ১ হাজার ৯৫৫ ভোট। ছাত্র ইউনিয়নের আকরাম হোসেন পান ১ হাজার ৭৩ ভোট এবং জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের পান ৭৫২ ভোট।

ভোটগ্রহণ চলে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। হল সংসদের ভোট গণনা হয় সংশ্লিষ্ট হলে এবং ডাকসুর গণনা সম্পন্ন হয় কলাভবনে।

এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় আগেরবারের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ছাত্র ইউনিয়ন। ডাকসুতে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে মান্না-সমর্থিত জাসদ ছাত্রলীগ।

১৯৮০ সালের ডাকসু নির্বাচন

স্বাধীনতার পর চতুর্থ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালের ১১ নভেম্বর। এই নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন আখতারুজ্জামান। আগের নির্বাচনে তাঁরা ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের প্রার্থী, তবে এবার অংশ নেন নবগঠিত বাসদ ছাত্রলীগের ব্যানারে।

১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালের ডাকসুতে ভিপি পদে জয়ী হন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবিতে ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় মান্না। সংগৃহীত ছবি
১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালের ডাকসুতে ভিপি পদে জয়ী হন মাহমুদুর রহমান মান্না। ছবিতে ১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় মান্না। সংগৃহীত ছবি

১৯৮০ সালের ৭ নভেম্বর জাসদের একাংশ আলাদা হয়ে গঠন করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। মান্না ও আখতারুজ্জামান তখন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত হন এবং ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বাসদ)-এর নেতৃত্বের দায়িত্ব পান মান্না।

ভোটের ফলাফলে ভিপি পদে মান্না পান ৪ হাজার ৪৩১ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের ওবায়দুল কাদের, যিনি পান ২ হাজার ৫৬৫ ভোট। অন্যদিকে ছাত্র শিবিরের আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের পান ৮৩৬ ভোট, ছাত্রদলের গোলাম সারোয়ার মিলন পান ৭৩৭ ভোট, জাসদ ছাত্রলীগের মুনির উদ্দিন পান ৭২২ ভোট এবং ছাত্র ইউনিয়নের আনোয়ার উদ্দিন পান ৬০৯ ভোট।

জিএস পদে জয়ী হন আখতারুজ্জামান। তিনি পান ৩ হাজার ১৮০ ভোট। খুব কাছাকাছি লড়াইয়ে ছাত্রলীগের বাহালুল মজনুন চুন্নু পান ৩ হাজার ২৩ ভোট। এছাড়া ছাত্রদলের এম এ কামাল পান ১ হাজার ১৪৪ ভোট, ছাত্র ইউনিয়নের মাহবুবুল মোকাদ্দেম আকাশ পান ৯৩৮ ভোট, শিবিরের আব্দুল কাদের বাচ্চু পান ৯০৮ ভোট এবং জাসদ ছাত্রলীগের এম এ হান্নান ফিরোজ পান ৭৪২ ভোট।

১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনের সময় টিএসসি এলাকা। ফেসবুক থেকে নেওয়া
১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনের সময় টিএসসি এলাকা। ফেসবুক থেকে নেওয়া

ডাকসুর ১৯টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে লড়েন ২৮ জন এবং জিএস পদে ২৫ জন। তালিকাভুক্ত ভোটার ছিলেন ১৬ হাজার ৫০ জন।

এই নির্বাচনে ডাকসুতে মান্না-আখতারুজ্জামান প্যানেল ছয়টি পদে জয়ী হয়। তবে বড় পরিবর্তন আসে হল সংসদে। প্রথমবারের মতো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সেখানে আসন পায়। ১১টি হলে মোট ১৩২টির মধ্যে তারা জয়ী হয় ২১টিতে। এর মধ্যে ফজলুল হক, শহীদুল্লাহ ও জসীমউদ্দীন হলে ভিপি পদে এবং মুহসীন ও রোকেয়া হলে জিএস পদে জয় পায় তারা। যদিও ডাকসুতে গোলাম সারোয়ার মিলন ও এম এ কামালের নেতৃত্বে লড়ে কোনো পদ পায়নি ছাত্রদল। তবে হল সংসদে নতুন শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তারা।

১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচন

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর এক বছরের ব্যবধানে ১৯৮২ সালের ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন।

সেবারের নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে জয় পান মান্না-সমর্থিত বাসদ ছাত্রলীগের আখতারুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচিত হন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ছাত্রদলের গোলাম সারোয়ার মিলন ও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন প্যানেল হল সংসদে শক্ত অবস্থান তৈরি করে। ১১টি হল সংসদে মোট ১৩২ আসনের মধ্যে ছাত্রদল জয় পায় ৬৫টিতে।

১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদের ফলাফল। আনন্দপত্র (১৯৮৮), ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদের ফলাফল। আনন্দপত্র (১৯৮৮), ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি

এই নির্বাচনের পরিবেশ ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ও সহিংস। ১১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হলেও ভোটের আগের রাতের ঘটনায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশ অবজারভার-এর খবরে বলা হয়, গতকাল (২১ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টার দিকে স্যার এ এফ রহমান হলে মিছিল করার সময় হলের ভেতর থেকে ছোড়া দুটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে ২৪ জন আহত হন। ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পাসে কড়া পুলিশি পাহারা বসানো হয়।

এতেই শেষ হয়নি সহিংসতা। পরদিন ২২ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে কলাভবন এলাকায় আরও সাতটি গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার মধ্যেই পরদিন ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৮৯ সালের ডাকসু নির্বাচন

দীর্ঘ সাত বছর বিরতির পর ১৯৮৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। সেই নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।

ছাত্রদলের প্রভাব ঠেকাতে একত্রিত হয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, বাসদ ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্রলীগ (মু-না) এবং ছাত্রলীগ (সু-র) মিলে গঠন করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

১৯৮৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ছবি: এ কে এম মহসিন
১৯৮৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ছবি: এ কে এম মহসিন

ফলাফলে দেখা যায়, ডাকসুর সব পদে জয় পায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ভিপি নির্বাচিত হন মনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন জাসদ ছাত্রলীগের মুশতাক হোসেন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন ছাত্র ইউনিয়নের নাসির। অপরদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রদলের শামসুজ্জামান দুদু ও আসাদুজ্জামান রিপন।

তবে ভোটের ফল ঘোষণার সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জাসদ ছাত্রলীগের কর্মী কফিল উদ্দিন (২৫)।

১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচন

১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। সেবার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ২৭ হাজার। প্রচারণায় ছাত্রদল সামনে আনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অঙ্গীকার, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাড়া ফেলে।

প্রায় ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে নুরুল হক নুর।

এই নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন খায়রুল কবির খোকন। বরাবরের মতোই ডাকসুতে জয়ী ছাত্রসংগঠনের মূল দল তখন ক্ষমতায় ছিল না।

১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের মিছিল। ছবি: এ কে এম মহসিন
১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের মিছিল। ছবি: এ কে এম মহসিন

ফলাফলে দেখা যায়, ডাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ১৮৮ আসনের মধ্যে ১৫১টিতেই বিজয়ী হয় ছাত্রদল। তবে পুরোপুরি একপেশে হয়নি নির্বাচন। ছাত্রলীগের শাহে আলম ও কামরুল আহসানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল দুটি হলে পূর্ণ প্যানেলে জয় পায়। অন্যদিকে রোকেয়া, শামসুন্নাহার ও এ এফ রহমান হলে সাতটি পদ দখল করে ছাত্র ইউনিয়ন।

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন

প্রায় ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে নুরুল হক নুর। তিনি বর্তমানে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি।

২০১৯ সালে ডাকসুতে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী হন ছাত্রলীগের (বর্তমান সভাপতি) সাদ্দাম হোসেন।

২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন নুরুল হোক নুর। সংগৃহীত ছবি
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন নুরুল হোক নুর। সংগৃহীত ছবি

নুরুল হক নুর ভিপি পদে ১১ হাজার ৬২টি ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পান ৯ হাজার একশ ২৯টি ভোট। জিএস পদে গোলাম রাব্বানী ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট পান। এজিএস পদে সাদ্দাম হোসেন ১৫ হাজার ৩০১ ভোট পান।

মোট ২৫টি পদে ভোটগ্রহণ হয়। একমাত্র ভিপি এবং সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদ ছাড়া বাকী ২৩টি পদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হন। সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়া আখতার হোসেন তখন ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রার্থী ছিলেন। তিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব।

Ad 300x250

‘মুজিবপিডিয়া’ কি আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী বয়ান তৈরির উপাদান, ইতিহাস কী বলে

কিশোরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারে দুই যুবদল নেতার সংঘর্ষ, নিহত ১, প্রতিপক্ষের বাড়িতে আগুন

পেহেলগাম থেকে মুজাফফরাবাদ: গুলি ও মিমের আড়ালে ন্যারেটিভের লড়াই

জুলাই সনদ পর্যালোচনা করে মতামত দিয়েছে বিএনপি, এনসিপিসহ ২৩ দল

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা করেও সমস্যার সমাধান হবে না

সম্পর্কিত