স্ট্রিম ডেস্ক
মোবাইলের স্ক্রিনে টাচ দিয়ে শুরু, তারপর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে টাকা, সময়, মনোযোগ- শেষে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণও। অনলাইন জুয়া শুধু খেলার নাম নয়, এটি এক কৌশলী ফাঁদ, যা মস্তিষ্কের দুর্বলতা ব্যবহার করে আমাদের আসক্ত করে তোলে। কীভাবে কাজ করে এই জুয়ার মাধ্যম, তা নিয়ে লিখেছেন সৈকত আমীন
২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা যখন বিশ্বসেরা হওয়ার উল্লাসে মাতোয়ারা, তখন আরেকটি শিল্প চুপিসারে সেই ট্রফির পাশে নিজের বিজয়ের পতাকা গেড়ে দেয়। শিল্পটি জুয়ার। সেইদিন বিশ্বজুড়ে খেলা দেখতে বসে মানুষ বাজি ধরে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এটিই হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের সর্বাধিক বাজি ধরা কোনো খেলার আসর।
প্রযুক্তির হাত ধরে জুয়া আজ এক আঙুলের ছোঁয়ায় পৌঁছে গেছে কোটি কোটি মানুষের পকেটে। মোবাইল অ্যাপে ক্লিক করেই এখন বাজি ধরা যায় যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে। সাধারণত এই ক্লিকের খেলায় সবচেয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে তরুণরা।
তবে প্রশ্ন উঠছে- কেন এই ঝোঁক? কেন মানুষ এত হারার পরও থামে না?
মস্তিষ্কের ভেতরে এক গোপন খেলা
বিজ্ঞান বলছে, জুয়ায় ঝোঁকের মূলে আছে আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেম। যখন আমরা কোনো আনন্দদায়ক কিছু করি বা পুরস্কার পাই, তখন ডোপামিন নামে এক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়- যা আমাদের আনন্দ দেয়। কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, যখন আমরা জানি না পুরস্কার মিলবে কি না- তখন এই ডোপামিন আরও বেশি নিঃসৃত হয়।
এটাই জুয়ার জাদু। জয় আসবে কি না, তা জানার আগেই উত্তেজনায় ভরে যায় মন। হারলেও আবার বাজি ধরার টান আসে, কারণ একদিন না একদিন তো আসবেই সেই কাঙ্ক্ষিত 'জয়'। এই অনিশ্চয়তা, এই সম্ভাবনার উত্তেজনাই মানুষকে বারবার ফিরিয়ে আনে বেটিং অ্যাপে, ক্যাসিনোর গেমে।
জেতা না জেতার মাঝখানের ফাঁদ
আপনি ভাবছেন, দুইটা ভালো চাল এসেছে, তৃতীয়টাও আসবে। কিন্তু এলো না। জয় হয়নি, কিন্তু মনে হলো প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন। এটাকেই বলে 'নিয়ার-মিস'। গবেষণায় দেখা গেছে, এই অনুভবও মস্তিষ্কে জয়ের মতোই উত্তেজনা তৈরি করে। অনেক স্লট মেশিন ইচ্ছা করেই এই পরিস্থিতি ঘন ঘন তৈরি করে।
স্পোর্টস বেটিং অ্যাপেও রয়েছে এমন ফাঁদ। 'পারলে' বেটের মতো ব্যবস্থায় একসাথে অনেকগুলো ইভেন্টে বাজি ধরা হয়। একটিতে হারলেই সব হার, অথচ আপনি হয়তো বাকি সব জিতেই গিয়েছিলেন! এটা একটা সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক খেলা- যেখানে হেরে গেলেও মনে হয়, 'আরেকবার চেষ্টা করলে জিততাম'।
ইন-প্লে বেটিং আর ‘ডার্ক ফ্লো’র জাল
খেলার মধ্যেই বাজি ধরার সুযোগ- যাকে বলে ইন-প্লে বেটিং- জুয়া খেলায় এনেছে নতুন মাত্রা। আপনি খেলা দেখছেন, হঠাৎ মনে হলো এখনি গোল হবে, বাজি ধরে দিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর ফলাফল। আবার পরের মুহূর্তে নতুন বেট।
এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এক ধরনের মানসিক ঘোর। যার নাম 'ডার্ক ফ্লো'। মানুষ এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়েন খেলায়, যে থেমে যাওয়ার চেয়ে চালিয়ে যাওয়াটাই সহজ মনে হয়।
কৌশল ও ভিডিও গেমের ফাঁদ
কৈশোর ও যৌবনের সময় মস্তিষ্কের ডোপামিন রিসেপ্টর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে এই বয়সীরা সহজেই জুয়ার আসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও অধিকাংশ দেশে জুয়া খেলার বৈধ বয়স ১৮ বা তার বেশি। সেই একই মনস্তাত্ত্বিক কৌশল এখন ঢুকে পড়েছে ভিডিও গেমের দুনিয়ায়।
বিশ্বব্যাপী জুয়ার প্লাটফর্মগুলো প্রতি বছর আয় করে শত শত বিলিয়ন ডলার। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই আয়ের ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আসে এমন তরুণ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে যারা জুয়ায় আসক্ত।
মানুষের মস্তিষ্কের দুর্বলতা জানে এই প্লাটফর্মগুলো। জানে কীভাবে অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা, আর সময়ের ফাঁদে আটকে রাখতে হয় একজন ব্যবহারকারীকে।
আজকের খেলাধুলা শুধু মাঠেই হয় না। আরেকটা খেলা চলে মস্তিষ্কের ভেতরে। সেই খেলায় পা রাখার আগে ভেবে দেখুন- আপনি কি খেলছেন, নাকি খেলাচ্ছেন?
মোবাইলের স্ক্রিনে টাচ দিয়ে শুরু, তারপর ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে টাকা, সময়, মনোযোগ- শেষে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণও। অনলাইন জুয়া শুধু খেলার নাম নয়, এটি এক কৌশলী ফাঁদ, যা মস্তিষ্কের দুর্বলতা ব্যবহার করে আমাদের আসক্ত করে তোলে। কীভাবে কাজ করে এই জুয়ার মাধ্যম, তা নিয়ে লিখেছেন সৈকত আমীন
২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা যখন বিশ্বসেরা হওয়ার উল্লাসে মাতোয়ারা, তখন আরেকটি শিল্প চুপিসারে সেই ট্রফির পাশে নিজের বিজয়ের পতাকা গেড়ে দেয়। শিল্পটি জুয়ার। সেইদিন বিশ্বজুড়ে খেলা দেখতে বসে মানুষ বাজি ধরে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এটিই হয়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের সর্বাধিক বাজি ধরা কোনো খেলার আসর।
প্রযুক্তির হাত ধরে জুয়া আজ এক আঙুলের ছোঁয়ায় পৌঁছে গেছে কোটি কোটি মানুষের পকেটে। মোবাইল অ্যাপে ক্লিক করেই এখন বাজি ধরা যায় যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে। সাধারণত এই ক্লিকের খেলায় সবচেয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে তরুণরা।
তবে প্রশ্ন উঠছে- কেন এই ঝোঁক? কেন মানুষ এত হারার পরও থামে না?
মস্তিষ্কের ভেতরে এক গোপন খেলা
বিজ্ঞান বলছে, জুয়ায় ঝোঁকের মূলে আছে আমাদের মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেম। যখন আমরা কোনো আনন্দদায়ক কিছু করি বা পুরস্কার পাই, তখন ডোপামিন নামে এক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়- যা আমাদের আনন্দ দেয়। কিন্তু চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, যখন আমরা জানি না পুরস্কার মিলবে কি না- তখন এই ডোপামিন আরও বেশি নিঃসৃত হয়।
এটাই জুয়ার জাদু। জয় আসবে কি না, তা জানার আগেই উত্তেজনায় ভরে যায় মন। হারলেও আবার বাজি ধরার টান আসে, কারণ একদিন না একদিন তো আসবেই সেই কাঙ্ক্ষিত 'জয়'। এই অনিশ্চয়তা, এই সম্ভাবনার উত্তেজনাই মানুষকে বারবার ফিরিয়ে আনে বেটিং অ্যাপে, ক্যাসিনোর গেমে।
জেতা না জেতার মাঝখানের ফাঁদ
আপনি ভাবছেন, দুইটা ভালো চাল এসেছে, তৃতীয়টাও আসবে। কিন্তু এলো না। জয় হয়নি, কিন্তু মনে হলো প্রায় জিতেই গিয়েছিলেন। এটাকেই বলে 'নিয়ার-মিস'। গবেষণায় দেখা গেছে, এই অনুভবও মস্তিষ্কে জয়ের মতোই উত্তেজনা তৈরি করে। অনেক স্লট মেশিন ইচ্ছা করেই এই পরিস্থিতি ঘন ঘন তৈরি করে।
স্পোর্টস বেটিং অ্যাপেও রয়েছে এমন ফাঁদ। 'পারলে' বেটের মতো ব্যবস্থায় একসাথে অনেকগুলো ইভেন্টে বাজি ধরা হয়। একটিতে হারলেই সব হার, অথচ আপনি হয়তো বাকি সব জিতেই গিয়েছিলেন! এটা একটা সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক খেলা- যেখানে হেরে গেলেও মনে হয়, 'আরেকবার চেষ্টা করলে জিততাম'।
ইন-প্লে বেটিং আর ‘ডার্ক ফ্লো’র জাল
খেলার মধ্যেই বাজি ধরার সুযোগ- যাকে বলে ইন-প্লে বেটিং- জুয়া খেলায় এনেছে নতুন মাত্রা। আপনি খেলা দেখছেন, হঠাৎ মনে হলো এখনি গোল হবে, বাজি ধরে দিলেন। কয়েক সেকেন্ড পর ফলাফল। আবার পরের মুহূর্তে নতুন বেট।
এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এক ধরনের মানসিক ঘোর। যার নাম 'ডার্ক ফ্লো'। মানুষ এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়েন খেলায়, যে থেমে যাওয়ার চেয়ে চালিয়ে যাওয়াটাই সহজ মনে হয়।
কৌশল ও ভিডিও গেমের ফাঁদ
কৈশোর ও যৌবনের সময় মস্তিষ্কের ডোপামিন রিসেপ্টর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। ফলে এই বয়সীরা সহজেই জুয়ার আসক্তিতে জড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও অধিকাংশ দেশে জুয়া খেলার বৈধ বয়স ১৮ বা তার বেশি। সেই একই মনস্তাত্ত্বিক কৌশল এখন ঢুকে পড়েছে ভিডিও গেমের দুনিয়ায়।
বিশ্বব্যাপী জুয়ার প্লাটফর্মগুলো প্রতি বছর আয় করে শত শত বিলিয়ন ডলার। আশঙ্কার বিষয় হলো, এই আয়ের ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আসে এমন তরুণ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে যারা জুয়ায় আসক্ত।
মানুষের মস্তিষ্কের দুর্বলতা জানে এই প্লাটফর্মগুলো। জানে কীভাবে অনিশ্চয়তা, উত্তেজনা, আর সময়ের ফাঁদে আটকে রাখতে হয় একজন ব্যবহারকারীকে।
আজকের খেলাধুলা শুধু মাঠেই হয় না। আরেকটা খেলা চলে মস্তিষ্কের ভেতরে। সেই খেলায় পা রাখার আগে ভেবে দেখুন- আপনি কি খেলছেন, নাকি খেলাচ্ছেন?
সোশ্যাল মিডিয়া আসার পর থেকেই বলা হচ্ছে, এই প্রজন্মের ধৈর্য কমে গেছে। কোনো ছেলে-মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উত্তর আশা করে। যদি উত্তর না পায়, তাহলে তার ভেতরে নানা চিন্তার উদ্রেক হয়।
৬ ঘণ্টা আগেমায়া সভ্যতার অন্যতম প্রধান নগরীর নাম চিচেন ইৎজা। পৃথিবীর নতুন সাত আশ্চর্যের একটি হিসেবে খ্যাত এই স্থানে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণ করেন। চিচেন ইৎজা ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত এবং ২০০৭ সালে এটি বিশ্বের নতুন সাত আশ্চর্যের মধ্যে স্থান পায়।
১ দিন আগেসমাজের প্রচলিত ধারণা এমন, মেয়েরা প্রচুর গসিপ করে আর ‘ব্যাটামানুষ’-রা গসিপের নাম শুনলেই ভ্রু কুঁচকায়। সেলিব্রেটি বা তারকাদের নিয়ে আমাদের সমাজের গসিপ এবং তার মেজাজটি কেমন? শাকিব-বুবলী-অপু গসিপের টর্নেডোর বাতাস কতটা আপনার গায়ে লেগেছে?
৩ দিন আগেসম্প্রতি মাহফুজ আলম থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের সংবাদমাধ্যম ‘কনটেক্সট নিউজ’-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি জুলাই অভ্যুত্থানসহ নানান বিষয়ে কথা বলেছেন। মো. তাহমিদ জামি’র নেওয়া সাক্ষাৎকারটি স্ট্রিম পাঠকদের জন্য অনূদিত হল।
৪ দিন আগে