স্ট্রিম ডেস্ক
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের অভাব ছিল না, ছিল এক রাজনৈতিক ব্যর্থতার নির্মম বহিঃপ্রকাশ। আর সেই ট্র্যাজেডিকে তুলির আঁচড়ে ইতিহাসে অমর করে তুলেছিলেন জয়নুল আবেদিন। আজ এই শিল্পীর মৃত্যুদিন। তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন শতাব্দীকা ঊর্মি
শিল্পের ক্যানভাসে যখন রঙের বাহারেই থাকে শিল্পীর অস্তিত্ব, সেখানে জয়নুল বলেন এক ধূসর বাস্তবতার কথা। ক্ষুধা কেবল পেটের নয়—ক্ষুধা কখনো কখনো সমবেত আত্মার চিৎকার, যেন এই যন্ত্রণারই দৃশ্যরূপ মেলে জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষচিত্রে। ছেঁড়া কাগজে কালো কালিতে আঁকা রেখাগুলো যেন রেখা নয়—এ এক জাতির মৃতপ্রায় আত্মার কান্না, যার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর অনন্য শিল্পকর্ম। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের অভাব ছিল না, ছিল এক রাজনৈতিক ব্যর্থতার নির্মম বহিঃপ্রকাশ। আর সেই ট্র্যাজেডিকে যিনি তুলির আঁচড়ে ইতিহাসে অমর করে তুললেন, তিনি জয়নুল আবেদিন।
জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষচিত্রে এমন কোনো রঙের বাহার নেই, কিন্তু তাতে আছে চোখে ঝাঁপসা হয়ে যাওয়ার মতো আবেগ। তাঁর রেখাগুলি কাঁপে না, বরং দৃঢ়, গভীর ও নির্লিপ্ত। এই নির্লিপ্ততাই চিৎকার করে ওঠে।
জয়নুল মানুষকে কাঁদতে শেখাননি। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কেমন হয় জীবন যখন কাঁদারও শক্তি থাকে না।তাঁর চিত্রে কেবল ক্ষুধা নয়—আছে লজ্জা, ঘৃণা, ব্যর্থতা, এবং জাতিগত অপরাধবোধ। জাতি হিসেবে আমরা কীভাবে এই লজ্জা বহন করব, সেই প্রশ্ন রেখেছেন শিল্পাচার্য।
১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। অথচ ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশে শুরু হলো এক ভয়াবহ অধ্যায়—দুর্ভিক্ষ। খাদ্যশস্যের অভাব, যুদ্ধের প্রভাব এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের নিষ্ঠুর অবহেলার ফলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। মৃতদেহ পড়ে থাকে রাস্তায়, ক্ষুধার্ত শিশু মায়ের লাশ ধরে কাঁদে, মানুষ কুকুরের খাবার খোঁজে ডাস্টবিনে।
এই বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই নিশ্চুপ ছিলেন, কিন্তু একজন মানুষ তাঁর চোখের সামনে দেখা সত্যকে তুলির রেখায় চিরকালীন করে তুললেন। তিনি জয়নুল আবেদিন—বাংলাদেশের শিল্পাচার্য।
জয়নুল আবেদিন তখন কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলের ছাত্র। তথাকথিত রূপবাদের বাইরে গিয়ে তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। দুর্ভিক্ষের বাস্তবতাকে সরাসরি ক্যানভাসে তুলে ধরার। তিনি বেছে নেন ছেঁড়া সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় চা-পাতার রঙ এবং কালি দিয়ে কাজ করা—যেন রঙ নয়, জীবনচিত্রই হোক মূল ভাষা।
এই সময়কার আঁকা প্রায় ৬০টি স্কেচ আজ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। প্রতিটি রেখাচিত্রে ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব, ভয়, ক্ষুধা আর মৃত্যুর অগ্রাহ্য আর্তি।
তাঁর একটি চিত্রে দেখা যায়, এক মা তার মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছে, আরেকটি স্কেচে দুই কঙ্কালসার শিশু মাটিতে পড়ে আছে মুখ গুঁজে। এসব চিত্র চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, শুধু সৌন্দর্য নয়—মানবতার গভীর সত্যই শিল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষচিত্র কেবল ঐতিহাসিক নথি নয়, একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ। ব্রিটিশ শাসনের নিষ্ঠুর অব্যবস্থাপনা, খাদ্য মজুদের অভাব, এবং যুদ্ধের নামে উপনিবেশিক শোষণের পরিণতি ছিল এই দুর্ভিক্ষ। জয়নুল সেই শোষণেরই দলিল তৈরি করেন তাঁর স্কেচে।
তাঁর শিল্প ‘মিউজিয়ামের জন্য’ নয়, ছিল ‘মানুষের জন্য’। আর্ট ফর দ্য পিপল অর্থ্যাৎ মানুষের জন্য শিল্প—এই দর্শনেই তিনি বিশ্বাস করতেন। এই শিল্প একধরনের প্রতিবাদ—যা একদিকে বাস্তবের নির্মমতা তুলে ধরেছে, অন্যদিকে শিল্পকে এনে দিয়েছে মানবিক দায়বদ্ধতার গভীরতা।
কিন্তু তাঁর শিল্পের শেকড় গাঁথা সেই দুর্ভিক্ষচিত্রেই। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে বাস্তবতাই শিল্পের সবচেয়ে বড় রসদ। তাঁর সেই দুর্ভিক্ষচিত্রগুলো আজও মনে করিয়ে দেয়—শিল্পী কখনও কেবল রূপের কারিগর নন, তিনি ইতিহাসের বিবেকও।
আজ যখন শিল্পকে বলা হয় ‘সুন্দর’, তখন জয়নুল মনে করিয়ে দেন—সুন্দর মানে কেবল মুগ্ধতা নয়, কখনো কখনো তা অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি হওয়াও।
আর সেই সত্যের রূঢ় রেখাগুলোই ছাপ রেখে গেছে বাংলার শিল্প ও ইতিহাসের হৃদয়ে—অমোচনীয়ভাবে।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের অভাব ছিল না, ছিল এক রাজনৈতিক ব্যর্থতার নির্মম বহিঃপ্রকাশ। আর সেই ট্র্যাজেডিকে তুলির আঁচড়ে ইতিহাসে অমর করে তুলেছিলেন জয়নুল আবেদিন। আজ এই শিল্পীর মৃত্যুদিন। তাঁকে স্মরণ করে লিখেছেন শতাব্দীকা ঊর্মি
শিল্পের ক্যানভাসে যখন রঙের বাহারেই থাকে শিল্পীর অস্তিত্ব, সেখানে জয়নুল বলেন এক ধূসর বাস্তবতার কথা। ক্ষুধা কেবল পেটের নয়—ক্ষুধা কখনো কখনো সমবেত আত্মার চিৎকার, যেন এই যন্ত্রণারই দৃশ্যরূপ মেলে জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষচিত্রে। ছেঁড়া কাগজে কালো কালিতে আঁকা রেখাগুলো যেন রেখা নয়—এ এক জাতির মৃতপ্রায় আত্মার কান্না, যার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর অনন্য শিল্পকর্ম। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের অভাব ছিল না, ছিল এক রাজনৈতিক ব্যর্থতার নির্মম বহিঃপ্রকাশ। আর সেই ট্র্যাজেডিকে যিনি তুলির আঁচড়ে ইতিহাসে অমর করে তুললেন, তিনি জয়নুল আবেদিন।
জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষচিত্রে এমন কোনো রঙের বাহার নেই, কিন্তু তাতে আছে চোখে ঝাঁপসা হয়ে যাওয়ার মতো আবেগ। তাঁর রেখাগুলি কাঁপে না, বরং দৃঢ়, গভীর ও নির্লিপ্ত। এই নির্লিপ্ততাই চিৎকার করে ওঠে।
জয়নুল মানুষকে কাঁদতে শেখাননি। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কেমন হয় জীবন যখন কাঁদারও শক্তি থাকে না।তাঁর চিত্রে কেবল ক্ষুধা নয়—আছে লজ্জা, ঘৃণা, ব্যর্থতা, এবং জাতিগত অপরাধবোধ। জাতি হিসেবে আমরা কীভাবে এই লজ্জা বহন করব, সেই প্রশ্ন রেখেছেন শিল্পাচার্য।
১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। অথচ ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশে শুরু হলো এক ভয়াবহ অধ্যায়—দুর্ভিক্ষ। খাদ্যশস্যের অভাব, যুদ্ধের প্রভাব এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের নিষ্ঠুর অবহেলার ফলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। মৃতদেহ পড়ে থাকে রাস্তায়, ক্ষুধার্ত শিশু মায়ের লাশ ধরে কাঁদে, মানুষ কুকুরের খাবার খোঁজে ডাস্টবিনে।
এই বিভীষিকার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই নিশ্চুপ ছিলেন, কিন্তু একজন মানুষ তাঁর চোখের সামনে দেখা সত্যকে তুলির রেখায় চিরকালীন করে তুললেন। তিনি জয়নুল আবেদিন—বাংলাদেশের শিল্পাচার্য।
জয়নুল আবেদিন তখন কলকাতা গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলের ছাত্র। তথাকথিত রূপবাদের বাইরে গিয়ে তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। দুর্ভিক্ষের বাস্তবতাকে সরাসরি ক্যানভাসে তুলে ধরার। তিনি বেছে নেন ছেঁড়া সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় চা-পাতার রঙ এবং কালি দিয়ে কাজ করা—যেন রঙ নয়, জীবনচিত্রই হোক মূল ভাষা।
এই সময়কার আঁকা প্রায় ৬০টি স্কেচ আজ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ। প্রতিটি রেখাচিত্রে ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব, ভয়, ক্ষুধা আর মৃত্যুর অগ্রাহ্য আর্তি।
তাঁর একটি চিত্রে দেখা যায়, এক মা তার মৃত সন্তানকে কোলে নিয়ে বসে আছে, আরেকটি স্কেচে দুই কঙ্কালসার শিশু মাটিতে পড়ে আছে মুখ গুঁজে। এসব চিত্র চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, শুধু সৌন্দর্য নয়—মানবতার গভীর সত্যই শিল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
জয়নুল আবেদিনের দুর্ভিক্ষচিত্র কেবল ঐতিহাসিক নথি নয়, একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ। ব্রিটিশ শাসনের নিষ্ঠুর অব্যবস্থাপনা, খাদ্য মজুদের অভাব, এবং যুদ্ধের নামে উপনিবেশিক শোষণের পরিণতি ছিল এই দুর্ভিক্ষ। জয়নুল সেই শোষণেরই দলিল তৈরি করেন তাঁর স্কেচে।
তাঁর শিল্প ‘মিউজিয়ামের জন্য’ নয়, ছিল ‘মানুষের জন্য’। আর্ট ফর দ্য পিপল অর্থ্যাৎ মানুষের জন্য শিল্প—এই দর্শনেই তিনি বিশ্বাস করতেন। এই শিল্প একধরনের প্রতিবাদ—যা একদিকে বাস্তবের নির্মমতা তুলে ধরেছে, অন্যদিকে শিল্পকে এনে দিয়েছে মানবিক দায়বদ্ধতার গভীরতা।
কিন্তু তাঁর শিল্পের শেকড় গাঁথা সেই দুর্ভিক্ষচিত্রেই। সেখানে তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে বাস্তবতাই শিল্পের সবচেয়ে বড় রসদ। তাঁর সেই দুর্ভিক্ষচিত্রগুলো আজও মনে করিয়ে দেয়—শিল্পী কখনও কেবল রূপের কারিগর নন, তিনি ইতিহাসের বিবেকও।
আজ যখন শিল্পকে বলা হয় ‘সুন্দর’, তখন জয়নুল মনে করিয়ে দেন—সুন্দর মানে কেবল মুগ্ধতা নয়, কখনো কখনো তা অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি হওয়াও।
আর সেই সত্যের রূঢ় রেখাগুলোই ছাপ রেখে গেছে বাংলার শিল্প ও ইতিহাসের হৃদয়ে—অমোচনীয়ভাবে।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র স্মরণে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘প্রিয় আননোন থার্টি ওয়াই’। গত শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে হয়ে গেল সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো। কী দেখিয়েছে সিনেমাটি?
১ দিন আগেশাফিন আহমেদের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলা গান এখনো তাঁকে হারানোর ব্যথা ভুলতে পারেনি। সংগীতপ্রেমীরা টের পাচ্ছেন তাঁর শূন্যতা। আজ আমরা ফিরে তাকাতে চাই ১৮ বছরের এক তরুণ শাফিন আহমেদের দিকে। কীভাবে তিনি ‘মাইলস’ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন—শুরুর সেই ঘটনা আজ মনে করতে চাই।
২ দিন আগেএকটি দেশের পোশাকের সঙ্গে রয়েছে সে দেশের পরিবেশ ও আবহাওয়ার সম্পর্ক। কেননা, পোশাকেরও রয়েছে সংস্কৃতি ও ইতিহাস। আছে রাজনীতি। তা ছাড়া বলা দরকার, কোনো দেশের পোশাক কেমন হবে, তা ওই দেশের আবহাওয়ার ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
৩ দিন আগে‘তুমি যে আমার’, ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশ’, ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’, ‘বাবুজি ধীরে চল না’—এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়িকা গীতা দত্ত ছিলেন ভারতের নারী ‘সিংগিং-সুপারস্টার’। তবে অনেকেই জানেন না, এই কালজয়ী শিল্পী জন্মেছিলেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে।
৪ দিন আগে