লেবানন থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহার
এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউনিফিলে থাকা বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের ১০ হাজার ৮ শর বেশি শান্তিরক্ষীকে স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
সালেহ ফুয়াদ
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। আগামী বছরের শেষ নাগাদ শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নেবে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের চাপের মুখে নেওয়া এ সিদ্ধান্তকে অনেকে দেখছেন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বাস্তবায়নের নতুন অগ্রগতি হিসেবে।
শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রায় পাঁচ দশক পর গত ২৮ আগস্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্তটি এমন সময় নিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সরকারের সঙ্গে মিলে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা করছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউনিফিলে থাকা বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের ১০ হাজার ৮ শর বেশি শান্তিরক্ষীকে স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউনিফিল ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে। এরপর লেবানন সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে ধাপে ধাপে ১০ হাজার ৮ শ সামরিক ও বেসামরিক সদস্য এবং তাঁদের সরঞ্জাম প্রত্যাহার করা হবে। এরপর জাতিসংঘ নির্ধারিত ইসরায়েল সীমান্তের (ব্লু লাইন) উত্তরে লেবানন সরকারকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে।
হিজবুল্লাহ সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েল এখনো দেশটি দখল করে রেখেছে। এমন অবস্থায় শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থই হলো ইসরায়েলের দখলদারি অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেওয়া। যদিও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বিবৃতি দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের জাতিসংঘ প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেছেন, ‘অবশেষে জাতিসংঘ থেকে কিছু ভালো খবর পেলাম।’
‘ইউএন ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন’ বা ইউনিফিল হলো জাতিসংঘের একটি শান্তিরক্ষী মিশন। এর কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।
১৯৭৮ সালের মার্চে ইসরায়েল লেবাননে হামলা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এটি গঠন করে। নিরাপত্তা পরিষদ তখন ইসরায়েলকে লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। যে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনিফিল গঠিত হয়, তাতে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যগুলো হলো ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করা ও লেবানন সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা।
ইউনিফিলের সদস্যরা নিজ দেশে সেনাসদস্য হলেও শান্তিরক্ষা মিশনে তারা যুদ্ধে জড়ান না। নিয়ম অনুযায়ী, শান্তিরক্ষীদের অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হয়। যে দেশে তারা মোতায়েন হন সেই দেশের সম্মতি ছাড়া সেখানে তাঁরা অবস্থান করতে পারেন না।
জাতিসংঘের ভাষ্যমতে, তাদের কার্যক্রম শুধু শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখে না, বরং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করে, প্রাক্তন যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ, সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি ও পুনর্বাসনে সহায়তা করে, নির্বাচন আয়োজন সমর্থন করে, মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়ন করে এবং আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
ইউনিফিলে বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের ১০ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী রয়েছেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শান্তিরক্ষী সদস্যদের যে সংখ্যা পাওয়া যায়, এর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ১ হাজার ২ শ ৩১, ইতালির ১ হাজার ৬৮, ভারতের ৯ শ ৩, নেপালের ৮ শ ৭৬, ঘানার ৮ শ ৭৩, মালয়েশিয়ার ৮ শ ৩৩, স্পেনের ৬ শ ৭৬, ফ্রান্সের ৬ শ ৭৩, চীনের ৪ শ ১৮, আয়ারল্যান্ডের ৩ শ ৭০, দক্ষিণ কোরিয়ার ২ শ ৯৪, পোল্যান্ডের ২ শ ১৩, ফিনল্যান্ডের ২ শ ৫, কম্বোডিয়ার ১ শ ৮৫, সার্বিয়ার ১ শ ৮২, অস্ট্রিয়ার ১ শ ৬৫, গ্রিসের ১ শ ৩১, শ্রীলঙ্কার ১ শ ২৬, তানজানিয়ার ১ শ ২৫, বাংলাদেশের ১ শ ২০, জার্মানির ১ শ ১২, তুরস্কের ৯২, এল সালভাদরের ৫২, মলদোভার ৩২, ব্রুনাইয়ের ২৯, হাঙ্গেরির ১৫, ব্রাজিলের ১১, মাল্টার ৯, উত্তর মেসিডোনিয়ার ৫, মঙ্গোলিয়ার ৪, আর্জেন্টিনার ৩, কেনিয়ার ৩, লাটভিয়ার ৩, সিয়েরা লিওনের ৩, সাইপ্রাসের ২, গুয়াতেমালার ২, জাম্বিয়ার ২ জন। আর্মেনিয়া, যুক্তরাজ্য, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফিজি, কাজাখস্তান, মালাউই, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, পেরু, কাতার, উরুগুয়ের আরও ১ জন করে শান্তিরক্ষী সদস্য ইউনিফিলে কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী ইউনিফিলের আরও প্রায় ৮ শ বেসামরিক কর্মী রয়েছে।
২০০০ সালে জাতিসংঘ লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দীর্ঘ একটি ‘সীমান্তরেখা’ টেনে দেয়। এটিকে ব্লু লাইন বলা হয়। ইউনিফিলের সদস্যদের উপস্থিতি দক্ষিণ লেবাননের লিতানি নদী থেকে ব্লু লাইন পর্যন্ত বিস্তৃত।
ব্লু লাইন এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে ইসরায়েলি ও লেবাননি কর্তৃপক্ষকে যেকোনো কার্যক্রমের (যেমন: রুটিন মেরামত কাজ বা নিরাপত্তা অভিযান) আগে ইউনিফিলকে জানাতে হয়। এর ফলে ইউনিফিল সংবেদনশীল সীমান্ত অঞ্চলে কার্যকরভাবে নজরদারি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ইউনিফিল না থাকলে কী হতে পারে
ইউনিফিল শুধু ১৯৭৮ সালেই কাজ করেনি। বিভিন্ন যুদ্ধে তারা শান্তি ফেরাতে নানা রকম ভূমিকা রেখেছে। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ করে রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পুরো দক্ষিণ লেবানন দখল করে তারা উত্তরে অগ্রসর হয়।
১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল এই দখলদারিত্ব বজায় রাখে। এ সময় ইউনিফিল দক্ষিণের সাধারণ মানুষকে রক্ষা ও মানবিক সহায়তা দেয়। তবে তারা ইসরায়েলি সেনাদের রুখতে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি।
এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে দক্ষিণ লেবাননে আবার যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় এক মাস স্থায়ী ওই যুদ্ধে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংঘাত শেষ হয়। নিরস্ত্রীকৃত একটি বাফার জোনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয় এ সময়।
স্বাভাবিকভাবেই শান্তিরক্ষী বাহিনী না থাকলে সীমান্ত অঞ্চলে কার্যকর নজরদারি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবে না জাতিসংঘ। ইসরায়েলের জন্য এটি বিশেষ সুযোগ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা। গত ১২ আগস্ট এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ স্বপ্নের সঙ্গে তিনি একাত্মবোধ করেন। দেশটির সাবেক সংসদ সদস্য শ্যারন গালকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুকে একটি রক্ষাবর্ম (এম্যুলেট) উপহার দেওয়া হয়। এতে ছিল ‘প্রতিশ্রুত ভূমির মানচিত্র’ তথা বৃহত্তর ইসরায়েলের মানচিত্র।
‘গ্রেটার ইসরায়েল’ বা বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণাটি বহুদিন ধরেই অতি-রাষ্ট্রবাদী ইসরায়েলিদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে। ইসরায়েলের ভূখণ্ড বাড়িয়ে ফিলিস্তিন, লেবানন ও জর্ডানের পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাক, মিসর ও সৌদি আরবের বড় একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করাই বৃহত্তর ইসরায়েল ধারণাটির মূল লক্ষ্য।
তবে অনেক সময় ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বলতে ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপকেও বোঝানো হয়। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন রাজনৈতিক জায়নবাদের জনক থিওডর হার্তজেল। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ইহুদি রাষ্ট্রের ভূখণ্ড ‘মিসরের সিনাই উপদ্বীপে অবস্থিত ওয়াদি (শুষ্ক নদীর তলদেশ) থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত’ বিস্তৃত হওয়া উচিত।
এই বর্ণনা এসেছে বাইবেলের আদিপুস্তক (জেনেসিস) থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, ঈশ্বর ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরদের এক বিশাল ভূখণ্ড দান করেছেন, যা মিসরের সিনাই উপদ্বীপে অবস্থিত একটি ওয়াদি থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত।
অন্যদিকে, ওল্ড টেস্টামেন্টের দ্বিতীয় বিবরণীতে (ডিউটারোনমি) ঈশ্বর মুসাকে নির্দেশ দেন ফিলিস্তিন, লেবানন, মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার কিছু অংশ দখল করতে। অনেক ইসরায়েলি এটাকেই বৃহত্তর ইসরায়েল বলে মনে করেন।
আবার অনেকে বাইবেলের স্যামুয়েলের দৃষ্টান্ত টেনে আনেন। সেখানে রাজা সাউল ও দাউদের অধীনে ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার কিছু অংশ জয় করার বর্ণনা রয়েছে। যাঁরা এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেন, তাঁদের কাছে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ শুধু রাজনৈতিক কোনো লক্ষ্য নয়, বরং এক ঐশ্বরিক নির্দেশ পূরণ। ন্যায্য ভূমি পুনরুদ্ধারের লড়াই। এই লড়াইয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি লেবানন থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ফেরত পাঠানো।
ইসরায়েল এখনো দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি এলাকা দখল করে রেখেছে। এই অবস্থায় কীভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নিতে পারে—এ প্রশ্ন তুলেছেন ইউনিফিলের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া তেনেন্তি। তিনি বলেছেন, লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতিতে থাকলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ কিভাবে কার্যকর করা সম্ভব? ২০০৬ সালে গৃহীত ওই প্রস্তাবে হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর দক্ষিণ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল।
ইউনিফিলের মুখপাত্র বলেন, ‘লেবানন সরকারের প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু তারা কীভাবে দক্ষিণে সর্বত্র সেনা মোতায়েন করবে যদি ইসরায়েলি সেনারা এখনো দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে থাকে? এসব বিষয় সত্যিই বোঝা কঠিন।’
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, মিডিল ইস্ট আই, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, দ্য ন্যাশনন্স
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। আগামী বছরের শেষ নাগাদ শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নেবে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের চাপের মুখে নেওয়া এ সিদ্ধান্তকে অনেকে দেখছেন ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বাস্তবায়নের নতুন অগ্রগতি হিসেবে।
শান্তিরক্ষী মোতায়েনের প্রায় পাঁচ দশক পর গত ২৮ আগস্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিদ্ধান্তটি এমন সময় নিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র লেবানন সরকারের সঙ্গে মিলে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা করছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউনিফিলে থাকা বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের ১০ হাজার ৮ শর বেশি শান্তিরক্ষীকে স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউনিফিল ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে। এরপর লেবানন সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে ধাপে ধাপে ১০ হাজার ৮ শ সামরিক ও বেসামরিক সদস্য এবং তাঁদের সরঞ্জাম প্রত্যাহার করা হবে। এরপর জাতিসংঘ নির্ধারিত ইসরায়েল সীমান্তের (ব্লু লাইন) উত্তরে লেবানন সরকারকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে।
হিজবুল্লাহ সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, ইসরায়েল এখনো দেশটি দখল করে রেখেছে। এমন অবস্থায় শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থই হলো ইসরায়েলের দখলদারি অব্যাহত রাখার অনুমোদন দেওয়া। যদিও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বিবৃতি দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের জাতিসংঘ প্রতিনিধি ড্যানি ড্যানন বলেছেন, ‘অবশেষে জাতিসংঘ থেকে কিছু ভালো খবর পেলাম।’
‘ইউএন ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন’ বা ইউনিফিল হলো জাতিসংঘের একটি শান্তিরক্ষী মিশন। এর কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।
১৯৭৮ সালের মার্চে ইসরায়েল লেবাননে হামলা করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এটি গঠন করে। নিরাপত্তা পরিষদ তখন ইসরায়েলকে লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। যে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনিফিল গঠিত হয়, তাতে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যগুলো হলো ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করা ও লেবানন সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা।
ইউনিফিলের সদস্যরা নিজ দেশে সেনাসদস্য হলেও শান্তিরক্ষা মিশনে তারা যুদ্ধে জড়ান না। নিয়ম অনুযায়ী, শান্তিরক্ষীদের অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতে হয়। যে দেশে তারা মোতায়েন হন সেই দেশের সম্মতি ছাড়া সেখানে তাঁরা অবস্থান করতে পারেন না।
জাতিসংঘের ভাষ্যমতে, তাদের কার্যক্রম শুধু শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখে না, বরং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করে, প্রাক্তন যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণ, সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি ও পুনর্বাসনে সহায়তা করে, নির্বাচন আয়োজন সমর্থন করে, মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়ন করে এবং আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
ইউনিফিলে বাংলাদেশসহ ৫০টি দেশের ১০ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী রয়েছেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শান্তিরক্ষী সদস্যদের যে সংখ্যা পাওয়া যায়, এর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ১ হাজার ২ শ ৩১, ইতালির ১ হাজার ৬৮, ভারতের ৯ শ ৩, নেপালের ৮ শ ৭৬, ঘানার ৮ শ ৭৩, মালয়েশিয়ার ৮ শ ৩৩, স্পেনের ৬ শ ৭৬, ফ্রান্সের ৬ শ ৭৩, চীনের ৪ শ ১৮, আয়ারল্যান্ডের ৩ শ ৭০, দক্ষিণ কোরিয়ার ২ শ ৯৪, পোল্যান্ডের ২ শ ১৩, ফিনল্যান্ডের ২ শ ৫, কম্বোডিয়ার ১ শ ৮৫, সার্বিয়ার ১ শ ৮২, অস্ট্রিয়ার ১ শ ৬৫, গ্রিসের ১ শ ৩১, শ্রীলঙ্কার ১ শ ২৬, তানজানিয়ার ১ শ ২৫, বাংলাদেশের ১ শ ২০, জার্মানির ১ শ ১২, তুরস্কের ৯২, এল সালভাদরের ৫২, মলদোভার ৩২, ব্রুনাইয়ের ২৯, হাঙ্গেরির ১৫, ব্রাজিলের ১১, মাল্টার ৯, উত্তর মেসিডোনিয়ার ৫, মঙ্গোলিয়ার ৪, আর্জেন্টিনার ৩, কেনিয়ার ৩, লাটভিয়ার ৩, সিয়েরা লিওনের ৩, সাইপ্রাসের ২, গুয়াতেমালার ২, জাম্বিয়ার ২ জন। আর্মেনিয়া, যুক্তরাজ্য, কলম্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফিজি, কাজাখস্তান, মালাউই, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, পেরু, কাতার, উরুগুয়ের আরও ১ জন করে শান্তিরক্ষী সদস্য ইউনিফিলে কাজ করছেন। বিশ্বব্যাপী ইউনিফিলের আরও প্রায় ৮ শ বেসামরিক কর্মী রয়েছে।
২০০০ সালে জাতিসংঘ লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দীর্ঘ একটি ‘সীমান্তরেখা’ টেনে দেয়। এটিকে ব্লু লাইন বলা হয়। ইউনিফিলের সদস্যদের উপস্থিতি দক্ষিণ লেবাননের লিতানি নদী থেকে ব্লু লাইন পর্যন্ত বিস্তৃত।
ব্লু লাইন এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে ইসরায়েলি ও লেবাননি কর্তৃপক্ষকে যেকোনো কার্যক্রমের (যেমন: রুটিন মেরামত কাজ বা নিরাপত্তা অভিযান) আগে ইউনিফিলকে জানাতে হয়। এর ফলে ইউনিফিল সংবেদনশীল সীমান্ত অঞ্চলে কার্যকরভাবে নজরদারি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ইউনিফিল না থাকলে কী হতে পারে
ইউনিফিল শুধু ১৯৭৮ সালেই কাজ করেনি। বিভিন্ন যুদ্ধে তারা শান্তি ফেরাতে নানা রকম ভূমিকা রেখেছে। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ করে রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পুরো দক্ষিণ লেবানন দখল করে তারা উত্তরে অগ্রসর হয়।
১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ইসরায়েল এই দখলদারিত্ব বজায় রাখে। এ সময় ইউনিফিল দক্ষিণের সাধারণ মানুষকে রক্ষা ও মানবিক সহায়তা দেয়। তবে তারা ইসরায়েলি সেনাদের রুখতে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি।
এরপর ২০০৬ সালে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে দক্ষিণ লেবাননে আবার যুদ্ধ শুরু করে। প্রায় এক মাস স্থায়ী ওই যুদ্ধে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংঘাত শেষ হয়। নিরস্ত্রীকৃত একটি বাফার জোনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয় এ সময়।
স্বাভাবিকভাবেই শান্তিরক্ষী বাহিনী না থাকলে সীমান্ত অঞ্চলে কার্যকর নজরদারি ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবে না জাতিসংঘ। ইসরায়েলের জন্য এটি বিশেষ সুযোগ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা। গত ১২ আগস্ট এক সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ স্বপ্নের সঙ্গে তিনি একাত্মবোধ করেন। দেশটির সাবেক সংসদ সদস্য শ্যারন গালকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুকে একটি রক্ষাবর্ম (এম্যুলেট) উপহার দেওয়া হয়। এতে ছিল ‘প্রতিশ্রুত ভূমির মানচিত্র’ তথা বৃহত্তর ইসরায়েলের মানচিত্র।
‘গ্রেটার ইসরায়েল’ বা বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণাটি বহুদিন ধরেই অতি-রাষ্ট্রবাদী ইসরায়েলিদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে। ইসরায়েলের ভূখণ্ড বাড়িয়ে ফিলিস্তিন, লেবানন ও জর্ডানের পাশাপাশি সিরিয়া, ইরাক, মিসর ও সৌদি আরবের বড় একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করাই বৃহত্তর ইসরায়েল ধারণাটির মূল লক্ষ্য।
তবে অনেক সময় ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বলতে ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপকেও বোঝানো হয়। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন রাজনৈতিক জায়নবাদের জনক থিওডর হার্তজেল। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছিলেন, ইহুদি রাষ্ট্রের ভূখণ্ড ‘মিসরের সিনাই উপদ্বীপে অবস্থিত ওয়াদি (শুষ্ক নদীর তলদেশ) থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত’ বিস্তৃত হওয়া উচিত।
এই বর্ণনা এসেছে বাইবেলের আদিপুস্তক (জেনেসিস) থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, ঈশ্বর ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরদের এক বিশাল ভূখণ্ড দান করেছেন, যা মিসরের সিনাই উপদ্বীপে অবস্থিত একটি ওয়াদি থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত।
অন্যদিকে, ওল্ড টেস্টামেন্টের দ্বিতীয় বিবরণীতে (ডিউটারোনমি) ঈশ্বর মুসাকে নির্দেশ দেন ফিলিস্তিন, লেবানন, মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার কিছু অংশ দখল করতে। অনেক ইসরায়েলি এটাকেই বৃহত্তর ইসরায়েল বলে মনে করেন।
আবার অনেকে বাইবেলের স্যামুয়েলের দৃষ্টান্ত টেনে আনেন। সেখানে রাজা সাউল ও দাউদের অধীনে ফিলিস্তিন, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার কিছু অংশ জয় করার বর্ণনা রয়েছে। যাঁরা এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেন, তাঁদের কাছে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ শুধু রাজনৈতিক কোনো লক্ষ্য নয়, বরং এক ঐশ্বরিক নির্দেশ পূরণ। ন্যায্য ভূমি পুনরুদ্ধারের লড়াই। এই লড়াইয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি লেবানন থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের ফেরত পাঠানো।
ইসরায়েল এখনো দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি এলাকা দখল করে রেখেছে। এই অবস্থায় কীভাবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নিতে পারে—এ প্রশ্ন তুলেছেন ইউনিফিলের মুখপাত্র আন্দ্রেয়া তেনেন্তি। তিনি বলেছেন, লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতিতে থাকলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ কিভাবে কার্যকর করা সম্ভব? ২০০৬ সালে গৃহীত ওই প্রস্তাবে হিজবুল্লাহকে লিতানি নদীর দক্ষিণ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল।
ইউনিফিলের মুখপাত্র বলেন, ‘লেবানন সরকারের প্রতিশ্রুতি আছে, কিন্তু তারা কীভাবে দক্ষিণে সর্বত্র সেনা মোতায়েন করবে যদি ইসরায়েলি সেনারা এখনো দক্ষিণে অবস্থান নিয়ে থাকে? এসব বিষয় সত্যিই বোঝা কঠিন।’
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, মিডিল ইস্ট আই, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, দ্য ন্যাশনন্স
নেপাল সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব) কোম্পানির সাথে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধে জড়িয়েছে, যা মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং সামাজিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেরাত পেরোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট। ক্যাম্পাসের বাতাসে নির্বাচনী আমেজ। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আবাসন সংকট নিরসন, খাবারের মানোন্নয়ন, পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ
৫ ঘণ্টা আগেনেপালে জেন-জি আন্দোলনে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬। আহত হয়েছে আরও ১০০ জনের বেশি। সম্প্রতি কেপি শর্মা অলি নেতৃতাধীন সরকারের সিদ্ধান্তে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সরকারে দুর্নীতির প্রতিবাদে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভ এখন সহিংস আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামীকাল ৯ সেপ্টেম্বর। ভোটে মোট ৯টি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি এবং জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে।
৯ ঘণ্টা আগে