leadT1ad

নেতানিয়াহু কি গাজার পুরোটাই দখলে নিতে পারবেন

রুহুল আমিন
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ০৭
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ২০
স্ট্রিম গ্রাফিক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পুরোটাই দখলে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। আজ শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃবিতে বলা হয়েছে, ‘দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদস্যরা গাজা দখলে শিগগিরই কাজ শুরু করবে।’

প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েলের সেনাদের কি গাজার পূর্ণাঙ্গ দখলের সক্ষমতা আছে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েলের জন্য তা অনেকটা জটিল। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি সেনারা দীর্ঘ যুদ্ধে ক্লান্ত। অনেক সেনা যুদ্ধ করতে অনাগ্রহী। বিরোধী রাজনীতিক থেকে এবং জিম্মিদের পরিবার থেকে আছে চাপ। তবু নিজের রাজনীতি, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জন হোক বা না হোক, ফিলিস্তিনিদের জীবনে যে আরও ভয়াবহতা নেমে আসবে তা সহজেই অনুমেয়।

নেতানিয়াহু কেন গাজা দখলে নিতে চান

গাজার পূর্ণাঙ্গ দখল নেওয়ার পেছনে নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়। কেউ কেউ বলছেন, হামাসকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে গাজা দখলের এই কৌশল নিয়েছেন নেতানিয়াহু। গত মার্চে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজার ওপর অনানুষ্ঠানিক অবরোধ চাপিয়ে দেয় ইসরায়েল। এতে গাজায় দেখা দেয় ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি। পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ হয় যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ হামাসকে নির্মূলের জন্য এবং অবশিষ্ট গাজাবাসীকে ‘কনসেনট্রেশন জোন’ ক্যাম্পে বন্দি রাখা।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

গাজা যুদ্ধ পরিস্থিতির আরও অবনতি মানে, জনগণের মধ্যে তাঁকে নিশ্চিতভাবেই আরও অজনপ্রিয় করে তোলা। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণ এই বিরামহীন যুদ্ধ দেখতে দেখতে ইতিমধ্যে ক্লান্ত।

বেশকয়েকটি জনমত জরিপেও সে মত উঠে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের অধিকাংশ নাগরিক এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে নেতানিয়াহু সরকারের বারবারের ব্যর্থতায় বিরক্ত। তারা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন। এখনো ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি হিসেবে হামাসের কাছে আটকে আছেন।

তাহলে নেতানিয়াহু কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন? গত মে মাসে ইসরায়েলের চ্যানেল-১২ এর এক জনমত জরিপে দেখা যায়, অধিকাংশ ইসরায়েলি মনে করেন নেতানিয়াহু যুদ্ধ জয়ের চেয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকায় বেশি আগ্রহী। গাজা দখলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে এটিই মূল কারণ।

ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা বলছেন, এক তৃতীয়াংশ নয়, অর্ধেক ইসরায়েলি অনেক আগেই নেতানিয়াহুর এই পাগলামির ব্যাপারে নিজেদের মত দিয়েছেন। কিন্তু নেতানিয়াহুর কাছে তার রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকাই মূল কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েল সফর করেন। তিনি বলেছিলেন, গাজা যুদ্ধ কার্যকরভাবে বন্ধ করতে তিনি ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দোহায় অনুষ্ঠিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে যায়। পরে ইসরায়েলি জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তেলআবিব ও ওয়াশিংটন বুঝতে পেরেছে হামাস চুক্তি করতে আগ্রহী নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী তাদের সামরিক পরাজয় ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন।

তবে ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনায় মার্কিন সমর্থন রয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা শিহাব রতনসি বলেন, বলতে গেলে নেতানিয়াহুকে সবুজ সংকেতই দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করছে।

গাজা দখলে ইসরায়েলের ৫ নীতি

যুদ্ধ বন্ধে গাজা দখলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে পাঁচটি নীতি গ্রহণ করেছে ইসরায়েলে নিরাপত্তা পরিষদ। এই নীতির মধ্যে বিকল্প বেসামরিক সরকারের পরিকল্পনাও আছে। তবে সেটি হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়।

এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর অফিস বলছে, যুদ্ধ বন্ধে গাজা দখলে পাঁচটি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে এই নীতি গৃহীত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা শহর দখলে আইডিএফ প্রস্তুতি নেবে। যুদ্ধাঞ্চলের বাইরে গাজা শহরের বাসিন্দাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে। ইসরায়েলের নেওয়া পাঁচ নীতি হলো:

১. হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ

২. মৃত ও জীবিত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা

৩. গাজা উপত্যকা অসামরিকীকরণ

৪. গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ

৫. হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয় এমন একটি বিকল্প বেসামরিক সরকার থাকা

গাজা পুরোপুরি দখলে নেওয়ার ইসরায়েলের ক্ষমতা কতটুকু

ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিমরড ফ্লাসেনবার্গ বলেছেন, নিজের রাজনীতি বাঁচাতে বা ক্ষমতায় টিকে থাকতে—যেকোনো কারণেই হোক, নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন। অতীতেই নেতানিয়াহু প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি জনপ্রিয় মতামত বা গণবিক্ষোভকে পাত্তা দেন না; যতক্ষণ না পর্যন্ত তার ডানপন্থি সমর্থক গোষ্ঠী খুশি থাকে।

যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। সংগৃহীত ছবি
যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। সংগৃহীত ছবি

নিমরড বলেন, এটি আমরা রাফাহতে দেখিছি—যা তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন। এটি আমরা ইরানে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে দেখেছি। অধিকাংশ মানুষ কী ভাবছে, তার কোনো মূল্য নেই নেতানিয়াহুর কাছে। তিনি শুধু তার সমর্থকদের ধরে রাখার চেষ্টা করেন এবং সামনের নির্বাচন নিয়ে ভাবেন। গত দুই বছর ধরে এটিই তার কৌশল।

তবে পুরো গাজা দখলে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সক্ষমতা আছে কীনা তা নিয়ে ফ্লাসেনবার্গ প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর সদস্যরা খুবই ক্লান্ত। তারা ব্যাপকহারে পোস্ট ট্রমাট্রিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছে। অসংখ্য সেনা স্থল অভিযানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পুরো গাজা দখলের জন্য এক লাখের বেশি সেনার ঘাটতি আছে। গত এপ্রিলে ইসরায়েলি ম্যাগাজিন প্লাস নাইনসেভেনটু-তে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থা গ্লোবাল গার্ডিয়ানের সাবেক ইউএস স্পেশাল ফোর্স কমান্ডার কর্নেল শেঠ ক্রুম্মিচ গাজা দখলের নেতানিয়াহুর পরিকল্পনাকে বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুরো গাজা দখলের জন্য ব্যাপক সংখ্যক সেনা এবং রিসোর্চ দরকার। এই ইস্যুতে ইসরায়েলি জনগণ বিভক্ত।’

ইসরায়েলিরা আসলে কী ভাবছে

রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেক ইসরায়েলি সেনা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পর্যন্ত নেতানিয়াহু ও তাঁর ডানপন্থি মিত্রদের এই পরিকল্পনার ঘোর বিরোধী। এমনকি গাজা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও তাদের সমর্থন নেই।

শুধু তাই নয়, গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ছয় শতাধিক কর্মকর্তা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা গাজা যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে তার প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি সাবেক জেনারেল এবং মোসাদ সদস্যদের সংগঠন সিন বেটের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান অ্যামি আয়োলনও চিঠিতে স্বাক্ষরকারী একজন। তিনি বলেছেন, ‘সামরিক দৃষ্টিতে হামাস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে আদর্শ হিসেবে আমাদের আশপাশের আরব ও মুসলিম বিশ্বে এবং ফিলিস্তিনি মানুষের কাছে হামাস আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।’

গাজার পরিস্থিতি এখন কেমন

যুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্য সংকটের দিক থেকে গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। হামাসকে দুর্বল করার অজুহাতে সেখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। আর এতে অঞ্চলটি ব্যাপক বঞ্চনার শিকার।

যুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। সংগৃহীত ছবি
যুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেছেন, তীব্র পুষ্টি ঘাটতির দিক থেকে জুলাই হলো গাজার শিশুদের জন্য সবচেয়ে খারাপ মাস। পাঁচ বছরের নিচে অন্তত ১২ হাজার শিশু এই পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত।

ইসরায়েল ইতিমধ্যে গাজার অধিকাংশ ভূমি দখলে নিয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান, গাজার ৮৭ শতাংশ জায়গা হয় সামরিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে, না হয় খালি করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গাজা দখল ও পরিণতি

ইসরায়েলে নিরাপত্তা পরিষদ গাজার সামরিক দখল অনুমোদন দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অফিস বলছে, সেনাবাহিনী গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে। যদিও গাজায় এখনো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বসবাস করে।

নেতানিয়াহুর গাজা দখলের এই সিদ্ধান্ত বিরোধি দল ও জিম্মিদের পরিবার বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবে।

এ ছাড়া গাজা দখলের ক্ষেত্রে আরও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক হতাহতের শঙ্কাও রয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। কারণ ইতিমধ্যে গাজার মানবিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েল বিতর্কিত হয়ে আছে।

ফিলিস্তিনিরা কী বলছেন

নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের পর রায়েদ আবু মোহাম্মদ নামে এক ফিলিস্তিনি বলেছেন, গাজায় মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। অথচ যুদ্ধ থেকে বেসামরিক মানুষদের রেহাই পাওয়ার কথা।

নেতানিয়াহুর গাজা দখলের সিদ্ধান্তের পর বেঁচে থাকার আর কোনো আশা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে প্রতিবাদ। সংগৃহীত ছবি
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে প্রতিবাদ। সংগৃহীত ছবি

আবু মোহাম্মদ জানান, তারা গাজায় আকাশ, স্থল এবং সমুদ্রের দখলদারিত্বের মধ্যেই বাস করছেন। তারা পাঁচ মাস ধরে তাঁবুতে বাস করছেন এবং সেখানে কিছুটা স্থির হতে শুরু করেছিলেন।

আবু মোহাম্মদ বলেন, ‘হ্যাঁ এখানে কষ্ট আছে, মৃত্যু আছে। কিন্তু আমরা এখনও জীবনকে আঁকড়ে আছি। ইসরায়েল হামাসকে হত্যা করছে না। বেসামরিক, শিশু, নারীদের হত্যা করছে ইসরায়েল।’

মোহাম্মদ আল-কুরাশলি নামে আরেক ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এখানে দখল করার মতো আর কিছু অবশিষ্ট নেই। গাজা শহরের প্রায় সবটুকুই দখল হয়ে গেছে। এখন শুধু এটুকুই বাকি আছে। এই মুহূর্তে গাজা দখল করুক বা না করুক, জনগণের কাছে এর কোনো পার্থক্য নেই।’

ইসমাইল আল-শয়িস নামে আরেক ফিলিস্তিনি বলেন, এখানে বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। জীবনের কোনো চিহ্নমাত্র নেই।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি থমকে যাবে?

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম দখলে নেয়। তবে ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে এখনও আন্তর্জাতিকভাবে এই সংঘাত সমাধানের একমাত্র উপায় হিসেবে দেখা হয়।

যদিও এখনো জাতিসংঘের সব সদস্য দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৪৭টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

স্বীকৃতি দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে কানাডা। যদি তা হয়, তবে জি-৭ সদস্যভুক্ত তৃতীয় কোনো দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

অবশ্য কার্নি এও বলেছেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ফিলিস্তিনের গণতান্ত্রিক সংস্কার ও হামাসকে বাদ দিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আগামী বছর নির্বাচন আয়োজনের ওপর।

কানাডার এই ঘোষণা অবশ্য ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যাখান করে বলেছিলেন, এটা হামাসের জন্য পুরস্কার স্বরূপ। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, কানাডার এই সিদ্ধান্ত দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরকে ‘কঠিন করে তুলবে’।

এর আগে যুক্তরাজ্যও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়। তারও এক সপ্তাহ আগে (২৪ জুলাই) ফ্রান্স জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দেয়। ফ্রান্সই জি-৭ ভুক্ত প্রথম দেশ এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রথম স্থায়ী সদস্য (ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া) যেটি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়।

ফ্রান্সের আগে ২৭টি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশের মধ্যে ১০টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৮৮ সালে বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং রোমানিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। যদিও তখন দেশগুলো ইইউর সদস্য ছিল না।

২০১৪ সালে প্রথম ইইউ সদস্য দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনতে স্বীকৃতি দেয় সুইডেন। আর গত বছরেরর ২৮ মে ইউরোপের দেশ স্পেন ও আয়ারল্যান্ড স্বীকৃতি দেয়। একই বছরের ৪ জুন স্লোভেনিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। আর জার্মানি বলছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই দেশটির। ইতালিরও একই ধরনের মনোভাব। বেলজিয়াম সেপ্টেম্বরের আগেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এখনো দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইসরায়েল বা তার প্রধান মিত্র যক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবে সমর্থন নেই। এখন গাজার পূর্ণাঙ্গ দখলে আসছে সেপ্টেম্বরে দেশগুলোর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

সূত্র: এপি, রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, এনডিটিভি, দ্য গার্ডিয়ান

Ad 300x250

সম্পর্কিত