leadT1ad

স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি আসলে কী, কেন ইউরোপ স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছে

তুফায়েল আহমদ
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৪৬
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বিষয়টি বিশ্বরাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ ১৫টি পশ্চিমা শক্তি বিভিন্ন শর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাশাপাশি স্পেন, আয়ারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও সুইডেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও সাম্প্রতিক সময়ের গাজা যুদ্ধপরিস্থিতি অবসানের জন্য সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ ও ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনের জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন পরিচালনার জন্য ১৯৯৪ সালে গঠিত অস্থায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে (পিএ) ক্ষমতায়ন করতে চায়। এই সমর্থন ও শর্ত বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি বিষয়টি বিশ্বরাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ ১৫টি পশ্চিমা শক্তি বিভিন্ন শর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছা জানিয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাশাপাশি স্পেন, আয়ারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও সুইডেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও সাম্প্রতিক সময়ের গাজা যুদ্ধপরিস্থিতি অবসানের জন্য সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ ও ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনের জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন পরিচালনার জন্য ১৯৯৪ সালে গঠিত অস্থায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে (পিএ) ক্ষমতায়ন করতে চায়। এই সমর্থন ও শর্ত বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত করছে।

ইউরোপজুড়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বড় সংখ্যক সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল এই রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান চান। তাই ভোটের রাজনীতিতেও এই স্বীকৃতি প্রভাব ফেলবে।

তবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় সংঘাত তীব্র হওয়ার পর থেকে এখনো চলমান ইসরায়েলি দখলের বিরুদ্ধে হামাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

এই স্বীকৃতির অর্থ কী

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাষ্ট্র হিসেবে না থাকায়, ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি একপ্রকার প্রতীকী পদক্ষেপ। এই স্বীকৃতি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক বিবৃতি হলেও বাস্তবে খুব একটা প্রভাব ফেলতে হলে পরবর্তী পদক্ষেপগুলোও জরুরি।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফিলিস্তিন এমন এক রাষ্ট্র, বিদেশে যার কূটনৈতিক মিশন আছে, অলিম্পিকসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দল আছে। কিন্তু কোনো সরকার নেই, সামরিক বাহিনী নেই।

ফ্রান্সভিত্তিক বার্তাসংস্থা এএফপির ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্তত ১৪২টি দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অথবা স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্বীকৃতির ব্যবহারিক প্রভাব সীমিত হতে পারে, তবে কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এমন স্বীকৃতি ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

আরব দেশগুলো কী বলছে

কাতার, সৌদি আরব ও মিশরসহ আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে চলমান বিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ ও গাজা শাসন শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে।

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) যৌথভাবে সৌদি আরব ও ফ্রান্স আয়োজিত জাতিসংঘের এক সম্মেলনে স্বাক্ষরিত ঘোষণায় এই আহ্বান জানানো হয়। ২২ সদস্যের আরব লিগ, সমগ্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরও ১৭টি দেশ এই ঘোষণায় সমর্থন জানিয়েছে।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন।’ ঘোষণায় বলা হয়, যথাযথ আন্তর্জাতিক সহায়তার সঙ্গে ফিলিস্তিনের সব ভূখণ্ডে প্রশাসন, আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে থাকতে হবে। একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গাজার যুদ্ধ শেষ করার পরিপ্রেক্ষিতে হামাসকে গাজায় শাসন শেষ করতে হবে এবং তাদের অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ঘোষণায় সই করা দেশগুলো পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে।

এর আগে ২০২৪ সালে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক স্থাপন করবে না বলে জানিয়েছিল সৌদি আরব।

নিউইয়র্কে ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন’ শীর্ষক  বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আল-জাজিরা
নিউইয়র্কে ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন’ শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আল-জাজিরা

৭০-এর দশকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু পর থেকেই সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সমগ্র আরব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।

এর মধ্যে সৌদি আরব, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, আলজেরিয়া ও কুয়েত ইসরায়েলের সাথে কোনো প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্কও রাখে না।

ইউরোপ কেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে?

চলতি বছরের ২৪ জুলাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ঘোষণা করেন, সেপ্টেম্বর মাসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য এবং আজ বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কানাডাও একই ধরনের ঘোষণা করেছে। শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি আনা, হামাস নিরস্ত্রীকরণ, ফিলিস্তিনের সরকারের ক্ষমতায়ন, যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলের সাথে সমঝোতার শর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ইউরোপের দেশগুলো রাজি হয়েছে।

তবে এসব শর্তের বাইরেও ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোর নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে এই স্বীকৃতির পেছনে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইকনোমিস্টের প্রতিবেদনে মতে, প্রথম জি-৭ দেশ হিসাবে ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। এর মাধ্যমে ফ্রান্স আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন করে নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে চাচ্ছে। এই উদ্যোগ ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় পদক্ষেপ হতে পারে। যা আদতে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রনীতির সক্রিয়তাকে পুনরুজ্জীবিত করবে।

দ্য ইকনোমিস্টের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঐতিহাসিকভাবেই আরব বিশ্বের সঙ্গে ফ্রান্সের শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ফ্রান্সের প্রাক্তন উপনিবেশ হওয়ায় ফরাসি পররাষ্ট্রনীতি সবসময় আরব বিশ্বের সঙ্গে সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। মাখোঁ এই ঐতিহ্যকে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ফ্রান্সের প্রভাব বলয় আরও বিস্তার করতে চান।

বিশেষজ্ঞদের মতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো বড় পদক্ষেপ ইসরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করবে এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় ফিরতে বাধ্য করবে। সাম্প্রতিক শুল্ক-পাল্টাশুল্ক ইস্যুতে এই স্বীকৃতি নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবতে বাধ্য করবে।

অন্যদিকে নয়টি রাজনৈতিক দলের ২২০ জন এমপি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি লিখেছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই তাঁর নিজের দল লেবার পার্টির। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন বলছে, নিজের দল ও বিরোধী দলগুলোর চাপের মুখেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আলাপে সম্মত হয়েছেন স্টারমার।

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতোই কানাডার স্বীকৃতি প্রতীকী হলেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপের অংশ হিসেবে কাজ করবে। এই স্বীকৃতি সংঘাতের অবসানে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। কানাডা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে সমর্থন করে আসছে।

কূটনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতির প্রভাবের বাইরেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাধারণ নাগরিকদের ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান। কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ জনগণ, যারা ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করেন, তাঁদের মতামতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ইউরোপজুড়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বড় সংখ্যক সাধারণ মানুষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল এই রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান চান। তাই ভোটের রাজনীতিতেও এই স্বীকৃতি প্রভাব ফেলবে।

কিয়ার স্টারমারের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাকে ‘সন্ত্রাসীদের তোষামোদ’ আখ্যা দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদবাদী রাষ্ট্র গঠিত হলে তা আগামীকাল ব্রিটেনের জন্যই হুমকি হবে।

ইউরোপ ও আরব দেশগুলো দুই রাষ্ট্র সমাধানের দিকে এগোতে চাইলেও ইসরায়েলের দখলদারি মনোভাব ও হামাসের শাসন এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আদৌ এই উদ্যোগ সফল হবে কি না তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে সংশয় রয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘অক্টোবর ৭-এর হত্যাযজ্ঞের পরেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এটি হামাসের জন্য একপ্রকার উপহার এবং নতুন ইরানি ঘাঁটি তৈরির ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নয়, বরং ইসরায়েল ধ্বংসের জন্য একটি মঞ্চ হবে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাঁখোর পরিকল্পনাকে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এই বেপরোয়া সিদ্ধান্ত কেবল হামাসের প্রচারণাকে উসকে দেবে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেবে।

কিয়ার স্টারমারের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনাকে ‘সন্ত্রাসীদের তোষামোদ’ আখ্যা দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, আজ ইসরায়েলের সীমান্তে একটি জিহাদবাদী রাষ্ট্র গঠিত হলে তা আগামীকাল ব্রিটেনের জন্যই হুমকি হবে।

আজ (৩১ জুলাই) কানাডার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এই সমর্থনের ঘোষণা দেওয়ার কারণে কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা কঠিন হয়ে গেল।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা

২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অধীনে আনা’ হবে। ট্রাম্প গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘রিভিয়েরা’ হিসেবে পুনর্গঠনের ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রায় ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে বলপ্রয়োগ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়াও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজা থেকে ৫ কোটিরও বেশি টন ধ্বংসাবশেষ ও অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ অপসারণের কথা বলা হয়। এই পরিকল্পনায় বহু দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘বিপ্লবী ও সৃজনশীল’ বলে প্রশংসা করেন।

বার্লিনভিত্তিক থিংক ট্যাংক জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ পিটার লিন্টল মনে করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ। ট্রাম্প বন্ধুত্বের ভাব দেখিয়ে বলছেন, এই অঞ্চলের মানুষ আরো ভালোভাবে থাকবে এবং মিসরকে গাজার মানুষদের আশ্রয় দিতে হবে। কিন্তু বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।’

এত স্বীকৃতি, এত আলোচনা তবুও থামছে না রক্তপাত

চলতি মাসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি ও আলোচনার পরেও ইসরায়েলের আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্যসংকট। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান তো অনেক দূরে, গত সপ্তাহে কাতারে অনুষ্ঠিত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইসরায়েলি ও মার্কিন আলোচকেরা আর অংশ নিচ্ছেন না।

পশ্চিমা স্বীকৃতি যতই আসুক না কেন, বাস্তব পরিবর্তন তখনই সম্ভব হবে যখন ইসরায়েলের ওপর বাস্তব চাপ প্রয়োগ করা হবে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ ও আন্তর্জাতিক তদন্তের মাধ্যমেই একমাত্র ইসরায়েলের আগ্রাসনের লাগাম টানা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফিলিস্তিনি জনগণ এখন প্রতীকী স্বীকৃতি নয়, চায় নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, পলিটিকো, দ্য কনভার্সেশন, এএফপি

Ad 300x250

সম্পর্কিত