ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ বেড়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের পক্ষে অনেক দেশেই বিক্ষোভ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিক্ষোভ মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ এর সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই নেটওয়ার্কে অদৃশ্য প্রভাবশালী আমলা, গোয়েন্দা সংস্থা ও ধনী দাতারা যুক্ত।
স্ট্রিম ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং ধ্বংসযজ্ঞের দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এ সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ বেড়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের পক্ষে অনেক দেশেই বিক্ষোভ হচ্ছে। এবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসব বিক্ষোভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এর কিছুদিন পরই গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বলা হয়, এসব বিক্ষোভ মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ এর সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই নেটওয়ার্কে অদৃশ্য প্রভাবশালী আমলা, গোয়েন্দা সংস্থা ও ধনী দাতারা যুক্ত। অভিযোগ হলো, তারা গোপন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঘটনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যা কখনো ট্রাম্প সরকার ও ইসরায়েলকে দুর্বল করতে, কখনো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ঘিরে বিক্ষোভ এখন বৈশ্বিক ঘটনা। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বজুড়েই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের পক্ষের বিক্ষোভগুলোতে ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘গণহত্যা’ বলা হয় এবং যুদ্ধবিরতির দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষের বিক্ষোভগুলোতে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানানো হয় এবং গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ইউরোপ: ইউরোপের বড় শহরগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছে। ইসরায়েলকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে নিষিদ্ধ করার দাবিও বাড়ছে।
থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেন, ‘গত এক বছরে ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন হয়েছে। জনগণ তাদের সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এর ফলে ইসরায়েল নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে দীর্ঘদিনের ট্যাবু ভাঙা শুরু হয়েছে।’
গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ইউরোপীয় নৌবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। একইসঙ্গে একের পর এক দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আগে অকল্পনীয় ছিল।
মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষোভ বাড়ায়, ইউরোপীয় নেতারাও—জনগণের চাপের মুখে—ইসরায়েলের যুদ্ধ কার্যক্রমের সমালোচনা শুরু করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং গাজায় সাহায্য প্রবেশে অনুমতি দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
এমনকি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও গত সপ্তাহে বলেন, তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বক্তৃতায় মেলোনি বলেন, ‘ইসরায়েল মানবিক নিয়ম ভঙ্গ করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে গণহত্যা চালিয়েছে।’ এটি ছিল তার সবচেয়ে কঠোর অবস্থান। এর আগে ইতালিতে পালার্মো থেকে মিলান পর্যন্ত ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এবং জাতীয় ধর্মঘট হয়।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি)-এর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইউরোপে ৭৮০টি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ হয়। পরের পাঁচ মাসে (মে-সেপ্টেম্বর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬টিতে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন অন্তত ১৫টি বিক্ষোভ হয়।
অন্যদিকে গত ছয় মাসে ইউরোপে ইসরায়েলের পক্ষে মাত্র ৫১টি বিক্ষোভ হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি জার্মানিতে। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পর থেকেই ইসরায়েলের প্রতি জনসমর্থন তীব্রভাবে কমে গেছে বলে এসিএলইডি জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বজুড়ে: ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতোই নিউ ইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসসহ সচেতন নাগরিকদের শহরগুলোর ক্যাম্পাসে তাঁবু ফেলে আন্দোলন হয়। এসব বিক্ষোভে ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি ওঠে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিক্ষোভের সূচনা হয়।
সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি রাজ্যের অন্তত ১৪০টি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরাও একের পর এক বিক্ষোভ করে আসছে। অবশ্য তার আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হয়েছে।
এ বছর ইসরায়েলেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। তারা সরকারের গাজা যুদ্ধ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত আগস্টে প্রতিবাদ জানায়।
মেক্সিকোতে সেপ্টেম্বরে গণহত্যাবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভ হয়।
ইউরোপ-আমেরিকায় ইসরায়েলের পক্ষেও পাল্টা বিক্ষোভ হয়েছে, তবে তা ছিল তুলনামূলকভাবে ছোট। এসব বিক্ষোভে মূলত জিম্মিদের মুক্তির দাবি প্রাধান্য পায়।
বিক্ষোভগুলোর চূড়ান্ত পর্যায় আসে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম-শরতে (জুন-সেপ্টেম্বর)। গাজায় দুর্ভিক্ষ এবং শান্তি আলোচনার স্থবিরতা বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে।
‘ডিপ স্টেট’ একটি ষড়যন্ত্রমূলক শব্দ, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জনপ্রিয় হয়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়— একদল স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা (যেমন সিআইএ, এফবিআই) এবং কোটিপতি ধনকুবের (যেমন জর্জ সোরোস, বিল গেটস) নাকি নির্বাচিত নেতাদের বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করে। এই প্রেক্ষাপটে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের দাবি, সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো ছিল ডিপ স্টেটের পরিকল্পিত পদক্ষেপ। তাদের মতে এর উদ্দেশ্য ছিল—
ইসরায়েলপন্থী সরকারগুলোকে (যেমন নেতানিয়াহুর সরকার বা ইউরোপের ডানপন্থী সরকার) অস্থিতিশীল করা, বিভাজন ও ইহুদিবিদ্বেষ উসকে দেওয়া।
ট্রাম্পকে দুর্বল করা (যিনি ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত), যাতে তার শান্তি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয় অথবা ফিলিস্তিনপন্থী ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পরিবর্তন আনা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সংকটসহ অন্যান্য ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘোরানো, বা বৈশ্বিক এজেন্ডা (যেমন জলবায়ু বা এলজিবিটিকিউপ্লাস আন্দোলন) এগিয়ে নেওয়া।
এক্সে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, সিআইএ বা জর্জ সোরোস নাকি অর্থ দিয়ে ‘পেশাদার বিক্ষোভকারী’দের বিভিন্ন দেশ পাঠিয়েছে, যেমনটা জর্জিয়া বা ইউরোপে ‘কালার রেভল্যুশন’-এর সময় হয়েছিল। কেউ বলেন, এসব বিক্ষোভ ফ্লোটিলা ও এনজিওর কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বিত, যাতে ইসরায়েল সময় পায়।
অন্যদিকে কেউ কেউ উল্টো অভিযোগ করেন— ইসরায়েল বা মোসাদ নাকি এই অস্থিরতা তৈরি করছে, যাতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাকস্বাধীনতা দমন করা যায়। আরেক দল দাবি তোলে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের বিচারবিভাগের সংস্কারবিরোধী বিক্ষোভও নাকি এর সঙ্গে যুক্ত। তাদের মতে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটরা তখন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ উসকে দিতে ১ বিলিয়ন ডলার ঢেলেছিল।
মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ ফিলিস্তিনপন্থী বা ইসরায়েলপন্থী বৈশ্বিক বিক্ষোভ পরিকল্পনা করেছে— এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। বড় বড় সমাবেশগুলো মূলত ছাত্র সংগঠন, ইউনিয়ন, এনজিও এবং বিভিন্ন জোটের উদ্যোগে সংগঠিত হয়। জর্জ সোরোস বা ‘ডিপ স্টেট’ জড়িত—এমন দাবি বহুবার খণ্ডিত হয়েছে। অধিকাংশ আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত, যা মানবিক ক্ষোভ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং তৃণমূল নেটওয়ার্ক থেকে গড়ে উঠেছে।
তবে অর্থায়ন ও ভুয়া তথ্যপ্রচার ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। ভুয়া তথ্য পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ বা সংকটকালে ‘ডিপ স্টেট’ সম্পর্কিত গল্প দ্রুত বেড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া, রাজনৈতিক মহলে অযাচাইকৃত বক্তব্য ছড়ানো এবং পুরোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পুনরাবৃত্তিই এসব প্রচারের মূল মাধ্যম।
কিন্তু নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্মগুলো কোনো নথিভিত্তিক প্রমাণ খুঁজে পায়নি যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা বা ‘ডিপ স্টেট’ বৈশ্বিক বিক্ষোভ পরিচালনা করেছে। বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো বারবার খণ্ডন করেছে ‘বিলিয়নিয়াররা টাকা দিলেই সব বিক্ষোভ সম্ভব’ ধরনের সরল দাবি।
এটা সত্য যে বিভিন্ন এনজিও, ফাউন্ডেশন ও দাতব্য তহবিল বিভিন্ন প্রচারণা ও সংগঠনমূলক কার্যক্রমে অর্থ দিয়েছে। তবে এসব অর্থায়ন সাধারণত স্বচ্ছ ছিল। ‘একজন ধনকুবেরই সব আন্দোলনের টাকা দিয়েছে’— এমন দাবি বারবার খণ্ডিত হয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, বিদেশি শক্তি সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও বলেছেন, ইরানসহ কয়েকটি দেশ অনলাইনে এসব বিক্ষোভকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তবে এর মানে এই নয় যে কোনও সরকার নিজেই বিক্ষোভ সংগঠিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ নিরাপত্তার কারণে বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নজরদারি প্রযুক্তি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণ মানে এই নয় যে সরকার বিক্ষোভ পরিচালনা করেছে।
ইসরায়েল-গাজা সংঘাত ঘিরে বিক্ষোভ অত্যন্ত বিভাজনমূলক। বড় ধরনের আন্দোলন দ্রুত ও বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক মহল সহজেই ধরে নেয়, এগুলো স্বতঃস্ফূর্ত নয়। এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে পুরোনো ধারণা (বাইরের উস্কানিদাতা, অদৃশ্য অর্থদাতা) আবার সামনে আনা হয়। ভুয়া তথ্য প্রচারকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব গল্প ছড়ায়, কারণ এগুলো আবেগপ্রবণ এবং সহজে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। স্বাধীন গবেষণা ও ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলোও দেখিয়েছে যে এই প্রবণতা নিয়মিত ঘটে।
প্রগতিশীল ফাউন্ডেশনগুলো যেমন জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি, রকফেলার, গেটস এবং প্রিটজকার ফাউন্ডেশন— ফিলিস্তিনিপন্থী সংগঠনগুলোর (যেমন স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন) পাশে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের সহায়তা অনেকটা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের অর্থায়নের মতো।
দ্য পলিটিকো জানিয়েছে, এই ‘মেগা-ডোনাররা’— সমালোচকেরা যাদের ‘ডিপ স্টেট প্রক্সি’ বলে অভিহিত করেন— ক্যাম্পাসভিত্তিক আন্দোলনগুলোকে সহায়তা দিয়েছে। কিছু সংগঠন মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ পেয়েছে। আর এক্স-এ অনেকে একেই আন্দোলন পরিকল্পিত হওয়ার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে।
এ ছাড়ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের দাবি ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ছিল ভুয়া অভিযোগ যে ইরানের এজেন্টরা যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভে অর্থায়ন করেছে। অথবা হামাসের নথি দিয়ে ইসরায়েলের বামপন্থী বিক্ষোভকে ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে যুক্ত করা।
নেতানিয়াহুও দেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ‘ডিপ স্টেট’ তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট এস্থার, যা প্রজেক্ট ২০২৫-এর সঙ্গে যুক্ত, ফিলিস্তিনপন্থী কার্যক্রমকে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে কাজ করেছে। এটি মার্কিন অভিজাতদের বিরোধ দেখানোর ইঙ্গিত দেয়।
কিছু বিক্ষোভ সন্দেহজনকভাবে একরকমভাবে হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলনের সূচনার কৌশল অনুসরণ করে। এক্সে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের দাঙ্গা এমআই ফাইভ বা মোসাদের অপারেশন ছিল, যাতে ফিলিস্তিন বিষয়ক বাকস্বাধীনতা দমন করা যায়।
এসব ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব প্রায়শই চরম-ডানপন্থী বা ইসরায়েলপন্থী মহল থেকেও আসে। উদাহরণস্বরূপ, এক্সে ইসরায়েলপন্থীরা এগুলোকে ‘গ্লোবালিস্ট এজেন্ডা’-র সঙ্গে যুক্ত করে দেখান।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) এর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে বিক্ষোভের সংখ্যা গাজার হতাহত মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়েছে, কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নয়। কিছু বিক্ষোভে ইহুদিবিদ্বেষী ধাঁচের বক্তব্য (যেমন ‘ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ’) দেখা গেছে, তবে কোনো একক বা সমন্বিত ষড়যন্ত্র ছিল না।
অতীতেও বিক্ষোভগুলো নিয়ে এমন তত্ত্ব ছড়িয়েছে। ২০২০ সালের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে জর্জ সোরোসের ষড়যন্ত্র বলা হয়েছিল। ২০১১ সালের আরব বসন্তকে সিআইএ-র অপারেশন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা কিছু মনোযোগ পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু বিক্ষোভ চলছেই। কারণ হামাস এখনও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে বিবেচনা করছে। শান্তিচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের সময়সীমা হামাসের ওপর চাপ তৈরি করছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনপন্থী সক্রিয় আন্দোলনকারীরা এটিকে পক্ষপাতপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই বিক্ষোভগুলো যদি সত্যিই ডিপ স্টেটের পরিকল্পিত হত, তবে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার পর আরও তীব্রতা দেখা যেত। কিন্তু এর পরিবর্তে বিক্ষোভ কিছুটা কমেছে।
আলোচনায় স্থবিরতা থাকলে নতুন অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এসব দাবি মূলত প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিশ্বাসকে ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, বিক্ষোভ মানবিক ক্ষতি ও বাস্তব পরিস্থিতির কারণে হচ্ছে, অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে নয়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, ওয়্যারড, ইন দিজ টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস, হারেতজ
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং ধ্বংসযজ্ঞের দুই বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এ সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ বেড়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের পক্ষে অনেক দেশেই বিক্ষোভ হচ্ছে। এবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসব বিক্ষোভ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এর কিছুদিন পরই গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বলা হয়, এসব বিক্ষোভ মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ এর সহায়তায় পরিচালিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই নেটওয়ার্কে অদৃশ্য প্রভাবশালী আমলা, গোয়েন্দা সংস্থা ও ধনী দাতারা যুক্ত। অভিযোগ হলো, তারা গোপন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঘটনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে, যা কখনো ট্রাম্প সরকার ও ইসরায়েলকে দুর্বল করতে, কখনো নিজেদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত ঘিরে বিক্ষোভ এখন বৈশ্বিক ঘটনা। ইউরোপ-আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বজুড়েই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের পক্ষের বিক্ষোভগুলোতে ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘গণহত্যা’ বলা হয় এবং যুদ্ধবিরতির দাবি তোলা হয়। অন্যদিকে ইসরায়েলের পক্ষের বিক্ষোভগুলোতে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানানো হয় এবং গাজা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ইউরোপ: ইউরোপের বড় শহরগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছে। ইসরায়েলকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে নিষিদ্ধ করার দাবিও বাড়ছে।
থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেন, ‘গত এক বছরে ইউরোপে একটি বড় পরিবর্তন হয়েছে। জনগণ তাদের সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এর ফলে ইসরায়েল নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে উচ্চপর্যায়ে দীর্ঘদিনের ট্যাবু ভাঙা শুরু হয়েছে।’
গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ইউরোপীয় নৌবাহিনী মোতায়েন হয়েছে। একইসঙ্গে একের পর এক দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আগে অকল্পনীয় ছিল।
মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষোভ বাড়ায়, ইউরোপীয় নেতারাও—জনগণের চাপের মুখে—ইসরায়েলের যুদ্ধ কার্যক্রমের সমালোচনা শুরু করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং গাজায় সাহায্য প্রবেশে অনুমতি দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
এমনকি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিও গত সপ্তাহে বলেন, তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বক্তৃতায় মেলোনি বলেন, ‘ইসরায়েল মানবিক নিয়ম ভঙ্গ করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে গণহত্যা চালিয়েছে।’ এটি ছিল তার সবচেয়ে কঠোর অবস্থান। এর আগে ইতালিতে পালার্মো থেকে মিলান পর্যন্ত ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এবং জাতীয় ধর্মঘট হয়।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি)-এর তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইউরোপে ৭৮০টি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ হয়। পরের পাঁচ মাসে (মে-সেপ্টেম্বর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬টিতে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন অন্তত ১৫টি বিক্ষোভ হয়।
অন্যদিকে গত ছয় মাসে ইউরোপে ইসরায়েলের পক্ষে মাত্র ৫১টি বিক্ষোভ হয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি জার্মানিতে। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পর থেকেই ইসরায়েলের প্রতি জনসমর্থন তীব্রভাবে কমে গেছে বলে এসিএলইডি জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বজুড়ে: ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের মতোই নিউ ইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসসহ সচেতন নাগরিকদের শহরগুলোর ক্যাম্পাসে তাঁবু ফেলে আন্দোলন হয়। এসব বিক্ষোভে ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের দাবি ওঠে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওই বিক্ষোভের সূচনা হয়।
সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি রাজ্যের অন্তত ১৪০টি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরাও একের পর এক বিক্ষোভ করে আসছে। অবশ্য তার আগে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ হয়েছে।
এ বছর ইসরায়েলেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। তারা সরকারের গাজা যুদ্ধ সম্প্রসারণ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত আগস্টে প্রতিবাদ জানায়।
মেক্সিকোতে সেপ্টেম্বরে গণহত্যাবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও বিক্ষোভ হয়।
ইউরোপ-আমেরিকায় ইসরায়েলের পক্ষেও পাল্টা বিক্ষোভ হয়েছে, তবে তা ছিল তুলনামূলকভাবে ছোট। এসব বিক্ষোভে মূলত জিম্মিদের মুক্তির দাবি প্রাধান্য পায়।
বিক্ষোভগুলোর চূড়ান্ত পর্যায় আসে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম-শরতে (জুন-সেপ্টেম্বর)। গাজায় দুর্ভিক্ষ এবং শান্তি আলোচনার স্থবিরতা বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকে আরও তীব্র করে তোলে।
‘ডিপ স্টেট’ একটি ষড়যন্ত্রমূলক শব্দ, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জনপ্রিয় হয়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়— একদল স্থায়ী সরকারি কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা (যেমন সিআইএ, এফবিআই) এবং কোটিপতি ধনকুবের (যেমন জর্জ সোরোস, বিল গেটস) নাকি নির্বাচিত নেতাদের বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করে। এই প্রেক্ষাপটে ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকদের দাবি, সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলো ছিল ডিপ স্টেটের পরিকল্পিত পদক্ষেপ। তাদের মতে এর উদ্দেশ্য ছিল—
ইসরায়েলপন্থী সরকারগুলোকে (যেমন নেতানিয়াহুর সরকার বা ইউরোপের ডানপন্থী সরকার) অস্থিতিশীল করা, বিভাজন ও ইহুদিবিদ্বেষ উসকে দেওয়া।
ট্রাম্পকে দুর্বল করা (যিনি ইসরায়েলপন্থী হিসেবে পরিচিত), যাতে তার শান্তি উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হয় অথবা ফিলিস্তিনপন্থী ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পরিবর্তন আনা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সংকটসহ অন্যান্য ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘোরানো, বা বৈশ্বিক এজেন্ডা (যেমন জলবায়ু বা এলজিবিটিকিউপ্লাস আন্দোলন) এগিয়ে নেওয়া।
এক্সে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, সিআইএ বা জর্জ সোরোস নাকি অর্থ দিয়ে ‘পেশাদার বিক্ষোভকারী’দের বিভিন্ন দেশ পাঠিয়েছে, যেমনটা জর্জিয়া বা ইউরোপে ‘কালার রেভল্যুশন’-এর সময় হয়েছিল। কেউ বলেন, এসব বিক্ষোভ ফ্লোটিলা ও এনজিওর কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বিত, যাতে ইসরায়েল সময় পায়।
অন্যদিকে কেউ কেউ উল্টো অভিযোগ করেন— ইসরায়েল বা মোসাদ নাকি এই অস্থিরতা তৈরি করছে, যাতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাকস্বাধীনতা দমন করা যায়। আরেক দল দাবি তোলে, ২০২৩ সালে ইসরায়েলের বিচারবিভাগের সংস্কারবিরোধী বিক্ষোভও নাকি এর সঙ্গে যুক্ত। তাদের মতে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটরা তখন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ উসকে দিতে ১ বিলিয়ন ডলার ঢেলেছিল।
মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ ফিলিস্তিনপন্থী বা ইসরায়েলপন্থী বৈশ্বিক বিক্ষোভ পরিকল্পনা করেছে— এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। বড় বড় সমাবেশগুলো মূলত ছাত্র সংগঠন, ইউনিয়ন, এনজিও এবং বিভিন্ন জোটের উদ্যোগে সংগঠিত হয়। জর্জ সোরোস বা ‘ডিপ স্টেট’ জড়িত—এমন দাবি বহুবার খণ্ডিত হয়েছে। অধিকাংশ আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত, যা মানবিক ক্ষোভ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং তৃণমূল নেটওয়ার্ক থেকে গড়ে উঠেছে।
তবে অর্থায়ন ও ভুয়া তথ্যপ্রচার ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উসকে দিয়েছে। ভুয়া তথ্য পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ বা সংকটকালে ‘ডিপ স্টেট’ সম্পর্কিত গল্প দ্রুত বেড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া, রাজনৈতিক মহলে অযাচাইকৃত বক্তব্য ছড়ানো এবং পুরোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পুনরাবৃত্তিই এসব প্রচারের মূল মাধ্যম।
কিন্তু নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম ও ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্মগুলো কোনো নথিভিত্তিক প্রমাণ খুঁজে পায়নি যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা বা ‘ডিপ স্টেট’ বৈশ্বিক বিক্ষোভ পরিচালনা করেছে। বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো বারবার খণ্ডন করেছে ‘বিলিয়নিয়াররা টাকা দিলেই সব বিক্ষোভ সম্ভব’ ধরনের সরল দাবি।
এটা সত্য যে বিভিন্ন এনজিও, ফাউন্ডেশন ও দাতব্য তহবিল বিভিন্ন প্রচারণা ও সংগঠনমূলক কার্যক্রমে অর্থ দিয়েছে। তবে এসব অর্থায়ন সাধারণত স্বচ্ছ ছিল। ‘একজন ধনকুবেরই সব আন্দোলনের টাকা দিয়েছে’— এমন দাবি বারবার খণ্ডিত হয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, বিদেশি শক্তি সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও বলেছেন, ইরানসহ কয়েকটি দেশ অনলাইনে এসব বিক্ষোভকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তবে এর মানে এই নয় যে কোনও সরকার নিজেই বিক্ষোভ সংগঠিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ নিরাপত্তার কারণে বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণে গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও নজরদারি প্রযুক্তি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষণ মানে এই নয় যে সরকার বিক্ষোভ পরিচালনা করেছে।
ইসরায়েল-গাজা সংঘাত ঘিরে বিক্ষোভ অত্যন্ত বিভাজনমূলক। বড় ধরনের আন্দোলন দ্রুত ও বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক মহল সহজেই ধরে নেয়, এগুলো স্বতঃস্ফূর্ত নয়। এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে পুরোনো ধারণা (বাইরের উস্কানিদাতা, অদৃশ্য অর্থদাতা) আবার সামনে আনা হয়। ভুয়া তথ্য প্রচারকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব গল্প ছড়ায়, কারণ এগুলো আবেগপ্রবণ এবং সহজে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। স্বাধীন গবেষণা ও ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলোও দেখিয়েছে যে এই প্রবণতা নিয়মিত ঘটে।
প্রগতিশীল ফাউন্ডেশনগুলো যেমন জর্জ সোরোসের ওপেন সোসাইটি, রকফেলার, গেটস এবং প্রিটজকার ফাউন্ডেশন— ফিলিস্তিনিপন্থী সংগঠনগুলোর (যেমন স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন) পাশে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের সহায়তা অনেকটা ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের অর্থায়নের মতো।
দ্য পলিটিকো জানিয়েছে, এই ‘মেগা-ডোনাররা’— সমালোচকেরা যাদের ‘ডিপ স্টেট প্রক্সি’ বলে অভিহিত করেন— ক্যাম্পাসভিত্তিক আন্দোলনগুলোকে সহায়তা দিয়েছে। কিছু সংগঠন মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ পেয়েছে। আর এক্স-এ অনেকে একেই আন্দোলন পরিকল্পিত হওয়ার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে।
এ ছাড়ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের দাবি ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে ছিল ভুয়া অভিযোগ যে ইরানের এজেন্টরা যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভে অর্থায়ন করেছে। অথবা হামাসের নথি দিয়ে ইসরায়েলের বামপন্থী বিক্ষোভকে ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে যুক্ত করা।
নেতানিয়াহুও দেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ‘ডিপ স্টেট’ তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট এস্থার, যা প্রজেক্ট ২০২৫-এর সঙ্গে যুক্ত, ফিলিস্তিনপন্থী কার্যক্রমকে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে কাজ করেছে। এটি মার্কিন অভিজাতদের বিরোধ দেখানোর ইঙ্গিত দেয়।
কিছু বিক্ষোভ সন্দেহজনকভাবে একরকমভাবে হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলনের সূচনার কৌশল অনুসরণ করে। এক্সে প্রকাশিত পোস্টে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের দাঙ্গা এমআই ফাইভ বা মোসাদের অপারেশন ছিল, যাতে ফিলিস্তিন বিষয়ক বাকস্বাধীনতা দমন করা যায়।
এসব ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব প্রায়শই চরম-ডানপন্থী বা ইসরায়েলপন্থী মহল থেকেও আসে। উদাহরণস্বরূপ, এক্সে ইসরায়েলপন্থীরা এগুলোকে ‘গ্লোবালিস্ট এজেন্ডা’-র সঙ্গে যুক্ত করে দেখান।
আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) এর তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে বিক্ষোভের সংখ্যা গাজার হতাহত মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়েছে, কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নয়। কিছু বিক্ষোভে ইহুদিবিদ্বেষী ধাঁচের বক্তব্য (যেমন ‘ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণ’) দেখা গেছে, তবে কোনো একক বা সমন্বিত ষড়যন্ত্র ছিল না।
অতীতেও বিক্ষোভগুলো নিয়ে এমন তত্ত্ব ছড়িয়েছে। ২০২০ সালের ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে জর্জ সোরোসের ষড়যন্ত্র বলা হয়েছিল। ২০১১ সালের আরব বসন্তকে সিআইএ-র অপারেশন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা কিছু মনোযোগ পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু বিক্ষোভ চলছেই। কারণ হামাস এখনও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার বিষয়ে বিবেচনা করছে। শান্তিচুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের সময়সীমা হামাসের ওপর চাপ তৈরি করছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনপন্থী সক্রিয় আন্দোলনকারীরা এটিকে পক্ষপাতপূর্ণ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই বিক্ষোভগুলো যদি সত্যিই ডিপ স্টেটের পরিকল্পিত হত, তবে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার পর আরও তীব্রতা দেখা যেত। কিন্তু এর পরিবর্তে বিক্ষোভ কিছুটা কমেছে।
আলোচনায় স্থবিরতা থাকলে নতুন অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এসব দাবি মূলত প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবিশ্বাসকে ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, বিক্ষোভ মানবিক ক্ষতি ও বাস্তব পরিস্থিতির কারণে হচ্ছে, অদৃশ্য ষড়যন্ত্রের কারণে নয়।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, ওয়্যারড, ইন দিজ টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস, হারেতজ
সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনার পর সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘মাসুদের সঙ্গে দেখা হলেই প্রায় আমি বলি, মাসুদ তুমি ভালো হয়ে যাও। কিন্তু সে এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি।’
১৩ ঘণ্টা আগেনাটক-সিনেমার সংলাপে এক সময় শোনা যেত, ‘ঠান্ডা, না গরম?’ বড়লোক নায়ক অথবা নায়িকার বাবারা বলতেন। অথবা বলতেন গরিব নায়কের বড়লোক বন্ধু। এরপর এলো নতুন সংলাপ, ‘চা, না কফি?’—এও শোনা গেছে বড়লোকদের মুখেই। অর্থাৎ বাঙালির সংস্কৃতিতে ঢুকে গেছে কফির পোড়া পোড়া চকলেটি স্বাদ। কিন্তু সিনেমার সংলাপে ঢোকার আগে কফি তো ঢুক
১৬ ঘণ্টা আগেপ্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু দলনেতা হাকিম জেফরিস বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের হুমকিতে ভীত হবে না। সরকার বন্ধ হয়ে গেলে আরও ফেডারেল কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হবে, এমন ভয়ে তারা শঙ্কিত নন।
১৮ ঘণ্টা আগেনিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ‘সাতটি অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধ করেছেন। তিনি নিজেকে জাতিসংঘের চেয়ে বড় শান্তির দূত হিসেবেও তুলে ধরেন। এমনকি নিজেকে একাধিকবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলেও দাবি করেন।
১ দিন আগে