.png)

স্ট্রিম ডেস্ক

৩০০-র বেশি লেখক, শিক্ষাবিদ ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত বিভাগে লেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা একত্রে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন পত্রিকাটিকে গাজায় চলমান গণহত্যায় এর ভূমিকার জন্য দায়ী করতে।
প্রকাশিত বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জন আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখালেখি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তিনটি নির্দিষ্ট দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেউই এর মতামত বিভাগে আর লিখবেন না।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বর্জনকারীদের মধ্যে রয়েছেন রিমা হাসান, চেলসি ম্যানিং, রাশিদা তালিব, গাবর মাতে, স্যালি রুনি, রূপি কৌর, এলিয়া সুলেইমান, মরিয়ম বারঘুতি, গ্রেটা থুনবার্গ, কিয়েসে লেইমন, মোহাম্মদ এল-কুর্দ, হান্না আইনবিন্ডার, প্লেসতিয়া আলাকাদ, সুসান আবুলহাওয়া, মোনা চালাবি, ক্যাথরিন লেসি, কাভে আখবার, নওরা এরাকাত, মোসাব আবু তোহা, দেরেকা পারনেল, আজা মনেট, ন্যান গোল্ডিন, ভিয়েত থান নুয়েন, জিয়া টলেন্টিনো, মারিয়াম কাবা, ডেভ জিরিন এবং ওমর এল আখাদ প্রমুখ।
সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনে হামলা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস ধারাবাহিকভাবে সত্য বিকৃতি করেছে। তারা মনে করেন, এই আচরণ পত্রিকাটির নিজস্ব সাংবাদিকতা নীতির পরিপন্থী।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক হুসাম শাবাত মৃত্যুর কয়েকমাস আগে লিখেছিলেন, ‘ভাষাই গণহত্যাকে ন্যায্যতা দেয়। আজ ২৪৩ দিন পরও আমাদের ওপর বোমা পড়ছে, কারণ নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম তা সম্ভব করেছে।’ কয়েক মাস পরই ইসরায়েল তাকে হত্যা করে।
বিবৃতিতে লেখকরা বলেন, গাজায় বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলের বিমান হামলা, হত্যাযজ্ঞ ও অবরোধের পর পশ্চিমা সমাজের দায়িত্ব হলো—এই অপরাধে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা। তাদের মতে, অস্ত্র নির্মাতাদের মতো গণমাধ্যমও যুদ্ধযন্ত্রের অংশ, যা দোষমুক্তি ও বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও প্রযোজকরা প্রায়ই তাদের কাভারেজ অনুসরণ করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
লেখকরা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, অতীতেও পত্রিকাটি ইরান (১৯৫৩), ইরাক (২০০৩) ও লিবিয়া (২০১১) ইস্যুতে ভুল পথে প্রভাব ফেলেছিল। গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ শুরু হওয়ার পর নিউ ইয়র্ক টাইমস ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ আড়াল করেছে, যৌক্তিকতা দেখিয়েছে এবং অস্বীকার করেছে। এর মাধ্যমে তারা বহু দশকের প্রচলিত নীতি—ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্রের মতো আচরণ—চালিয়ে যাচ্ছে।
লেখকদের অভিযোগ, নিউ ইয়র্ক টাইমস ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মিথ্যা বক্তব্য পুনর্মুদ্রণ করেছে, ইসরায়েলি কনস্যুলেট ও লবিগোষ্ঠীর অনুরোধে খবর পরিবর্তন বা গোপন করেছে এবং সাংবাদিকদের নির্দেশ দিয়েছে যেন ‘হত্যা’, ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও ‘দখলকৃত অঞ্চল’ শব্দগুলো ব্যবহার না করা হয়।
তারা আরও বলেন, পত্রিকার নিয়োগ নীতিতেও আরব ও মুসলিমবিরোধী পক্ষপাত স্পষ্ট। অনেক আরব ও মুসলিম কর্মীকে হয় চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, নয়তো বৈষম্যমূলক তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছে। বিপরীতে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্যকে ‘তথ্য’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়, অথচ গণহত্যাকে মতবাদের বিতর্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
লেখকরা বলেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস তার ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখতে, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির ছাপ দিতে মতামত বিভাগকে ব্যবহার করে আসছিল। পত্রিকাটি এই বিভাগকে এমন এক ‘ডিনার পার্টি’-র সঙ্গে তুলনা করে থাকে যেখানে সবাই প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেয়।
কিন্তু লেখকদের মতে, এটি ‘তরবারি ও গলার মধ্যে কথোপকথন’—যেমনটি বিপ্লবী লেখক ঘাসান কানাফানি বলেছিলেন। তারা বলেন, বেট স্টিফেন্স, টমাস ফ্রিডম্যান বা ডেভিড লিওনহার্টের মতো কলামিস্টদের সঙ্গে বসে গণহত্যার সংজ্ঞা নিয়ে ভদ্রভাবে বিতর্ক করার কোনো অর্থ নেই, যখন ইসরায়েলি সেনারা আমেরিকান অস্ত্র দিয়ে ক্ষুধার্ত শিশু ও সাংবাদিকদের হত্যা করছে।
তাদের মতে, এমন একটি পত্রিকার সঙ্গে সহযোগিতার বিনিময়ে কিছু পরিচিতি পাওয়ার কোনো মূল্য নেই, যে পত্রিকা যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বা অপরাধীদের নাম প্রকাশ করতেও অস্বীকার করে। মতামত বিভাগ তার লেখকদের ওপরই নির্ভরশীল। তাই এটিকে অগ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং ‘পেপার অব রেকর্ড’ হিসেবে এর মর্যাদা চ্যালেঞ্জ করা এখন লেখকদের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখকরা আরও বলেন, মাঠের সবচেয়ে ভয়াবহ সত্য—যেমন শিশুদের ওপর ইসরায়েলের পরিকল্পিত গুলিবর্ষণ—কেবল ‘মতামত’ হিসেবে উপস্থাপন করা সাংবাদিকতার গুরুতর অনৈতিকতা। নিউ ইয়র্ক টাইমস যতদিন পর্যন্ত গাজার বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনের দায় স্বীকার না করবে এবং সত্যনিষ্ঠ ও নৈতিকভাবে মার্কিন-ইসরায়েলি যুদ্ধের খবর প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হবে, ততদিন পর্যন্ত পত্রিকাটিতে ব্যক্তিগত প্রবন্ধ প্রকাশের যে কোনো উদ্যোগ আসলে সেই অনৈতিকতা বজায় রাখার অনুমতি দেবে। কেবল আমাদের শ্রম প্রত্যাহারের মাধ্যমেই আমরা টাইমস-এর সেই প্রভাবশালী অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি, যা এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিথ্যা প্রচারের আড়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বিবৃতিতে ৩টি দাবি উত্থাপন করে লেখকরা বলেন, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতামত বিভাগে লেখা বন্ধ রাখব, যতক্ষণ না ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনের তিনটি মূল দাবি পূরণ করা হয়। এই দাবিগুলো উত্থাপন করেছে একাধিক সংগঠন, যার মধ্যে রয়েছে রাইটার্স অ্যাগেইনস্ট দ্য ওয়ার অন গাজা (ডাব্লিউএডাব্লিউওজি), প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট (পিওয়াইএম), প্যালেস্টাইস ফেমিনিস্ট কালেক্টিভ (পিএফসি) পিএএল-আওদা: দ্য রাইট টু রিটার্ন কোয়ালিশন, ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন (এনএসজেপি), ইউএস প্যালেস্টাইন কমিউনিটি নেটওয়ার্ক, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ওয়ার্কি গ্রুপ (পিএসডাব্লিউজি), হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন (এইচসিডাব্লিউফোরপি) এবং ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (ডিএসএ)।
সংবাদ বিভাগকে অবশ্যই ফিলিস্তিনবিরোধী পক্ষপাত পর্যালোচনা করে নতুন সম্পাদকীয় মানদণ্ড প্রণয়ন করতে হবে। বিগত কয়েক দশকের পক্ষপাতমূলক ও বর্ণবাদী সংবাদ কাভারেজ সংশোধনের জন্য টাইমস–কে তাদের স্টাইল গাইড, তথ্য সংগ্রহ ও উদ্ধৃতির পদ্ধতি এবং নিয়োগনীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। যারা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীতে কাজ করেছে, তাদের ইসরায়েলের যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে সংগৃহীত তথ্য প্রকাশের প্রচলিত প্রথা বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ বিভাগকে ‘স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক বিতর্কিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করতে হবে। ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস স্বীকার করেছিল যে, ইরাকে তথাকথিত ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ নিয়ে তাদের ভুল প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের বিপর্যয়কর আক্রমণকে উৎসাহ দিয়েছিল। একইভাবে ‘স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস’ প্রতিবেদনে ৭ অক্টোবরের ‘অস্ত্র হিসেবে যৌন সহিংসতা’–সংক্রান্ত অপ্রমাণিত দাবি অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক প্রকাশ্যে গণহত্যার পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে চাকরিচ্যুত হন, সাক্ষ্যদাতারা অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছেন এবং যাদের নিয়ে প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল, তারা নিজেরাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই প্রতিবেদন টাইমস-এর নিজস্ব তথ্যযাচাই মানদণ্ডও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সম্পাদকীয় বোর্ডকে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাতে হবে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বোর্ড অবশেষে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেয়—যা পরে কিছু আইনপ্রণেতা সমর্থন করেন এবং অক্টোবর মাসে তা কার্যকর হয়। কিন্তু ইসরায়েল প্রমাণ করেছে, শুধু যুদ্ধবিরতি গাজার ধ্বংস ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। টেকসই শান্তির জন্য অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সেই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে, যা ইসরায়েলের অপরাধকে সম্ভব করছে। টাইমস-এর সম্পাদকীয় বোর্ডের উচিত তার প্রভাব ব্যবহার করে এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নেওয়া।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই দাবিগুলো কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়। টাইমস অতীতেও জনমত ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে তাদের স্টাইল গাইড পরিবর্তন করেছে। ১৯৮৭ সালে জনসমালোচনার পর তারা এই গাইড সংশোধন করে এবং পরবর্তীতে এইডস সংকটে পক্ষপাতদুষ্ট কাভারেজের বিষয়টি স্বীকার করে। ইরাক যুদ্ধের পরও টাইমস তাদের ভুল তথ্যপ্রচার স্বীকার করে, দায়ী লেখকদের সরিয়ে দেয় এবং ক্ষমা চায়। সে সময় তাদের জনসম্পাদক মন্তব্য করেছিলেন, ‘এই ব্যর্থতা ব্যক্তিগত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক।’ পত্রিকাটি অতীতে বিভিন্ন দেশ, যেমন উপসাগরীয় রাষ্ট্র, দক্ষিণ সুদান, চীন ও বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি সীমিত করার আইনগত পদক্ষেপের পক্ষেও অবস্থান নিয়েছিল।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, টাইমস-এর নিজস্ব স্বীকারোক্তি—ইউরোপে ইহুদি নিধনের সময় সঠিক ও সময়োচিতভাবে প্রতিবেদন করতে না পারা ছিল ‘একটি লজ্জাজনক ব্যর্থতা।’ এক সাবেক নির্বাহী সম্পাদক লিখেছিলেন, ‘গণহত্যার মুখে সাংবাদিকতা যেন আর কখনও ব্যর্থ না হয়—এই শিক্ষা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়।’
সবশেষে লেখকরা বলেন, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখকদের প্রতি নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি, পত্রিকাটি তার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করুক—যাতে আর কখনও কোনো গণহত্যা, নির্যাতন বা বাস্তুচ্যুতি ঘটানোর প্রচারে সাংবাদিকতা ব্যবহৃত না হয়।
সূত্র: দ্য ওয়্যার

৩০০-র বেশি লেখক, শিক্ষাবিদ ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতামত বিভাগে লেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা একত্রে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন পত্রিকাটিকে গাজায় চলমান গণহত্যায় এর ভূমিকার জন্য দায়ী করতে।
প্রকাশিত বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জন আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখালেখি করেছেন। তারা জানিয়েছেন, তিনটি নির্দিষ্ট দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেউই এর মতামত বিভাগে আর লিখবেন না।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বর্জনকারীদের মধ্যে রয়েছেন রিমা হাসান, চেলসি ম্যানিং, রাশিদা তালিব, গাবর মাতে, স্যালি রুনি, রূপি কৌর, এলিয়া সুলেইমান, মরিয়ম বারঘুতি, গ্রেটা থুনবার্গ, কিয়েসে লেইমন, মোহাম্মদ এল-কুর্দ, হান্না আইনবিন্ডার, প্লেসতিয়া আলাকাদ, সুসান আবুলহাওয়া, মোনা চালাবি, ক্যাথরিন লেসি, কাভে আখবার, নওরা এরাকাত, মোসাব আবু তোহা, দেরেকা পারনেল, আজা মনেট, ন্যান গোল্ডিন, ভিয়েত থান নুয়েন, জিয়া টলেন্টিনো, মারিয়াম কাবা, ডেভ জিরিন এবং ওমর এল আখাদ প্রমুখ।
সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনে হামলা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস ধারাবাহিকভাবে সত্য বিকৃতি করেছে। তারা মনে করেন, এই আচরণ পত্রিকাটির নিজস্ব সাংবাদিকতা নীতির পরিপন্থী।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক হুসাম শাবাত মৃত্যুর কয়েকমাস আগে লিখেছিলেন, ‘ভাষাই গণহত্যাকে ন্যায্যতা দেয়। আজ ২৪৩ দিন পরও আমাদের ওপর বোমা পড়ছে, কারণ নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম তা সম্ভব করেছে।’ কয়েক মাস পরই ইসরায়েল তাকে হত্যা করে।
বিবৃতিতে লেখকরা বলেন, গাজায় বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলের বিমান হামলা, হত্যাযজ্ঞ ও অবরোধের পর পশ্চিমা সমাজের দায়িত্ব হলো—এই অপরাধে সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা। তাদের মতে, অস্ত্র নির্মাতাদের মতো গণমাধ্যমও যুদ্ধযন্ত্রের অংশ, যা দোষমুক্তি ও বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও প্রযোজকরা প্রায়ই তাদের কাভারেজ অনুসরণ করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে।
লেখকরা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, অতীতেও পত্রিকাটি ইরান (১৯৫৩), ইরাক (২০০৩) ও লিবিয়া (২০১১) ইস্যুতে ভুল পথে প্রভাব ফেলেছিল। গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ শুরু হওয়ার পর নিউ ইয়র্ক টাইমস ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ আড়াল করেছে, যৌক্তিকতা দেখিয়েছে এবং অস্বীকার করেছে। এর মাধ্যমে তারা বহু দশকের প্রচলিত নীতি—ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্রের মতো আচরণ—চালিয়ে যাচ্ছে।
লেখকদের অভিযোগ, নিউ ইয়র্ক টাইমস ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মিথ্যা বক্তব্য পুনর্মুদ্রণ করেছে, ইসরায়েলি কনস্যুলেট ও লবিগোষ্ঠীর অনুরোধে খবর পরিবর্তন বা গোপন করেছে এবং সাংবাদিকদের নির্দেশ দিয়েছে যেন ‘হত্যা’, ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ও ‘দখলকৃত অঞ্চল’ শব্দগুলো ব্যবহার না করা হয়।
তারা আরও বলেন, পত্রিকার নিয়োগ নীতিতেও আরব ও মুসলিমবিরোধী পক্ষপাত স্পষ্ট। অনেক আরব ও মুসলিম কর্মীকে হয় চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, নয়তো বৈষম্যমূলক তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছে। বিপরীতে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্যকে ‘তথ্য’ হিসেবে প্রকাশ করা হয়, অথচ গণহত্যাকে মতবাদের বিতর্ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
লেখকরা বলেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস তার ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখতে, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির ছাপ দিতে মতামত বিভাগকে ব্যবহার করে আসছিল। পত্রিকাটি এই বিভাগকে এমন এক ‘ডিনার পার্টি’-র সঙ্গে তুলনা করে থাকে যেখানে সবাই প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেয়।
কিন্তু লেখকদের মতে, এটি ‘তরবারি ও গলার মধ্যে কথোপকথন’—যেমনটি বিপ্লবী লেখক ঘাসান কানাফানি বলেছিলেন। তারা বলেন, বেট স্টিফেন্স, টমাস ফ্রিডম্যান বা ডেভিড লিওনহার্টের মতো কলামিস্টদের সঙ্গে বসে গণহত্যার সংজ্ঞা নিয়ে ভদ্রভাবে বিতর্ক করার কোনো অর্থ নেই, যখন ইসরায়েলি সেনারা আমেরিকান অস্ত্র দিয়ে ক্ষুধার্ত শিশু ও সাংবাদিকদের হত্যা করছে।
তাদের মতে, এমন একটি পত্রিকার সঙ্গে সহযোগিতার বিনিময়ে কিছু পরিচিতি পাওয়ার কোনো মূল্য নেই, যে পত্রিকা যুদ্ধাপরাধ তদন্ত বা অপরাধীদের নাম প্রকাশ করতেও অস্বীকার করে। মতামত বিভাগ তার লেখকদের ওপরই নির্ভরশীল। তাই এটিকে অগ্রহণযোগ্য করে তোলা এবং ‘পেপার অব রেকর্ড’ হিসেবে এর মর্যাদা চ্যালেঞ্জ করা এখন লেখকদের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখকরা আরও বলেন, মাঠের সবচেয়ে ভয়াবহ সত্য—যেমন শিশুদের ওপর ইসরায়েলের পরিকল্পিত গুলিবর্ষণ—কেবল ‘মতামত’ হিসেবে উপস্থাপন করা সাংবাদিকতার গুরুতর অনৈতিকতা। নিউ ইয়র্ক টাইমস যতদিন পর্যন্ত গাজার বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনের দায় স্বীকার না করবে এবং সত্যনিষ্ঠ ও নৈতিকভাবে মার্কিন-ইসরায়েলি যুদ্ধের খবর প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হবে, ততদিন পর্যন্ত পত্রিকাটিতে ব্যক্তিগত প্রবন্ধ প্রকাশের যে কোনো উদ্যোগ আসলে সেই অনৈতিকতা বজায় রাখার অনুমতি দেবে। কেবল আমাদের শ্রম প্রত্যাহারের মাধ্যমেই আমরা টাইমস-এর সেই প্রভাবশালী অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারি, যা এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মিথ্যা প্রচারের আড়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বিবৃতিতে ৩টি দাবি উত্থাপন করে লেখকরা বলেন, আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতামত বিভাগে লেখা বন্ধ রাখব, যতক্ষণ না ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনের তিনটি মূল দাবি পূরণ করা হয়। এই দাবিগুলো উত্থাপন করেছে একাধিক সংগঠন, যার মধ্যে রয়েছে রাইটার্স অ্যাগেইনস্ট দ্য ওয়ার অন গাজা (ডাব্লিউএডাব্লিউওজি), প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট (পিওয়াইএম), প্যালেস্টাইস ফেমিনিস্ট কালেক্টিভ (পিএফসি) পিএএল-আওদা: দ্য রাইট টু রিটার্ন কোয়ালিশন, ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন (এনএসজেপি), ইউএস প্যালেস্টাইন কমিউনিটি নেটওয়ার্ক, প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ওয়ার্কি গ্রুপ (পিএসডাব্লিউজি), হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন (এইচসিডাব্লিউফোরপি) এবং ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (ডিএসএ)।
সংবাদ বিভাগকে অবশ্যই ফিলিস্তিনবিরোধী পক্ষপাত পর্যালোচনা করে নতুন সম্পাদকীয় মানদণ্ড প্রণয়ন করতে হবে। বিগত কয়েক দশকের পক্ষপাতমূলক ও বর্ণবাদী সংবাদ কাভারেজ সংশোধনের জন্য টাইমস–কে তাদের স্টাইল গাইড, তথ্য সংগ্রহ ও উদ্ধৃতির পদ্ধতি এবং নিয়োগনীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। যারা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীতে কাজ করেছে, তাদের ইসরায়েলের যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। এছাড়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে থেকে সংগৃহীত তথ্য প্রকাশের প্রচলিত প্রথা বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ বিভাগকে ‘স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস’ শীর্ষক বিতর্কিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করতে হবে। ২০০৪ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস স্বীকার করেছিল যে, ইরাকে তথাকথিত ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ নিয়ে তাদের ভুল প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের বিপর্যয়কর আক্রমণকে উৎসাহ দিয়েছিল। একইভাবে ‘স্ক্রিমস উইদাউট ওয়ার্ডস’ প্রতিবেদনে ৭ অক্টোবরের ‘অস্ত্র হিসেবে যৌন সহিংসতা’–সংক্রান্ত অপ্রমাণিত দাবি অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক প্রকাশ্যে গণহত্যার পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে চাকরিচ্যুত হন, সাক্ষ্যদাতারা অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছেন এবং যাদের নিয়ে প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল, তারা নিজেরাই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই প্রতিবেদন টাইমস-এর নিজস্ব তথ্যযাচাই মানদণ্ডও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সম্পাদকীয় বোর্ডকে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাতে হবে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বোর্ড অবশেষে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নেয়—যা পরে কিছু আইনপ্রণেতা সমর্থন করেন এবং অক্টোবর মাসে তা কার্যকর হয়। কিন্তু ইসরায়েল প্রমাণ করেছে, শুধু যুদ্ধবিরতি গাজার ধ্বংস ঠেকাতে যথেষ্ট নয়। টেকসই শান্তির জন্য অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সেই অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে, যা ইসরায়েলের অপরাধকে সম্ভব করছে। টাইমস-এর সম্পাদকীয় বোর্ডের উচিত তার প্রভাব ব্যবহার করে এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নেওয়া।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই দাবিগুলো কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়। টাইমস অতীতেও জনমত ও অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে তাদের স্টাইল গাইড পরিবর্তন করেছে। ১৯৮৭ সালে জনসমালোচনার পর তারা এই গাইড সংশোধন করে এবং পরবর্তীতে এইডস সংকটে পক্ষপাতদুষ্ট কাভারেজের বিষয়টি স্বীকার করে। ইরাক যুদ্ধের পরও টাইমস তাদের ভুল তথ্যপ্রচার স্বীকার করে, দায়ী লেখকদের সরিয়ে দেয় এবং ক্ষমা চায়। সে সময় তাদের জনসম্পাদক মন্তব্য করেছিলেন, ‘এই ব্যর্থতা ব্যক্তিগত নয়, প্রাতিষ্ঠানিক।’ পত্রিকাটি অতীতে বিভিন্ন দেশ, যেমন উপসাগরীয় রাষ্ট্র, দক্ষিণ সুদান, চীন ও বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি সীমিত করার আইনগত পদক্ষেপের পক্ষেও অবস্থান নিয়েছিল।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, টাইমস-এর নিজস্ব স্বীকারোক্তি—ইউরোপে ইহুদি নিধনের সময় সঠিক ও সময়োচিতভাবে প্রতিবেদন করতে না পারা ছিল ‘একটি লজ্জাজনক ব্যর্থতা।’ এক সাবেক নির্বাহী সম্পাদক লিখেছিলেন, ‘গণহত্যার মুখে সাংবাদিকতা যেন আর কখনও ব্যর্থ না হয়—এই শিক্ষা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়।’
সবশেষে লেখকরা বলেন, ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখকদের প্রতি নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি, পত্রিকাটি তার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করুক—যাতে আর কখনও কোনো গণহত্যা, নির্যাতন বা বাস্তুচ্যুতি ঘটানোর প্রচারে সাংবাদিকতা ব্যবহৃত না হয়।
সূত্র: দ্য ওয়্যার
.png)

বাংলাদেশ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ একটি প্রস্তাবিত আইনগত সংস্কার। এর লক্ষ্য ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ সংশোধন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন, শাসনব্যবস্থা ও কার্যকর স্বাধীনতা বাড়ানো।
৩ ঘণ্টা আগে
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে চার দিনব্যাপী আলোচনার পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে ২৮ অক্টোবর। কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে ‘শেষ চেষ্টা’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অভিযোগের কারণে আলোচনাটি ভেঙে পড়ে।
২০ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা ও বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে ‘বিরল খনিজ’ বিশ্বজুড়ে আলোচনায়। ১৭টি রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট (আরইই) বা বিরল মৃত্তিকা উপাদানকে বলা বিরল হয় বিরল খনিজ। এই ধাতুগুলো রাসায়নিকভাবে প্রায় একইরকম।
১ দিন আগে
আর্জেন্টিনার মধ্যবর্তী সংসদ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই তার চরম ডানপন্থী অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে জোরালো জনসমর্থন অর্জন করেছেন। তার দল লা লিবেরতাদ আভানজা জাতীয় ভোটে ৪১ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে।
১ দিন আগে