.png)
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন ঢেউ তুলেছেন নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি। তাঁর জয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য এক সাংবিধানিক সংঘাতের মঞ্চ তৈরি করেছে—প্রশ্ন উঠছে, প্রেসিডেন্ট কি সত্যিই কোনো শহরের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করতে পারেন?

তুফায়েল আহমদ

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা দেখছেন গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে। মামদানির বিজয় কেবল নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের জন্যই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। নিজের বিজয়োত্তর ভাষণে মামদানি ঘোষণা করেছেন, নিউইয়র্ক ‘রাজনৈতিক অন্ধকারের মুহূর্তে’ ‘আলো’ হয়ে উঠবে এবং বিভাজনের রাজনীতির মোকাবিলা করবে। মামদানির এই বিজয় হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাতের মঞ্চ তৈরি করেছে। বিশেষ করে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। এই মুখোমুখি অবস্থান এখন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: ট্রাম্প কি সত্যিই এই হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারবেন, নাকি ম্যাডম্যান থিওরি প্রয়োগ করে ট্রাম্পের রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল?
চলতি বছরের ৩ নভেম্বর সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি নিউইয়র্ক সিটি মেয়র প্রার্থী মামদানির জনপ্রিয়তা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার জন্য নিউইয়র্কে প্রচুর টাকা দেওয়া কঠিন হবে। কারণ যদি একজন কমিউনিস্ট (মামদানি) নিউইয়র্ক চালায়, তাহলে সেখানে টাকা পাঠালে কেবল নষ্টই হবে।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মামদানিকে কমিউনিস্ট হিসেবে উল্লেখ করে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
এছাড়াও একই দিনে তার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি কমিউনিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জেতে, তাহলে সর্বনিম্ন প্রয়োজন থেকে বেশি ফেডারেল তহবিল দেওয়া আমার জন্য অসম্ভব।’
এর আগে চলতি বছরের জুনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে (প্রাথমিক বাছাইয়ে) বিপুল ভোট পেয়ে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনীত হয়েছিলেন মামদানি। তাঁর জয়ের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক পোস্টে মামদানির চেহারা, কণ্ঠস্বর ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিদ্রূপ করেছেন এবং তাঁকে ‘শতভাগ পাগল কমিউনিস্ট’ বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।
ওই সময় ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘জোহরান মামদানি শতভাগ পাগল কমিউনিস্ট, ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারি জিতে এখন তিনি মেয়র হওয়ার পথে। এর আগেও আমরা উগ্র বামপন্থীদের দেখেছি, তবে এটা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে উঠেছে। মামদানি দেখতে ভয়ংকর, বিরক্তিকর কণ্ঠ, তাঁর বুদ্ধিসুদ্ধিও খুব একটা নেই।’
তবে ৫ নভেম্বর মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। ফক্স নিউজের ব্রেট বেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘মামদানিকে ওয়াশিংটনের প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, কারণ যদি সে তা না হয়, তাহলে তার সফল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি তাকে সফল করতে চাই। আমি শহরটিকে সফল করতে চাই।" যদিও এই কথার পরপরই ট্রাম্প দ্রুত স্পষ্ট করে দেন, তিনি নিউইয়র্ক সিটিকে সফল করতে চান, মামদানিকে নয়।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহরগুলোর একটি নিউইয়র্ক সিটি। এই শহর পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, যে কারণে ফেডারেল তহবিল নিউইয়র্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার অফিসের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল নিউইয়র্কের বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়। এই তহবিলগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, পরিবহন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির জন্য ব্যবহার করা হয়।
শহরের সাবওয়ে সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ, পাবলিক স্কুলের কার্যক্রমে সহায়তা ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফেডারেল তহবিল ব্যবহৃত হয়। যদি এই তহবিল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নিউইয়র্কের জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। শহরের পরিষেবাগুলো ব্যাহত হতে পারে এবং অনেক প্রকল্প থমকে যেতে পারে।
ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার ক্ষমতা কি প্রেসিডেন্টের হাতে আছে? এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা জটিল। আমেরিকান সংবিধান ও আইনী কাঠামো অনুযায়ী, ফেডারেল তহবিলগুলো নির্দিষ্ট আইন ও নিয়মের অধীনে বিতরণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট চাইলেই কোনো শহর বা রাজ্যের তহবিল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন না। মার্কিন ফেডারেল সরকারের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এটি করা প্রায় অসম্ভব। এসব ক্ষেত্রে কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করে এবং তহবিলের বরাদ্দ নির্ধারণ করে। প্রেসিডেন্ট কেবল সেই আইনগুলো কার্যকর করতে পারেন।
তবে, প্রেসিডেন্ট কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কর্মসূচির জন্য তহবিল স্থগিত বা পুনর্বণ্টন করার ক্ষমতা রাখেন, বিশেষ করে জাতীয় জরুরি অবস্থা বা গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে। কিন্তু একটি শহরের নির্বাচিত মেয়রের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তহবিল বন্ধ করা আইনিভাবে বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। হার্ভার্ড ল রিভিউ-এর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ আদালতে টিকতে পারবে না।
উল্টো ট্রাম্প এমন দাবি নিয়ে আদালত পর্যন্ত পৌঁছালে আদালত এমন পদক্ষেপকে সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে দেখতে পারে।
নিজের প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল কাটার চেষ্টা করেছিলেন। অভিবাসন নীতি নিয়ে মতবিরোধের কারণে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু ‘অভয়ারণ্য শহর’ থেকে তহবিল কাটার হুমকি দিয়েছিল। নিউইয়র্ক সিটিও সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রচেষ্টাগুলো আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ফেডারেল সরকার কেবল কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না হলে তহবিল কাটতে পারে। ওই সময় আদালত রায় দিয়েছিল, কোনো শহরের অভিবাসন নীতি শহরটির ফেডারেল তহবিল কাটার জন্য কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়।
ট্রাম্প অতীতেও এমন হুমকি দিয়েছেন কিন্তু আইনি বাধার কারণে তার হুমকি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করতে পারেননি। নিউইয়র্ক সিটির শক্তিশালী আইনি দল এবং নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো সবসময়ই এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
মামদানির জয়ের পর ট্রাম্পের পূর্ববর্তী হুমকি ও সাম্প্রতিক মন্তব্য এখন নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে, ট্রাম্পের পক্ষে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা খুব কঠিন হবে। আমেরিকান সংবিধান এবং আইনের শাসন এমন স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। কংগ্রেসের অনুমোদন ও আদালতের সম্মতি ছাড়া এমন বড় ধরনের আর্থিক কাটছাঁট সম্ভব নয়। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলোতে শর্তসাপেক্ষে সহায়তার ইঙ্গিত থাকলেও, তার মৌলিক আপত্তি এখনো বিদ্যমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেনও, নিউইয়র্ক সিটি তার অধিকার রক্ষা করতে ও ফেডারেল তহবিল নিশ্চিত করতে নিশ্চিতভাবে আইনি লড়াইয়ে নামবে। ফলে ট্রাম্পের হুমকি কেবল রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই থেকে যেতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা ও পলিটিকো

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয়কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা দেখছেন গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে। মামদানির বিজয় কেবল নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের জন্যই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। নিজের বিজয়োত্তর ভাষণে মামদানি ঘোষণা করেছেন, নিউইয়র্ক ‘রাজনৈতিক অন্ধকারের মুহূর্তে’ ‘আলো’ হয়ে উঠবে এবং বিভাজনের রাজনীতির মোকাবিলা করবে। মামদানির এই বিজয় হোয়াইট হাউসের সঙ্গে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাতের মঞ্চ তৈরি করেছে। বিশেষ করে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন। এই মুখোমুখি অবস্থান এখন গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে: ট্রাম্প কি সত্যিই এই হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারবেন, নাকি ম্যাডম্যান থিওরি প্রয়োগ করে ট্রাম্পের রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল?
চলতি বছরের ৩ নভেম্বর সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি নিউইয়র্ক সিটি মেয়র প্রার্থী মামদানির জনপ্রিয়তা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার জন্য নিউইয়র্কে প্রচুর টাকা দেওয়া কঠিন হবে। কারণ যদি একজন কমিউনিস্ট (মামদানি) নিউইয়র্ক চালায়, তাহলে সেখানে টাকা পাঠালে কেবল নষ্টই হবে।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, মামদানিকে কমিউনিস্ট হিসেবে উল্লেখ করে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
এছাড়াও একই দিনে তার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি কমিউনিস্ট প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জেতে, তাহলে সর্বনিম্ন প্রয়োজন থেকে বেশি ফেডারেল তহবিল দেওয়া আমার জন্য অসম্ভব।’
এর আগে চলতি বছরের জুনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে (প্রাথমিক বাছাইয়ে) বিপুল ভোট পেয়ে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনীত হয়েছিলেন মামদানি। তাঁর জয়ের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক পোস্টে মামদানির চেহারা, কণ্ঠস্বর ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিদ্রূপ করেছেন এবং তাঁকে ‘শতভাগ পাগল কমিউনিস্ট’ বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।
ওই সময় ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘জোহরান মামদানি শতভাগ পাগল কমিউনিস্ট, ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারি জিতে এখন তিনি মেয়র হওয়ার পথে। এর আগেও আমরা উগ্র বামপন্থীদের দেখেছি, তবে এটা রীতিমতো হাস্যকর হয়ে উঠেছে। মামদানি দেখতে ভয়ংকর, বিরক্তিকর কণ্ঠ, তাঁর বুদ্ধিসুদ্ধিও খুব একটা নেই।’
তবে ৫ নভেম্বর মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুরে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। ফক্স নিউজের ব্রেট বেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘মামদানিকে ওয়াশিংটনের প্রতি কিছুটা শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, কারণ যদি সে তা না হয়, তাহলে তার সফল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি তাকে সফল করতে চাই। আমি শহরটিকে সফল করতে চাই।" যদিও এই কথার পরপরই ট্রাম্প দ্রুত স্পষ্ট করে দেন, তিনি নিউইয়র্ক সিটিকে সফল করতে চান, মামদানিকে নয়।
আমেরিকার সবচেয়ে বড় ও জনবহুল শহরগুলোর একটি নিউইয়র্ক সিটি। এই শহর পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, যে কারণে ফেডারেল তহবিল নিউইয়র্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার অফিসের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল নিউইয়র্কের বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়। এই তহবিলগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, পরিবহন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির জন্য ব্যবহার করা হয়।
শহরের সাবওয়ে সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ, পাবলিক স্কুলের কার্যক্রমে সহায়তা ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ফেডারেল তহবিল ব্যবহৃত হয়। যদি এই তহবিল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নিউইয়র্কের জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। শহরের পরিষেবাগুলো ব্যাহত হতে পারে এবং অনেক প্রকল্প থমকে যেতে পারে।
ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার ক্ষমতা কি প্রেসিডেন্টের হাতে আছে? এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা জটিল। আমেরিকান সংবিধান ও আইনী কাঠামো অনুযায়ী, ফেডারেল তহবিলগুলো নির্দিষ্ট আইন ও নিয়মের অধীনে বিতরণ করা হয়। প্রেসিডেন্ট চাইলেই কোনো শহর বা রাজ্যের তহবিল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারেন না। মার্কিন ফেডারেল সরকারের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এটি করা প্রায় অসম্ভব। এসব ক্ষেত্রে কংগ্রেস আইন প্রণয়ন করে এবং তহবিলের বরাদ্দ নির্ধারণ করে। প্রেসিডেন্ট কেবল সেই আইনগুলো কার্যকর করতে পারেন।
তবে, প্রেসিডেন্ট কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কর্মসূচির জন্য তহবিল স্থগিত বা পুনর্বণ্টন করার ক্ষমতা রাখেন, বিশেষ করে জাতীয় জরুরি অবস্থা বা গুরুতর নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে। কিন্তু একটি শহরের নির্বাচিত মেয়রের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তহবিল বন্ধ করা আইনিভাবে বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। হার্ভার্ড ল রিভিউ-এর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ আদালতে টিকতে পারবে না।
উল্টো ট্রাম্প এমন দাবি নিয়ে আদালত পর্যন্ত পৌঁছালে আদালত এমন পদক্ষেপকে সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে দেখতে পারে।
নিজের প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল কাটার চেষ্টা করেছিলেন। অভিবাসন নীতি নিয়ে মতবিরোধের কারণে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু ‘অভয়ারণ্য শহর’ থেকে তহবিল কাটার হুমকি দিয়েছিল। নিউইয়র্ক সিটিও সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রচেষ্টাগুলো আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ফেডারেল সরকার কেবল কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না হলে তহবিল কাটতে পারে। ওই সময় আদালত রায় দিয়েছিল, কোনো শহরের অভিবাসন নীতি শহরটির ফেডারেল তহবিল কাটার জন্য কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়।
ট্রাম্প অতীতেও এমন হুমকি দিয়েছেন কিন্তু আইনি বাধার কারণে তার হুমকি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করতে পারেননি। নিউইয়র্ক সিটির শক্তিশালী আইনি দল এবং নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো সবসময়ই এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
মামদানির জয়ের পর ট্রাম্পের পূর্ববর্তী হুমকি ও সাম্প্রতিক মন্তব্য এখন নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে, ট্রাম্পের পক্ষে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা খুব কঠিন হবে। আমেরিকান সংবিধান এবং আইনের শাসন এমন স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। কংগ্রেসের অনুমোদন ও আদালতের সম্মতি ছাড়া এমন বড় ধরনের আর্থিক কাটছাঁট সম্ভব নয়। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলোতে শর্তসাপেক্ষে সহায়তার ইঙ্গিত থাকলেও, তার মৌলিক আপত্তি এখনো বিদ্যমান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেনও, নিউইয়র্ক সিটি তার অধিকার রক্ষা করতে ও ফেডারেল তহবিল নিশ্চিত করতে নিশ্চিতভাবে আইনি লড়াইয়ে নামবে। ফলে ট্রাম্পের হুমকি কেবল রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই থেকে যেতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা ও পলিটিকো
.png)

নিউইয়র্কের মেয়র পদে জিতেছেন জোহরান মামদানি। এর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে চায়ের টং, সবখানেই তাঁকে নিয়ে কথা হচ্ছে। আধুনিক সময়ে নিউইয়র্কের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র হওয়ার পাশাপাশি মামদানি প্রথম মুসলমান ও দক্ষিণ এশীয় মেয়রও বটে।
১ দিন আগে
মামদানির সমাজতান্ত্রিক নীতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিজম আসলে কী, আর কী নয়। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। জুন মাসে এনবিসির মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে মামদানি সরাসরি বলেন, ‘আমি কমিউনিস্ট নই।’
১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩০ অক্টোবর মার্কিন যুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন ‘অবিলম্বে’ পুনরায় পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করতে। এর মাধ্যমে তিনি ১৯৯২ সালে শুরু হওয়া ৩৩ বছরের স্বেচ্ছা-নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটান।
২ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে রেকর্ড ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন স্বঘোষিত গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী জোহরান মামদানি। মামদানি শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র, প্রথম ভারতীয়-উগান্ডান বংশোদ্ভূত এবং সবচেয়ে তরুণ মেয়র। এই বিজয় ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরেও একটি নতুন ধারা সূচিত করেছে।
২ দিন আগে