জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা—সবখানেই আছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা—সবখানেই আছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি।
যদিও এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এ ছাড়া আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। কোণঠাসা হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তারাও। তবে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) পদে বসেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক নেতা বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে, ৫ আগস্টের পর অধ্যাপক সোহেল আহমেদের হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত হয়েছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশকেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য জাকসু নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য আব্দুর রশিদ জিতু। তাঁকে সামনে রেখেই মূলত স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই প্যানেল সাজানো হয়েছে।
তবে এই প্যানেলে প্রার্থী হিসেবে একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী রয়েছেন। এমনকি প্রচারণাতেও অংশ নিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মওলানা ভাসানী হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুর শাওন ৫ আগস্ট পর হলে থাকতেন না। কিন্তু জাকসু উপলক্ষে চলে এসেছেন হলে। জিতুর হয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ ছাড়া মওলানা ভাসানী হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রিফাত, রফিকুল ইসলাম সিফাত, মীর মশাররফ হোসেন হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মৃন্ময় দাস, কামাল উদ্দিন হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মুজতাহিদসহ একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে আব্দুর রশিদ জিতুর প্রচারণায় দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এ নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুসহ প্যানেলের অন্য সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। দিচ্ছেন বুদ্ধি-পরামর্শও।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাকসুর একজন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী স্ট্রিমকে বলেন, ছাত্রদল, শিবির বা বাগছাসকে টাকা দেওয়ার জন্য, লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তাদের দল রয়েছে। কিন্তু জিতুর প্যানেলের কে আছে? এত টাকা জিতু কোথা থেকে পাচ্ছে? আমরা খবর পেয়েছি উপ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ জিতুকে সাহায্য করছেন।
এদিকে একটি টকশোতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে একটি আলাপ রয়েছে—ঘুমন্ত ছাত্রলীগকে জিতু ভাই শেল্টার দিচ্ছে।’ বক্তব্যটি শুনেই টকশোতে জিতু উত্তেজিত হয়ে যান।
একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছেলেদের প্রতিটি হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে জিতুর পক্ষে কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে যখন আন্দোলন হয়, তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মদদের অভিযোগ আছে সোহেল আহমেদের বিরুদ্ধে। তৎকালীন উপাচার্য ফারজানা ইসলামের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মোছার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাতে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে, সে জন্য অনশনে বসেছিলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুর রহমান এনাম। ওই সময় সোহেল আহমেদ ও ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু এনামের অনশনে সংহতি জানিয়েছিলেন। পরে তৎকালীন প্রশাসন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের দুই নেতা অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ফোন করা হলেও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আরও যাঁদের বিরুদ্ধে
জিতুর প্যানেলে সহসমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম। তিনি হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রার্থী ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ছাত্রলীগের ব্লকে থাকাসহ নিয়মিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। ছাত্রলীগের আনন্দ র্যালিতেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজ গাজীকে দেখা গেছে জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রচারণায়। মাহফুজ ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত। তা ছাড়া হল ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ব্লকের শিক্ষার্থীরাও ওই প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
জুলাইয়ের হামলায় অভিযুক্ত মাহফুজ গাজীকে নিয়ে তদন্ত কাজ চলমান আছে বলে নিশ্চিত করেন অধিকতর তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘একটা সিন্ডিকেট সভায় যাঁরা হামলাকারী ছিল, তাদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। ঠিক একই সময়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে আরও বেশ কয়েকজনকে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে, সেখানে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ গাজীর নাম রয়েছে। নতুন নাম আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে তদন্ত কাজ চলমান আছে।’
এদিকে অভিযুক্ত হামলাকারীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণার ঘটনাকে অনেকেই জাকসু নির্বাচন বানচাল করার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। অনেক প্রার্থী এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্য প্যানেলের প্রার্থীরা কী বলছেন
বামপন্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সংশপ্তক পর্ষদ’র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘প্রচারণায় জুলাইয়ের হামলাকারীদের অংশগ্রহণ আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক। যাঁর বা যাঁদের ব্যাপারে তদন্ত চলমান আছে, তাঁরা প্রচারণায় অংশ নেওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের তো ক্যাম্পাসেই থাকার কথা না—যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচার কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব, অনতিবিলম্বে ওই প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি যেই প্যানেল থেকে নির্বাচন করছে সেই প্যানেলের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জুলাইয়ে হামলাকারী সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অনেককে নানা ফ্রেমিংয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, এটি তার একটি প্রয়াস কিনা, সেটা আমাদের প্রশ্ন থাকবে। নির্বাচন কমিশনারকে এই ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সন্ত্রাসী সংগঠনের কোনো প্রকার আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী শেখ সাদি বলেন, ‘এই ধরনের চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে যাঁরা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাঁরাও অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। কোনো প্রার্থী অপরাধীদের নিয়ে মাঠে থাকার দুঃসাহস দেখাতে চাইলে আমরা সেটা কখনোই মেনে নেব না, বরদাশতও করব না। প্রশাসনের উচিত হবে বিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
আনজুমের পক্ষে অন্যরা কী বলছেন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তূলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক মেহরাব সিফাতের ঘনিষ্ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত জান্নাতুল ফিরদাউস আনজুম। গত বছরের ২১ নভেম্বর রাজধানীর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তিনি উপস্থিত হলে সেটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ বিষয়ে মেহেরাব সিফাত স্ট্রিমকে বলেন, ‘আনজুম ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন না। সবাই জানে যে হল থেকে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে যেতো অনুষ্ঠানে। হয়তো তেমনই কোন অনুষ্ঠানেরই তার কোনো ছবি আছে। তবে তিনি তার প্রচারণায় কোন ছাত্রলীগ কর্মী রেখেছেন কিনা, এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রশিদ জিতুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের ব্যাপারে কিছু না বললেও জান্নাতুল ফিরদাউস আনজু্মের বিষয়ে স্ট্রিমকে বলেন, প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নেওয়া হতো। তাই সে সময়ের ছবি দিয়ে কাউকে বিচার করাটা ভুল।
জিতু আরও বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে কোন বিতর্কিত বা সমালোচিত কাউকে রাখিনি। তবে প্রচারের সময় আনজুমের সাথে ছাত্রলীগের কেউ থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আপনারা দেখবেন যখন আমরা প্যানেল হিসেবে প্রচারণা করি, তখন সেখানে বাইরের কেউ থাকে না। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা যদি প্রামাণিত হয়, তাহলে আমরা প্যানেলের সকলে মিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা—সবখানেই আছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি।
যদিও এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এ ছাড়া আরেক শীর্ষ কর্মকর্তা ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্টের আগেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। কোণঠাসা হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তারাও। তবে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) পদে বসেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক নেতা বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে, ৫ আগস্টের পর অধ্যাপক সোহেল আহমেদের হাত ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত হয়েছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশকেও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য জাকসু নির্বাচনে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য আব্দুর রশিদ জিতু। তাঁকে সামনে রেখেই মূলত স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই প্যানেল সাজানো হয়েছে।
তবে এই প্যানেলে প্রার্থী হিসেবে একাধিক ছাত্রলীগ কর্মী রয়েছেন। এমনকি প্রচারণাতেও অংশ নিয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মওলানা ভাসানী হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুর শাওন ৫ আগস্ট পর হলে থাকতেন না। কিন্তু জাকসু উপলক্ষে চলে এসেছেন হলে। জিতুর হয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ ছাড়া মওলানা ভাসানী হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী রিফাত, রফিকুল ইসলাম সিফাত, মীর মশাররফ হোসেন হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মৃন্ময় দাস, কামাল উদ্দিন হলের সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মুজতাহিদসহ একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে আব্দুর রশিদ জিতুর প্রচারণায় দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এ নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুসহ প্যানেলের অন্য সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। দিচ্ছেন বুদ্ধি-পরামর্শও।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জাকসুর একজন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী স্ট্রিমকে বলেন, ছাত্রদল, শিবির বা বাগছাসকে টাকা দেওয়ার জন্য, লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তাদের দল রয়েছে। কিন্তু জিতুর প্যানেলের কে আছে? এত টাকা জিতু কোথা থেকে পাচ্ছে? আমরা খবর পেয়েছি উপ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ জিতুকে সাহায্য করছেন।
এদিকে একটি টকশোতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে একটি আলাপ রয়েছে—ঘুমন্ত ছাত্রলীগকে জিতু ভাই শেল্টার দিচ্ছে।’ বক্তব্যটি শুনেই টকশোতে জিতু উত্তেজিত হয়ে যান।
একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছেলেদের প্রতিটি হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে জিতুর পক্ষে কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে যখন আন্দোলন হয়, তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মদদের অভিযোগ আছে সোহেল আহমেদের বিরুদ্ধে। তৎকালীন উপাচার্য ফারজানা ইসলামের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মোছার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাতে দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে, সে জন্য অনশনে বসেছিলেন ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুর রহমান এনাম। ওই সময় সোহেল আহমেদ ও ভিপি পদপ্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু এনামের অনশনে সংহতি জানিয়েছিলেন। পরে তৎকালীন প্রশাসন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের দুই নেতা অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ফোন করা হলেও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আরও যাঁদের বিরুদ্ধে
জিতুর প্যানেলে সহসমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস আনজুম। তিনি হল ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রার্থী ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ছাত্রলীগের ব্লকে থাকাসহ নিয়মিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। ছাত্রলীগের আনন্দ র্যালিতেও তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহফুজ গাজীকে দেখা গেছে জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রচারণায়। মাহফুজ ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত। তা ছাড়া হল ছাত্রলীগের রাজনৈতিক ব্লকের শিক্ষার্থীরাও ওই প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
জুলাইয়ের হামলায় অভিযুক্ত মাহফুজ গাজীকে নিয়ে তদন্ত কাজ চলমান আছে বলে নিশ্চিত করেন অধিকতর তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রব। তিনি বলেন, ‘একটা সিন্ডিকেট সভায় যাঁরা হামলাকারী ছিল, তাদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। ঠিক একই সময়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে আরও বেশ কয়েকজনকে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে, সেখানে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ গাজীর নাম রয়েছে। নতুন নাম আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে তদন্ত কাজ চলমান আছে।’
এদিকে অভিযুক্ত হামলাকারীকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণার ঘটনাকে অনেকেই জাকসু নির্বাচন বানচাল করার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। অনেক প্রার্থী এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অন্য প্যানেলের প্রার্থীরা কী বলছেন
বামপন্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সংশপ্তক পর্ষদ’র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘প্রচারণায় জুলাইয়ের হামলাকারীদের অংশগ্রহণ আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক। যাঁর বা যাঁদের ব্যাপারে তদন্ত চলমান আছে, তাঁরা প্রচারণায় অংশ নেওয়া তো দূরের কথা, তাঁদের তো ক্যাম্পাসেই থাকার কথা না—যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচার কার্যক্রম শেষ হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাব, অনতিবিলম্বে ওই প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি যেই প্যানেল থেকে নির্বাচন করছে সেই প্যানেলের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
শিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘জুলাইয়ে হামলাকারী সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অনেককে নানা ফ্রেমিংয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, এটি তার একটি প্রয়াস কিনা, সেটা আমাদের প্রশ্ন থাকবে। নির্বাচন কমিশনারকে এই ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সন্ত্রাসী সংগঠনের কোনো প্রকার আস্ফালন মেনে নেওয়া হবে না।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী শেখ সাদি বলেন, ‘এই ধরনের চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে যাঁরা প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাঁরাও অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। কোনো প্রার্থী অপরাধীদের নিয়ে মাঠে থাকার দুঃসাহস দেখাতে চাইলে আমরা সেটা কখনোই মেনে নেব না, বরদাশতও করব না। প্রশাসনের উচিত হবে বিধি অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’
আনজুমের পক্ষে অন্যরা কী বলছেন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তূলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক মেহরাব সিফাতের ঘনিষ্ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত জান্নাতুল ফিরদাউস আনজুম। গত বছরের ২১ নভেম্বর রাজধানীর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তিনি উপস্থিত হলে সেটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ বিষয়ে মেহেরাব সিফাত স্ট্রিমকে বলেন, ‘আনজুম ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলেন না। সবাই জানে যে হল থেকে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে যেতো অনুষ্ঠানে। হয়তো তেমনই কোন অনুষ্ঠানেরই তার কোনো ছবি আছে। তবে তিনি তার প্রচারণায় কোন ছাত্রলীগ কর্মী রেখেছেন কিনা, এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে আব্দুর রশিদ জিতুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের ব্যাপারে কিছু না বললেও জান্নাতুল ফিরদাউস আনজু্মের বিষয়ে স্ট্রিমকে বলেন, প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নেওয়া হতো। তাই সে সময়ের ছবি দিয়ে কাউকে বিচার করাটা ভুল।
জিতু আরও বলেন, ‘আমাদের প্যানেলে কোন বিতর্কিত বা সমালোচিত কাউকে রাখিনি। তবে প্রচারের সময় আনজুমের সাথে ছাত্রলীগের কেউ থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আপনারা দেখবেন যখন আমরা প্যানেল হিসেবে প্রচারণা করি, তখন সেখানে বাইরের কেউ থাকে না। তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, তা যদি প্রামাণিত হয়, তাহলে আমরা প্যানেলের সকলে মিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’
নানা মেরুকরণের এই নির্বাচনে বামপন্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যকার বিভেদ দূর করতে পারেনি। ঐক্যের চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। ফলে তিনটি আলাদা প্যানেলে নির্বাচনে লড়ছেন বামপন্থী শিক্ষার্থীরা, যা ভোটের মাঠে তাঁদের অবস্থানকে দুর্বল করেছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
২ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ছাত্র সংগঠনগুলোর গুরুত্ব অনেক প্রাচীন। ১৮৮৫ সালে ভারতের প্রথম রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ শুরু হয়।
৫ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদসহ ২৮টি পদের ২৩টিতেই জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ডাকসুর ইতিহাসে একবারই প্রথম জয় পেল শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সবার মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে কী ভাবেছেন ডাকসুর সাবে
৭ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমি আজকে ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাই যাঁরা ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হয়েছে তাঁদের। এটাই গণতন্ত্রের রীতি।’
১১ ঘণ্টা আগে