leadT1ad

বিএনপি ১৫ আসন ছাড়তে পারে শরিকদের

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৩
বিএনপির লোগো

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সম্ভাব্য বলা হলেও এসব আসনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা খুব কম। বাকি ২৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করবে তফসিল ঘোষণার পর।

সবকিছু ঠিক থাকলে আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তবে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। দেখা দিয়েছে দূরত্ব।

সূত্রের দাবি, বিএনপির কাছে থেকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি আসনে ছাড় চায় যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জিততে পারে এমন প্রার্থী ঠিক করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ বিবেচনায় ফাঁকা রাখা ২৮টির মধ্যে শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ আসন রাখতে চাইছে। কারণ হিসেবে নীতিনির্ধারকরা বলছেন, শরিক দলগুলো থেকে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী খুবই কম। এরপরও শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।

অবশ্য প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন মোকাবিলা ও বিজয়ী হলে সরকার গঠন করতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। গত ৮ ডিসেম্বর রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। শিগগির অন্য দল ও জোটের সঙ্গে বসবেন বিএনপির নেতারা।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন স্ট্রিমকে বলেছেন, আমাদের তো অনেক বিষয়ে কাজ চলছে। জোটের ব্যাপারে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আসন বণ্টন নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অন্য ১৩টি আসন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের আশঙ্কায় ছয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। পাবনা-১, নীলফামারী-২ ও ময়মনসিংহ-১০ আসন এখনো ফাঁকা। কারণ বিএনপি নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী পায়নি। আর চারটি আসনে আসনসীমানা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি। এগুলো হলো- বাগেরহাট-১, বাগেরহাট-২, বাগেরহাট-৩ ও গাজীপুর-১ আসন।

বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে ১২ দলীয় জোট, ১১ দলের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, বিজেপি, এনডিএম, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও গণফোরাম। এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, বিএনপি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখছে না এবং তারা একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বিএনপি ৩৬ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পর ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা ৬ ডিসেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জোটের নেতারা বিস্মিত ও মর্মাহত।

শরিক দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আগে ওই আসনে তাঁকে কাজ করার জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল বিএনপি থেকে। দ্বিতীয় দফায় এখানে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবালকে প্রার্থী করা হয়েছে।

নড়াইল-২ (সদরের একাংশ ও লোহাগড়া) আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালে এই আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবারও এই আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেছিলেন এনপিপির নেতাকর্মীরা। তবে এখানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামকে বেছে নিয়েছে হাইকমান্ড।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেছেন, বিএনপি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এটা গণতন্ত্রের জন্য একধরনের অশনিসংকেত।

একইভাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এখানে রফিকুল ইসলাম জামালকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইরান পিরোজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। তাঁর বাড়িও এই জেলায়।

ঝালকাঠী-১ আসনে বিএনপি প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ ইরান দলটির সঙ্গে প্রায় ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। লেবার পার্টির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার চরম সংকটকালে, যখন তাঁর সবচেয়ে বেশি দৃঢ় রাজনৈতিক ঐক্য ও বন্ধুত্বের প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সময় মিত্রদের সঙ্গে এমন আচরণ কেউ প্রত্যাশা করেনি। এ আচরণ রাজনৈতিক অমর্যাদা ও অকৃতজ্ঞতার এক বেদনাদায়ক নজির হয়ে থাকবে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বর্তমানে বিএনপি নির্বাচনী জোট নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়, হয়তো মিত্রদের কিছু আসনে তারা প্রার্থী দেবে না। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। আমরাও শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই।

যেসব আসন পেতে পারে শরিকরা

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, যে ২৮ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫টি আসন শরিকদের জন্য রাখা হতে পারে। এর মধ্যে নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ের নেতা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপি থেকে আছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম তুহিন। আলোচনা করে এটি শেষ পর্যন্ত শরিকদের জন্য ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি।

বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না জোটের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন, মোটামুটি নিশ্চিত। একইভাবে পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি নিজ দলের প্রার্থী দেয়নি। এখান থেকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নির্বাচন করতে চান।

ঝিনাইদহ-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের জোটের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঢাকা-১৩ আসন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের জন্য রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা-১৭ আসন খালি রাখা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের জন্য।

লক্ষ্মীপুর-১ শরিক বিএলডিপির জন্য রাখা হলেও, গত সোমবার নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বিএলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।

শরিকদের জন্য বিবেচনায় থাকা অন্যান্য আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ এ জমিয়তে উলামার মুফতি মনির হোসেন কাসেমী জোটের সমর্থন পেতে পারেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে সমর্থন পেতে পারেন আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদে ছেলে ওমর ফারুক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জমিয়তে উলামায়ের জুনায়েদ আল হাবিব ও সিলেট-৫ আসনে একই দলের মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এছাড়া ফাঁকা রাখা পাবনা-১, নীলফামারী-২ ও ময়মনসিংহ-১০ আসন বিএনপি শরিকদের জন্য ছেড়ে দিতে পারে বলে জানা গেছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত