leadT1ad

এনসিপিতে ভিন্নমত-অসন্তোষ, পদত্যাগের চিন্তা কেন্দ্রীয় নেতাদেরও

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। স্ট্রিম গ্রাফিক

গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ কারণে অভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয় রাজনীতিতে দলটির গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ছিল। কিন্তু দল গঠনের সাত মাসের মধ্যেই মতভিন্নতা ও অসন্তোষ থেকে বেশ কয়েকটি এলাকায় নানা পর্যায়ের নেতারা পদত্যাগ করেছেন। এখন কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাও সেই পথে হাঁটছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, উচ্চপর্যায়ে থাকা দুই নেতা ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

এনসিপির কয়েকজন নেতা স্ট্রিমকে জানান, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে তাঁদের সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের ‘ভরাডুবির’ পর সংকট ঘনীভূত হয়েছে। ওই দুই নির্বাচনে এনসিপির নীতিগত সমর্থন ছিল গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা নেতাদের নিয়ে গড়া ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) প্রতি। তবে নির্বাচনে এনসিপির অনেক নেতাকর্মী বাগছাসের বদলে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে কাজ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ডাকসু ও জাকসুতে বাগছাসের ফল বিশ্লেষণে এমন তথ্য পাওয়ায় এনসিপির অনেকেই ক্ষুব্ধ। ওই বিশ্লেষণে সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি দলের মধ্যে আদর্শিক সংকট তথ্যও এসেছে।

উপজেলা, জেলা বা মহানগর পর্যায়ের কেউ কেউ হয়তোবা তাঁর পার্সোনাল পজিশন নিয়েছে। এই ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে সরাসরি শিবিরের জন্য এনসিপির কেউ নির্বাচন করেছে বা কাজ করছে, এটা আমরা দেখিনি। যদি এ রকম নজরে আসে, তাইলে হয়তোবা দল সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, দল নীতিগতভাবে বাগছাসকে সমর্থন দেওয়ার জন্য একমত হয়েছিল। ‌এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও দলটির শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল আমিন

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে এনসিপির কিছু নেতার শিবিরের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি তাঁরা শুনেছেন। তবে তাঁরা কোনো প্রমাণ পাননি। প্রমাণ পেলে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। দুটি ছাত্র-সংসদ নির্বাচনে বাগছাস নেতাদের পরাজয় নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দলটির লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব এসব বিষয়ে বলেন, ‘আমরা নতুন একটা দল গঠন করেছি। ফলে সাংগঠনিক দুর্বলতার কিছু বিষয় আছে। সেজন্য একটু সময় লাগবে। আর পদত্যাগের বিষয়টা আমরা শুনেছি। দুজন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একজন জমা দেওয়ার অবস্থায় আছে। এটা আমরা মিউচুয়ালি সলভ করার চেষ্টা করছি।’

সম্প্রতি কয়েকটি দলের সঙ্গে এনসিপি একাধিকবার বৈঠক করেছে। সেখানে এনসিপির সঙ্গে দলগুলোর একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে তথ্য এসেছে। এমনকি গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি ভেঙে একটি নতুন দল গঠন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন। তবে এমন কোনো আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন এনসিপির নীতিনির্ধারক নেতারা।

তিনি আরও বলেন, ‘এনসিপিতে বিভিন্ন মতপথের লোক একসঙ্গে হয়েছে। এটা একটা ভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট। এখানে ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট, ছাত্রশিবিরের প্রেসিডেন্টকে একই টিমে দেখবেন... এটা তো অনেক বড় এক্সপেরিমেন্ট। বাংলাদেশে এই পলিটিক্সটা আগে কখনও হয় নাই। ফলে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।’

আর এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব ও দলটির শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল আমিন স্ট্রিমকে বলেন, ‘উপজেলা, জেলা বা মহানগর পর্যায়ের কেউ কেউ হয়তোবা তাঁর পার্সোনাল পজিশন নিয়েছে। এই ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে সরাসরি শিবিরের জন্য এনসিপির কেউ নির্বাচন করেছে বা কাজ করছে, এটা আমরা দেখিনি। যদি এ রকম নজরে আসে, তাইলে হয়তোবা দল সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ, দল নীতিগতভাবে বাগছাসকে সমর্থন দেওয়ার জন্য একমত হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদিও বাগছাস আমাদের সহযোগী সংগঠন না। কিন্তু আমরা একই বোঝাপড়ার মানুষ; একই রেভুল্যুশন থেকে উঠে আসা সংগঠন। তো ওইখান থেকে আমরা নীতিগতভাবে তাদের সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এটা নতুন কোনো দল নয়। এনসিপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ হয়তো একই প্ল্যাটফর্মে আসতে পারে। বিষয়টি আমরা এখনও ভাবছি। ‍এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব

অন্য দলে যুক্ত হওয়ার ‘আলোচনা’

সম্প্রতি কয়েকটি দলের সঙ্গে এনসিপি একাধিকবার বৈঠক করেছে। সেখানে এনসিপির সঙ্গে দলগুলোর একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে তথ্য এসেছে। এমনকি গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি ভেঙে একটি নতুন দল গঠন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন। তবে এমন কোনো আলোচনা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন এনসিপির নীতিনির্ধারক নেতারা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব স্ট্রিমকে বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এটা নতুন কোনো দল নয়। এনসিপির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ হয়তো একই প্ল্যাটফর্মে আসতে পারে। বিষয়টি আমরা এখনও ভাবছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আলাপটা হচ্ছে আসলে ওল্ড জেনারেশন ভার্সেস নিউ জেনারেশনের মধ্যে। যারা লাস্ট টেন ইয়ার্স বাংলাদেশের পলিটিক্সটা করছে বা যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, তাদের একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা। আরও কিছু সংগঠনের সঙ্গে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। তবে নির্বাচনী জোটের আলাপ হয়নি।’

এদিকে, ডানপন্থী জোট গঠনের সম্ভাবনা, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বিভিন্ন বিষয়ে আদর্শিক সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা। দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতর তৈরি হওয়া এসব বিষয়ের কারণে কেউ কেউ পদত্যাগের কথা ভাবছেন বলে জানান তাঁরা।

দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়ে স্ট্রিমকে জানান, ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে বাগছাস হারার পর অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, এনসিপি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে দুটি দল ভেঙে একটি দলে পরিণত হলে সাংগঠনিক শক্তি কমতে পারে। আর আদর্শিক সংকট ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বেশ কয়েকজন পদত্যাগের কথা ভাবছেন। তবে কেউ কেউ সে সিদ্ধান্ত আবার পরিবর্তনও করেছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত