leadT1ad

বুয়েটের সনি হত্যা মামলায় সাজা খাটার পর মাদক ও অস্ত্র কারবারে জড়ান টগর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী সাবিকুন নাহার সনি হত্যা মামলায় ১৯ বছর সাজা খাটার পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পাওয়া মুশফিক উদ্দিন টগর (৫০) অবৈধ মাদক ও অস্ত্র কারবারে জড়িয়ে পড়েন।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ১৫
কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছেন র‍্যাব ৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী সাবিকুন নাহার সনি হত্যা মামলায় ১৯ বছর সাজা খাটার পর রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পাওয়া মুশফিক উদ্দিন টগর (৫০) অবৈধ মাদক ও অস্ত্র কারবারে জড়িয়ে পড়েন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে র‍্যাব সদস্যরা জানতে পারেন, এই টগর বুয়েট শিক্ষার্থী সনি হত্যা মামলার সাজাখাটা আসামি। পরে তাঁর হেফাজত থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র ও ১৫৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের অস্থায়ী মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব ৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর আজিমপুর এলাকা থেকে মুশফিক উদ্দিন টগরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার হেফাজত থেকে পয়েন্ট ৩২ মি. মি.-এর ১টি রিভলবার, ১টি ম্যাগজিন, ১টি কাঠের পিস্তলের গ্রিপ, ১৫৫ রাউন্ড (২২ রাইফেল) গুলি, ১টি ৭.৬২ মি. মি.-এর মিসফায়ার গুলি, ১টি শর্টগানের খালি কার্তুজ, ২টি মুখোশ ও ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানান, ২০০২ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি ছিলেন টগর। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ১৯ বছর সাজা খাটেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় তিনি ওই হত্যা মামলার সাজা থেকে মুক্তি পান। কারাগার থেকে বের হয়ে টগর জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। রাজধানীর মুগদা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা আছে। তারপর ধীরে ধীরে অবৈধ অস্ত্র কারাবারে জড়িয়ে পড়েন।

র‍্যাব জানায়, সাজা খাটা অবস্থায় বিশেষ বিবেচনায় ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তিনি মুক্তি পান। মুক্তির পর তার বিরুদ্ধে মুগদা থানায় একটা মাদক মামলা হয়। সেইসময় থেকেই তিনি মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়েন। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের কাছে সরবরাহ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টগর জানিয়েছেন, তিনি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকার অপরাধীদের কাছে সরবরাহ করেন। তাঁর দেওয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে আরও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সাবেকুন নাহার সনি। ছবি: সংগৃহীত
সাবেকুন নাহার সনি। ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাব জানায়, সনি হত্যা মামলায় টগর ২০০২ সালের ২৪ জুন গ্রেপ্তার হন। এরপর টানা প্রায় ১৯ বছর সাজা খাটেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতির বিশেষ বিবেচনায় টপর কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

র‍্যাব ৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফিন জানান, র‍্যাব মূলত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গিয়ে তাঁর পরিচয় জানতে পারে। তারপর আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হই, তিনি বুয়েট শিক্ষার্থী সনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মুখোশ প্রসঙ্গে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, অনেকসময় নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য তিনি মুখোশ ব্যবহারের কথা জানিয়েছে। তবে ভিন্ন কোনো কারণও থাকতে পারে।

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুয়া জানান, লালবাগ থানায় টগরের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হচ্ছে। সেই মামলার আসামি হিসাবে তাঁকে লালবাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

লালবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইদুজ্জামান স্ট্রিমকে জানান, র‍্যাবের পক্ষ থেকে তাঁর বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। মামলার এজাহার পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০০২ সালের ৮ জুন দরপত্র নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের তৎকালীন ছাত্রদল নেতা মুশফিক উদ্দিন টগর গ্রুপের সংঘর্ষ বাধে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিহত হন সাবেকুন নাহার সনি। বুয়েটের কেমিপ্রকৌশল বিভাগের ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি সেদিন ক্লাস শেষে বুয়েটের হলে ফিরছিলেন।

সনির এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তি দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০০৩ সালের ২৯ জুন ঢাকার নিম্ন আদালতে মুকিত, টগর ও নুরুল ইসলাম সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। পরে ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট তাঁদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেয় হাইকোর্ট।

২৩ বছরেও ধরা পড়েনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মুকিত ও সাগর

সনি হত্যাকাণ্ডের পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২৩ বছর। এই সময়েও দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি মোকাম্মেল হায়াত খান ওরফে মুকিত ও নুরুল ইসলাম ওরফে সাগরকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরতে পারেনি। তাদের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কেও সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি র‍্যাব পুলিশ। সনি হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত ছয় আসামির মধ্যে বর্তমানে চারজন কারাগারে। পলাতক দুই আসামির মধ্যে এখনও পলাতক সাজাপ্রাপ্ত মুকিত ও সাগর। মুকিত বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করলেও সাগরের হদিস নেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত