জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে, দলটির অপর অংশের আয়োজিত দশম জাতীয় সম্মেলন সংক্রান্ত আবেদন নিয়ে কোনো করণীয় নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গত ২০ অক্টোবর জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বরাবর পাঠানো হয়। তবে চিঠিটি প্রকাশ্যে আসে গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) রাতে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় পার্টি এর আগে চলতি বছরের ৮ জুলাই, ১৭ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে একাধিকবার চিঠি পাঠায়। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন বর্তমানে বিচারাধীন, এবং দেওয়ানী মামলায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে, তাই ইসির কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে চিঠিতে জানানো হয়।
জাপাকে ইসি এমন সময় চিঠিটি দিয়েছে যখন নির্বাচন কমিশন নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের কাজের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কারণ ইসি আসছে নভেম্বরে নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনি সংলাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে, চিঠিটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে জাপার দুইটি অংশের মধ্যে তুমুল আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জি এম কাদেরের সমর্থকেরা দাবি করছেন, ইসির এই চিঠির মাধ্যমে কার্যত জি এম কাদের ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তবে অপর পক্ষ বলছে, চিঠিতে কোথাও শামীম হায়দার পাটোয়ারীর পদবী মহাসচিব হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি, অর্থাৎ তাদের মতে, এটি পূর্ণ স্বীকৃতি নয়।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেছে, জি এম কাদেরের গত ৭ জুলাই দেওয়া বহিষ্কারাদেশটি অবৈধ। ওইদিন তিনি তখনকার সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো–চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ জন শীর্ষ নেতাকে অব্যাহতি দেন।
পরবর্তীতে অব্যাহতি পাওয়া নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই আদালত জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই অবস্থায় বিদ্রোহী জ্যেষ্ঠ নেতারা জি এম কাদেরকে বাদ দিয়েই দলীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করেন।
এই সময়েই ২০১৯ সালে আলাদা হওয়া রওশন এরশাদপন্থিদের সঙ্গে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বাধীন অংশের ঐক্য গড়ে ওঠে।
তবে গত ১৩ আগস্ট আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জি এম কাদের ও মাহমুদ আলমের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করলে আদালত নতুন আদেশ দেন। ফলে জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাধা ওঠে যায়।
জাপার গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী, দলের চেয়ারম্যান যেকোনো সদস্যকে কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যেকোনো পদ থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। এই ধারা চেয়ারম্যানকে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করে, যার ফলে অতীতেও একাধিক শীর্ষ নেতা পদচ্যুত হয়েছেন। মূলত এই ধারা নিয়েই তৎকালীন মহাসচিব ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের বিরোধ বাঁধে।
এই ধারা নিয়ে ২০১৯ সালে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। পরে ২০২২ সালের নভেম্বরে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিম্ন আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনে ‘স্বীকৃতি’ চেয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বাধীন জাপার দেওয়া চিঠির কোনো জবাব পাননি বলে নিশ্চিত করেছেন এই অংশের দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক।