leadT1ad

হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে চায় জামায়াত, দায়িত্বে উলামা কমিটি

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ‘নিবিড়’ করতে উলামা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে দলটি। দায়িত্ব পেয়ে উলামা নেতারা হেফাজত নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। স্ট্রিম গ্রাফিক

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ‘নিবিড়’ করতে উলামা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে দলটি। দায়িত্ব পেয়ে উলামা নেতারা হেফাজত নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। উলামা কমিটি বলছে, ‘বিভিন্ন এজেন্সি সক্রিয়’ থাকায় শীর্ষ আলেমদের নিয়ে এক সঙ্গে বসা যাচ্ছে না, তবে পর্দার আড়ালে তাঁরা সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

হেফাজতের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীসহ শীর্ষ আলেমরা প্রায়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জামায়াতকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। গত শুক্রবারও (৩ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে জামায়াতকে ভোট না দেওয়ার সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন বাবুনগরী। এই অবস্থায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মানুরাগী মানুষের ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জামায়াত। তাঁরা ইসলামপন্থীদের সব ভোট এক বাক্সে আনতে চায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ কারণে নির্বাচনের আগে যেকোনোভাবে হেফাজতের আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীসহ শীর্ষ আলেমদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলতে চায় জামায়াত। আর এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উলামা কমিটির আলেমদের।

নির্বাচনে হেফাজতের সমর্থন চায় জামায়াত

দেশের ইসলামপ্রিয় বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মাঝে হেফাজতে ইসলামের এক ধরনের প্রভাব দেখা যায়। এ কারণে নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বরাবরই ‘কদর’ পেয়ে আসছে সংগঠনটি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারও তাদের কাছে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অপরাপর দলগুলোও। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৎপর বিএনপি ও জামায়াত।

যদিও এরইমধ্যে হেফাজতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতাদের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি রাজনৈতিক দল জামায়াতের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, তারপরেও হেফাজতে থাকা ‘অরাজনৈতিক’ ও শীর্ষ প্রভাবশালী নেতাদের অনেককে প্রকাশ্যে জামায়াতবিরোধী ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। জামায়াত চাইছে তাঁদের সঙ্গেও দ্রুত দূরত্ব কমিয়ে আনতে। এ জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর উলামা কমিটির নেতারা। প্রকাশ্যে জামায়াতের তীব্র সমালোচনার পরেও জামায়াতের পক্ষ থেকে জবাব না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে উলামা কমিটি সূত্রে জানা যাচ্ছে। উলামা কমিটি হচ্ছে, আলেমদের নিয়ে গঠিত জামায়াতে ইসলামীর একটি বিশেষায়িত বিভাগ।

দেশের ইসলামপ্রিয় বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মাঝে হেফাজতে ইসলামের এক ধরনের প্রভাব দেখা যায়। এ কারণে নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বরাবরই ‘কদর’ পেয়ে আসছে সংগঠনটি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারও তাদের কাছে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অপরাপর দলগুলোও। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তৎপর বিএনপি ও জামায়াত।

দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ

গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে নানামুখী মেরুকরণ ঘটছে। বিএনপির এক সময়ের জোটসঙ্গী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো স্বতন্ত্র নির্বাচনী জোট গড়ার চেষ্টা করছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল সমঝোতার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে এই দলগুলো গত মাস থেকে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচিও পালন করছে। সম্প্রতি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সমঝোতা হলে প্রয়োজনে তাঁরা জোটসঙ্গী সমমনা দলগুলোকে ১০০টি আসন ছেড়ে দেবেন।

সম্প্রতি প্রায় অভিন্ন কিছু দাবিতে জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সঙ্গী হয়েছে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মাওলানা মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, হাফেজ্জি হুজুরের বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ড. আহমদ আবদুল কাদেরের খেলাফত মজলিস, আল্লামা সারওয়ার কামাল আজিজীর নেজামে ইসলাম পার্টি। এই দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই দেওবন্দি ধারার আলেম। একই সঙ্গে তাঁরা হেফাজতে ইসলামের নেতাও। শুধু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা সরাসরি হেফাজতের নেতৃত্বে নেই। তবে তাঁরাও হেফাজতের মতো দেওবন্দি আদর্শে বিশ্বাসী।

দেওবন্দি ধারার আলেমদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক বিরোধ বেশ পুরনো। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদির ইসলামের ব্যাখ্যাকে বিতর্কিত মনে করেন দেওবন্দি ধারার আলেমরা। এ কারণে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে দেওবন্দি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজও জামায়াতের স্বতন্ত্র কোনো জোট হয়নি। তবে বিভিন্ন সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসলামপন্থী দলগুলোর নির্বাচনী জোট হয়েছে। সেখানে জামায়াতও ছিল। গত বছরের পাঁচ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরে হেফাজত-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দলকে জামায়াত প্রায় অভিন্ন দাবির যুগপৎ আন্দোলনে টানতে পারলেও হেফাজতের শীর্ষ নেতারা এখনও দলটির প্রতি অনমনীয় রয়েছেন।

দেওবন্দি ধারার আলেমদের সর্ববৃহৎ সংগঠন হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের আদর্শিক বিরোধ বেশ পুরনো। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবুল আলা মওদুদির ইসলামের ব্যাখ্যাকে বিতর্কিত মনে করেন দেওবন্দি ধারার আলেমরা। এ কারণে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে দেওবন্দি ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজও জামায়াতের স্বতন্ত্র কোনো জোট হয়নি। তবে বিভিন্ন সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসলামপন্থী দলগুলোর নির্বাচনী জোট হয়েছে। সেখানে জামায়াতও ছিল।

বাবুনগরীসহ শীর্ষ আলেমদের নমনীয় করতে তৎপর ‘উলামা কমিটি’

গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী জামায়াতে ইসলামীকে ভোট না দেওয়ার সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই সন্ধ্যায় হেফাজতের হাটহাজারী উপজেলা শাখা আয়োজিত ‘শানে রেসালত’ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যারা পূজা আর রোজাকে একই বলে তারা যেন ক্ষমতায় গিয়ে কুফরি প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, এজন্য আগামী সংসদ নির্বাচনে তাদের ভোট দেওয়া যাবে না।’ সম্প্রতি সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট শিশির মনির ‘রোজা-পূজাকে এক’ আখ্যা দিয়ে মন্তব্য করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে গত শুক্রবারই প্রথম নয়; এর আগেও গত ৪ আগস্ট, ১১ জুলাই ও গত বছর ২৫ অক্টোবরসহ বিভিন্ন সময় হেফাজতের আমির জামায়াতের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেছেন। গত ৪ আগস্ট এক সভায় বাবুনগরী বলেন, ‘জামায়াত ভণ্ড ইসলামি দল। প্রকৃত ইসলামি দল নয়। প্রকৃত ইসলামকে তারা ধারণ করে না। তারা মদিনার ইসলাম নয়, মওদূদীর ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ এ সময় উর্দু ভাষায় তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামি কো বদতর সমঝতা হুঁ, হাত্তাকে কাদিয়ানিসে বদতর সমঝতা হুঁ।’ অর্থাৎ, জামায়াতে ইসলামিকে নিকৃষ্ট (দল) মনে করি, এমনকি কাদিয়ানির চেয়েও নিকৃষ্ট মনে করি।

আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর এই মন্তব্যের পরে ৬ আগস্ট বিবৃতি দিয়ে হেফাজত আমিরের বক্তব্যকে ‘কটূক্তিপূর্ণ ও অসত্য মন্তব্য’ বলে চিহ্নিত করে বিবৃতি দেয় জামায়াত। বিবৃতিতে তারা হেফাজতের আমিরের বক্তব্যকে ‘অসত্য, মনগড়া, অশোভন, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক’ বলে উল্লেখ করে। জামায়াতের এই বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় হেফাজতের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বাংলাদেশের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও বাংলাদেশের সমস্ত উলামায়ে কেরামের মুরব্বি। তাঁর মতো একজন বুজুর্গ ব্যক্তির বক্তব্যকে ‘‘উসকানিমূলক’’ ও ‘‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’’ বলা কোনোভাবেই সমীচীন না।’

হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য প্রচেষ্টা এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। স্ট্রিমকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা এই জিনিসগুলাকে সমাধান করার জন্য আপসে চেষ্টা করার লাইনে আছি, চেষ্টা চলছে। এটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বৃহত্তর যে ইসলামি ঐক্য বা সমঝোতা হচ্ছে, তা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা এই ধরনের বক্তব্য বিনষ্ট করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তখন হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের ঐক্য প্রচেষ্টা এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। স্ট্রিমকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা এই জিনিসগুলাকে সমাধান করার জন্য আপসে চেষ্টা করার লাইনে আছি, চেষ্টা চলছে। এটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বৃহত্তর যে ইসলামি ঐক্য বা সমঝোতা হচ্ছে, তা কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা এই ধরনের বক্তব্য বিনষ্ট করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।’

জামায়াতের একাধিক নেতা স্ট্রিমকে জানিয়েছেন, হেফাজতের আমিরের বক্তব্য, জামায়াতের বিবৃতি ও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দলটির জন্য নির্বাচনের আগে অস্বস্তির কারণ হতে পারে। এ কারণে জামায়াত এরপর সম্পর্ক উন্নয়নের নীতি নেয়। দলীয় কর্মীদের হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের নেতিবাচক সমালোচনা না করারও নির্দেশ দেন জামায়াতের আমির। আর নির্বাচনের আগে হেফাজতের ‘নির্দলীয়’ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের উলামা কমিটিকে।

রাজধানীর তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় উলামা বিভাগীয় কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের (হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের) পেছনে লেগে আছি’। তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন এজেন্সির কারণে তাঁদের অনেকে একসঙ্গে বসতে ইতস্তত করেন, কিন্তু সবার সঙ্গে আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।’ বাবুনগরী ও সাজিদুর রহমানের সঙ্গেও একই সম্পর্ক রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারো নাম আমরা উল্লেখ না করি। সবার সঙ্গেই আমাদের মধুর সম্পর্ক রয়েছে।’

খলিলুর রহমান মাদানী জানান, বাবুনগরী ও হেফাজতের অন্য শীর্ষ নেতাদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসা না হলেও আলাদা করে তাঁদের সঙ্গে উলামা কমিটির বৈঠক হয়। তিনি বলেন, ‘তবে একেবারে ডোর টু ডোর, একেবারে বাসা টু বাসা শুধু একদিন না, নিয়মিত বসা হয়। বসাটা অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।’ বাবুনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে থাকেন। সেখানে গিয়েও সাক্ষাৎ করা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো সব সময়ই হয়।’

হেফাজত নেতারা জামায়াতের সমালোচনা করলেও তার কোনো উত্তর না দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে জামায়াত আমিরের। নেতিবাচক সমালোচনার কারণে সম্পর্ক খারাপ হোক তা কোনোভাবেই চায় না জামায়াত। গত শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় উলামা কমিটির উদ্যোগে ‘দাঈ ও ওয়ায়েজ’ সম্মেলনেও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিতর্কিত ও সমালোচনামূলক বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

খলিলুর রহমানের মতে, আওয়ামী আমলে হেফাজতের সব আন্দোলন-সংগ্রামে জনবল নিয়ে পেছন থেকে সমর্থন দিয়ে গেছে জামায়াত। বিভিন্ন আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ব্যানারে আলেম-উলামা ছিলেন, কিন্তু জনশক্তি কার ছিল তা তো আপনারা সবাই বাস্তব সাক্ষী। তাদের (হেফাজতের) প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে দেওয়া, জেলায় জেলায় সম্মেলন হয়েছে, এসবে মাইক-ব্যানার থেকে শুরু করে সবকিছু কীভাবে হয়েছে জানেন আপনারা।’

হেফাজতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে অন্য দলগুলোরও

শুধু জামায়াতের কাছেই নয়, কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ‘ভোটব্যাংক’ লক্ষ্য করে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও হেফাজতকেন্দ্রিক আগ্রহ বেড়েছে। হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপি ও এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদও ওই দিন হেফাজত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ইতিমধ্যে হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির প্রভাববলয়ে প্রবেশ করে ফেলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। দলটি জামায়াতের সঙ্গে জোট করছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। দেওবন্দি ধারার প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটির সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক গত ১৮ আগস্ট স্ট্রিমকে খোলাখুলিই জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধবেন তাঁরা। তবুও কোনোভাবেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একজোট হবেন না।

অন্যদিকে হেফাজতের আমির ও মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন দলের নেতাদের সাক্ষাতের খবর প্রকাশ্যে এলেও জামায়াত নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন কি না, তা প্রকাশ্যে আসেনি এখনো। তবে স্ট্রিমকে জামায়াতের প্রথম সারির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, হেফাজতের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। যেকোনো মূল্যে হেফাজতের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনতে চায় জামায়াত। আর এই ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে জামায়াতের উলামা কমিটি।

হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আদর্শিক বিরোধ মিটিয়ে এক হতে পারলে সেটি হবে জামায়াতের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। দেওবন্দিধারার ইসলামপন্থীদের নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। এর অনেকটাই নির্ভর করছে উলামা কমিটির সক্রিয় ভূমিকার ওপর।

হেফাজতের নেতিবাচক সমালোচনা না করার নির্দেশ জামায়াতের

হেফাজত নেতারা জামায়াতের সমালোচনা করলেও তার কোনো উত্তর না দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে জামায়াত আমিরের। নেতিবাচক সমালোচনার কারণে সম্পর্ক খারাপ হোক তা কোনোভাবেই চায় না জামায়াত। গত শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে দলের কেন্দ্রীয় উলামা কমিটির উদ্যোগে ‘দাঈ ও ওয়ায়েজ’ সম্মেলনেও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিতর্কিত ও সমালোচনামূলক বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় উলামা কমিটির সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী স্ট্রিমকে বলেন, ‘এখন যারা হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ত্বে রয়েছেন সবাই কিন্তু জামায়াতের ভালোবাসা নিয়ে একাকার হয়েই ছিলেন। আওয়ামী লীগের শেষ আমলে তো সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিদায় নিল আওয়ামী লীগ, এর পরপরই ১৭ আগস্ট আল ফালাহ টাওয়ারে আমিরে জামায়াতের সঙ্গে সব ঘরানার আলেমদের নিয়ে বৈঠক হলো। ওখানে হেফাজতের সবাই ছিল এবং জমিয়তসহ সব ইসলামী দলও ছিল। আওয়ামী দুঃশাসনের পরে আল ফালাহ টাওয়ারে এটাই প্রথম সম্মেলন। ওইদিন দেশের শীর্ষ আলেম ও সব ইসলামি দলকে ডাকা হয়েছিল। ওই দিন জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমি উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির একটা আওয়াজ উঠিয়েছিলেন যে দেশের স্বার্থে এবং ইসলামি বিধিবিধানকে অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ইসলামপন্থীদের একটা অভিন্ন বাক্স হওয়া দরকার। সবাই এটার সঙ্গে একমত হন।’

এখন পর্যন্ত সবাই এই মতের ওপর ঐক্যবদ্ধ আছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘দুয়েকজন বিভিন্ন সময় একটু-আধটু ভিন্ন সুর দেখাচ্ছেন, কিন্তু তাদের পার্টির অন্য সবাই কিন্তু আবার ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের পক্ষে। আর মুরুব্বিরা যারা দুয়েকজন কথা বলছেন, এ ব্যাপারে আমাদের দলের কড়া সিদ্ধান্ত হলো, ইসলাম ও জাতির জন্য মুরব্বিদের অনেক অবদান রয়েছে, বয়সের ভারে কেউ কেউ কোনো কোনো কথা বলে ফেলে, অন্য আমলের কারণে ওসব মাফ হয়ে যাবে। এটা নিয়ে যেন কোনো নেতিবাচক মন্তব্য কেউ মাঠে, অনলাইনে বা সংবাদমাধ্যমে না করে। এরপরেও আমাদের কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাকে ডেকে সংশোধন করে দেওয়া হয়। অনলাইনে লিখলে সেটি ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়।’

হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আদর্শিক বিরোধ মিটিয়ে এক হতে পারলে সেটি হবে জামায়াতের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। দেওবন্দিধারার ইসলামপন্থীদের নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনে আর কোনো বাঁধা থাকবে না। এর অনেকটাই নির্ভর করছে উলামা কমিটির সক্রিয় ভূমিকার ওপর।

Ad 300x250

সম্পর্কিত