leadT1ad

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে জবানবন্দি

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ২০
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সংগৃহীত ছবি

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ দিন সাক্ষ্য দেন প্রসিউশনের ১২তম সাক্ষী ৪৬ বছর বয়সী পুলিশ কনস্টেবল মো. রাশেদুল ইসলাম।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছর ৫ আগস্ট ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় ড্রাইভার কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ওই দিন আমার কোন ডিউটি ছিল না। থানা ভবনের ৪র্থ তলায় অবস্থান করছিলাম। আনুমানিক বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে থানা ভবনের জানালা দিয়ে দেখি নিচে লোকজনের হৈচৈ এবং গুলির শব্দ।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, সেখানে থাকা নিরাপদ না মনে করে নিচে নেমে আসি। থানার মেইন গেটের বাম দিকে রাস্তার উপর একটি ভ্যানের উপর লাশের স্তুপ দেখতে পাই। আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি সায়েদ স্যার বলেন, “রাশেদ আপনার হাত খালি আছে, লাশগুলো ঢেকে দেন।” পাশে থাকা নীল রংয়ের ব্যানার দিয়ে লাশগুলো ঢেকে দেই। ওই সময় ওসি সায়েদ স্যারের সাথে ছিল ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, ওসি (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস, এএসআই বিশ্বজিৎ, কনস্টেবল মুকুল চোকদার, ডিবি ইন্সপেক্টর আরাফাত।

জবানবন্দিতে এই পুলিশ সদস্য আরও বলেন, এই ঘটনার পর থানার পশ্চিম পাশে আট তলা একটি ভবনের নিচে আনুমানিক ১ ঘণ্টা অবস্থান করি। ওই ভবনের নিচ তলার একটি ছেলেকে আমি অনুরোধ করি আমাকে একটি পাঞ্জাবি ও টুপি দাও। আমি ওই পাঞ্জাবি ও টুপি পড়ে কাইচা বাড়ি রোড হয়ে বন্ধুর বাসায় অবস্থান করি। পরে শুনতে পাই আশুলিয়া থানার ভ্যান ভর্তি লাশগুলো পুলিশের গাড়িতে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এই কাজ করেছে তারা অমানবিক কাজ করেছে। জবানবন্দি প্রদান শেষে সাক্ষীকে জেরা করা হয়।

এর আগে, ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। এ মামলায় দোষ স্বীকার করেছেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করে ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া, রাজসাক্ষী হতে চাওয়া নিয়ে লিখিত আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হন তিনি।

এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন—ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ পলাতক আট আসামিকে গ্রেপ্তারসহ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই এ আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-২।

গত ২ জুলাই এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আট আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয়জন। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত