leadT1ad

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাধ্যক্ষের বাসায় 'কাজ না করায়' চাকরিচ্যুত, কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি পাঁচ দিনে

কর্মচারীদের অভিযোগ, হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় কাজ না করার জন্য তাঁদের চাকরিচ্যুত করেছেন।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ০৬
প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে কর্মসূচি পালন করছেন কর্মচারীরা। স্ট্রিম ছবি

‘হল প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করা’র অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আজ মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলতুন্নেসা হলের সামনে তাঁদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ সময় তাঁদের হাতে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড ছিল।

অবস্থান নেওয়া কর্মচারীরা জানান, গত বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে হলটির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি থেকে বিরত ছিলেন।

কর্মচারীদের অভিযোগ, হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় কাজ না করার জন্য তাঁদের চাকরিচ্যুত করেছেন।

ওই তিন কর্মচারী হলেন ফজিলতুন্নেসা হলের ডাইনিং অ্যাটেন্ডেন্ট মিরা রানী রায় ও চম্পা এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোছা. সোমা। তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে গত দেড় বছর ধরে হলটিতে কর্মরত ছিলেন।

গত ২৮ আগস্ট তাঁদের চাকরিচ্যুত করে এসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

চাকরিচ্যুত কর্মচারীদের অভিযোগ, অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় আগে থেকে যাঁরা কাজ করতেন তাঁদের হলে কর্মচারী হিসেবে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির আওতায় তারা ফজিলতুন্নেসা হলে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে আসছিলেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর হলটিতে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় গিয়েও আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বলা হয়।

তবে কর্মচারীদের কেউ কেউ প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে গেলেও ওই তিনজন অস্বীকৃতি জানান। গত এপ্রিল মাসে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও তাঁদের হল প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হয়। তখন হলের এক ওয়ার্ডেনের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয়। তবে গত ২৮ আগস্ট তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই তিন কর্মচারী বলেন, ‘আমাদের যে পদে নিয়োগ হয়েছে আমরা সে পদেই কাজ করব। হলের সব কাজ আমরা করতে রাজি। কিন্তু হল প্রভোস্টের বাসায় কাজ করার কথা তো আমাদের না। আমরা কেনো ওইখানে কাজ করতে যাব?’

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানের কাছে বিচারের দাবি জানিয়ে একটি অভিযোগও দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পাশাপাশি হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভায়ও বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে সমাধানের জন্য প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক হল প্রাধ্যক্ষ্যের বাংলোয় একজন করে গার্ড, পিয়ন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মালি কাজ করেন। এর বাইরে কোন কর্মচারীর প্রাধ্যক্ষ্যের বাংলোতে কাজ করার নিয়ম নেই।

এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির ডিরেক্টর (অপারেশন) মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত ওই কর্মচারীরা হলের প্রভোস্টের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেজন্য তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কোন প্রভোস্টেরই কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার ক্ষমতা নেই। আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীদের নিয়োগ, অব্যাহতি বা বদলির ক্ষমতা কেবলমাত্র সংশ্লিষ্ট কোম্পানির। আমি প্রভোস্ট হিসেবে যোগদানের পর জানলাম, হলে ডাইনিং চালু নেই। কিন্ত কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া আছে। অথচ ১০ তলা হলে মাত্র একজন সুইপার। ফলে কোম্পানিকে অনুরোধ করি সুইপার নিয়োগ দিতে। তারা তাদের কর্মচারীদের সুইপারের কাজ করতে অনুরোধ করলে তারা রাজি হয়নি। উল্টো চাকরিচ্যুত তিনজন অন্য স্টাফদের এই কাজ করতে অনুৎসাহিত করেছে বলে জানতে পারি। তারই ধারাবাহিকতায় কোম্পানি তাদের চাকরিচ্যুত করেছে।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হলটিতে নতুন যে তিনজন নিয়োগ হয়েছে তারা সুইপার পদে নিয়োগ পাননি। চাকরিচ্যুতদের পদেই তারা নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া হলটিতে চারজন সুইপার রয়েছেন বলে জানা গেছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত