leadT1ad

বিবিসিকে সাক্ষাৎকার

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেভাবে মূল্যায়ন করেন তারেক রহমান

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০৭
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: বিবিসি বাংলা থেকে নেওয়া

২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নির্বাসনে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় পর্বটি আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে তারেক ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান, দেশে ফেরা, আসন্ন নির্বাচন ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। আর দ্বিতীয় পর্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার, শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি ইস্যুতে কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও বিবিসি বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি স্ট্রিমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

বিবিসি বাংলা: যে সরকার এখন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?

তারেক রহমান: (হেসে) বিষয়টি তো রাজনৈতিক। এটি তো কোনো ব্যক্তির বিষয় নয়। আমরা প্রথম থেকে যে কথাটি বলেছি যে, আমরা চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। অর্থাৎ অনেক কিছুর মত বিভিন্ন বিষয় আছে। যেমন আমরা যদি মূল দুটো বিষয় বলি যে, কিছু সংস্কারের বিষয় আছে, একই সঙ্গে প্রত্যাশিত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বাধীন নির্বাচনের একটি বিষয় আছে।

মূলত কিছু সংস্কারসহ যেই সংস্কারগুলো না করলেই নয়, এরকম সংস্কারসহ একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু, স্বাধীন নির্বাচন করাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি যে, উনারা উনাদের ওপরে যেটা মূল দায়িত্ব, সেটি উনারা সঠিকভাবে সম্পাদন করবেন। এটাই তো রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের চাওয়া।

আমরা আশা রাখি, প্রত্যাশা করি যে, উনারা করবেন কাজটি সুন্দরভাবে। স্বাভাবিকভাবে এই কাজটির সৌন্দর্য্য বা কতটুকু ভালো, কতটুকু ভালো বা মন্দভাবে করতে পারছেন, তার ওপরেই মনে হয় সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা যেটাই বলেন, সেটা নির্ভর করবে।

বিবিসি বাংলা: আপনি কয়েক মাস আগে একটি মন্তব্য করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আপনার এই মন্তব্যটি নিয়ে আমি প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তার একটি সাক্ষাৎকারে যে এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কি? তিনি তখন বলেছিলেন যে সন্দেহটা উনার মনে। অর্থাৎ আপনার মনে আছে কি-না সেটা তিনি জানতে চান। আপনার মনে কি সেই সন্দেহ আছে?

তারেক রহমান: দেখুন আমি যখন এই কথাটি বলেছিলাম, এই মুহূর্তে আমার যতটুকু মনে পড়ে সেই সময় পর্যন্ত ওনারা কিন্তু নির্বাচনের ব্যাপারে সঠিক কোনো টাইম ফ্রেম বা কোনো কিছু বলেননি।

রোডম্যাপ বলতে যা বোঝায়, আমরা নরমালি যা বুঝে থাকি, এরকম কিছু বলেননি। এবং সে কারণেই শুধু আমার মনের মধ্যেই নয়, আমরা যদি সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়া দেখি, বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দেখি যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, প্রায় সবার মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল।

আমরা যখন দেখলাম যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ডক্টর ইউনূস উনি মোটামুটিভাবে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার উনি উনার যে সিদ্ধান্ত সেটির ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারপর থেকেই খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সন্দেহটি বহু মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে চলে যেতে ধরেছে।

আমি মনে করি, উনারা যা বলেছেন উনারা যতক্ষণ পর্যন্ত দৃঢ় থাকবেন, উনাদের বক্তব্যে উনাদের কাজে যত বেশি দৃঢ় থাকবেন, ততই সন্দেহ চলে যাবে আস্তে আস্তে।

বিবিসি বাংলা: সেই সন্দেহ মনে কিছুটা দূরীভূত হয়েছিল লন্ডনে যখন তিনি আপনার সাথে বৈঠক করলেন। তারপরেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছিল। তো সেই বৈঠকে নির্বাচনের কথা তো হয়েছিল, যেহেতু সেটি পরে এসেছে। এর বাইরে কি আপনাদের মধ্যে আর কোনো কথা হয়েছে? আর কোনো বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা বা সমঝোতা কিছু হয়েছে?

তারেক রহমান: এর বাইরে স্বাভাবিকভাবেই উনি অত্যন্ত একজন স্বনামধন্য মানুষ। অত্যন্ত বিজ্ঞ মানুষ উনি। এর বাইরে তো অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা হয়েছে। এর বাইরেও উনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন যে, জনগণ যদি আপনাদের সুযোগ দেয়, তাহলে আপনারা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য? এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমার কিছু চিন্তাভাবনা দেশের মানুষকে নিয়ে, দেশের জনগণকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ আমাদেরকে যদি সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমরা কি কি বিষয়ে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো, সেই বিষয়গুলো নিয়ে কিছু কিছু আলোচনা হয়েছে।

বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের বিষয়টি তো আপনি বললেন, এর বাইরে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে গত এক বছরে যে ভূমিকা রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার, সেটাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানে ইন্টেরিম, মানে এটা তো ক্ষণস্থায়ী বিষয়টি। তো খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি দেশ পরিচালনা তো একটি বিশাল বিষয়। আমরা হয়তো ভূখন্ডের ভিত্তিতে যদি বিবেচনা করি, হয়তো বাংলাদেশকে অনেকে বলবে ছোট দেশ। কিন্তু আমরা যদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিবেচনা করি, বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক ভূখণ্ডের চেয়ে বড় দেশ।

ইউকের (যুক্তরাজ্য) জনসংখ্যা সাত কোটির মত, বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্লাস- মাইনাস ২০ কোটির মত এখন। কাজেই ইউকের তিন গুণ বড়। এরকম একটি দেশ পরিচালনা করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের ম্যান্ডেটসহ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার প্রয়োজন। বিভিন্ন বিষয় থাকে, ইস্যুজ থাকে, বিভিন্ন বিষয় আছে।

তো এখন নির্বাচনের বাইরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পারফরমেন্স আপনি যেটা বললেন, আমরা সকল কিছু বিবেচনা করলে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, হয়তো উনারা চেষ্টা করেছেন অনেক বিষয়ে। সব ক্ষেত্রে সবাই তো আর সফল হতে পারে না, স্বাভাবিকভাবে ওনাদের লিমিটেশনস কিছু আছে। সেই লিমিটেশনস এর মধ্যে উনারা হয়তো চেষ্টা করেছেন, যতটুকু পেরেছেন হয়তো চেষ্টা করছেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত