leadT1ad

৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ, ক্ষমতায় গেলে কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ০৩
৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ, কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে ‘সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র মেরামতে’ ৩১ দফা ঘোষণা করে বিএনপি। তবে ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আবারও বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের দাবি উঠেছে। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে করা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্কারের অনেক বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যও হয়েছে, সেগুলো নিয়ে একটা ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়নের কথা রয়েছে। বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার সঙ্গে অনেকগুলো বিষয়ের মিলও আছে। বিএনপি যদি সামনে ক্ষমতায় আসে বা সরকার গঠন করে, তখন ৩১ দফা নাকি জুলাই সনদ কোনটা অগ্রাধিকার পাবে? এমন একটি প্রশ্নে জবাবে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হন তারেক রহমান। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেগুলোতে একমত হয়েছি, প্রথমে আমরা সেগুলোর ওপরেই জোর দিব। সেটা আপনি যে নামেই বলেন না কেন, স্বাভাবিকভাবে আমরা ঐকমত্য কমিশনে যেগুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছি, আমরা প্রথমে সেগুলোতে ইনশাআল্লাহ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রথমে সেগুলোতেই অবশ্যই জোর দিব।’

আর ঘোষিত ৩১ দফা জনগণের প্রতি বিএনপির কমিটমেন্ট বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ৩১ দফা আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট জনগণের প্রতি। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে যেগুলোর এটার সঙ্গে মিলে গেছে, সেগুলো তো করবই। এর বাইরে যেগুলো থাকবে, সেগুলোও বাস্তবায়ন করবো। কারণ ওটা তো আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটাও যেমন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট, ওটাও আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। এটা আমরা রাজনৈতিক দলগুলো মিলে একত্রিত হয়ে বলেছি। ওটাও আমরা... অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েই কিন্তু ৩১ দফা দিয়েছি।’

২০০৮ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নির্বাসনে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় পর্বটি আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে তারেক ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান, দেশে ফেরা, আসন্ন নির্বাচন ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন। আর দ্বিতীয় পর্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার, আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি ইস্যুতে কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও বিবিসি বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তারেক রহমানকে বলা হয়, সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটা বিতর্ক আছে। অনেক দল বলছে যে, নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দেওয়া বা বাস্তবায়ন করা। আর বিএনপি বলছে, নির্বাচিত সংসদ সেটা করবে। এই জায়গাটা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়টা কি, বিএনপির চিন্তাটা এখন কি?

এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা কিন্তু কোন হাইড এন্ড সিক করছি না। যদি আমাদের সেরকম অসৎ উদ্দেশ্য থাকতো মনের ভিতরে থাকতো একটা, বলতাম আরেকটা যে ঠিক আছে ওকে অসুবিধা নাই। তারপরে ইনশআল্লাহ আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমরা হয়তো করতাম না। তো আমরা যেটা মনে করছি আমরা সেটাই বলছি।’

এসময় তুমি সম্প্রতি জেন-জি বিপ্লবে সরকার পরিবর্তিত হওয়া নেপালের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘নেপালেও যদি দেখি, ওরা কিন্তু এত কিছুর মধ্যে যাচ্ছে না। ওরা বলছে যে, গুরুত্বপূর্ণ যা বিষয় আছে, সংস্কার বলেন বা বিভিন্ন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যা বিষয় আছে- নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা আসবে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা আসবে, তারা সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপরেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সবকিছু বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলো বসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান করেছে। এখানে যতটুকু হয়েছে, আমরা বলেছি, এখন যতটুকু হয়েছে, যেগুলো শুধু আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে, নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পরে সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আপনি যদি নির্বাচিত সংসদের কথা বলেন, অথচ তাকে বাদ দিয়ে যদি আপনি আউট অব দি বক্স কিছু করেন এবং এটা যদি রেওয়াজ হয়ে যায়, তাহলে এটা আমরা মনে করি যে, এটা সাংবিধানিকভাবে হোক, আইনগতভাবে হোক বা যে দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার- বিবেচনা করেন না কেন- ভবিষ্যতের জন্য এটা একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সেজন্য আমরা মনে করি, যেটা দেশের জন্য সামগ্রিকভাবে ক্ষতির একটি কারণ হবে। সেজন্যই আমরা এটার সঙ্গে একমত না।’

সংস্কার ইস্যুতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য নিয়েও কথা বলেন দলটির শীর্ষ এই নেতা। এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলের প্রধান থাকতে পারবেন না, এরকম একটা প্রস্তাবের বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সকলের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, এই যে বাংলাদেশে রাষ্ট্র মেরামতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, থাকবেন না। এরকম আরো যে বিষয়গুলো আছে, এগুলো বাংলাদেশে যখন স্বৈরাচার ছিল তাদের মুখের উপরে, তাদের চোখের দিকে চোখ রেখে আমরা বিএনপিই বলেছিলাম। এখন হয়তো অনেকে সংস্কারের কথা বলছেন। সেদিন কিন্তু সংস্কারের ‘স’-ও তারা বলেননি। তারপরেও সবার প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আমি বলতে চাই যে, বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে এগ্রি (সম্মত) করতে হবে সবার সঙ্গে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সঙ্গে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না। মানে, আমাকে অন্যের সঙ্গে একমত হতে হবে, তাহলে গণতন্ত্র। আমি যদি অন্যের সঙ্গে দ্বিমত করি, তাহলে গণতন্ত্র না। এটি কেমন গণতন্ত্র?’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের মানেই তো হচ্ছে, বিভিন্ন মতামত থাকবে। আমরা অনেক ব্যাপারেই একমত হব হয়তো। সকল ব্যাপারে একমত হবো না, কিছু ব্যাপারে হয়তো দ্বিমত থাকতেই পারে, এটাই তো গণতন্ত্র, এটাই তো এসেন্স অব গণতন্ত্র। আমরা তো কোনো হাইড অ্যান্ড সিক করছি না। আমি যেটা মনে করছি যে ভাই আমি মনে করছি যেটা আমার দৃষ্টিতে ঠিক না, আমি বলছি ঠিক না।’

বিএনপির ৩১ দফাতে সংস্কারের যেসব বিষয় আছে, সেখানে রাষ্ট্রপতি- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছে। তাহলে এই বিষয়গুলোতে আপত্তি কেন— এমন এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘না, আমরা যেটাতে বলেছিলাম, আমরা সেখানে এখনো আছি। যতটুকু ভারসাম্য হওয়া উচিত, যে যে বিষয়ে যতটুকু বিবেচনা করা উচিত, আমরা সে বিষয়ের মধ্যে এখনো কমবেশি আছি। আমাদের অবস্থান থেকে তো আমরা অবস্থান পরিবর্তন করিনি।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,আমরা তো তখনো বলিনি যে এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবে না। এটা অন্যরা কেউ বলেছে যে, এক ব্যক্তি তিন পদে থাকতে পারবে না। আমরা মনে করি না যে, এটাতে স্বৈরাচারী হওয়ার কোনো কারণ আছে। আমরা তো দেখেছি স্বৈরাচারের সময়ও এবং তার আগে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তাদের টু থার্ড মেজরিটি ছিল। টু থার্ড মেজরিটি ২০০৮ সালে তারা নিয়েছিল। তারা ওটাকে চেঞ্জ করে ফেলেছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখেনি। ২০০১ সালে তো বিএনপিরও টু থার্ড মেজরিটি ছিল, বিএনপি তো চেঞ্জ করেনি। যেহেতু জনগণ মনে করে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে; বিএনপি টু থার্ড মেজরিটি থাকার পরেও তো বিএনপি চেঞ্জ করেনি।

‘এক ব্যক্তির হাতে থাকলেই যে স্বৈরাচর হবে তা নয়। এটি নির্ভর করে ব্যক্তি টু ব্যক্তি, শুধু আইন চেঞ্জ করলেই সবকিছু সঠিক হয়ে যাবে না’, যুক্ত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

Ad 300x250

সম্পর্কিত