স্ট্রিম প্রতিবেদক
‘এত দেরি করলে মাইনসে মনে করব ভেজাল হইছে, কোন অপরাধ না করলেও মনে করবো কী যেন করতেছে।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণে এমন আশঙ্কার কথা বলছিলেন রিকশাচালক জলিল মিয়া।
আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জলিল মিয়া।
মাদারীপুর শিবচরের বাসিন্দা জলিলের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় সবাই। রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ক্যাম্পাস ও আশপাশের সবার একটাই প্রশ্ন–কেন দেরী হচ্ছে?’
জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে। অবশেষে প্রায় ৫০ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় ভোটের ফলাফল ঘোষণা।
গণনা করে ফল ঘোষণায় এত সময় লাগার কারণ হিসেবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওএমআর স্ক্যানার মেশিনের পরিবর্তে হাতে ভোট গণনা, পর্যাপ্ত জনবল কাজে না লাগানো, নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং কিছু শিক্ষকের ‘অসহযোগিতা’ এর জন্য দায়ী।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ভোট গণনায় সময় বেশি লাগার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, `প্রধান জটিলতা তৈরি হয়েছে ভোটের আগের রাতে ভোট গণনার ডিজিটাল পদ্ধতি বাদ দিয়ে ম্যানুয়ালি গণনার সিদ্ধান্তে। ছাত্র-শিক্ষকদের আপত্তির কারণে একটি রাজনৈতিক দলঘেঁষা কোম্পানির সরবরাহ করা ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরদিন শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২১ হলের ভোটগ্রহণ সম্পন্নে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, সেই জনবল দিয়েই সারা রাত ভোট গণনার কাজ করানো হয়। এতে অনেকেই শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ ভোট গুণতে গুণতেই ঘুমে ঢোলে পড়েন।’
একই কথা বলেছেন জাবির জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আহমেদ সুমন। শুক্রবার সকালে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি নিজে ভোট গণনার সময় গণনাকারীকে ঘুমে ঢোলে পড়তে দেখেছি। তখন আমি বলেছি, আপনি ঝিমাচ্ছেন কেন? গণনায় ভুল হবে তো।’
সংশ্নিষ্টরা জানান, জাকসু নির্বাচনে ২১টি আবাসিক হল মিলিয়ে ভোটার ছিলেন প্রায় ১২ হাজার। জাকসুর ২৫টি ও হল সংসদের ২০টি পদের ভোট হয়েছে। জাকসু নির্বাচনে লড়েছেন ১৭৭ জন প্রার্থী ও হল সংসদের ৪৪৫ প্রার্থী ছিলেন। এতসংখ্যক পদের জন্য হল সংসদের ক্ষেত্রে দুই পাতা ও জাকসুর জন্য তিন পাতার ব্যালট ছাপানো হয়। এ জন্য ভোট দিতেও প্রত্যেকের সময় লেগেছে। একই কারণে ভোট গণনা করতে গিয়ে আরও সময় বেশি লাগে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন ভোটারের ৫ পাতার ব্যালট থেকে জাকসু ও হল সংসদের মোট ৪৫ পদের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীর নামের পাশে ভোটের সংখ্যা বসাতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। কখনো কখনো একজন ভোটারের ভোট গণনা করতে গিয়ে ৯ থেকে ১০ মিনিটও লেগেছে।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাঁরা ভোট গণনা করেছেন, তাঁদের কারও এর আগে এ ধরনের ভোট গণনার অভিজ্ঞতা ছিল না। নির্বাচন কমিশনেরও পূর্বঅভিজ্ঞতা ছিল না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান স্ট্রিমকে আগেই তার অনভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, নির্বাচনব্যবস্থা কিংবা ভোট গণনার পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অধ্যাপক বলেন, `কাস্ট হওয়া প্রায় ৮ হাজার ভোটারের প্রায় ৪০ হাজার পাতা চেক করতে হয়েছে। হিসাব করতে হয়েছে। সেখান থেকে প্রার্থীদের ভোটপ্রাপ্তির হিসাব করতে হয়েছে। ফলে একজন ভোটারের ভোট গুণতেই ৭ থেকে ৮ মিনিট সময় লেগেছে।’
একই কথা বলেছেন মওলানা ভাসানী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ মহসিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হল সংসদের ব্যালটে থাকা পছন্দের প্রার্থীর নাম খুঁজে তা টিক দিতে দিতেই গড়ে চার মিনিট করে সময় লেগেছে। জাকসুর ব্যালট পেপার পূরণে আরও বেশি সময় লেগেছে।’
ভোট গণনায় দেরি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ‘জামায়াতপন্থী’ একজন শিক্ষক স্ট্রিমকে জানান, জাবি ক্যাম্পাসে বিএনপি বিভক্ত। যদিও তাঁরা সবাই প্রশাসনের বিভিন্ন লোভনীয় পদ-পদবী বাগিয়ে নেন পটপরিবর্তনের পরপরই। ভিসির নিয়োগে বিএনপি ও জামায়াতের দুই লবিই কাজ করেছে। যার কারণে দুই দলের মন রক্ষা করতে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতেও বাধাগ্রস্থ হন। যার কারণে সময়ক্ষেপণ বেশি হয়েছে।
জামায়াতপন্থি ওই শিক্ষক আরও জানান, ১০ নম্বর ছাত্রী হলের (ফজিলাতুন্নেছা) প্রভোস্ট শামীমা সুলতানা ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির একটি বলয় নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই বলয় চায়নি এই নির্বাচন হোক। এ কারণেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার বয়কট করেছে; নির্বাচনী দায়িত্ব থেকেও তাঁরা সরে গেছেন। তাঁদের পথ ধরে প্রথমে নির্বাচন কমিশনার মাফরুহী সাত্তার টিটো, পরে আরেক নির্বাচন কমিশনার রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধাও পদত্যাগ করেন। এতে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেলের ভোট বর্জনের ঘোষণায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরুরি সভায় বসেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও নির্বাচন কমিশন। প্রায় তিন ঘণ্টার সভা শেষে আইনি পরামর্শকের মতামত নিয়ে রাত ১০টায় গণনা শুরু হয়।
উপ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন শুরুর পর এত অভিযোগ আসবে, ভুলত্রুটি হবে তা জানা ছিল না। এগুলোর সমাধানকল্পে মিটিং করতে করতেই প্রায় তিন ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তারপর ভোট গণনা শুরু হয়। যাঁরা সারা দিন ভোটগ্রহণ করেছেন, তারাই সিনেট ভবনে ব্যালট বাক্স নিয়ে এসে ভোট গণনায় নেমে যান। এতে তাদের পক্ষে টানা পরিশ্রম প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরও তারা অমানবিক পরিশ্রম করে গণনা সম্পন্ন করেছেন।’
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, দেরি হওয়ার মূল কারন ডিজিটাল সেটআপ বাতিল করে ম্যানুয়ালি গণনার সিদ্ধান্ত। ম্যানুয়ালি গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শুরুর দিকে জনবল বাড়ানো হয়নি। ডিজিটালি গণনার জন্য নির্ধারিত জনবল দিয়েই গণনার কাজ শুরু করা হয়।
‘জামায়াতপন্থী’ আরেক শিক্ষক স্ট্রিমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসাবে মাফরুহী সাত্তার ও রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা সংকট তৈরি করেন, সহযোগিতা না করে। এতে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম অগোছালো হয়ে পড়ে। তা সত্বেও সারা দিন ভোটগ্রহণ শেষে একই জনবল দিয়ে সারা রাত কাউন্ট করতে গিয়ে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে একজন শিক্ষক মারা যান। এতেও গণনায় ধীরগতি আসে।
সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে ভোট বাতিলের চাপ আসতে থাকে ভিসির কাছে। তবে তিনি অনড় ছিলেন ভোট গণনার ব্যাপারে। এক্ষেত্রে ভিসিকে পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়ে গেছেন জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের আহ্বানে ক্যাম্পাসের চারপাশে শ শ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নিতে থাকেন। বিভিন্ন হল থেকেও ছাত্রশিবিরের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে। ভোট বাতিলের চাপ বাড়তে থাকলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মৌখিকভাবে ভোট গণনা করে ফল প্রকাশের নির্দেশনা আসে।
গনিত বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম নির্বাচনী অবস্থাপনা ও ত্রুটি প্রসঙ্গে বলেন, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, অখ্যাত ও সরকারি প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া না মেনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কিত ব্যক্তির কোম্পানিকে ভোট গণনা ও ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব প্রদান করায় ভোট কারচুপির আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ দলের প্রার্থীদের হাতে হলে হলে হয়রানি ও মারধরের শিকার হন অন্য দলের প্রার্থীরা। এসব কারণে ভোট বর্জন করি ও দায়িত্ব থেকে সরে আসি।
উপ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘ভোটগ্রহণের আগের রাতে ভোট গণনার জন্য আয়োজিত ডিজিটাল পদ্ধতির সব সেটআপ বদল করে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে কাজ মেশিনের করার কথা ছিল, সেই কাজ ম্যানুয়ালি করতে গিয়ে এত সময় লেগেছে।’
উপ-উপাচার্য বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর জাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা অপেক্ষা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মেনে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য টেকনিক্যাল ও লিগ্যাল বিষয় যাছাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই ভোট গণনার শুরুতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিভিন্ন নির্বাচন আয়োজন করলেও ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এমন ভোটের আয়োজনের সঙ্গে আমাদের কারও কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা শতভাগ থাকলেও পরিবতর্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে নির্বাচন কমিশনের বেশি সময় লেগেছে।’
‘এত দেরি করলে মাইনসে মনে করব ভেজাল হইছে, কোন অপরাধ না করলেও মনে করবো কী যেন করতেছে।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় বিলম্বের কারণে এমন আশঙ্কার কথা বলছিলেন রিকশাচালক জলিল মিয়া।
আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে জলিল মিয়া।
মাদারীপুর শিবচরের বাসিন্দা জলিলের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় সবাই। রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ক্যাম্পাস ও আশপাশের সবার একটাই প্রশ্ন–কেন দেরী হচ্ছে?’
জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে। অবশেষে প্রায় ৫০ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় ভোটের ফলাফল ঘোষণা।
গণনা করে ফল ঘোষণায় এত সময় লাগার কারণ হিসেবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওএমআর স্ক্যানার মেশিনের পরিবর্তে হাতে ভোট গণনা, পর্যাপ্ত জনবল কাজে না লাগানো, নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়া এবং কিছু শিক্ষকের ‘অসহযোগিতা’ এর জন্য দায়ী।
শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ভোট গণনায় সময় বেশি লাগার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, `প্রধান জটিলতা তৈরি হয়েছে ভোটের আগের রাতে ভোট গণনার ডিজিটাল পদ্ধতি বাদ দিয়ে ম্যানুয়ালি গণনার সিদ্ধান্তে। ছাত্র-শিক্ষকদের আপত্তির কারণে একটি রাজনৈতিক দলঘেঁষা কোম্পানির সরবরাহ করা ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরদিন শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২১ হলের ভোটগ্রহণ সম্পন্নে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, সেই জনবল দিয়েই সারা রাত ভোট গণনার কাজ করানো হয়। এতে অনেকেই শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ ভোট গুণতে গুণতেই ঘুমে ঢোলে পড়েন।’
একই কথা বলেছেন জাবির জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আহমেদ সুমন। শুক্রবার সকালে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি নিজে ভোট গণনার সময় গণনাকারীকে ঘুমে ঢোলে পড়তে দেখেছি। তখন আমি বলেছি, আপনি ঝিমাচ্ছেন কেন? গণনায় ভুল হবে তো।’
সংশ্নিষ্টরা জানান, জাকসু নির্বাচনে ২১টি আবাসিক হল মিলিয়ে ভোটার ছিলেন প্রায় ১২ হাজার। জাকসুর ২৫টি ও হল সংসদের ২০টি পদের ভোট হয়েছে। জাকসু নির্বাচনে লড়েছেন ১৭৭ জন প্রার্থী ও হল সংসদের ৪৪৫ প্রার্থী ছিলেন। এতসংখ্যক পদের জন্য হল সংসদের ক্ষেত্রে দুই পাতা ও জাকসুর জন্য তিন পাতার ব্যালট ছাপানো হয়। এ জন্য ভোট দিতেও প্রত্যেকের সময় লেগেছে। একই কারণে ভোট গণনা করতে গিয়ে আরও সময় বেশি লাগে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন ভোটারের ৫ পাতার ব্যালট থেকে জাকসু ও হল সংসদের মোট ৪৫ পদের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীর নামের পাশে ভোটের সংখ্যা বসাতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। কখনো কখনো একজন ভোটারের ভোট গণনা করতে গিয়ে ৯ থেকে ১০ মিনিটও লেগেছে।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাঁরা ভোট গণনা করেছেন, তাঁদের কারও এর আগে এ ধরনের ভোট গণনার অভিজ্ঞতা ছিল না। নির্বাচন কমিশনেরও পূর্বঅভিজ্ঞতা ছিল না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান স্ট্রিমকে আগেই তার অনভিজ্ঞতার কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, নির্বাচনব্যবস্থা কিংবা ভোট গণনার পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অধ্যাপক বলেন, `কাস্ট হওয়া প্রায় ৮ হাজার ভোটারের প্রায় ৪০ হাজার পাতা চেক করতে হয়েছে। হিসাব করতে হয়েছে। সেখান থেকে প্রার্থীদের ভোটপ্রাপ্তির হিসাব করতে হয়েছে। ফলে একজন ভোটারের ভোট গুণতেই ৭ থেকে ৮ মিনিট সময় লেগেছে।’
একই কথা বলেছেন মওলানা ভাসানী হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ মহসিন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হল সংসদের ব্যালটে থাকা পছন্দের প্রার্থীর নাম খুঁজে তা টিক দিতে দিতেই গড়ে চার মিনিট করে সময় লেগেছে। জাকসুর ব্যালট পেপার পূরণে আরও বেশি সময় লেগেছে।’
ভোট গণনায় দেরি হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ‘জামায়াতপন্থী’ একজন শিক্ষক স্ট্রিমকে জানান, জাবি ক্যাম্পাসে বিএনপি বিভক্ত। যদিও তাঁরা সবাই প্রশাসনের বিভিন্ন লোভনীয় পদ-পদবী বাগিয়ে নেন পটপরিবর্তনের পরপরই। ভিসির নিয়োগে বিএনপি ও জামায়াতের দুই লবিই কাজ করেছে। যার কারণে দুই দলের মন রক্ষা করতে গিয়ে তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতেও বাধাগ্রস্থ হন। যার কারণে সময়ক্ষেপণ বেশি হয়েছে।
জামায়াতপন্থি ওই শিক্ষক আরও জানান, ১০ নম্বর ছাত্রী হলের (ফজিলাতুন্নেছা) প্রভোস্ট শামীমা সুলতানা ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির একটি বলয় নিয়ন্ত্রণ করেন। সেই বলয় চায়নি এই নির্বাচন হোক। এ কারণেই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার বয়কট করেছে; নির্বাচনী দায়িত্ব থেকেও তাঁরা সরে গেছেন। তাঁদের পথ ধরে প্রথমে নির্বাচন কমিশনার মাফরুহী সাত্তার টিটো, পরে আরেক নির্বাচন কমিশনার রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধাও পদত্যাগ করেন। এতে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেলের ভোট বর্জনের ঘোষণায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে জরুরি সভায় বসেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও নির্বাচন কমিশন। প্রায় তিন ঘণ্টার সভা শেষে আইনি পরামর্শকের মতামত নিয়ে রাত ১০টায় গণনা শুরু হয়।
উপ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন শুরুর পর এত অভিযোগ আসবে, ভুলত্রুটি হবে তা জানা ছিল না। এগুলোর সমাধানকল্পে মিটিং করতে করতেই প্রায় তিন ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। তারপর ভোট গণনা শুরু হয়। যাঁরা সারা দিন ভোটগ্রহণ করেছেন, তারাই সিনেট ভবনে ব্যালট বাক্স নিয়ে এসে ভোট গণনায় নেমে যান। এতে তাদের পক্ষে টানা পরিশ্রম প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরও তারা অমানবিক পরিশ্রম করে গণনা সম্পন্ন করেছেন।’
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা জানান, দেরি হওয়ার মূল কারন ডিজিটাল সেটআপ বাতিল করে ম্যানুয়ালি গণনার সিদ্ধান্ত। ম্যানুয়ালি গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শুরুর দিকে জনবল বাড়ানো হয়নি। ডিজিটালি গণনার জন্য নির্ধারিত জনবল দিয়েই গণনার কাজ শুরু করা হয়।
‘জামায়াতপন্থী’ আরেক শিক্ষক স্ট্রিমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনার হিসাবে মাফরুহী সাত্তার ও রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা সংকট তৈরি করেন, সহযোগিতা না করে। এতে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম অগোছালো হয়ে পড়ে। তা সত্বেও সারা দিন ভোটগ্রহণ শেষে একই জনবল দিয়ে সারা রাত কাউন্ট করতে গিয়ে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে একজন শিক্ষক মারা যান। এতেও গণনায় ধীরগতি আসে।
সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে ভোট বাতিলের চাপ আসতে থাকে ভিসির কাছে। তবে তিনি অনড় ছিলেন ভোট গণনার ব্যাপারে। এক্ষেত্রে ভিসিকে পুরোপুরি সাপোর্ট দিয়ে গেছেন জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের আহ্বানে ক্যাম্পাসের চারপাশে শ শ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী অবস্থান নিতে থাকেন। বিভিন্ন হল থেকেও ছাত্রশিবিরের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে। ভোট বাতিলের চাপ বাড়তে থাকলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মৌখিকভাবে ভোট গণনা করে ফল প্রকাশের নির্দেশনা আসে।
গনিত বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম নির্বাচনী অবস্থাপনা ও ত্রুটি প্রসঙ্গে বলেন, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার ছাপানো, অখ্যাত ও সরকারি প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া না মেনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্কিত ব্যক্তির কোম্পানিকে ভোট গণনা ও ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব প্রদান করায় ভোট কারচুপির আশঙ্কা তৈরি হয়। বিশেষ দলের প্রার্থীদের হাতে হলে হলে হয়রানি ও মারধরের শিকার হন অন্য দলের প্রার্থীরা। এসব কারণে ভোট বর্জন করি ও দায়িত্ব থেকে সরে আসি।
উপ-উপাচার্য সোহেল আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘ভোটগ্রহণের আগের রাতে ভোট গণনার জন্য আয়োজিত ডিজিটাল পদ্ধতির সব সেটআপ বদল করে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গণনার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে কাজ মেশিনের করার কথা ছিল, সেই কাজ ম্যানুয়ালি করতে গিয়ে এত সময় লেগেছে।’
উপ-উপাচার্য বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর জাকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা অপেক্ষা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ মেনে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য টেকনিক্যাল ও লিগ্যাল বিষয় যাছাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই ভোট গণনার শুরুতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিভিন্ন নির্বাচন আয়োজন করলেও ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এমন ভোটের আয়োজনের সঙ্গে আমাদের কারও কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা শতভাগ থাকলেও পরিবতর্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে নির্বাচন কমিশনের বেশি সময় লেগেছে।’
আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করতে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত ছাত্রদল সমর্থিত আবির-জীবন-এষা প্যানেল এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত সম্মিলিত প্যানেল ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’।
৮ মিনিট আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নাট্য সম্পাদক পদে এক ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইগিমি চাকমা।
১ ঘণ্টা আগেজনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা বিএনপির লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
৪ ঘণ্টা আগেসংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক চার দফা দাবির আদায়ে যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা করবেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—জুলাই সনদের অবিলম্বে বাস্তবায়ন, জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন, আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি।
৯ ঘণ্টা আগে