leadT1ad

মহাপ্রয়াণে শোকাঞ্জলি

বদরুদ্দীন উমর: যুগান্তকারী উত্তর-উপনিবেশিক ব্যক্তিত্ব

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮: ৫৩
বদরুদ্দীন উমর: যুগান্তকারী উত্তর-উপনিবেশিক ব্যক্তিত্ব। স্ট্রিম গ্রাফিক

উজ্জ্বল নক্ষত্র বদরুদ্দীন উমর (১৯৩১) আর নেই। তিনি কেবল উপনিবেশ-পরবর্তী বাংলাদেশের একজন মার্কসবাদী ইতিহাসবিদই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন বিপ্লবী তাত্ত্বিক এবং রাজনীতিবিদও। লেখালেখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে শ্রেণিসংগ্রাম, জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রগঠনের প্রচলিত ধারণাকে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। নিজের পাণ্ডিত্য, দলিলভিত্তিক ইতিহাসচর্চা ও বিপ্লবী রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে তিনি উপনিবেশ-পরবর্তী বাংলাদেশের শ্রেণিসংগ্রাম, কৃষক আন্দোলন এবং অন্তর্নিহিত বৈপরীত্যগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।

ছয় দশকের বৌদ্ধিক অনুসন্ধানে উমর গড়ে তুলেছেন এক মৌলিক পাঠ ও পঠন। এই বয়ান একদিকে যেমন উদারনৈতিক ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছে, অন্যদিকে সংশোধনবাদী বামপন্থী ব্যাখ্যাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সমকালীন পর্যালোচনামূলক তত্ত্বে উমরের কাজ অপরিহার্য হয়ে ওঠে তিনটি মৌলিক নীতির ব্যাপারে অটল থাকার কারণে। প্রথমত, ইতিহাস ও সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আসে কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, অভিজাত জাতীয়তাবাদ থেকে নয়। দ্বিতীয়ত, উপনিবেশ-পরবর্তী বুর্জোয়া শ্রেণি প্রগতিশীল নয়, বরং দালাল শ্রেণি। তৃতীয়ত, মার্কসবাদের ধারাবাহিক পুনর্নবীকরণ বা নিরন্তর পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে পুনর্গঠন জরুরি। আর তা কেবল তৃতীয় বিশ্বের বাস্তব লড়াই-সংগ্রামের ভেতর দিয়েই সম্ভব।

বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত
বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের শাসক শ্রেণির সমালোচনা উমরের সবচেয়ে মৌলিক অবদান। তিনি এদের নাম দিয়েছেন ‘লুম্পেন বুর্জোয়া শ্রেণি’। তিনি দেখান, এরা এমন একটি পরজীবী অভিজাত গোষ্ঠী, যারা পুঁজিবাদের স্বাভাবিক বিকাশের মাধ্যমে নয় বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সাম্রাজ্যবাদী আঁতাতের ফলস্বরুপ গড়ে উঠেছে। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা ‘দ্য ইমার্জেন্স অব বাংলাদেশ: ক্লাস স্ট্রাগল ইন ইস্ট পাকিস্তান (২০০৪)’ এই বিশ্লেষণকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। এই বইয়ে তিনি ‘লুম্পেন বুর্জোয়া শ্রেণি’ ধারণাটি তুলে ধরেন। তিনি দেখান যে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণি মূলত দালালি ও সুবিধাভোগী জোটের মাধ্যমে টিকে আছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তার এই ধারণা গড়ে উঠে। এটি লাতিন আমেরিকান নির্ভরতা তত্ত্বের তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা দেয়।

মূলধারার মার্কসবাদ সাধারণত শিল্পশ্রমিক বা সর্বহারা শ্রেণিকে কেন্দ্র করে বিপ্লবের তত্ত্ব দেয়। কিন্তু উমর দাবি করেনে, বাংলার প্রকৃত বিপ্লবী শক্তি হলো কৃষক শ্রেণি। তিনি দেখান, ১৯৪৬–৪৭ সালের তেভাগা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী গণআন্দোলনে কৃষকরাই মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। ‘বাংলায় কৃষক বিদ্রোহ, ১৮৫০-১৯৫০ (১৯৭৮)’ বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন, কৃষক বিদ্রোহ কোনো রোমান্টিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নয়। এগুলো আসলে জমিদার, মহাজন ও ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শ্রেণিসংগ্রাম।

বদরুদ্দীন উমর দাবি করেনে, বাংলার প্রকৃত বিপ্লবী শক্তি হলো কৃষক শ্রেণি। তিনি দেখান, ১৯৪৬–৪৭ সালের তেভাগা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী গণআন্দোলনে কৃষকরাই মূল চালিকাশক্তি ছিলেন।

এই আলোচনার ভেতর দিয়ে তিনি একসঙ্গে ইতিহাসের দুটি প্রচলিত বয়ান ভেঙে দেন। প্রথমটি ঔপনিবেশিক বয়ান। এই বয়ানে বাঙালি কৃষকদের কেবল নিষ্ক্রিয় প্রজা হিসেবে দেখানো হয়। দ্বিতীয়টি জাতীয়তাবাদী বয়ান। এই বয়ানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির নেতৃত্বকে স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দেখানো হয়। উমর দলিলসমৃদ্ধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখান, তেভাগা আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিদ্রোহে ভাগচাষি ও ভূমিহীন শ্রমিকেরা তাদের বিপ্লবী চেতনা নিজেরাই গড়ে তুলেছিল। এতে তাদের শহুরে বুদ্ধিজীবিদের সহায়তা দরকার হয়নি। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তীকালে ‘সাবঅল্টার্ন এজেন্সি’ বা ‘নিম্মবর্গের মানুষের কর্তাসত্তা’ নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা শুরুর অনেক আগেই সেই আলোচনার পথ তৈরি করেছিল। তবে এর পাশাপাশি উমর সবসময় শ্রেণিভিত্তিক বিশ্লেষণেও অটল থেকেছেন।

‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (১৯৭০)’ বদরুদ্দীন উমরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই বইয়ে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। প্রচলিত জাতীয়তাবাদী ও উদারপন্থী ব্যাখ্যায় ভাষা আন্দোলনকে দেখা হয় কেবল পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিদের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ হিসেবে। কিন্তু উমর এই আন্দোলনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শ্রেণি-সংঘাতকে উন্মোচন করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে ভাষা আন্দোলন শুধু সংস্কৃতির প্রশ্ন ছিল না বরং তা শ্রেণিসংগ্রামের গভীর মাত্রাও বহন করেছিল।

বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত
বদরুদ্দীন উমরের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর এই দলিলভিত্তিক গবেষণা দেখিয়েছে, কীভাবে শহরের ভদ্রলোকরা (মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী) ভাষাগত জাতীয়তাবাদকে কৌশলগতভাবে নিজেদের শ্রেণিস্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করেছিল। তারা নিজেরা সরকারি চাকরি ও সাংস্কৃতিক অধিকার অর্জন করেছিল, কিন্তু একই সময়ে কৃষক ও শিল্পশ্রমিকদের অর্থনৈতিক দাবি পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিল। এটি কেবল একাডেমিক পর্যালোচনা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যকে ১৯৭১ পরবর্তী শাসকশ্রেণি কৃষকদের ওপর তাদের শোষণকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করেছে।

উমরের বিশ্লেষণ পরবর্তীতে বাম রাজনীতিতে ‘সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন’ সংক্রান্ত বিতর্কের পথও দেখিয়েছিল। তিনি বেঞ্জামিন অ্যান্ডারসনের ‘কল্পিত সম্প্রদায়সমূহ’ এর তাত্ত্বিক ধারণার বিপরীতে দেখিয়েছেন কীভাবে বাংলার ভাষাগত জাতীয়তাবাদ শুধু বিমূর্ত পরিচয় গঠনের জন্য নয়, বরং বাস্তব শ্রেণিগত লক্ষ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়েছে। মধ্যবিত্তদের প্রচলিত মানভাষার বিপরীতে তিনি শ্রমিক ও কৃষকদের ভাষার (যেমন পূর্ববঙ্গের মুসলমানি বাংলা) প্রতি অবহেলার সমালোচনা করেছেন। তার এই সমালোচনা উপনিবেশ-পরবর্তী রাষ্ট্রে ভাষাগত সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে সমকালীন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি: ঐতিহ্য ও বর্তমান (১৯৮৯)’ এবং পরবর্তী প্রবন্ধগুলোতে উমর বামপন্থার ব্যর্থতার পর্যালোচনা করেছেন। তার এই পর্যালোচনা স্থানীয় সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক হয়ে উঠে। তিনি বামপন্থার তিনটি মারাত্মক স্ববিরোধ চিহ্নিত করেন। প্রথমত, বামপন্থীদের অভিজাত প্রবণতা এবং গণবিচ্ছিন্নতা। তিনি দেখান যে দলের কর্মীরা মার্কসবাদকে একটি অপরিবর্তনীয় এবং গোঁড়া তাত্ত্বিক মতবাদে পরিণত করে। শ্রমিক ও কৃষকের বাস্তব সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের প্রতি কৌশলগত আত্মসমর্পণ। তিনি দেখান যে কমিউনিস্ট গ্রুপগুলো শ্রেণিগত স্বার্থ জাতীয় ঐক্যের কল্পনার কাছে সমর্পন করে। তৃতীয়ত, তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে অভিজাততান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা দমন ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বামপন্থী সংগঠকদের নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করেছে। একে তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসনমূলক নিষ্ক্রিয়করণ’।

উমরের নোটবুকগুলো দেখায় যে তিনি দৈনন্দিন বৈষয়িক ঘটনাবলীও খুবই মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন। যেমন, ফসলের মৌসুমে পানের দাম কতটা ওঠানামা করছে, রেলওয়ের শ্রমিকদের আবাসের স্থানিক বিন্যাস কেমন। এসব তার শ্রেণিসংগ্রামভিত্তিক ইতিহাস বিশ্লেষণকে বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করেছে।

এই অন্তর্দৃষ্টি আজও প্রাসঙ্গিক। ভারত উপমহাদেশীয় বামফ্রন্টের পতন থেকে শুরু করে আফ্রিকার সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সংকট, সবখানেই দেখা যায়, উপনিবেশ-পরবর্তী বামপন্থা শক্তিশালী বিরোধী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে। ১৯৮০-র দশকের টাংগাইল ও সিরাজগঞ্জের কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে উমরের অপ্রকাশিত কিছু লেখা রয়েছে। সেসব লেখায় সেখানকার কমিউনিস্ট সংগঠকরা কীভাবে স্থানীয় ভাগচাষি নেতৃত্বকে উপেক্ষা করেছিল তার উল্লেখ রয়েছে। এসব ঘটনা বামপন্থীদের গণবিচ্ছিন্নতার বাস্তব উদাহরণ।

উমর তার গবেষণায় পজিটিভিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাসচর্চা ও পশ্চিমা মার্কসবাদী বিমূর্ততাকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন। উমরের গবেষণাপদ্ধতিকে একটি ভেতরগত বিপ্লবী চর্চা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তিনটি পারস্পরিক নির্ভরশীল উপায়ে এটি পরিচালিত হয়েছিল। প্রথমত, ঔপনিবেশিক ভূমি রেকর্ড ও আদালতের দলিলপত্রের কঠোর নথিগত অনুসন্ধান। দ্বিতীয়ত, নোয়াখালী ও রংপুরের কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে বসবাসের মাধ্যমে মৌখিক ইতিহাস সংগ্রহ। তৃতীয়ত, শ্রমিক ধর্মঘট ও ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ, যেখানে তিনি নিজেকে বিপ্লবী পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করতেন।

এই পদ্ধতিতেই জন্ম নিয়েছে তার বই ‘পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৯ সালের গনবিদ্রোহ (১৯৮৯)’। এতে কারখানার পেশাগত কমিটি ও গ্রামীণ সম্প্রদায়কে কেবল বিমূর্ত সমাজতাত্ত্বিক ধারণা হিসেবে নয়, বরং শ্রমিকদের সরাসরি বক্তৃতা ও হাতে লেখা পত্রিকা ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

উমরের নোটবুকগুলো দেখায় যে তিনি দৈনন্দিন বৈষয়িক ঘটনাবলীও খুবই মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতেন। যেমন, ফসলের মৌসুমে পানের দাম কতটা ওঠানামা করছে, রেলওয়ের শ্রমিকদের আবাসের স্থানিক বিন্যাস কেমন। এসব তার শ্রেণিসংগ্রামভিত্তিক ইতিহাস বিশ্লেষণকে বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করেছে। এই পদ্ধতি পরবর্তীতে ‘নিচুতলার ইতিহাস’ লেখার ধারা উন্মোচনের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। ই.পি. থম্পসনের ‘দ্য মেকিং অব দ্য ইংলিশ ওয়ার্কিং ক্লাস’ সাবঅল্টার্ন এজেন্সি বা নিম্মবর্গের কর্তাসত্তাকে মূলত অতীতমূলকভাবে পুনর্নির্মাণ করেছে, যেখানে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ বা উপস্থিতি ছিল না। বিপরীতে উমর একইসঙ্গে একজন গবেষক ও সংগঠক হিসেবে তাদের মধ্যে উপস্থিত থেকেই তাদের কর্তাসত্তার পুনর্নির্মান করেছেন।

উমর কেবল একজন তাত্ত্বিক নন, বরং একুশ শতকের স্ববিরোধগুলো বোঝার জন্য এক ধরনের বিশ্লেষণমূলক হাতিয়ার। তিনি জোর দেন যে দুর্বোধ্য একাডেমিক পরিভাষায় নয়, মার্কসবাদকে কথা বলতে হবে কৃষক বিদ্রোহ ও কারখানার ধর্মঘটের ভাষায়।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৫ সালে উমরের কুমিল্লায় ঋণ-দাসত্ব সংক্রান্ত মাঠ গবেষণা তার ‘অ্যাগ্রারিয়ান বেঙ্গল (১৯৮৬)’ বইয়ের সুদি মহাজনী পুঁজি-র সমালোচনার জন্য তাত্ত্বিক ভিত্তি দেয়। এছাড়া, এটি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জমি অধিকার মামলায় আইনি প্রমাণ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। এই ব্যক্তিগত বিপ্লবী রাজনৈতিক চর্চা-ভিত্তিক জ্ঞানতত্ত্ব নয়া উদারবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও অ্যাকিটিভিজম বা চিন্তা ও তৎপরতার বিচ্ছেদকে চ্যালেঞ্জ করে। এ ছাড়া এটি নিজেকে তৃতীয় বিশ্বের জন্য সম্পৃক্ত গবেষণার একটি বিকল্প মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে।

উমরের মার্কসবাদ একইসঙ্গে সোভিয়েত গোঁড়ামি এবং উত্তরাধুনিক পরিচয়মূলক রাজনীতি উভয়েরই সমালোচনা করে। তিনি বিপ্লবী চর্চার পুনর্জীবনের পথ দেখান। সম্প্রতি তিনি জলবায়ু সংকটে বাংলার কৃষকদের অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়েও মন্তব্য করেছেন। এটি দেখায় যে তার পরিবেশগত মার্কসবাদও বাস্তব বৈষয়িক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি, শুধু একাডেমিক ফ্যাশন নয়।

সুতরাং আমরা দেখতে পাই, উমর কেবল একজন তাত্ত্বিক নন, বরং একুশ শতকের স্ববিরোধগুলো বোঝার জন্য এক ধরনের বিশ্লেষণমূলক হাতিয়ার। তিনি জোর দেন যে দুর্বোধ্য একাডেমিক পরিভাষায় নয়, মার্কসবাদকে কথা বলতে হবে কৃষক বিদ্রোহ ও কারখানার ধর্মঘটের ভাষায়। বিভিন্ন লেখার মধ্য দিয়ে বারবার এই কথাই বলতে চেয়েছেন তিনি। এটাই তার কাজকে তৃতীয় বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত শিক্ষাবিদ ও অ্যাকটিভিস্টদের জন্য গভীরভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক

Ad 300x250

উমর পরিবারের তিন প্রজম্মের হাতে যেভাবে রূপ পেয়েছে এ অঞ্চলের রাজনীতি

নির্বাচনে সাংবাদিকদের সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা

‘অনলাইন জুয়াড়ি চক্রের হোতা’ সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার সাত, এলাকায় নেই নুরুল হকের পরিবার

নারী হল সংসদ: এগিয়ে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

সম্পর্কিত