leadT1ad

ভয়াবহ বন্যার এক বছর

ফেনী জুড়ে এখনো ক্ষত চিহ্ন, ক্ষতি সংস্কারে প্রাপ্তি ১০ শতাংশ

স্ট্রিম সংবাদদাতাফেনী
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪৩
পরশুরামের বক্সমাহমুদ এলাকায় গত বছর বন্যায় ভাঙা সড়ক। স্ট্রিম ছবি

ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার এক বছর পেরিয়েছে চলতি আগস্টে। এরপর যথাযথ পুনর্বাসন ও সংস্কার করা হয়নি। এখনো জেলা জুড়ে রয়ে গেছে তার ক্ষত চিহ্ন। এরই মধ্যে চলতি বছরের বন্যার আঘাতে নাজেহাল হয়েছেন আগের ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি উপজেলার বাসিন্দারা।

২০২৪ সালে ২১ আগস্টে শুরু হওয়া ওই বন্যার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ২০ লাখ টাকার। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি মোকাবিলায় চাহিদার তুলনায় সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রাপ্তি খুবই কম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখনো পুর্নবাসনের আওতায় আসেনি। বন্যা পরবর্তী সরকারি পুনর্বাসন কর্মসূচির অপ্রতুলতার কারণে তাদের কষ্ট বেড়েছে কয়েকগুন।

গত বন্যার সময় প্রধান উপদেষ্টার কোষাগারে জমা সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের বড় অংশ ফেনীর ত্রাণ তহবিলে আসেনি। এতে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে তা কাজেও আসেনি ক্ষতিগ্রস্তদের। এ জন্য সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করছে ফেনীর মানুষ। তাদের মতে সরকার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্বই দেয়নি।

স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় সম্পদহানির পাশাপাশি ফেনীতে ২৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯ জনের পরিচয়ই মেলেনি শেষ পর্যন্ত। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল ১০ লক্ষাধিক মানুষ। তবে এর সংখ্যা আরও বেশি বলে উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে।

আবাসনখাত (ঘরবাড়ি)

বন্যার পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ক্ষয়ক্ষতি ও চলতি বছরের আগস্টে পুনর্বাসনের তথ্য প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। এর তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় আবাসনখাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার ৬৫৯টি ঘর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘর ১ হাজার ৭১৮টি।

পরে সরকারি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় মাত্র ১১০টি নির্মাণ করা হয়েছে, যা মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ১ হাজার ১২ বান্ডিল ঢেউটিন ও ৩০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা সহায়তা পাওয়া গেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ১৫৭টি পরিবারকে ৪ বান্ডিল করে ঢেউটিন ও নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। নৌবাহিনী পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ৭৬টি ঘর।

ফুলগাজীর শ্রীপুর গ্রামের গত বছর বন্যায় ভাঙা ঘর। স্ট্রিম ছবি
ফুলগাজীর শ্রীপুর গ্রামের গত বছর বন্যায় ভাঙা ঘর। স্ট্রিম ছবি

এর বাইরে ইউএনডিপির পক্ষ থেকে ৫ হাজার পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে ঘরবাড়ি সংস্কার এবং ১১ হাজার টাকা করে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে। ওয়াইএফপির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ হাজার ৯৯৪টি পরিবারকে ৬ হাজার টাকা করে মোট ১০ কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ২৮৭ পরিবারকে ৩ লাখ টাকা মূল্যের কমপ্লিট আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার ৯৭০ পরিবারকে ৩০ কোটি ১৯ হাজার টাকা দিয়েছে তারা। বিডিআরসিএস ৬ হাজার ৮২৬ পরিবারকে প্রায় ৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা করেন। মাস্তুল ফাউন্ডেশন ৯৯২টি পরিবারকে ১১ লাখ টাকা বিতরণ করে।

এ ছাড়া ইউনিসেফ, আরআইসি, আইপিএসএ, ব্রাক, গার্লফ অপারেটিভ সোসাইটি, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, কেয়ার বাংলাদেশ, ইফশা, ল্যাব-এইডসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতা করে।

তবে এই সহায়তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। জেলার অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ফুলগাজীর বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘২০২৪ সালের বন্যায় আমার মাথা গোঁজার ঠাঁইও ভেঙে যায়। তখন থেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকতে হয়। পরে স্থানীয় এক বিত্তশালী কিছু টিন দিলে সেগুলো দিয়ে কোনোমতে ঘর মেরামত করে এখন বসবাস করছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

সড়ক যোগাযোগ খাত

বন্যায় ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন সড়কে ৫৮৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সঙ্গে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি টাকার।

বন্যার পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাস্তা জরুরি মেরামত করে এলজিইডি। তা ছাড়া নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে মেরামত করা হয়েছে প্রায় ১২০ কিলোমিটার রাস্তা। ৬৯টি সড়কে ৬৬ দশমিক ২৯৪ কিলোমিটার রাস্তার এবং ১০টি সেতু-কালভার্ট সংস্কারের জন্য দরপত্র দপ্তরের অনলাইনে (ইজিপি) প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি কাজের নম্বর ‘এ’ দেওয়া হয়েছে।

অবশিষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য ২টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প প্রাক্কলন করে পাঠানো হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১৪ কোটি টাকা। বিভাগীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল উপযোগী রাখা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কসমূহ স্থায়ী সংস্কারের জন্য আনুমানিক ৪০ কোটি টাকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় বিভিন্ন এলাকার ৯টি সেতু ও ৩টি কাঠের সাঁকো ধসে গেছে, ৪০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক ও সেতু ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বন্যা শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর পরও যান চলাচলের এসব অবকাঠামো মেরামত না করায় দুর্ভোগে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন।

পরশুরামের বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম কাজী আতিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাসী ও ছাত্রছাত্রীদের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের ছাউনি দিয়ে এলাকার পোলটি মেরামতের করা হয়েছে। তবে তা এখানো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসেবে, বন্যায় স্রোতে ভাঙনে জেলায় ১৬৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর সংস্কারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১২ কোটি টাকা কাজ হলেও ফেরত গেছে ৮ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বরাদ্দ পাওয়া গেছে সংস্কার বাবদ ২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর অধীনে পরশুরাম উপজেলায় ৪৭টি স্থানে, ফুলগাজী উপজেলায় ৪৮টি স্থানে এবং সোনাগাজীতে ৪টি স্থানে বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।

মৎস খাত

জেলার মৎস খাতে ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বরাদ্দ ৪৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়াছে, যা মোট ক্ষতির অর্ধেকেরও কম। ওই বরাদ্দে ৫ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় পোনা মাছ বিতরণ করা হয়েছে। মাছের খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন।

ফুলগাজীর শ্রীপুর গ্রামের মাছচাষি আলমগীর বলেন, ‘তিন বিঘা পুকুরের সব মাছ চলে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’ একই এলাকার আরেক মাছচাষি হাসিবুর রহমান বলেন, ‘পুকুরের চারপাশে নেট দিয়েছিলাম, কিন্তু বাঁধ ভেঙে পানির তীব্র স্রোতে সব ভেসে গেল। বন্যার পরও কোনো সহায়তা পাইনি।’

প্রাণিসম্পদ

প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকার। সরকারি বরাদ্দ বাবদ গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে ১৩৪ দশমিক ২৯৪ মেট্রিক টন, দানাদার খাদ্য ১২১ দশমিক ১৬৯ টন, সাইলেজ ২৩ দশমিক ৩৩ টন, পাতাভূষি ৪ দশমিক ৪৮৫ টন, খড় ১ দশমিক ৬ টন, রেডি ফিড ২৫ টন, পোল্ট্রি খাদ্য বিতরণ ৯ টন। প্রজননক্ষম ৮৫টি ছাগী, ৮০০টি মুরগী বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ টাকা।

পরশুরামের বক্সমাহমুদ এলাকায় গত বছর বন্যায় ভেঙে যায় সড়ক। স্ট্রিম ছবি
পরশুরামের বক্সমাহমুদ এলাকায় গত বছর বন্যায় ভেঙে যায় সড়ক। স্ট্রিম ছবি

ফুলগাজীর একজন উদ্যোক্তা মো. রাসেল বলেন, ‘আমার তেরোশ মুরগিসহ শেড ডুবে যায় বন্যায়। প্রায় ১ কেজি ওজনের মুরগিগুলো মরে পানিতে ভাসছিল। আবার ঘের ভেসে গিয়ে ৪-৫ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন এখন মনের ভেতর হাহাকার করছে।’

শিক্ষা খাত

জেলায় প্রাথমিক শিক্ষাখাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এর ক্ষতি মোকাবিলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো থেকে সরবরাহ করা ৭ হাজার ৬৬৮টি পাঠ্যপুস্তক চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ইউনিসেফের সহায়তায় চট্টগ্রাম বাফা স্টক থেকে ১৭ হাজার ৭১৫টি বই সংগ্রহ ও বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা স্টক থেকে সমন্বয় করা হয়েছে ৮৬ হাজার ৭৪৫টি বই।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষাখাতে স্কুল ও মাদ্রাসায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৬৯ সেট পাঠ্যপুস্তকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এনসিটিবির পক্ষ থেকে জেলায় স্কুল পর্যায়ে ২৩ হাজার ৭৯৪ সেট বিতরণ করা হয়েছে। মাদ্রাসা পর্যায়ে ১১ হাজার ৪০০ সেট বরাদ্দকৃত পাঠ্যপুস্তকের বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে ৩১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০টি বিদ্যালয়ে সংস্কার হয়। তবে উপজেলা প্রকৌলশীর অধীনে দরপত্র আহ্বানের সময় কম হওয়ায় ২৮৪ বিদ্যালয় সংস্কারের সাড়ে ১২ কোটি টাকা ফেরতই চলে গেছে।

ফেনী সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচছুক এক প্রধান শিক্ষক স্ট্রিমকে বলেন, ‘শিক্ষা অফিস ও এলজিইডির সমস্যার কারণে বরাদ্দ কাজে লাগানো যায়নি। এতে বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে জরুরি সংস্কার কাজ করেছেন। এখন সেই টাকা ফেরত পাওয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’

কৃষিখাত

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলায় কৃষিখাতেই ক্ষতি হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। কৃষকদের জন্য গৃহীত পুর্নবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩০ কোটি ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার সহায়তা।

এর মধ্যে আছে বিনামূল্যে ২ হাজার ৩৯৫ জন কৃষকের মধ্যে আমন ধানের চারা, ২ হাজার ২৯০ জনের মধ্যে সরিষা বীজ, ৬৬০ জনের মধ্যে সবজির চারা বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে ১২ হাজার জন কৃষকের মধ্যে বীজ ও সার সরবরাহ প্রণোদনা কর্মসূচি বাবদ ৩০ কোটি ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ব্র্যাকের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার কৃষকের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকার কৃষি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচিতে ৭ হাজার ৫০০ জনকে বিনামূল্যে ৩০ হাজার নিম, বেল, জাম ও কাঁঠাল চারা দেওয়া হয়েছে। এর মূল্য ২ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা।

পরশুরামের সত্যনগর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আবদুল খালেক বলেন, ‘বন্যা আগে ১৬ শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। বন্যায় শুধু চারা না, মাটিও ভেসে গেছে। জমিতে শুধু বালুর স্তর। উপজেলা কৃষি অফিসে বার বার যোগাযোগের পরও কোনো সহায়তা পাই নাই।’

জনস্বাস্থ্য

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নলকূপ ৫২ হাজার ৩৭৫টি আংশিক ও ১১ হাজার ৫৫০টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ টিউবওয়েল উঁচু করা হয়েছে। মোট ২ হাজারটি টিউবওয়েল মেরামত ও ৫ হাজার ৬০০ টিউবওয়েল জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্যানিটেশনের সংখ্যা ৯০ হাজারটি। এর মধ্যে মেরামত করা হয়েছে মাত্র ৯৩৫টি ল্যাট্রিন।

বন্যার শুরুতে মোট ৪০ লাখ পানি পরিশোধন ট্যাবলেট ও মোট ৩ হাজার ৬০০টি হাইজিন কিট ও মোট ১৪ হাজার ৬৫০টি জেরিক্যান বিতরণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মোবাইল পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করে ১৫ লাখ লিটার নিরাপদ পানীয় জল বিতরণ করা হয়েছে।

৪ হাজার ৭৫০ কেজি ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে ল্যাট্রিনের পৃষ্ঠ এবং বাড়ির আশপাশের এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে। এ ছাড়া জেলার ৬টি উপজেলায় ১২ হাজার জনকে স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী বিতরণ (প্রতিটি প্যাকেটে ৫টি গোসলের সাবান এবং ২টি স্যানিটারি ন্যাপকিন) বিতরণ করা হয়।

ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্যোগ-এর সদস্য আসাদুজ্জামান দারা বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন না করা সম্পূর্ণ সরকারের উদাসীনতা। সরকার বিষয়টিতে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। বেসরকারিভাবে আমরা কিছু করেছি, তবে তা একেবারেই অপ্রতুল।’

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১১০টি ঘর নির্মাণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি ঘর সমন্বয় করেছি। সরকারের বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব। আমাদের হাতে থাকা সামান্য টিন এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত