leadT1ad

সাভারে শহীদ ছায়াদ হত্যা

১৩ মাস পর মামলা করলেন এক ‘সচেতন নাগরিক’, ভুয়া তথ্যের অভিযোগ পরিবারের

স্ট্রিম সংবাদদাতা
সাভার
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৩৯
স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকার সাভারে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ছায়াদ মাহমুদ খানের মৃত্যুকে ঘিরে আদালতে এক বছরের ব্যবধানে দুটি ভিন্ন মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলার বাদী নিহত শিশুটির বাবা। আরেকটি মামলায় বাদী হিসেবে উঠে এসেছেন এক অচেনা ব্যক্তি, যিনি নিজেকে ‘সচেতন নাগরিক’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ছায়াদ মাহমুদ খান (১২) মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ধল্লা এলাকার বাহাদুর খানের ছেলে।

শহীদ ছায়াদ মাহমুদ খানের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সাভারের শাহীবাড় এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে বাইরে বের হয় ছায়াদ মাহমুদ খান। পরে সে ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সাভার নিউ মার্কেটের দক্ষিণ পূর্ব দিকের চাপাইনগামী সড়কে বাম পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিনই হাসপাতালে মারা যায় সে। ছায়াদ মাহমুদ খান সাভারের জাবাল-ই-নুর দাখিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর বাহাদুর খান বাদি হয়ে সাভার মডেল থানায় ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়।

তবে এক বছর পর শহীদ ছায়াদ মাহমুদ খানকে ‘ভিকটিম’ উল্লেখ করে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নতুন একটি মামলা করা হয়েছে। ছায়াদ মাহমুদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক উল্লেখ না করলেও বাদী সাভারের শাহীবাগ এলাকার রফিকুল ইসলাম মামলায় দাবি করেন, তিনি একজন সচেতন নাগরিক। মামলায় ২৫২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়, আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ঘটনার তারিখ লেখা হয় ১৯ জুলাই এবং স্থান আশুলিয়া থানার সামনে। সেখানে ছায়াদের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ২৬ বছর। তবে বাবার নাম ও ঠিকানা মিল রয়েছে। আদালত মামলাটি আশুলিয়া থানাকে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।

এ দিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে সিংগাইর থানা এলাকায় শুধু একজনই নিহত হয়েছেন— ধল্লার বাহাদুর খানের ১২ বছর বয়সী ছেলে ছায়াদ মাহমুদ। তাকে সাভারে গুলি করা হয়েছিল এবং ধল্লা কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ছায়াদ মাহমুদ খানের বাবা বাহাদুর খান বলেন, ‘আমার সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে আমি নিজেই সাভার থানায় মামলা করেছি, ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছি। যাকে আমি চিনি না, সে কেন আমার শহীদ সন্তানকে ভিকটিম বানাবে, ১২ মাস পর আদালতে অভিযোগ দেবে? ওই মামলায় মৃত্যুর তারিখ, সময় আর ঘটনাস্থল সবই মিথ্যা। এটা ষড়যন্ত্র।’

তিনি জানান, সম্প্রতি ঢাকার চিফ জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একই ঘটনায় রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ছায়াদ মাহমুদ খানের মৃত্যুর তারিখ, সময় ও ঘটনাস্থল ভিন্ন জায়গা হিসেবে উল্লেখ করে মামলা করেছেন। ছায়াদকে অনেকে সাদ বলে ডাকেন। সিংঙ্গাইরে এই নামে আর কেউ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত হয়নি।

আর আশুলিয়ার স্থানীয়রাও জানান, গত বছরের ১৯ জুলাই কোনো গুলিবর্ষণের ঘটনা সেখানে ঘটেনি। আদালতের মামলায় উল্লেখ করা ঘটনাস্থলে গিয়েও ১৯ জুলাইয়ে এমন কোনো গোলাগুলির তথ্য পাওয়া যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিফাত হোসেন ইমন জানান, আশুলিয়া থানায় বর্বর ঘটনা ঘটে ৫ আগস্ট। ১৯ জুলাই কোনো গুলির ঘটনা ঘটেনি।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেকর্ডে ছায়াদের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। হাসপাতালের ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমাদের রেকর্ডে ছায়াদ মাহমুদ খান সাভারে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর কেস নম্বর ১১৮৫৩। সরকারি গেজেটেও তাঁর নাম আছে।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে বাদী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাননান বলেন, আদালত এ সংক্রান্ত একটি মামলা তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। মূলত এই ঘটনায় পূর্বে আশুলিয়া থানায় কোন মামলা হয়েছে কিনা সেটি আদালত জানতে চেয়েছিলেন। আদালতের কাছ থেকে আদেশ প্রাপ্তির পর থানার নথিপত্র যাচাই করে দেখেছি এই ঘটনা সংক্রান্তে আশুলিয়া থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে একই ভিকটিমের হত্যার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে ইতিমধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত