leadT1ad

জুলাই সনদ: সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়নের প্রস্তাব

জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
জুলাই সনদ। স্ট্রিম গ্রাফিক

জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোটের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নিতে বলছেন তারা।

ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই মতকে সমর্থন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি দ্বিমত জানিয়ে বলেছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে। তবে দলটি গণভোটের পক্ষে।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণপরিষদের মাধ্যমে সনদের বাস্তবায়ন চাইলেও নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছেন। ঐকমত্য আনতে দলগুলোকে অনানুষ্ঠানিক সংলাপের পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। অক্টোবরের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে হওয়া বৈঠকে সমস্যার সমাধানের আশা তাদের।

আজ বুধবার (১৭ সেপ্টম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় ধাপের তৃতীয় দিনের সংলাপে এসব আলোচনা হয়।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠকের প্রথমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত মতামত দলগুলোর সামনে উত্থাপন করা হয়।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছুটা সময় দিতে চাই, যেটা তাঁরা অনুরোধ করেছেন—যাতে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিকল্পগুলো কমিয়ে আনতে পারে। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করতে চাই আমরা।’

তাতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই সনদ ২০২৫-এ মূল সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ (কনস্টিটিউশনাল অর্ডার) জারি করতে পারে। ওই সংবিধান আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত, সংবিধান আদেশকে একটি গণভোটে উপস্থাপন করা যেতে পারে, যা আগামী সাধারণ নির্বাচনের একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধান আদেশে গণভোটের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যদি সংবিধান আদেশ জনগণের অনুমোদন পায় গণভোটের মাধ্যমে, তবে তা প্রণয়নের তারিখ থেকেই বৈধ বলে গণ্য হবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত সরকারের কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সরকারের কাছে যেসব সুপারিশ পাঠানো হবে, তার মধ্যে এটিও একটি হতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করেছি। অনেকে এটি সমর্থন করেছেন, আবার কেউ কেউ এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ভিন্নমতও প্রকাশ করেছেন।’

বৈঠকে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব একাধিক দলের কাছ থেকে এসেছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি জানান দলগুলো নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনার করে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করছেন বলে আলোচনায় জানিয়েছেন।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছুটা সময় দিতে চাই, যেটা তাঁরা অনুরোধ করেছেন—যাতে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে বিকল্পগুলো কমিয়ে আনতে পারে। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করতে চাই আমরা।’

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়াকে ভালো বিকল্প বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সংলাপের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, সরকার যদি রাষ্ট্রপতিকে বলে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার জন্য তাহলে তিনি তা করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে কোন সময়, কোন প্রক্রিয়ায় সংস্কার করা হবে—সে বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে লেখা আছে। কেউ চাইলে এর বিরোধিতা করতে পারেন, কিন্তু জাতি এই ঘোষণাকে গ্রহণ করেছে। ঘোষণার ২৫ দফায় বলা আছে, নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদই সাংবিধানিক সংস্কার করবে। ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদেও একই কথা বলা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই ঘোষণার ভিত্তিতে ‘অর্ডার’ করার কথা বলা হলেও এর কোনো সরাসরি আইনি ভিত্তি নেই। এটা আসলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা ধরে নিয়েছেন, এগুলো করা হবে—এ কারণেই ঘোষণাকে আইনি ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করা হলে ভালো হয়। তখন যে দল বা জোট জয়ী হবে, তাদের পক্ষেই গণভোটের রায় আসবে। যেসব সংস্কার প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেগুলো সংসদে পাস হলে পরবর্তীতে গণভোট ছাড়া সম্ভব নয়। তাই একাধিক গণভোট করার চেয়ে বিষয়টি একবারে করা উচিত। নইলে অনেক জায়গায় সংঘাত ও জটিলতা তৈরি হতে পারে।
সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির এ নেতা বলেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—যদি এখনই জুলাই সনদ কার্যকর করা হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে। এর বৈধতা কে দেবে? এখান থেকে অনুমোদন করা হলে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না, এমন নিশ্চয়তা কীভাবে পাওয়া যাবে? সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত চাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সংবিধান আদেশ বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব কি না, সেটা স্পষ্ট করতে হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করা হলে ভালো হয়। তখন যে দল বা জোট জয়ী হবে, তাদের পক্ষেই গণভোটের রায় আসবে। যেসব সংস্কার প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেগুলো সংসদে পাস হলে পরবর্তীতে গণভোট ছাড়া সম্ভব নয়। তাই একাধিক গণভোট করার চেয়ে বিষয়টি একবারে করা উচিত। নইলে অনেক জায়গায় সংঘাত ও জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হলে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন হচ্ছে, সেখানে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ১০৬ অনুচ্ছেদ সমাধান নয়। সংবিধান আদেশের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তি দেওয়া হোক, তার ভিত্তিতে নির্বাচন হতে হবে। আর গণভোট সবচেয়ে শক্তিশালী। সংসদ মৌলিক সংস্কার বা সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন করতে পারবে না।

বাস্তবায়ন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন। তবে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার বিপক্ষে। এতে জুলাই সনদ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন জাবেদ

রাসিন বলেন, ‘পরবর্তী সংসদে গিয়ে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হবে, আজকের আলোচনায় সেরকমই একটা ইঙ্গিত আছে। একটু ঘুরিয়ে ১০৬-কে সমানে এনে। কী প্রশ্ন করব, সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন করব, পরের সংসদ এই মৌলিক সংস্কারগুলো করতে পারে কি না। তার মানে পরের সংসদের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেব।’

রাসিন বলেন, তারা এই সরকারের অধীনে সনদের বাস্তবায়ন চান। তারা মনে করেন সর্বোত্তম পন্থা হলো গণপরিষদ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত