leadT1ad

গাজীপুর সাফারি পার্ক

মারা গেছে শেষ জিরাফটি, আর দেখা মিলবে না আফ্রিকার এই প্রাণীর

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৩৩
গাজীপুর সাফারি পার্কে বেঁচে থাকা একমাত্র জিরাফটিও মারা গেছে। ছবি: আশরাফুল আলম

গাজীপুর সাফারি পার্কে বেঁচে থাকা একমাত্র জিরাফটি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মারা গেছে। এই স্ত্রী জিরাফটি দীর্ঘদিন টিউবারকুলোসিস (টিবি) রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পার্ক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে গত শুক্রবার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, জিরাফ মৃত্যুর বিষয়ে শ্রীপুর থানার একটি সাধারণ ডায়েরি জিডি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গাজীপুর সাফারি পার্কের শুরুর দিকে ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্ত্রী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ১২টি জিরাফ আনা হয়েছিল। পরে এ সব জিরাফ চারটি বাচ্চার জন্ম দিলেও সেগুলো বাঁচেনি। এরপর ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ৯টি জিরাফ মারা গেছে। ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর এক স্ত্রী জিরাফ ক্যানসারে মারা যায়, গত বছর আরেকটি মারা যায়। শেষ জিরাফের মৃত্যু হলো বৃহস্পতিবার।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক রহমান বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে জিরাফটি অসুস্থ ছিল। বিষয়টি জানার পর দ্রুত একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয় যে জিরাফটির টিবি ধরা পড়েছে।’

জিরাফ কোন দেশের প্রাণী

জিরাফ মূলত আফ্রিকার বন্য প্রাণী। সাব-সাহারান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে জিরাফ দেখা যায়। জিরাফ শুধুই দীর্ঘ গলার একটি প্রাণী নয়—জীববৈচিত্র্যে তাঁদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আফ্রিকান ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, জিরাফ গাছের ওপরের অংশের পাতা খেয়ে ফেলে। ফলে গভীর জঙ্গলের ভূমিতে রোদ–বৃষ্টি পৌঁছতে পারে। এভাবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। জিরাফ গাছের ফল ও লতা খায়। গাছের বীজ বহন করার মাধ্যমে নতুন গাছ জন্মাতে সাহায্য হয়। উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যাভাসের কারণে তারা বনভূমিতে বিভিন্ন স্তরের উদ্ভিদ ও গাছের বৃদ্ধি রূপরেখা নির্ধারণে সহায়ক হয়।

আর যে সব প্রাণী হারিয়েছে পার্কটি

২০১৩ সালে গাজীপুরের সদর ও শ্রীপুর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় সাড়ে তিন হাজার একরের বেশি জমি নিয়ে পার্কটি স্থাপিত হয়। শুরুর দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, ক্যাঙ্গারু, লেমুর, ম্যাকাও, প্যারটসহ বহু বিরল প্রাণী ও পাখি আনা হয়। দর্শনার্থীরা নিরাপদ গাড়িতে ঘুরে প্রাণীদের চলাফেরা দেখতে পারতেন।

পরে প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, চুরি, খাবার ও চিকিৎসায় অনিয়ম এবং নিরাপত্তার ঘাটতির খবর আসতে থাকে একের পর এক। ২০২১ সালের শেষ থেকে প্রাণীর মৃত্যুর খবর বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের মধ্যে ১১টি জেব্রা, একটি সিংহ, একটি বাঘ এবং পরে শেষ ক্যাঙ্গারু মারা যায়। আফ্রিকান লেমুর ও নীলগাই নিখোঁজ হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ নাগাদ পার্কের শেষ পুরুষ জিরাফ মারা যায়, ফলে প্রজনন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আর গত বৃহস্পতিবার যে জিরাফটি মারা গেছে, সেটি ছিল শেষ স্ত্রী জিরাফ।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, পার্কের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রাণী সংরক্ষণ ব্যর্থ হয়েছে এবং যাঁরা দায়ী তাঁদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত