leadT1ad

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ট্রাম্প কি প্রভাব ফেলতে পারবেন

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫৪
রবিবার (২৬ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের ৬ দিনের এশিয়া সফর শুরু হয়েছে। স্ট্রিম গ্রাফিক

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর এশিয়া সফর শুরু করেন। এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের চাপের মধ্যে কৌশলগত স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৬৮ কোটি এবং এই অঞ্চলের অর্থনীতির আকার প্রায় ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় ঘোষিত নতুন শুল্ক, যার মধ্যে ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ কর আরোপের হুমকি রয়েছে, ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে। এতে আসিয়ান দেশগুলোর ইলেকট্রনিক্স ও বস্ত্র রপ্তানির খরচ বেড়েছে।

সম্মেলনের আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলোচনার প্রস্তুতিও চলছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্ভাব্য ট্রাম্প-শি বৈঠকের পথ খুলে দিতে পারে। তাই প্রশ্ন উঠছে—এই সফরে ট্রাম্প কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনর্গঠন করতে পারবেন, নাকি তাঁর নীতি এই অঞ্চলকে আরও বেশি বেইজিং-এর দিকে ঠেলে দেবে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদিও ট্রাম্প কিছু স্বল্পমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য পেতে পারেন, তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতি আসিয়ান দেশগুলোকে চীনের দিকে আরও ঝুঁকিয়ে দিতে পারে।

আঞ্চলিক বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এখন ট্রাম্প প্রশাসনের আক্রমণাত্মক বাণিজ্য কৌশলের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তিনি এপ্রিল মাসে আসিয়ান দেশগুলোর পণ্যে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। এর লক্ষ্য ছিল চীনের সাপ্লাই চেইনের প্রভাব কমানো, কিন্তু এতে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো অংশীদার দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকট্রনিকস ও বস্ত্র রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল।

ট্রাম্পের সফরসূচিতে রয়েছে মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে অংশগ্রহণ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিতি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদিও ট্রাম্প কিছু স্বল্পমেয়াদি কূটনৈতিক সাফল্য পেতে পারেন, তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতি আসিয়ান দেশগুলোকে চীনের দিকে আরও ঝুঁকিয়ে দিতে পারে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারসাম্যের লড়াই

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দশ সদস্যের আসিয়ান ও নতুন সদস্য তিমুর-লেসেথে নিয়ে গঠিত অঞ্চলটি, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক অঞ্চল। তবে এটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার পর্যায়ে রয়েছে।

২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে আসিয়ানের বাণিজ্য দাঁড়ায় ৯৮০ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট বাণিজ্যের চেয়েও বেশি। এই প্রবৃদ্ধি এসেছে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অবকাঠামো প্রকল্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়াতে চীনা কারখানাগুলোর স্থানান্তরের ফলে।

রাজনৈতিকভাবে অঞ্চলটি একাধিক সংকটে জর্জরিত—মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ, কম্বোডিয়া ও লাওসে প্রতারণা চক্রের বিস্তার এবং থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত। এসব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও, অনেক সময় চীনের মধ্যস্থতাই প্রাধান্য পায়।

আসিয়ানের ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশল একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের ২০২৫ সালের এপ্রিলে আরোপিত ১০-৪০ শতাংশ শুল্ক উল্টো প্রভাব ফেলেছে। এতে কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে চীন ও আসিয়ানভিত্তিক বাণিজ্যিক নেটওয়ার্কে ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিকভাবে অঞ্চলটি একাধিক সংকটে জর্জরিত—মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ, কম্বোডিয়া ও লাওসে প্রতারণা চক্রের বিস্তার এবং থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘাত। এসব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও, অনেক সময় চীনের মধ্যস্থতাই প্রাধান্য পায়।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফর তাই এক ধরনের পরীক্ষা—তিনি কি এই সংকটগুলো কাজে লাগিয়ে অঞ্চলটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার করতে পারবেন, নাকি তা আরও চীনের প্রভাব বাড়ানোর পথ খুলে দেবে?

ট্রাম্পের কৌশল: চুক্তি ও চাপ প্রয়োগের রাজনীতি

ট্রাম্প এই সফরে ভ্রমণ করবেন—মালয়েশিয়া (২৬–২৭ অক্টোবর), জাপান (২৮–২৯ অক্টোবর) ও দক্ষিণ কোরিয়া (৩০–৩১ অক্টোবর)। সফরসুচি থেকেই বোঝায় যা ট্রাম্প মূলত বহুপাক্ষিকের চেয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

কুয়ালালামপুরে তিনি কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ডের যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, যার কৃতিত্ব তিনি শুল্ক-চাপের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য হিসেবে দাবি করেছেন। সেখানে তিনি সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিশ্চিতের বিনিময়ে আসিয়ান দেশগুলোর জন্য শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব দেবেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের সঙ্গে তাঁর পার্শ্ব বৈঠকে বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনের বিষয়টি প্রধান আলোচ্য থাকবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ‘“রেয়ার আর্থ’ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে।

ট্রাম্পের কৌশল—কঠোর হুমকি ও ব্যক্তিগত প্রশংসার মিশ্রণ—আগেও ভিন্নধর্মী ফল দিয়েছে, যেমন ইউএসএমসিএ চুক্তিতে দেখা গেছে। এবারও এতে কিছু দ্রুত সাফল্য মিলতে পারে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়া ইলেকট্রনিক্স চুক্তি। তবে ঝুঁকিও রয়েছে—আয়োজক দেশগুলো হয়তো যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতার খেলায় পুতুলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় সতর্ক থাকবে।

সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ গ্রেগ পোলিং মন্তব্য করেছেন, ‘ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো চীনের প্রতি অনুকূল নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয়ই এত বড় শক্তি যে কাউকেই এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়।’

ট্রাম্পের কৌশল—শুল্কের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রশংসা—সবচেয়ে স্পষ্ট হয়েছে কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে। যুদ্ধ থামাতে তিনি বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। থাইল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করতে চাইলে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হবে বলে শর্ত দেন ট্রাম্প।

সম্মেলনে ট্রাম্প ইলেকট্রনিক্স ও খনিজ পণ্যে শুল্ক ছাড়ের দাবি তুলবেন। তাঁর লক্ষ্য আসিয়ানকে বিকল্প উৎস হিসেবে গড়ে তোলা, যাতে চীনের ৯৫ শতাংশ বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলা করা যায়। পার্শ্ব আলোচনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করবেন এবং ফিলিপাইনের দক্ষিণ চীন সাগর সংক্রান্ত দাবি সমর্থনের মাধ্যমে পুরোনো মিত্রতার আশ্বাস দেবেন।

সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট (সামরিক জান্তা প্রতিনিধিত্ব ছাড়া) এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্রতারণা চক্র। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীনের জান্তা-সমর্থনকে প্রতিহত করতে চায়।

তবে সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ গ্রেগ পোলিং মন্তব্য করেছেন, ‘ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো চীনের প্রতি অনুকূল নয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয়ই এত বড় শক্তি যে কাউকেই এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়।’ এটাই ট্রাম্পের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তাৎক্ষণিক সাফল্য মিললেও, চীনের প্রভাব বেড়ে চলায় দীর্ঘমেয়াদি আস্থা অর্জন কঠিন।

সম্ভাব্য প্রভাব: অর্জন ও ঝুঁকি

ট্রাম্পের কৌশল দ্রুত কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দিতে পারে। এতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সম্ভব হবে, যা ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় মার্কিন উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করবে। নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও সুবিধা মিলছে—ফিলিপাইনের জন্য স্থগিত থাকা ৩৩৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পুনরায় চালু হচ্ছে, যা চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরে সাফল্য ট্রাম্পকে ‘শান্তির মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করছে। সিঙ্গাপুরের আইএসইএএস- ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের গবেষক জোয়ান লিন বলেন, ‘এই সফরের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প সরাসরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এই সফর মূলত তার নিজের প্রচারের জন্য। ট্রাম্প নিজেকে বৈশ্বিক ডিলমেকার বা চুক্তিনির্মাতা হিসেবে তুলে ধরতে চান।’

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিসিসের উপদেষ্টা গ্রান্ট হাউবার বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন যেভাবে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারদের অসম্মান করেছে, তা ভুলে যাওয়া হবে না। এর ফলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবে অনেক দেশ।’

ঝুঁকিও কম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে আসিয়ান দেশগুলো চীনের সঙ্গে নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে এবং কানাডা, ভারত ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি অংশীদারত্ব প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন বাণিজ্য আলোচক ওয়েন্ডি কাটলার সতর্ক করেছেন, ‘আমরা আমাদের সফট পাওয়ারের অনেকটাই হারাচ্ছি। যখন এর সঙ্গে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা যুক্ত হয়, তখন আসিয়ান দেশগুলো চীনের দিকে আরও ঘনিষ্ঠ হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা বুঝতে পারছে, দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র নির্ভরযোগ্য অংশীদার নয়। তাই নির্ভরশীলতা কমানোই বুদ্ধিমানের কাজ।’

জাপানের কানসাই গাইদাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক এস. কোগান মনে করেন, এই প্রভাব ধরে রাখা কঠিন হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন কি এই চাপ ধরে রাখবে? থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিষয়ে ট্রাম্প কতদিন আগ্রহ দেখাবেন?’

একই মত দেন কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাভিন চাচাভালপংপুন, যিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরের পর বাইরের চাপ কমে যাবে, ফলে এই চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে দুর্বল।’

বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনও এখন দৃশ্যমান। ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালিসিসের উপদেষ্টা গ্রান্ট হাউবার বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন যেভাবে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারদের অসম্মান করেছে, তা ভুলে যাওয়া হবে না। এর ফলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাবে অনেক দেশ।’

কার্নেগী এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ‘বাণিজ্যযুদ্ধ থাই-মার্কিন সম্পর্ককেও দুর্বল করবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্র যদি সবাইকে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, তাহলে এশিয়ায় তার প্রভাব কমবে।’

ইন্দোনেশিয়ার দৃষ্টিতে, ‘চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত প্রযুক্তি ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর ক্ষতি করছে। এতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বদলে চীনের দিকেই ঝুঁকছে।’

কুয়ালালামপুরে ট্রাম্পের আগমনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারা স্থিতিশীলতার আশা করছে, কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধের অস্থিরতার জন্যও প্রস্তুত।

ট্রাম্প কি প্রভাব ফেলতে পারবেন?

ট্রাম্প স্বল্পমেয়াদে কিছু প্রভাব রাখতে পারেন—যেমন যুদ্ধবিরতি ও শুল্ক ছাড়—যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব প্রদর্শন করবে। তবে এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। শুল্কনীতি পরিবর্তন বা যুদ্ধবিরতি আলোচনার মতো কৌশলগত সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কিছুটা ফিরিয়ে আনতে পারে। এতে মিত্রতা পুনর্গঠনের জন্য সময় পাওয়া যাবে, যা সাম্প্রতিক শুলক্ বাড়ানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো বড় সমঝোতা না হলে ট্রাম্পের সফর বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। এতে আসিয়ান দেশগুলো আরও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে—যার প্রমাণ বর্ধিত বাণিজ্য ও নতুন সহযোগিতা চুক্তি। পলিটিকো-এর বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্পর্ক বর্তমানে দুর্বল অবস্থায় আছে। ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি বিভাজন বাড়াচ্ছে, সম্পর্ক মজবুত করছে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থায়ী প্রভাবের জন্য ধারাবাহিকতা জরুরি। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গ্রেগরি বি. পোলিং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ নীতিগত পরিবর্তনগুলো চীনের অস্থিরতার প্রতিচ্ছবি তৈরি করছে, ফলে আসিয়ান দেশগুলো বিকল্প জোটে ঝুঁকছে।’

কার্নেগির বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, ‘মালয়েশিয়া আশঙ্কা করছে, দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন আগের মতোই চাপ প্রয়োগের কৌশল চালাবে।’

সবশেষে, প্রকৃত ফল নির্ভর করবে বাস্তব পদক্ষেপের ওপর। এই বৈঠকগুলো কি কার্যকর চুক্তি আনবে, নাকি শুধু ছবি তোলার সুযোগেই সীমিত থাকবে? যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নির্ভর করছে ‘দৃশ্যমানতা’ থেকে বাস্তব অঙ্গীকারে রূপান্তরের ওপর।

আর নয়তো, ওয়েন্ডি কাটলারের ভাষায়, ‘প্রতিযোগিতার যুগে নয়, স্থিতিশীলতার যুগে প্রবেশ করা আসিয়ান অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আরও স্বনির্ভর হয়ে উঠবে। আর যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব হারাবে। কুয়ালালামপুরে ট্রাম্পের আগমনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারা স্থিতিশীলতার আশা করছে, কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধের অস্থিরতার জন্যও প্রস্তুত।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ওয়াশিংটন পোস্ট, পলিটিকো, নিউইয়র্ক টাইমস, টাইম, ইস্ট এশিয়া ফোরাম

Ad 300x250

সম্পর্কিত