leadT1ad

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই কোনো মনোচিকিৎসক

শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এ তিনটি দিক ভালো থাকলেই একজন মানুষকে সুস্থ্য বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক দিককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে এখনো স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক দিককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। স্ট্রিম ছবি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে দীর্ঘ নয় মাস ধরে সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোচিকিৎসকের পদ শূন্য। কয়েক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে। নানান মানসিক চাপ ও ব্যক্তিগত সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নীরবে ভুগছেন, আবার অনেকে সাহস পাচ্ছেন না সাহায্য চাইতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এ পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি অনুষদের ২৯টি বিভাগ ও একটি ইনস্টিটিউটের অধীনে ৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। পাশাপাশি পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। শিক্ষার্থী ও কর্মরতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আলীম চৌধুরী মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা কেন্দ্রে একজন মনোচিকিৎসক ছিলেন। তবে তিনি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অবসরে চলে যান। ফলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চিকিৎসা কেন্দ্রে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া প্রায় বন্ধ আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞা অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এ তিনটি দিক ভালো থাকলেই একজন মানুষকে সুস্থ বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক দিককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফাহমিদা বলেন, আগে প্রতিদিন গড়ে আট থেকে দশজন শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতেন। এখন অন্য বিভাগের চিকিৎসকেরা সীমিতভাবে কাউন্সেলিং সহায়তা দিচ্ছেন, কিন্তু এটি বিশেষজ্ঞ সেবার বিকল্প নয়।

গত ৫ মে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌকির আহমেদ। তৌকিরের পরিবার ও সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, মানসিক অবসাদ, পারিবারিক ও আর্থিক সংকটে ভুগছিলেন তিনি। ওই ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা আশা করেছিলেন, দ্রুত মনোচিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু নয় মাস পেরিয়ে গেলেও সেই পদ এখনো শূন্য।

যদিও ওই ঘটনার পর গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন, দুই মাসের মধ্যে মনোচিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাশরাফি আহমেদ বলেন, দীর্ঘ নয় মাস ধরে মনোচিকিৎসকের পদ শূন্য। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সংকটে পড়েছেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে মারাত্মক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, কিন্তু কাউকে বলতেও পারেন না।

পৃথিবীর উন্নত দেশের স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের দেখভালের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বলতে মানুষ শুধু শরীরটাকে বোঝে। যে কারণে মানসিক স্বাস্থ্য অথবা মনের যে সমস্যা হতে পারে, অসুস্থতা হতে পারে, এটি ধর্তব্যের মধ্যে আনে না। ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্যবিদ

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মাহিনুল হক আবির বলেন, অনেক শিক্ষার্থী মানসিক চাপে ভুগছে। জড়তার কারণে তাঁরা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে এখন কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা সার্কুলার দিয়েছিলাম, কিন্তু উপযুক্ত কাউকে পাইনি। তাই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন পার্ট-টাইম ভিত্তিতে কাউকে রাখার পরিকল্পনা চলছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তটি প্রক্রিয়াধীন, উপাচার্য দেখছেন।

মনের চিকিৎসা কেন জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞা অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এ তিনটি দিক ভালো থাকলেই একজন মানুষকে সুস্থ বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো স্বাস্থ্য বলতে কেবল শারীরিক দিককেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, ফলে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন, দুই মাসের মধ্যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে।

তাঁরা বলছেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বা কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাভীতি, সম্পর্ক ভাঙন বা ব্যক্তিগত সংকটে ভুগলেও যথাযথ সহায়তা পান না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবহেলার কারণে আত্মহত্যা, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া ও অসামাজিক আচরণের প্রবণতা বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেনিন চৌধুরী স্ট্রিমকে বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশের স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যের দেখভালের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বলতে মানুষ শুধু শরীরটাকে বোঝে। যে কারণে মানসিক স্বাস্থ্য অথবা মনের যে সমস্যা হতে পারে, অসুস্থতা হতে পারে, এটি ধর্তব্যের মধ্যে আনে না।

তিনি বলেন, যদি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে মন এবং মনের সমস্যা অবহেলিত হয়, তাহলে শিক্ষার প্রধান এবং মৌলিক উদ্দেশ্যও কিন্তু ব্যাহত হয়। আমরা চাইব, আমাদের দেশের সমস্ত পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাউন্সেলরদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

মানসিক চিকিৎসা সেবার অভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়ে যায় বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।

Ad 300x250

সম্পর্কিত