ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সরকার একাধিকবার নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেও রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। এমনকি কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, ঘোষিত এই সময়ে নির্বাচন হবে না। সম্প্রতি আরও কয়েকজন জাতীয় নেতার মুখেও এমন বক্তব্য শোনা গেছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের ক্রিয়াশীল রাজনীতি অন্যতম প্রধান তিন স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকরা। এই বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের প্রসঙ্গই প্রধান গুরুত্ব পেয়েছে। নির্বাচন নিয়ে এই ধোঁয়াশা কেটেছে কি না, তা উঠে এসেছে বৈঠক-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে।
স্ট্রিম ডেস্ক
চলমান সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে দফায় দফায় জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রেস ব্রিফিংয়ে আলোচ্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
এদিকে বৈঠক শেষে ব্রিফ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শফিকুল আলম জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।’
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন— কেউ যদি নির্বাচনের কোন বিকল্প নিয়ে ভাবে সেটা হবে এই জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রফেসর ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজন করা। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার উল্লেখ করেছেন যে, এ নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন।’
শফিকুল আলম বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকগুলো খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে: বিএনপি
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সবশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির প্রতিনিধি দলের। এই বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। আমরা সেটি বিশ্বাস করি। নির্বাচন কমিশন যে শিডিউল ঘোষণা করেছে, সেই সময়েই নির্বাচন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি চক্রান্ত চলছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।’
বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ এবং প্রত্যাশার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ বৈঠক গোটা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রসঙ্গও বৈঠকে এসেছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নুরুল হক নুরের ওপর হামলা অত্যন্ত গর্হিত ও উদ্বেগজনক ঘটনা। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এর সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। আমাদের ধারণা, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যে একটি শক্তি এ ধরনের কাজ করছে।’
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিষয়টি বৈঠকে আলোচিত হয়নি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা কেবল আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নিয়ে জামায়াতের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা দেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বসেছেন। এটি তার এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। তিনি যেকোনো দলের প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।
আগামী নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে: এনসিপি
জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামী নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এমন মন্তব্য করে বলেন, ‘সেই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা দেশের দীর্ঘ ৫৪-৫৫ বছরের সংকট ও একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী কাঠামো থেকে স্থায়ী সমাধান দেবে।’
এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদ নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি দাবি করে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর পেরিয়ে গেলেও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত হয়নি। এমনকি শহীদ পরিবার মাঠে নামলে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি, তাঁদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।’
আরিফুল ইসলাম আরও জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক থাকা জুলাই গণ-অভ্যুত্থনের সমর্থকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে এনসিপি। পাশাপাশি গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এনসিপি।
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পক্ষে এনসিপির অবস্থান জানিয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো পার্থক্য নেই। যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত এবং জাতীয় পার্টি তাদের নির্বাচনে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয়, সে কারণে জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও স্থগিত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
বৈঠকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
‘শঙ্কিত’ জামায়াত
বিকেলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। আগে একটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো, এখন আরেকটা গ্রুপ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারদের বিপক্ষে কোনো ভূমিকা নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এটা তো শুধু দলের দায়িত্ব না, সরকারপ্রধানেরও দায়িত্ব। যে সরকার চাঁদাবাজদের শাস্তি দিতে পারে না, সেই সরকার এত বড় নির্বাচন, এত সন্ত্রাসী কীভাবে ট্যাকেল করবে; আমরা এটিতে শঙ্কিত।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা (বৈঠকে) বলেছি, এখনও অনেক সময় আছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, এই সরকার হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা পিআর পদ্ধতি আনার জন্য জনগণের সঙ্গে গণভোটের কথা বলেছি। যদি জনগণ চায়, তাহলে হবে। নয় তো হবে না।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ডা. তাহের জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের তিনটি বিষয় আশ্বস্ত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রধান উপদেষ্টা এমন কিছু বিষয় সংস্কার করবেন, যেগুলোর জন্য নির্বাচন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়াও জুলাই-সন্ত্রাসীদের বিচারও দৃশ্যমান করা হবে বলে তাঁদের জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সবসময় দুই থেকে তিনটির বেশি দল ‘নিঃশর্ত ঐকমত্য’ পোষণ করেছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সবসময় গণতান্ত্রিক মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু আনফরচুনেটলি এখানে অল্পসংখ্যক দল ঐকমত্য বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ করছে। তারা বলছে, আগামীতে নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আগামী নির্বাচিত সরকারই এসে যদি বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমরা এখানে এসে ঐকমত্যে পৌঁছালাম কেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন? জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আমরা রিফর্মগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এখনই বাস্তবায়ন হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’
এসময় ঈমানের তিনটি অংশ— মুখে স্বীকৃতি দেওয়া, হৃদয়ে ধারণ করা এবং কাজে পরিণত করার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের তিনটি অংশ। একটি ঐকমত্যে বসা, দুই নম্বর তার আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং সেগুলোকে বাস্তবায়নে রূপান্তর করা। এখন পর্যন্ত আমরা শুধু ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু আইনি ভিত্তি এবং কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছে কয়েকটি দল। যদি জুলাইকে আইনি ভিত্তি না দেওয়া হয়, তবে তা হবে শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা চার্টারের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই এবং এই চার্টারের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
বৈঠকে নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দোষীদের কিছু বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানান ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, একদিনে সব বিচার হবে না। কিন্তু বিচার অব্যাহত থাকতে হবে। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
এ বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করলেও বর্তমান সরকারকে কিছু বিদেশি শক্তি নির্বাচন বিষয়ে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মনে করে জামায়াত। এসময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণারও সমালোচনা করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে একটি দলকে বেনেফিট দেওয়া হয়েছে।’
এসময় জুলাই ঘোষণাপত্রেরও সমালোচনা করেন ডা. তাহের। তিনি দাবি করেন, ‘৫ আগস্টে যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, সেটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়নি। সেখানে কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার অ্যাভয়েড করেছে এবং সেটি অনিরপেক্ষ, অসম্পূর্ণ।’
সরকার একটি চাপের মুখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও দাবি করেন ডা. তাহের। তিনি জানান, নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। তবে জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করে জামায়াত। তিনি বলেন, ‘একটা দল যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে হয়েছে। এজন্য তারা খুশি। আর বাকি মেজর দলগুলো, আমরা এক আছি— জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির ব্যাপারে কথা বলেছি। ৩১টি দল যারা ঐকমত্যে বসেছিল, এরমধ্যে ২৫টি দল পিআর চায়। বামপন্থী ও ইসলামপন্থী দলগুলো পিআর চায়। তার বাইরেও যেসব দল আছে, তারাও পিআর চায়। সুতরাং আমরা বলেছি, মেজরিটি রাজনৈতিক দল পিআর চাচ্ছে। অনেকদল আপার হাউসে (উচ্চকক্ষ) পিআর চায়। আমরা পুরোটাই (দুই কক্ষ) পিআর চাই। বিগত নির্বাচনগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা মনে করছি, নতুন একটা সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। নয়তো আগের মতই কেন্দ্র দখলের নির্বাচন হবে।
এসময় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ প্রসঙ্গেও কথা বলেন ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘নুরের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটা শুধু নিন্দাজনক, দুঃখজনক বললেই হয় না, সঙ্গে সঙ্গে কঠিনভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আগে একটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো, এখন আরেকটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে। এই অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারদের বিপক্ষে কোনো ভূমিকা নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এটা তো শুধু দলের দায়িত্ব না, সরকারপ্রধানের দায়িত্ব। যেই সরকার চাঁদাবাজ শাস্তি দিতে পারে না, সেই সরকার এত বড় নির্বাচন, এত সন্ত্রাসী কীভাবে ট্যাকেল করবে। আমরা এটিতে শঙ্কিত। আমরা বলেছি, এখনও অনেক সময় আছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, এই সরকার হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা পিআর পদ্ধতি আনার জন্য জনগণের সঙ্গে গণভোটের কথা বলেছি। যদি জনগণ চায় তাহলে হবে, নয়ত হবে না।’
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যভাগে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা রোববার তিনটি রাজনৈতিক দল- বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী ও এনসিপিকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। বিকালে প্রথম বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। অন্যরা হলেন, দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং হামিদুর রহমান আযাদ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।
চলমান সংকটময় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে দফায় দফায় জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রেস ব্রিফিংয়ে আলোচ্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
এদিকে বৈঠক শেষে ব্রিফ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের যে সময় ঘোষণা করেছেন সেই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শফিকুল আলম জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।’
প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন— কেউ যদি নির্বাচনের কোন বিকল্প নিয়ে ভাবে সেটা হবে এই জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রফেসর ইউনূস জোর দিয়ে বলেছেন-অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজন করা। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার উল্লেখ করেছেন যে, এ নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচন।’
শফিকুল আলম বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকগুলো খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে: বিএনপি
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সবশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির প্রতিনিধি দলের। এই বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। আমরা সেটি বিশ্বাস করি। নির্বাচন কমিশন যে শিডিউল ঘোষণা করেছে, সেই সময়েই নির্বাচন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি চক্রান্ত চলছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এ নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।’
বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ এবং প্রত্যাশার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ বৈঠক গোটা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রসঙ্গও বৈঠকে এসেছে বলে জানান বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘নুরুল হক নুরের ওপর হামলা অত্যন্ত গর্হিত ও উদ্বেগজনক ঘটনা। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এর সঠিক তদন্ত হওয়া জরুরি। আমাদের ধারণা, নির্বাচনকে বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যে একটি শক্তি এ ধরনের কাজ করছে।’
জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিষয়টি বৈঠকে আলোচিত হয়নি জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা কেবল আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক নিয়ে জামায়াতের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা দেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বসেছেন। এটি তার এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। তিনি যেকোনো দলের প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার এবং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও এজেডএম জাহিদ হোসেন।
আগামী নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে: এনসিপি
জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামী নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এমন মন্তব্য করে বলেন, ‘সেই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা দেশের দীর্ঘ ৫৪-৫৫ বছরের সংকট ও একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী কাঠামো থেকে স্থায়ী সমাধান দেবে।’
এনসিপি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণপরিষদ নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বলেও জানান তিনি।
গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত হয়নি দাবি করে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর পেরিয়ে গেলেও আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত হয়নি। এমনকি শহীদ পরিবার মাঠে নামলে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি, তাঁদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।’
আরিফুল ইসলাম আরও জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটক থাকা জুলাই গণ-অভ্যুত্থনের সমর্থকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে এনসিপি। পাশাপাশি গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতেও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এনসিপি।
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পক্ষে এনসিপির অবস্থান জানিয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো পার্থক্য নেই। যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত এবং জাতীয় পার্টি তাদের নির্বাচনে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয়, সে কারণে জাতীয় পার্টির কার্যক্রমও স্থগিত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
বৈঠকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
‘শঙ্কিত’ জামায়াত
বিকেলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। আগে একটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো, এখন আরেকটা গ্রুপ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারদের বিপক্ষে কোনো ভূমিকা নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এটা তো শুধু দলের দায়িত্ব না, সরকারপ্রধানেরও দায়িত্ব। যে সরকার চাঁদাবাজদের শাস্তি দিতে পারে না, সেই সরকার এত বড় নির্বাচন, এত সন্ত্রাসী কীভাবে ট্যাকেল করবে; আমরা এটিতে শঙ্কিত।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা (বৈঠকে) বলেছি, এখনও অনেক সময় আছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, এই সরকার হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা পিআর পদ্ধতি আনার জন্য জনগণের সঙ্গে গণভোটের কথা বলেছি। যদি জনগণ চায়, তাহলে হবে। নয় তো হবে না।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ডা. তাহের জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের তিনটি বিষয় আশ্বস্ত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, প্রধান উপদেষ্টা এমন কিছু বিষয় সংস্কার করবেন, যেগুলোর জন্য নির্বাচন বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়াও জুলাই-সন্ত্রাসীদের বিচারও দৃশ্যমান করা হবে বলে তাঁদের জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সবসময় দুই থেকে তিনটির বেশি দল ‘নিঃশর্ত ঐকমত্য’ পোষণ করেছে উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সবসময় গণতান্ত্রিক মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু আনফরচুনেটলি এখানে অল্পসংখ্যক দল ঐকমত্য বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ করছে। তারা বলছে, আগামীতে নির্বাচিত সরকার এসে এগুলো বাস্তবায়ন করবে। আগামী নির্বাচিত সরকারই এসে যদি বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমরা এখানে এসে ঐকমত্যে পৌঁছালাম কেন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো কেন? জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আমরা রিফর্মগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এখনই বাস্তবায়ন হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’
এসময় ঈমানের তিনটি অংশ— মুখে স্বীকৃতি দেওয়া, হৃদয়ে ধারণ করা এবং কাজে পরিণত করার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনের তিনটি অংশ। একটি ঐকমত্যে বসা, দুই নম্বর তার আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং সেগুলোকে বাস্তবায়নে রূপান্তর করা। এখন পর্যন্ত আমরা শুধু ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু আইনি ভিত্তি এবং কার্যকর করতে বাধা দিচ্ছে কয়েকটি দল। যদি জুলাইকে আইনি ভিত্তি না দেওয়া হয়, তবে তা হবে শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা চার্টারের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই এবং এই চার্টারের ভিত্তিতেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
বৈঠকে নির্বাচনের আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দোষীদের কিছু বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানান ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, একদিনে সব বিচার হবে না। কিন্তু বিচার অব্যাহত থাকতে হবে। পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
এ বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করলেও বর্তমান সরকারকে কিছু বিদেশি শক্তি নির্বাচন বিষয়ে বাধাগ্রস্ত করছে বলেও মনে করে জামায়াত। এসময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণারও সমালোচনা করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে একটি দলকে বেনেফিট দেওয়া হয়েছে।’
এসময় জুলাই ঘোষণাপত্রেরও সমালোচনা করেন ডা. তাহের। তিনি দাবি করেন, ‘৫ আগস্টে যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, সেটি সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হয়নি। সেখানে কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার অ্যাভয়েড করেছে এবং সেটি অনিরপেক্ষ, অসম্পূর্ণ।’
সরকার একটি চাপের মুখে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও দাবি করেন ডা. তাহের। তিনি জানান, নির্বাচনের তারিখের ব্যাপারে তাদের কোনো দ্বিধা নেই। তবে জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন না করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এক ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করে জামায়াত। তিনি বলেন, ‘একটা দল যেভাবে চেয়েছে, সেভাবে হয়েছে। এজন্য তারা খুশি। আর বাকি মেজর দলগুলো, আমরা এক আছি— জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির ব্যাপারে কথা বলেছি। ৩১টি দল যারা ঐকমত্যে বসেছিল, এরমধ্যে ২৫টি দল পিআর চায়। বামপন্থী ও ইসলামপন্থী দলগুলো পিআর চায়। তার বাইরেও যেসব দল আছে, তারাও পিআর চায়। সুতরাং আমরা বলেছি, মেজরিটি রাজনৈতিক দল পিআর চাচ্ছে। অনেকদল আপার হাউসে (উচ্চকক্ষ) পিআর চায়। আমরা পুরোটাই (দুই কক্ষ) পিআর চাই। বিগত নির্বাচনগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা মনে করছি, নতুন একটা সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। নয়তো আগের মতই কেন্দ্র দখলের নির্বাচন হবে।
এসময় কাকরাইলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ প্রসঙ্গেও কথা বলেন ডা. তাহের। তিনি বলেন, ‘নুরের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটা শুধু নিন্দাজনক, দুঃখজনক বললেই হয় না, সঙ্গে সঙ্গে কঠিনভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘আগে একটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করতো, এখন আরেকটা গ্রুপ চাঁদাবাজি করছে। এই অন্তর্বর্তী সরকার দখলদারদের বিপক্ষে কোনো ভূমিকা নিয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। এটা তো শুধু দলের দায়িত্ব না, সরকারপ্রধানের দায়িত্ব। যেই সরকার চাঁদাবাজ শাস্তি দিতে পারে না, সেই সরকার এত বড় নির্বাচন, এত সন্ত্রাসী কীভাবে ট্যাকেল করবে। আমরা এটিতে শঙ্কিত। আমরা বলেছি, এখনও অনেক সময় আছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বলেছি, এখন মনে হচ্ছে, এই সরকার হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। এখন আপনাদের আরও বেশি কঠোর হতে হবে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে, তাদের অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা পিআর পদ্ধতি আনার জন্য জনগণের সঙ্গে গণভোটের কথা বলেছি। যদি জনগণ চায় তাহলে হবে, নয়ত হবে না।’
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যভাগে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা রোববার তিনটি রাজনৈতিক দল- বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী ও এনসিপিকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। বিকালে প্রথম বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। অন্যরা হলেন, দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং হামিদুর রহমান আযাদ।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ উদ্যোগের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল বলে সমালোচকরা মনে করেন।
১ ঘণ্টা আগেপররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসা তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তবে, প্রয়োজনে তাঁর ভ্রমণ নথি বা পাসপোর্ট সম্পর্কিত বিষয়গুলো সমাধান করবে সরকার।
১ ঘণ্টা আগেগোলাম রব্বানী বলেন, ‘পেজগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।’
১ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
২ ঘণ্টা আগে