leadT1ad

ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ

পথে পথে যেসব দাবি জানালেন বাম নেতারা

প্রায় অর্ধশত সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী রোডমার্চে অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে আয়োজকেরা। চারটি প্রধান দাবিতে দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছে বামপন্থী রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১৯: ২৪
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৯: ৪৯
রোডমার্চ শুরুর আগে রাজধানীতে মিছিল। ছবি: ফেসবুক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কয়েকটি সিদ্ধান্তকে ‘সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে’ জড়ানোর চেষ্টা বলে সমালোচনা করেছেন বামসংগঠনের নেতারা। এসব বন্ধের দাবিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে দুদিনের রোডমার্চ করছে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অবস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে রোডমার্চ শুরু হয়। ‘মা মাটি মোহনা, বিদেশিদের দেব না’ মূল স্লোগানে রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে প্রায় অর্ধশত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

উদ্বোধনী কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে না পারলেও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রোডমার্চের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। অংশ নিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।

সমালোচিত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানিকে যুক্ত, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোরের উদ্যোগ ও স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালু করা। সরকারের ওই সব তৎপরতা বাতিলসহ মার্কিন ও ভারতের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে সব অসম চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন নেতারা।

কর্মসূচির প্রথম দিনে শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ে সমাবেশ হয়। এ ছাড়া কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও মিছিল শেষে টাউন হল ময়দানে প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। পরে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে রোডমার্চটি ফেনী রওনা দেয়। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন শনিবার (২৮ জুন) সকালে ফেনী থেকে যাত্রা করে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডে পথসভা ও মিছিল শেষে চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।

প্রেসক্লাবের সামনে

রোডমার্চ উদ্বোধনের আগে প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এর আগে প্ল্যাকার্ড, ব্যানারসহ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা এতে যোগ দেন। কর্মসূচির শুরুতে ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ গান গেয়ে শোনান গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের শিল্পীরা।

শুরুতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘নিউমুরিংসহ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিচালনা করতে হবে। রাখাইনে করিডোর দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে এবং জাতীয় সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বিগত সরকার এবং বর্তমান সরকারের যত গোপন চুক্তি আছে, তা প্রকাশ্যে আনতে হবে।’

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা মনে করি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা হলো আধিপত্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আকাঙ্ক্ষা। আমাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এই আন্দোলন দীর্ঘদিনের।’

রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা নানা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। ছবি: ফেসবুক
রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা নানা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। ছবি: ফেসবুক

প্রেসক্লাবের সামনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন নসু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, অধ্যাপক এম এম আকাশ, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সোশালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিক ঐক্যের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান লাল্টু প্রমুখ।

সোনারগাঁওয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ

ঢাকা থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। এতে বক্তব্য দেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা। স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিপিবির নেতা মন্টু ঘোষসহ কয়েকজন বক্তব্য দেন।

বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার চুক্তির জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সরকার, হাসিনার সরকার তৎপরতা শুরু করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যেই রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধচক্রে জড়ানোর তৎপরতা চালাচ্ছে।’

বজলুর রশিদ ফিরোজ আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশের ২৬টি পাটকল, অনেকগুলো চিনিকল বন্ধ করেছে। সেই কলকারখানা চালু করে মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ না নিয়ে, এই সরকার নতুন করে চট্টগ্রাম ইপিজেডে সমরাস্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরির করার জন্য কাতার ও তুরস্কের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।’

সোনারগাঁওয়ে সমাবেশ শেষে বেলা তিনটার দিকে কুমিল্লার চান্দিনায় পথসভা করেন ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ প্ল্যাটফর্মে অংশ নেওয়া নেতারা।

কুমিল্লায় সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জ থেকে কুমিল্লা শহরের যাওয়ার পথে চান্দিনা এলাকায় পথসভা করে রোডমার্চের নেতা-কর্মীরা। বিকাল ৫টার দিকে তাঁরা শহরে পৌঁছান। সেখানে প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ মিছিল শেষে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে টাউন হল ময়দানে প্রথম দিনের সমাপনী সমাবেশ যোগ দেন তাঁরা।

বিষয়:

আন্দোলন
Ad 300x250

সম্পর্কিত