leadT1ad

ফিরে দেখা ২৫ জুলাই

মেট্রো স্টেশনে গিয়ে বিচার চাইলেন হাসিনা, কোটায় আর সীমাবদ্ধ থাকল না আন্দোলন

২৫ জুলাই ২০২৪। মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শন করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন মায়াকান্না করছেন, ততদিনে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রুদ্ধশ্বাস দিনগুলোয় ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে জন্ম নিয়েছে কত না সত্য গল্প। সেসব দিনে ফিরে দেখা।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৬: ২৭
মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

খুব দরকার না হলে কেউই তখন বাইরে যায় না। তবে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারের বাসিন্দা জুম্মন আলীকে ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজে যেতে হয়েছিল। কারণ, তাঁর আট বছর বয়সী মেয়েটি প্রবল জ্বরের ঘোরে আবোলতাবোল বকছিল। অগত্যা এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল ঘুরে শেষে ঢাকা মেডিকেলেই গেলেন তিনি। সেদিনের অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘মেডিকেলে গিয়ে দেখি থমথমে অবস্থা। শুধু লাশ আর লাশ। আর উদ্‌ভ্রান্ত মানুষের ছোটাছুটি। মেয়েকে নিয়ে দৌড়ের ওপরে থাকলেও ঢাকা মেডিকেলের ওই দমবন্ধ অবস্থা আমাকে স্পর্শ করেছিল। কত মানুষ যে কাঁদছিল। সে কান্নার কাছে মেট্রোরেলে গিয়ে শেখ হাসিনার মায়াকান্না তখন খুব হাস্যকর লেগেছিল।’

হ্যাঁ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে কেঁদেছিলেন। মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতি দেখে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আজকে মেট্রোরেল বন্ধ। কারণ, এই স্টেশন যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ মডার্ন। এটা কতদিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কিন্তু কষ্ট পাবে তো মানুষ। আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবেন। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবে।’

তাঁর বক্তব্য ছিল এমন, যেন একটি মেট্রো স্টেশনের অভাবে তখন যেন জাতি উচ্ছন্নে যাচ্ছিল। মেট্রো স্টেশন পেয়েও ভাঙচুর করা বাংলাদেশিরা যে কত দুর্ভাগা, তা বোঝাতেই যেন তিনি বলে চললেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। আবার কর্মস্থলে পৌঁছানো, আবার ফেরত আসা—দীর্ঘ সময় লাগবে এবং ওই বসে ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া।’

অথচ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ততদিনে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। উত্তরা, রামপুরা ও যাত্রাবাড়ীর হাসপাতালগুলো রোগীতে ভর্তি। বহু হাসপাতাল আহতদের নিতে চাইছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ জানিয়ে দিয়েছে, বেওয়ারিশ লাশ আর রাখা যাবে না। সেই লাশগুলোর তাই জায়গা হয়েছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে।

সেদিকে অবশ্য তখনকার সরকারপ্রধানের থোড়াই কেয়ার। তিনি তখন ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো স্টেশনের বিচার চাইতে ব্যস্ত। ধরে আসা গলায় নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানালেন, ‘আপনাদের কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম। তা আপনাদেরকেই বলব, যেই কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, এই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল, তাঁদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাঁদের করতে হবে। আমি তাঁদের কাছেই বিচার চাই।’

আন্দোলনকারীরা বারবার দাবি পরিবর্তন করছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনো নাকি আন্দোলন করতে হবে! দফা! প্রথমে এক দফা কোটা সংস্কার করতে হবে। কোটা বাতিলও করে দিয়েছিলাম। আচ্ছা, কোটা সংস্কার হবে। আপিল করলাম। উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। সে পর্যন্ত তো ধৈর্য ধরতে হবে। যেকোনো নাগরিককে তো আইন-আদালত মেনে চলতে হবে। সেটা না। ওই এক দফার পরে আসল চার দফা। তারপর আসল ছয় দফা। তারপর আসল আট দফা। তারপরে আবার চার দফা। আবার ওই চার দফাও হবে না, আরও আট দফা। এইভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি আর সেই সাথে সাথে এই ধ্বংসযজ্ঞ। মানে এই ধ্বংসযজ্ঞটাকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যা বলল

২৫ তারিখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশীদের ফেসবুক আইডি থেকে নাহিদ ইসলামের একটি বক্তব্য পোস্ট করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই। তাই প্রজ্ঞাপন জারির সাথেই এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না। ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার ও ডাকসু সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সকল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উৎখাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

ওই সময়টায় আন্দোলনকারীদের ৮ দফা ও ৯ দফা নিয়ে বেশ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। এ বিষয়ে ওই পোস্টে বলা হয়, ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আট দফা ও নয় দফা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ৮ দফা ও ৯ দফার সাথে কোনো নীতিগতবিরোধ নেই। মূল বক্তব্য একই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে সকলের সাথে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত বক্তব্য ও কর্মপরিকল্পনা সকলের সামনে পেশ করব। এখন আমাদের জরুরি চারটি দাবি হলো—ইন্টারনেট খুলে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে সকল ক্যাম্পাসের হল খুলে দেওয়া, কারফিউ প্রত্যাহার করা এবং সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমাদের দুটি দাবি ইতোমধ্যে আংশিক পূরণ হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে ও কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে।’

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলতার তুর্ক এদিন বাংলাদেশে দমন-পীড়নের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে তিনি এর নিন্দা জানান এবং বিষয়টি নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের তদন্তে জাতিসংঘ সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানদণ্ড অনুসরণ করে দায়িত্ব পালনের আহ্বানও জানান তিনি।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ বেআইনিভাবে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে।

এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন, বাংলাদেশে যা হচ্ছে, তা এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। শীঘ্রই এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও এ সময় আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Ad 300x250

রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে বড় পরিবর্তন, নেতৃত্বে আসবেন অভিজ্ঞ কর্মকর্তার

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, কারণ জানে না কেউ

জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে ‘ঐতিহাসিক দলিল’ ঘোষণার নির্দেশ হাইকোর্টের

জাকসু ভবনের সংস্কার শুরু, সাবেকদের সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ

ভারতে আ.লীগের অফিস চালুর অভিযোগ ঢাকার, নাকচ দিল্লির

সম্পর্কিত