leadT1ad

ডাকসুর ব্যালট বিতর্ক: একেক সময়ে একেক কথা প্রশাসনের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার রাজধানীর নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ছাপানোর অভিযোগ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ছাপানোর অভিযোগ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্ট্রিম গ্রাফিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার রাজধানীর নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ছাপানোর অভিযোগ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথমে প্রশাসনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া হলেও পরদিন অভিযোগটি অতীব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা।

নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানো নিয়ে প্রথম অভিযোগটি করেন স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আরাফাত চৌধুরী। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি দাবি করেন, রাজধানীর নীলক্ষেতের একটি প্রিন্টিং প্রেসে অরক্ষিতভাবে ব্যালট পেপারগুলো ছাপানো হয়। দাবির পক্ষে তিনি একটি ছবি ওই পোস্টে সংযুক্ত করেন। ছবিটি ডাকসু নির্বাচনের আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে তোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরাফাত অভিযোগ করেন, ব্যালট পেপারগুলোতে কোনো ক্রমিক নম্বর কিংবা কিউআর কোড ছিল না। ফলে যে কেউ চাইলে আগে থেকেই যত খুশি তত ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখতে পারবে।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এ নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রচার করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নীলক্ষেতের একটি দোকানে তিন দিনে ব্যালট পেপারগুলো ছাপানো হয়েছে। আর এগুলো কাটিং করা হয় আলাদা একটি দোকানে। এ নিয়ে ব্যালট ছাপানোর টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান আনজা করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ওই প্রতিবেদককে বলেন, ছাপানোর সময় তিনি দেশে ছিলেন না। তাঁর কর্মচারীরা এ কাজ করে থাকতে পারে।

এরপর বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা শুরু হয়। যদিও ডাকসুর ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে, এ নিয়ে আরাফাত চৌধুরীর অভিযোগের পর থেকেই বিতর্ক চলছিল। একাধিক প্রার্থী এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ঢাবি প্রশাসন তিন দফায় তিন রকম বক্তব্য দিয়েছে।

একেকবার একেক দাবি প্রশাসনের

আরাফাত চৌধুরীর অভিযোগের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দীনের সঙ্গে কথা হয় স্ট্রিমের। তিনি জানান, ছাপানোর কাজ ভেন্ডর (এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যিনি পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করেন) করেছে। নির্বাচনের আগে না জানিয়ে এতদিন পর কেন অভিযোগ করা হচ্ছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেইসঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন।

এরপর গত বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি প্রশাসন দাবি করে, সব নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় একটি পরীক্ষিত ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর যে ওএমআর মেশিনে স্ক্যানিং করে ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজ সম্পন্ন করা হয়, তা নীলক্ষেতের কোনো দোকানে সম্ভব নয়।

যদিও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা গণমাধ্যমে জানান, ভেন্ডর নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিযোগিতাই হয়নি। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানই ব্যালট ছাপানোর জন্য আবেদন করেছিল।

২৪ তারিখের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ভোটার কর্তৃক গৃহীত ব্যালট পেপার ও প্রদত্ত ভোটের মধ্যে অসামঞ্জস্য থাকলে বা কোনো রকম অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতাম। এরকম কিছুই ঘটেনি। অতএব নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পর ব্যালট পেপারের মুদ্রণ নিয়ে এহেন অভিযোগের কোনো ভিত্তি আছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে না।’

কিন্তু এর পরদিনই অধ্যাপক জসীম উদ্দীন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে আরেক বক্তব্য দেয় প্রশাসন। এতে জানানো হয়, ব্যালট পেপার নিয়ে অভিযোগ কমিশন অতীব গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করছে। শিগগিরই একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিশন সব বিষয়ে বিস্তারিত জবাব দেবে।

রাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ঢাবির একদল শিক্ষার্থী উপাচার্য বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন তাঁরা। ‘ভিসি স্যার জানেন নাকি, নীলক্ষেতের নায়ক আপনি’, ‘নীলক্ষেত না ডাকসু, নীলক্ষেত নীলক্ষেত’, ‘ভিসি না নীলক্ষেত, নীলক্ষেত’, ‘চারিদিকে এ কী শুনি, নীলক্ষেতের জয়ধ্বনি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।

তাঁরা এ সময় অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার গোপনীয়তা ও নিয়মের অজুহাত দেখিয়ে ভোটার তালিকা ও কোথায় ব্যালট ছাপানো হয়েছে সেটি প্রকাশ করেনি। এতে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে বলে আশঙ্কার কথা জানান তাঁরা।

প্রার্থীরা যা বলছেন

ডাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান এ বিষয়ে স্ট্রিমকে জানান, ব্যালটের বিষয়ে তাঁদের জানানো অভিযোগ যে সত্য, সেটি প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, নীলক্ষেতে যে অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট ছাপানো হচ্ছে, সেটি ইসলামী ছাত্রশিবির নেতারা জানতেন।

ছাপানো সব ব্যালট পেপার যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছিল এর নিশ্চয়তা নেই অভিযোগ তুলে আবিদুল বলেন, ব্যালট গরমিলের অভিযোগের পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে সই করা ভোটার তালিকা চেয়েছিল ছাত্রদল। কিন্তু এটি দিতেও প্রশাসন অস্বীকার করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহযোগিতা এবং কারচুপি ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা রাখে না এবং বৈধতাও রাখে না।’

সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল স্ট্রিমকে জানান, তাঁরা অভিযোগগুলো নিয়ে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।

সবগুলো প্যানেলই এই অভিযোগের জবাব চাচ্ছে জানিয়ে জুবেল অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ক্ষেত্রে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। দাবি আদায়ে এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো কর্মসূচি না দিলেও, সামনে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এর আগে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী উমামা ফাতেমা বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে লেখেন, ‘চিফ রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, টেন্ডার এমনভাবে বানানো হয়েছিল, যেখানে একটি মাত্র কোম্পানি টেন্ডার সাবমিট করেছে। এই প্রক্রিয়াটিই কি সমস্যাজনক না? টেন্ডার বাজারে ছাড়া হয় যাতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে নির্বাচন করা যায়। কিন্তু টেন্ডারের শর্ত যদি এমন হয়, যেখানে একটি মাত্র কোম্পানি শর্ত মানতে পারে, তাহলে স্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকে বলে মনে করি।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুধু ব্যালট পেপার নয়, সেটি গণনার মেশিনের টেন্ডারও এমনভাবে দেওয়া হয়েছিল যাতে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানই টেন্ডার জমা দিতে পারে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত