leadT1ad

ঢাবির দুই সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত ফোন পরীক্ষার অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

অভিযোগকারী আবির হাসান। সংগৃহীত ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীকে হয়রানি ও তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন তল্লাশির অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার (২৫ অক্টোবর) আনুমানিক রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে শাহবাগ চেকপোস্টে প্রবেশের সময় ঘটা এক অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযোগটি সামনে এসেছে।

​ভুক্তভোগী আবির হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। তার দাবি, ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিলেন। এ নিয়ে মন্তব্য করায় তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে প্রক্টরিয়াল টিমের এক সদস্য পাশে থাকা এক রিকশাচালককে চড় মারলে শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদ করেন। পরে তাঁকে প্রক্টরের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

​ওই শিক্ষার্থী আরও অভিযোগ করেন, প্রক্টরের রুমে আসার পর প্রক্টরিয়াল টিমের ওই সদস্য দাবি করেন যে, শিক্ষার্থী ও রিকশাচালক মিলে তাকে মেরেছেন। তবে ওই শিক্ষার্থী তার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন এবং শাহবাগ থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার অনুরোধ জানান।

সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি আসে এরপর। প্রক্টর অফিসে থাকাকালীন সহকারী প্রক্টর ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং ড. কে এম আজম চৌধুরী ওই শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা করেন এবং তিনি কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন কি না জানতে চান।

আবির হাসান এক ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায় বা কোন আইনে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ফোন পরীক্ষা করার ক্ষমতা দেওয়া আছে? হল ও ভার্সিটির কার্ড দেখানোর পরেও কোন ক্ষমতা বা আইনে তার ব্যক্তিগত ফোন তল্লাশি করা হলো?

​ওই শিক্ষার্থী জানান, এই ঘটনার পর তিনি মানসিক চাপে ও আতঙ্কে ছিলেন। তাকে ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো কাজ না করা’ এবং ‘প্রক্টরিয়াল বডি যে শাস্তি দেবে, তা মেনে নিতে বাধ্য থাকা’ মর্মে মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয়।

এমনকি হলে ফেরার পর তিনি দেখতে পান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রক্টরিয়াল টিমের আহত এক সদস্যের ছবি ব্যবহার করে এমন একটি ভুল ধারণা ছড়ানো হচ্ছে যে, বামপন্থী শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের নিয়ে এসে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যকে মারধর করেছে।

​এই পরিস্থিতিতে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টা নাগাদ প্রক্টর অফিসে যান। প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগে তিনি তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। তাঁর দাবিগুলো হলো— তাঁর ব্যক্তিগত ফোন যারা পরীক্ষা করেছেন, তাদের কাছ থেকে লিখিত ব্যাখ্যা ও দুঃখপ্রকাশ চাওয়া হোক; ভবিষ্যতে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সম্পদ তল্লাশি করতে পারবেন না— এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট প্রশাসনিক নীতিমালা বা সার্কুলার প্রকাশ করা হোক এবং ঘটনার সময় তিনি মানসিকভাবে যে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নথিভুক্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

​এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. সাইফুদ্দিন চার সদস্য বিশিষ্ট একটি সত্যানুসন্ধান তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। যার আহ্বায়ক করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে। এছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন, সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী; পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাকিবুর রহমান রনি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নূমান আহমাদ চৌধুরী।

কমিটিকে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপরই শিক্ষার্থী হয়রানির অভিযোগ এবং প্রক্টরিয়াল বডির ক্ষমতা প্রয়োগের সীমানা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের মীমাংসা হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সহকারী প্রক্টর ড. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ‘সে (আবির হাসান) তাঁর অভিযোগে নিজের দোষগুলো লুকিয়েছে। সে প্রক্টর অফিসে আসার আগে প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে কার্ড প্রদর্শন নিয়ে ঝামেলা করেছে। পরবর্তী সময়ে সে প্রক্টর অফিসে আসার পর প্রক্টরিয়াল টিমের একজনকে আহত অবস্থায় দেখে আমি কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে যাই। তাই আমি তাঁর কারো সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না দেখার জন্য তার ফোন দেখেছি। আমি তার শিক্ষক এবং অভিভাবক, সে যদি কোনো ভুল করে তাকে শাসন করার অধিকার আমার আছে। সে চাইলে আমার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারতো। কিন্তু সে ফেসবুকে এই বিষয় নিয়ে ফলাওভাবে প্রচার করেছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত