leadT1ad

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দিতে যমুনায় কমিশন সদস্যরা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনায় পৌঁছেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তাঁদের যমুনায় প্রবেশ করতে দেখা যায়।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সবশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

নির্ধারিত আগামী সংসদ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে কী হবে সেটা নিয়ে একটি বিকল্প প্রস্তাবও সুপারিশ করবে কমিশন। সেখানে বিশেষ আদেশ জারির পরে সংবিধান সংক্রান্ত সব প্রস্তাব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিল তৈরি, পরে বিলের প্রশ্নে গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের মেয়াদে বাস্তবায়ন না হলে বিলে থাকা বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।

গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কমিশনের প্রস্তুত করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সুপারিশের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন প্রধানকে সুপারিশগুলো আমরা অবহিত করেছি। সে ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার (আজ) পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।

কমিশন সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করার প্রস্তাব দিচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ, আর এই অধ্যাদেশের ভিত্তিতেই হবে গণভোট।

সবশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়া থাকবে। যার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে বলেও সুপারিশে উল্লেখ করছে কমিশন।

বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে বলে প্রস্তাব করছে কমিশন। তারা বলছে, আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিক এবং কিছু কিছু বিষয় পরবর্তীতে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। তবে সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। শুধু কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকবে।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রে কাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সংবিধান-সম্পর্কিত। মূলত এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আছে। এ প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। এর মধ্যে ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বিএনপির।

সুপারিশে কমিশন বলছে, যে আদেশ জারি হবে, সেটির শুরুর দিকে এর প্রেক্ষাপট বলা থাকবে। যেখানে থাকবে সংবিধান–সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। এ জন্য গণভোট করা, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা এবং ওই সংস্কার পরিষদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা অপরিহার্য।

আদেশের পরিশিষ্টে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর উল্লেখ থাকবে। গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না। গণভোটে পাস হওয়া সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। এ সময় সংসদ নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে।

কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ থাকবে না। সনদের ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। ‘গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদে পাস হলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠন করার সুপারিশ করা হতে পারে’— যা আদেশে আলাদা করে উল্লেখ থাকতে পারে।

সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সনদের সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে বাধ্যবাধকতা করতে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব কমিশনকে দেবে বলে সূত্রে জানা গেছে। সেখানে বিকল্প সুপারিশে বলা হতে পারে, সংবিধান সংক্রান্ত সব সুপারিশ বিল আকারে আগামী চার মাসের মধ্যে সরকারকে তৈরি করতে বলা হবে। সেক্ষেত্রে গণভোটে বিলটা দেওয়া হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে বিলের শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করতে পারবে, তবে স্পিরিট বা মূলভাব পরিবর্তন করা যাবে না। তবে, ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে বিষয়গুলোর সমাধান না হলে, ২৭১তম দিনে বিলগুলো সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং গণভোট বিলের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।

গণভোট সময় ও আদেশ জারি সিদ্ধান্ত দেবে সরকার

গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে। কমিশন সূত্র জানায়, গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে; এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি। বিএনপি আদেশ জারির পক্ষে নয়। এমন অবস্থায় আদেশটি রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরবারে ওপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত