স্ট্রিম প্রতিবেদক
দেশের বেশিরভাগ মানুষের আয় বছরের পর বছর একই রয়েছে। অপর্যাপ্ত এই আয় দিয়ে পরিবারের মাসিক খরচসহ জরুরি চিকিৎসা ব্যয় মেটানো যায় না। এ পরিস্থিতি মানুষের অর্থনৈতিক সংকটকে তীব্র করছে এবং সমাজে বৈষম্য বাড়াচ্ছে। আয়ের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ২০ শতাংশ মানুষ বাকিদের চেয়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকা বেশি উপার্জন করছেন। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের ৬৪টি জেলার ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ওপর চালানো জরিপে এমনই তথ্যই উঠে এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘স্টেট অব দ্য রিয়েল ইকোনোমি: হাউসহোল্ড রিয়েলিটিস অ্যান্ড পলিসি অপশন্স টোয়ার্ডস স্ট্রেন্দেনিং ইকোনোমিক ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক জরিপটি চালিয়েছে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।
জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সাল থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশি দারিদ্রসীমায় বা এর নিচে বসবাস করছে। আর ১৮ শতাংশ দারিদ্রসীমার একটু উপরে অর্থাৎ ঝুঁকিতে বসবাস করছে। এছাড়া ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ গরিব নয় তবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। মাত্র ৫৪ শতাংশ পরিবার দরিদ্র নয় বলে চিহ্নিত হয়েছে।
সোমবার আগারগাঁওয়ে এলজিইডি অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক হোসাইন জিল্লুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, ‘শুধু সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক দেখলেই হবে না। মানুষের কল্যাণ, তাদের যাপনের বাস্তবতা এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
জরিপের ফলাফলের দিকে তাকালে বৈষম্য দৃশ্যমান। জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশের একাধিক উপার্জনকারী সদস্য রয়েছে। প্রায় ৮৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন ১৫-৩৫ বছর বয়সী সদস্য আছেন। আর ৩৫ শতাংশ পরিবারের একজন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া শিশু রয়েছে। প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারে ৬৫ বছরের উপরে বয়সী একজন সদস্য আছেন।
এক জাতি, দুই বাস্তবতা
২০২২ সালের হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডেচার সার্ভের (এইচএইচইএস) সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আয় প্রায় একই জায়গায় থমকে আছে। ২০২২ সালের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা থেকে সামান্য বেড়ে ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা হয়েছে।
আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে নিচে আছে ১০ শতাংশ পরিবার। তাদের মাসিক আয় প্রায় ৮৫০০ টাকা। আর মধ্যম পর্যায়ে থাকা ৪০ শতাংশের মাসিক আয় প্রায় ২৮ হাজার। এই হিসাবে সর্বনিম্ন আয়ে থাকা পরিবারের সঙ্গে মধ্যম পর্যায়ে থাকা পরিবারের আয়ের পার্থক্য ২০ হাজার টাকা।
তবে আয়ের দিক থেকে মধ্যম অবস্থানে থাকা ৪০ শতাংশের সঙ্গে শীর্ষে থাকা ২০ শতাংশের আয়ের পার্থক্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ২০ শতাংশ পরিবার মাসিক ব্যয় নির্বাহের জন্য সক্ষম। শীর্ষে থাকা ২০ বা ১০ শতাংশ পরিবার বলছে, মাসিক ব্যয় মিটিয়ে তাদের ৮ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে।
অন্যদের মাসিক ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত আয় হয় না। আয়ের দিক থেকে নিচের দিকে থাকা ১০ শতাংশ পরিবারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তাদের ঋণের পরিমাণ বাড়া সত্ত্বেও প্রতিমাসে তাদের ৩৫০০ টাকা ঘাটতি থাকে। আর আয়ের দিক থেকে নিচে থাকা ৪০ শতাংশ পরিবারের সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ ১১২-৩০৮ শতাংশ বেশি এবং চলতি বছরের প্রথমার্ধে তা আরও ৭ শতাংশ বেড়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পরিবারের খরচ মেটাতে তারা ঋণ করছেন। প্রায় ১০ শতাংশ বলছেন, ঋণ করার দ্বিতীয় কারণ চিকিৎসা ব্যয় মেটানো। এরপরই বাড়ি মেরামত ও দোকানের দেনা মেটাতেও ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেছেন উত্তরদাতারা।
বাড়ির মালিক, তবুও স্বস্তি নেই
উত্তরদাতাদের সিংহভাগই বলেছেন তাঁরা বাড়ির মালিক। মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের এই অবস্থা। আর যাঁরা বাড়ির মালিক নন তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ। উত্তরদাতাদের মাত্র ১৫ শতাংশ শেয়ারে অথবা একাই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন।
উত্তরদাতাদের ৮২ শতাংশ বলেছেন, তাদের নিজেদের বাড়ি আছে। ৩৯ শতাংশ টিনশেড বাড়িতে থাকেন, ২৮ শতাংশ সেমি-পাকা এবং ২৩ শতাংশ পাকা বাড়িতে থাকেন। অর্থাৎ অবকাঠামো স্থায়ী এবং ভালোভাবে নির্মিত। বাকি ৯ শতাংশ এখনো কাঁচা বাড়িতে বসবাস করেন। যেটি মাটি এবং অন্যান্য উপকরণে নির্মিত। আর এক শতাংশ পলিথিন বা অন্যান্য দিয়ে নির্মিত বাড়িতে থাকেন।
৯৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। ১৩ শতাংশ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন এবং ৫ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন।
জ্বালানি হিসেবে এখনো ৭৫ শতাংশ পরিবার লাকড়ি ব্যবহার করেন। এরমধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি শুধু রান্নার জন্যই তা ব্যবহার করেন এবং প্রায় ৬৫ শতাংশ এখনো খড়কুটো এবং ৪৫ শতাংশ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন।
চিকিৎসা ব্যয়: একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা
সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রেই আয়ের একটি বড় অংশ চিকিৎসার ব্যয়ে চলে যায়। জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর প্রায় অর্ধেকেই অন্তত একজন করে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন।
উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক বা আলসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হলো প্রধান স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
জরিপে উল্লেখ করা হয়, ‘দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার বোঝা এবং এর ফলে যে নিয়মিত ব্যয় হয় তা কোনো একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সবগোষ্ঠীর জন্যই সমস্যা।’
প্রায় ২০ শতাংশ জানিয়েছেন, গত বছর তারা অর্থনৈতিক সংকটে ভুগেছেন। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে এমনটা হয়েছে। আর ২৭ শতাংশ বলেছেন, দেনা পরিশোধের কারণে এই সংকটে পড়েন তাঁরা। প্রায় ৭ শতাংশ বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই সংকট তৈরি করেছে। এছাড়া প্রতি তিনটি পরিবারের একটির বেশি পরিবার এখনো অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারের কথা বলেছেন।
জরিপে দেখা যায়, ৩৭ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।
জরিপে শহর ও গ্রামের মধ্যে বিভাজনও দৃশ্যমান। শহরের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করে। সেখানে গ্রামের মাত্র ৫৯ শতাংশ মানুষ এই সুবিধা পায়।
৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের কাছে বাটন ফোন। ৭২ শতাংশের স্মার্টফোন আছে। আর মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আছে। তবে আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০ শতাংশের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবারের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে।
সিস্টেমের ফাঁকফোকরে সুরক্ষার ঘাটতি
সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অনেককে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে বাধাগ্রস্ত করে। মাত্র ২৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা পান। যার মধ্যে ১৭ শতাংশ খাদ্য-বান্ধব কর্মসূচি, ২৩ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি এবং ৩২ শতাংশ বয়স্ক ভাতা পান। তবুও, সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি আছে। যেমন—প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য যোগ্যদের প্রায় ২০ শতাংশ এই সুবিধা পান না।
টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড একটি প্রধান সমস্যা। কারণ এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য ৩২ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এই কার্ড পেয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, এই কার্ড পাওয়া ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দরিদ্র নয়। আর এটিই অন্তর্ভুক্তি ব্যবস্থার ত্রুটির দিকটি তুলে ধরে। এছাড়া প্রায় ৫ শতাংশ পরিবার বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু তাঁরা পাচ্ছেন না।
প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আশাবাদী হওয়া
জরিপে পাওয়া এসব তথ্য একইসঙ্গে দুটি বাস্তবতা তুলে ধরে। একদিকে রয়েছে একটি সুবিধাভোগী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যারা নিরাপদ ও আরামদায়ক জীবনযাপন করেন। অন্যদিকে রয়েছে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ, যাদের দৈনন্দিন জীবন খুবই অনিশ্চিত এবং মেপে চলতে হয়। কারণ মাত্র একটি চিকিৎসা বিলের কারণে তারা সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
এসব সত্ত্বেও আশা জেগে আছে। এমনকি নিম্ন-আয়ের মানুষও আশাবাদী। আয়ের দিক থেকে নিচের দিকে থাকা ১০ শতাংশের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করে পরিস্থিতি কাটানো যাবে। তবে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বলছেন, তারা সব সময় অর্থের অভাবে থাকেন। প্রায় ৩৮ শতাংশ বলছেন, মাঝেমধ্যে তাঁরা অর্থের অভাবে পড়েন।
আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা মানুষ এটা স্বীকার করতে রাজি না। আয়ে শীর্ষে থাকা ১০ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ বলেছেন, তাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, ৪৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ভালো করছেন এবং মাত্র ১০ শতাংশ বলেছেন তারা খুব সচ্ছল।
দেশের বেশিরভাগ মানুষের আয় বছরের পর বছর একই রয়েছে। অপর্যাপ্ত এই আয় দিয়ে পরিবারের মাসিক খরচসহ জরুরি চিকিৎসা ব্যয় মেটানো যায় না। এ পরিস্থিতি মানুষের অর্থনৈতিক সংকটকে তীব্র করছে এবং সমাজে বৈষম্য বাড়াচ্ছে। আয়ের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ২০ শতাংশ মানুষ বাকিদের চেয়ে অন্তত ৫০ হাজার টাকা বেশি উপার্জন করছেন। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশের ৬৪টি জেলার ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ওপর চালানো জরিপে এমনই তথ্যই উঠে এসেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘স্টেট অব দ্য রিয়েল ইকোনোমি: হাউসহোল্ড রিয়েলিটিস অ্যান্ড পলিসি অপশন্স টোয়ার্ডস স্ট্রেন্দেনিং ইকোনোমিক ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক জরিপটি চালিয়েছে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)।
জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সাল থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশি দারিদ্রসীমায় বা এর নিচে বসবাস করছে। আর ১৮ শতাংশ দারিদ্রসীমার একটু উপরে অর্থাৎ ঝুঁকিতে বসবাস করছে। এছাড়া ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ গরিব নয় তবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। মাত্র ৫৪ শতাংশ পরিবার দরিদ্র নয় বলে চিহ্নিত হয়েছে।
সোমবার আগারগাঁওয়ে এলজিইডি অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক হোসাইন জিল্লুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, ‘শুধু সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক দেখলেই হবে না। মানুষের কল্যাণ, তাদের যাপনের বাস্তবতা এবং সম্পদের ন্যায্য বণ্টনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
জরিপের ফলাফলের দিকে তাকালে বৈষম্য দৃশ্যমান। জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশের একাধিক উপার্জনকারী সদস্য রয়েছে। প্রায় ৮৩ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন ১৫-৩৫ বছর বয়সী সদস্য আছেন। আর ৩৫ শতাংশ পরিবারের একজন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া শিশু রয়েছে। প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারে ৬৫ বছরের উপরে বয়সী একজন সদস্য আছেন।
এক জাতি, দুই বাস্তবতা
২০২২ সালের হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডেচার সার্ভের (এইচএইচইএস) সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আয় প্রায় একই জায়গায় থমকে আছে। ২০২২ সালের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা থেকে সামান্য বেড়ে ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা হয়েছে।
আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে নিচে আছে ১০ শতাংশ পরিবার। তাদের মাসিক আয় প্রায় ৮৫০০ টাকা। আর মধ্যম পর্যায়ে থাকা ৪০ শতাংশের মাসিক আয় প্রায় ২৮ হাজার। এই হিসাবে সর্বনিম্ন আয়ে থাকা পরিবারের সঙ্গে মধ্যম পর্যায়ে থাকা পরিবারের আয়ের পার্থক্য ২০ হাজার টাকা।
তবে আয়ের দিক থেকে মধ্যম অবস্থানে থাকা ৪০ শতাংশের সঙ্গে শীর্ষে থাকা ২০ শতাংশের আয়ের পার্থক্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ২০ শতাংশ পরিবার মাসিক ব্যয় নির্বাহের জন্য সক্ষম। শীর্ষে থাকা ২০ বা ১০ শতাংশ পরিবার বলছে, মাসিক ব্যয় মিটিয়ে তাদের ৮ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে।
অন্যদের মাসিক ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত আয় হয় না। আয়ের দিক থেকে নিচের দিকে থাকা ১০ শতাংশ পরিবারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তাদের ঋণের পরিমাণ বাড়া সত্ত্বেও প্রতিমাসে তাদের ৩৫০০ টাকা ঘাটতি থাকে। আর আয়ের দিক থেকে নিচে থাকা ৪০ শতাংশ পরিবারের সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ ১১২-৩০৮ শতাংশ বেশি এবং চলতি বছরের প্রথমার্ধে তা আরও ৭ শতাংশ বেড়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পরিবারের খরচ মেটাতে তারা ঋণ করছেন। প্রায় ১০ শতাংশ বলছেন, ঋণ করার দ্বিতীয় কারণ চিকিৎসা ব্যয় মেটানো। এরপরই বাড়ি মেরামত ও দোকানের দেনা মেটাতেও ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলেছেন উত্তরদাতারা।
বাড়ির মালিক, তবুও স্বস্তি নেই
উত্তরদাতাদের সিংহভাগই বলেছেন তাঁরা বাড়ির মালিক। মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের এই অবস্থা। আর যাঁরা বাড়ির মালিক নন তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ। উত্তরদাতাদের মাত্র ১৫ শতাংশ শেয়ারে অথবা একাই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন।
উত্তরদাতাদের ৮২ শতাংশ বলেছেন, তাদের নিজেদের বাড়ি আছে। ৩৯ শতাংশ টিনশেড বাড়িতে থাকেন, ২৮ শতাংশ সেমি-পাকা এবং ২৩ শতাংশ পাকা বাড়িতে থাকেন। অর্থাৎ অবকাঠামো স্থায়ী এবং ভালোভাবে নির্মিত। বাকি ৯ শতাংশ এখনো কাঁচা বাড়িতে বসবাস করেন। যেটি মাটি এবং অন্যান্য উপকরণে নির্মিত। আর এক শতাংশ পলিথিন বা অন্যান্য দিয়ে নির্মিত বাড়িতে থাকেন।
৯৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। ১৩ শতাংশ লাইনের গ্যাস ব্যবহার করেন এবং ৫ শতাংশ সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন।
জ্বালানি হিসেবে এখনো ৭৫ শতাংশ পরিবার লাকড়ি ব্যবহার করেন। এরমধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি শুধু রান্নার জন্যই তা ব্যবহার করেন এবং প্রায় ৬৫ শতাংশ এখনো খড়কুটো এবং ৪৫ শতাংশ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করেন।
চিকিৎসা ব্যয়: একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা
সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রেই আয়ের একটি বড় অংশ চিকিৎসার ব্যয়ে চলে যায়। জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর প্রায় অর্ধেকেই অন্তত একজন করে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন।
উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক বা আলসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হলো প্রধান স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
জরিপে উল্লেখ করা হয়, ‘দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার বোঝা এবং এর ফলে যে নিয়মিত ব্যয় হয় তা কোনো একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সবগোষ্ঠীর জন্যই সমস্যা।’
প্রায় ২০ শতাংশ জানিয়েছেন, গত বছর তারা অর্থনৈতিক সংকটে ভুগেছেন। এর মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে এমনটা হয়েছে। আর ২৭ শতাংশ বলেছেন, দেনা পরিশোধের কারণে এই সংকটে পড়েন তাঁরা। প্রায় ৭ শতাংশ বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই সংকট তৈরি করেছে। এছাড়া প্রতি তিনটি পরিবারের একটির বেশি পরিবার এখনো অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহারের কথা বলেছেন।
জরিপে দেখা যায়, ৩৭ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।
জরিপে শহর ও গ্রামের মধ্যে বিভাজনও দৃশ্যমান। শহরের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করে। সেখানে গ্রামের মাত্র ৫৯ শতাংশ মানুষ এই সুবিধা পায়।
৭৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের কাছে বাটন ফোন। ৭২ শতাংশের স্মার্টফোন আছে। আর মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার আছে। তবে আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০ শতাংশের মধ্যে ৫৫ শতাংশ পরিবারের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ আছে।
সিস্টেমের ফাঁকফোকরে সুরক্ষার ঘাটতি
সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে অনেককে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে বাধাগ্রস্ত করে। মাত্র ২৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা পান। যার মধ্যে ১৭ শতাংশ খাদ্য-বান্ধব কর্মসূচি, ২৩ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি এবং ৩২ শতাংশ বয়স্ক ভাতা পান। তবুও, সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি আছে। যেমন—প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য যোগ্যদের প্রায় ২০ শতাংশ এই সুবিধা পান না।
টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড একটি প্রধান সমস্যা। কারণ এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য ৩২ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এই কার্ড পেয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, এই কার্ড পাওয়া ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ দরিদ্র নয়। আর এটিই অন্তর্ভুক্তি ব্যবস্থার ত্রুটির দিকটি তুলে ধরে। এছাড়া প্রায় ৫ শতাংশ পরিবার বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার পাওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু তাঁরা পাচ্ছেন না।
প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আশাবাদী হওয়া
জরিপে পাওয়া এসব তথ্য একইসঙ্গে দুটি বাস্তবতা তুলে ধরে। একদিকে রয়েছে একটি সুবিধাভোগী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যারা নিরাপদ ও আরামদায়ক জীবনযাপন করেন। অন্যদিকে রয়েছে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ, যাদের দৈনন্দিন জীবন খুবই অনিশ্চিত এবং মেপে চলতে হয়। কারণ মাত্র একটি চিকিৎসা বিলের কারণে তারা সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
এসব সত্ত্বেও আশা জেগে আছে। এমনকি নিম্ন-আয়ের মানুষও আশাবাদী। আয়ের দিক থেকে নিচের দিকে থাকা ১০ শতাংশের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করে পরিস্থিতি কাটানো যাবে। তবে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বলছেন, তারা সব সময় অর্থের অভাবে থাকেন। প্রায় ৩৮ শতাংশ বলছেন, মাঝেমধ্যে তাঁরা অর্থের অভাবে পড়েন।
আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা মানুষ এটা স্বীকার করতে রাজি না। আয়ে শীর্ষে থাকা ১০ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ বলেছেন, তাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, ৪৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা ভালো করছেন এবং মাত্র ১০ শতাংশ বলেছেন তারা খুব সচ্ছল।
দাবি আদায় না হলে বিসিএস প্রকৌশলীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিএসসি ও ডিপ্লোমাধারীদের দাবিগুলো পর্যালোচনার জন্য ১৪ সদস্যের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে সরকার। এ ছাড়া আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসসি প্রকৌশলী শিক্ষার্থীরা এটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
২ ঘণ্টা আগেদেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ কার্যকর রাখার ঘোষণা দিয়েছে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলন। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান চলবে।
৪ ঘণ্টা আগেসাত মাস ব্যথার চিকিৎসা করতে গিয়ে ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এই ঘটনায় ফেনীর সিভিল সার্জন ও ফেনী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিনের পুরোনো দ্বন্দ্ব—ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বনাম বিএসসি গ্র্যাজুয়েট ইঞ্জিনিয়ার—আবার নতুন করে উত্তপ্ত রূপ নিয়েছে। প্রমোশন, পদমর্যাদা ও ‘প্রকৌশলী’ উপাধি ব্যবহারের প্রশ্নে দুই পক্ষের বিরোধ এখন দেশজুড়ে আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে