‘পরিবারের সম্মতিতে’ দাফন করা হলেও ময়নাতদন্ত না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক, আইনজীবী ও শিবলীর সহকর্মীসহ অনেকেই।
মো. ইসতিয়াক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করার সময় গত ৯ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে মারা গেছেন চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার তরিকুল শিবলী (৪০)। ওই দিনই পরিবারের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় তাঁর মরদেহ। তবে ‘পরিবারের সম্মতিতে’ দাফন করা হলেও ময়নাতদন্ত না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক, আইনজীবী ও শিবলীর সহকর্মীসহ অনেকেই।
সেদিন যা ঘটেছিল
গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় লাইভ কাভারেজ চলাকালে শিবলী হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। তখন তাঁর সহকর্মীরা শিবলীকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিবলীর সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল রানা স্ট্রিমকে বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন কভার করার জন্য আমরা টিএসসিতে কাজ করছিলাম। এরপর আমরা কার্জন হলে গিয়ে আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করছিলাম। লাইভ শেষ হওয়ার পর বেলা একটার দিকে আমরা লাঞ্চ করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অফিসের গাড়িতে উঠছিলাম। হঠাৎ করেই শিবলী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পড়ে যান। আমরা এবং সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাকে ধরে মাথায় পানি দেই। কিন্তু জ্ঞান ফিরছিল না। আমরা দ্রুত তাঁকে চ্যানেলের গাড়িতে তুলে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
যা বলছে শিবলীর পরিবার
তরিকুল ইসলাম শিবলীর স্ত্রী সোনিয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘ওই দিন (৯ সেপ্টেম্বর) লাইভ শেষ হলে আমি শিবলীকে ফোন দেই। ফোনে কথা বলার সময়ই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোনিয়া বলেন, ‘আমাদের চার বছরের ও দেড় বছরের দুটি ছেলে আছে। তারা বারবার তাদের বাবার কথা জিজ্ঞেস করছে। এই শূন্যতা আমার সন্তানেরা কীভাবে মোকাবিলা করবে!’
শিবলির বোন নুসরাত বলেন, ‘ভাইয়া দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি নিজেও একজন চিকিৎসক। তাই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, এটি হিট স্ট্রোক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হতে পারে। দায়িত্ব পালনকালে, কোনো সংঘর্ষ বা মারামারি ছাড়াই হঠাৎ চলে গেলেন ভাইয়া। আমরা এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছি, তাই ময়নাতদন্তের দাবি করিনি।’
শিবলীর ময়নাতদন্ত না হওয়া নিয়ে আইনজীবীরা কী বলছেন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোনাকেব বাহারের সঙ্গে কথা হলে তিনি ময়নাতদন্ত করার প্রক্রিয়াগুলো জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মৃত্যু—যেমন আত্মহত্যা, হত্যা, দুর্ঘটনা বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি ঘটলে পুলিশকে তা জানাতে হয়। পুলিশ মৃতদেহের স্থান পরিদর্শন করে দুই বা ততোধিক ‘সম্মানিত স্থানীয় নাগরিক’-এর উপস্থিতিতে প্রাথমিক রিপোর্ট (সুরতহাল) তৈরি করে। রিপোর্টে মৃতদেহের আঘাত, দাগ বা অন্যান্য চিহ্নের বিবরণ দেওয়া হয়। এরপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। প্রয়োজনে মৃতদেহ নিকটতম সিভিল সার্জন বা যোগ্য চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা হয়।’
মোনাকেব বাহার প্রশ্ন তোলেন, শিবলীর ক্ষেত্রে এই পুরো প্রক্রিয়া কি অনুসরণ করা হয়েছিল?
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুকের দাবি, শিবলীর পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত না করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ও বোন যেহেতু এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক ও হিট স্ট্রোক হিসেবে মেনে নিয়েছেন তাই আর ময়নাতদন্ত হয়নি।
আইনজীবী মোনাকেব বাহার বলেন, ‘আইনে রয়েছে, যদি কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হয় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্তের দাবি না থাকে, তাহলে পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ময়নাতদন্ত বাধ্যতামূলকভাবে করানোর প্রয়োজন নেই।’
সম্ভবত এ কারণেই শিবলীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে জানান মোনাকেব বাহার।
কেন হয়নি ময়নাতদন্ত, কী বলছেন চিকিৎসক ও পুলিশ
ঢামেকের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক স্ট্রিমকে জানান, ওই দিন মরদেহ এনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছিল। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে মো. ফারুক বলেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তরিকুল ইসলাম শিবলীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করেছেন চিকিৎসকেরা। পরে পরিবারের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
মো. ফারুক আরও বলেন, ‘আসলে ওই দিন তাকে (শিবলীকে) যখন আনা হয়, তখনই তিনি মৃত ছিলেন। পরে অধিকতর নিশ্চয়তার জন্য চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এবং নিয়মানুযায়ী লগবুকে নাম রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর ময়নাতদন্তের অনুমতির জন্য পরিবারের সম্মতি চাওয়া হয়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর স্ত্রী ও বোন রাজি হননি। এরপর তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।’
এ রকম আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেন ময়নাতদন্ত করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত করার আগে কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে। ওই আইনি প্রক্রিয়াগুলো অনুযায়ীই তার পরিবার চায়নি যে ময়নাতদন্ত হোক। তাই আর আমরা ময়নাতদন্ত করিনি।’
তবে কোনো কোনো চিকিৎসক মনে করেন আইনি জটিলতার বাইরে গিয়ে যেকোনো সন্দেহভাজন মরদেহেরই ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারহানা ইয়াসমীন স্ট্রিমকে বলেন, ‘সাডেন ডেথের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। কারণ ময়নাতদন্ত না করে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিন্ত করা খুবই দুষ্কর। কিন্তু আমাদের এখানে দেখেন, একটা মানুষের মৃত্যুর পর আইনি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে দেখা যায় ময়নাতদন্ত করা হয় না। এখন কারও যদি ময়নাতদন্তই না করে, তাহলে কীভাবে বলা যাবে যে তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে?’
ডা. ফারহানা ইয়াসমীন বলেন, ‘শিবলীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তো ময়নাতদন্ত হয়নি। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে যেটা বলা হচ্ছে, তা না-ও হতে পারে। এ ছাড়া তার যে আগের এমন মেডিকেল হিস্ট্রি নেই বলছে, তা আসলে সঠিক না। অনেক সময় অনেক কিছু আমাদের অজানা থাকে। তাই এমন মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবশ্যই ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। আইনি জটিলতার বাইরে গিয়ে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
সহকর্মীরা যা বলছেন
শিবলীর সহকর্মী সোহেল রানা বলেন, ‘এটি হিট স্ট্রোকের মতো একটি ঘটনা বলে চিকিৎসকেরা আমাদের জানিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে আমাদের সরাসরি কোনো বিস্তারিত চিকিৎসা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (লগবুকে নাম রেজিস্ট্রেশনের স্লিপ) তার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।’
শিবলীর আরেক সহকর্মী ও চ্যানেল এসের প্রধান প্রতিবেদক মোস্তাফিজ রুমন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা শিবলীর মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য ডাক্তারকে অনুরোধ করেছিলোম। কিন্তু পরিবার চায়নি বলে শেষ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয়নি। তবে এরকম আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে যে কারও ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।’
সাংবাদিকের নিয়ে কাজ করা আন্তজার্তিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) তথ্যনুসারে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৯। অর্থাৎ পেশাগত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা অনেকটাই অনিরাপদ।
আরএসএফ আরও বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে কর্মক্ষেত্রে বা সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে। এরই সবশেষ তালিকায় যুক্ত হলেন চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার তরিকুল ইসলাম শিবলী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করার সময় গত ৯ সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে মারা গেছেন চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার তরিকুল শিবলী (৪০)। ওই দিনই পরিবারের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় তাঁর মরদেহ। তবে ‘পরিবারের সম্মতিতে’ দাফন করা হলেও ময়নাতদন্ত না করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক, আইনজীবী ও শিবলীর সহকর্মীসহ অনেকেই।
সেদিন যা ঘটেছিল
গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় লাইভ কাভারেজ চলাকালে শিবলী হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়েন। তখন তাঁর সহকর্মীরা শিবলীকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিবলীর সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সোহেল রানা স্ট্রিমকে বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন কভার করার জন্য আমরা টিএসসিতে কাজ করছিলাম। এরপর আমরা কার্জন হলে গিয়ে আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করছিলাম। লাইভ শেষ হওয়ার পর বেলা একটার দিকে আমরা লাঞ্চ করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অফিসের গাড়িতে উঠছিলাম। হঠাৎ করেই শিবলী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পড়ে যান। আমরা এবং সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা দ্রুত তাকে ধরে মাথায় পানি দেই। কিন্তু জ্ঞান ফিরছিল না। আমরা দ্রুত তাঁকে চ্যানেলের গাড়িতে তুলে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
যা বলছে শিবলীর পরিবার
তরিকুল ইসলাম শিবলীর স্ত্রী সোনিয়া স্ট্রিমকে বলেন, ‘ওই দিন (৯ সেপ্টেম্বর) লাইভ শেষ হলে আমি শিবলীকে ফোন দেই। ফোনে কথা বলার সময়ই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোনিয়া বলেন, ‘আমাদের চার বছরের ও দেড় বছরের দুটি ছেলে আছে। তারা বারবার তাদের বাবার কথা জিজ্ঞেস করছে। এই শূন্যতা আমার সন্তানেরা কীভাবে মোকাবিলা করবে!’
শিবলির বোন নুসরাত বলেন, ‘ভাইয়া দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি নিজেও একজন চিকিৎসক। তাই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, এটি হিট স্ট্রোক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হতে পারে। দায়িত্ব পালনকালে, কোনো সংঘর্ষ বা মারামারি ছাড়াই হঠাৎ চলে গেলেন ভাইয়া। আমরা এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছি, তাই ময়নাতদন্তের দাবি করিনি।’
শিবলীর ময়নাতদন্ত না হওয়া নিয়ে আইনজীবীরা কী বলছেন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোনাকেব বাহারের সঙ্গে কথা হলে তিনি ময়নাতদন্ত করার প্রক্রিয়াগুলো জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোডের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মৃত্যু—যেমন আত্মহত্যা, হত্যা, দুর্ঘটনা বা সন্দেহজনক পরিস্থিতি ঘটলে পুলিশকে তা জানাতে হয়। পুলিশ মৃতদেহের স্থান পরিদর্শন করে দুই বা ততোধিক ‘সম্মানিত স্থানীয় নাগরিক’-এর উপস্থিতিতে প্রাথমিক রিপোর্ট (সুরতহাল) তৈরি করে। রিপোর্টে মৃতদেহের আঘাত, দাগ বা অন্যান্য চিহ্নের বিবরণ দেওয়া হয়। এরপর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অন্য কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। প্রয়োজনে মৃতদেহ নিকটতম সিভিল সার্জন বা যোগ্য চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা হয়।’
মোনাকেব বাহার প্রশ্ন তোলেন, শিবলীর ক্ষেত্রে এই পুরো প্রক্রিয়া কি অনুসরণ করা হয়েছিল?
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেলের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুকের দাবি, শিবলীর পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত না করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ও বোন যেহেতু এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক ও হিট স্ট্রোক হিসেবে মেনে নিয়েছেন তাই আর ময়নাতদন্ত হয়নি।
আইনজীবী মোনাকেব বাহার বলেন, ‘আইনে রয়েছে, যদি কারও স্বাভাবিক মৃত্যু হয় এবং পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্তের দাবি না থাকে, তাহলে পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ময়নাতদন্ত বাধ্যতামূলকভাবে করানোর প্রয়োজন নেই।’
সম্ভবত এ কারণেই শিবলীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে জানান মোনাকেব বাহার।
কেন হয়নি ময়নাতদন্ত, কী বলছেন চিকিৎসক ও পুলিশ
ঢামেকের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক স্ট্রিমকে জানান, ওই দিন মরদেহ এনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছিল। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে মো. ফারুক বলেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তরিকুল ইসলাম শিবলীর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করেছেন চিকিৎসকেরা। পরে পরিবারের সম্মতিতে ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
মো. ফারুক আরও বলেন, ‘আসলে ওই দিন তাকে (শিবলীকে) যখন আনা হয়, তখনই তিনি মৃত ছিলেন। পরে অধিকতর নিশ্চয়তার জন্য চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় এবং নিয়মানুযায়ী লগবুকে নাম রেজিস্ট্রি করা হয়। এরপর ময়নাতদন্তের অনুমতির জন্য পরিবারের সম্মতি চাওয়া হয়। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর স্ত্রী ও বোন রাজি হননি। এরপর তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।’
এ রকম আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেন ময়নাতদন্ত করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবদুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত করার আগে কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে। ওই আইনি প্রক্রিয়াগুলো অনুযায়ীই তার পরিবার চায়নি যে ময়নাতদন্ত হোক। তাই আর আমরা ময়নাতদন্ত করিনি।’
তবে কোনো কোনো চিকিৎসক মনে করেন আইনি জটিলতার বাইরে গিয়ে যেকোনো সন্দেহভাজন মরদেহেরই ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারহানা ইয়াসমীন স্ট্রিমকে বলেন, ‘সাডেন ডেথের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। কারণ ময়নাতদন্ত না করে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিন্ত করা খুবই দুষ্কর। কিন্তু আমাদের এখানে দেখেন, একটা মানুষের মৃত্যুর পর আইনি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে দেখা যায় ময়নাতদন্ত করা হয় না। এখন কারও যদি ময়নাতদন্তই না করে, তাহলে কীভাবে বলা যাবে যে তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে?’
ডা. ফারহানা ইয়াসমীন বলেন, ‘শিবলীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তো ময়নাতদন্ত হয়নি। তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে যেটা বলা হচ্ছে, তা না-ও হতে পারে। এ ছাড়া তার যে আগের এমন মেডিকেল হিস্ট্রি নেই বলছে, তা আসলে সঠিক না। অনেক সময় অনেক কিছু আমাদের অজানা থাকে। তাই এমন মৃত্যুর ক্ষেত্রে অবশ্যই ময়নাতদন্ত প্রয়োজন। আইনি জটিলতার বাইরে গিয়ে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’
সহকর্মীরা যা বলছেন
শিবলীর সহকর্মী সোহেল রানা বলেন, ‘এটি হিট স্ট্রোকের মতো একটি ঘটনা বলে চিকিৎসকেরা আমাদের জানিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে আমাদের সরাসরি কোনো বিস্তারিত চিকিৎসা সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (লগবুকে নাম রেজিস্ট্রেশনের স্লিপ) তার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে।’
শিবলীর আরেক সহকর্মী ও চ্যানেল এসের প্রধান প্রতিবেদক মোস্তাফিজ রুমন স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমরা শিবলীর মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য ডাক্তারকে অনুরোধ করেছিলোম। কিন্তু পরিবার চায়নি বলে শেষ পর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয়নি। তবে এরকম আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে যে কারও ময়নাতদন্ত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।’
সাংবাদিকের নিয়ে কাজ করা আন্তজার্তিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের (আরএসএফ) তথ্যনুসারে, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৯। অর্থাৎ পেশাগত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা অনেকটাই অনিরাপদ।
আরএসএফ আরও বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে কর্মক্ষেত্রে বা সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে গিয়ে। এরই সবশেষ তালিকায় যুক্ত হলেন চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার তরিকুল ইসলাম শিবলী।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আহমেদ হেলাল স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যানজটের কারণে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানত মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ে। মানসিক চাপটা তাকে উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটির মতো রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এই চাপ বিষণ্ণতা
১৩ মিনিট আগেচাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ও ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৭৪১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন এক হাজার ২০২ জন। অর্থাৎ মোট দুর্ঘটনায় নিহতের ৩২ শতাংশের বেশি এসেছে দুই চাকার এই বাহন থেকে।
২ ঘণ্টা আগেউপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে যেসব পরামর্শ এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা নির্ধারণ, ভোট গণনার প্রক্রিয়া নির্ধারণ, কালি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি।
৩ ঘণ্টা আগে