leadT1ad

জনগণের নির্বাচন ভাবনা নিয়ে জরিপ: সমর্থনে কোন দল এগিয়ে

স্ট্রিম প্রতিবেদক
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে জরিপের ফল তুলে ধরা হয়। স্ট্রিম ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। যদিও এখনো তপশিল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিং। এটি সংস্থাটির দ্বিতীয় পর্বের জরিপ। এতে উঠে এসেছে কোন দলের প্রতি জনগণের সমর্থন কত।

আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সারোয়ার।

জরিপে দেখা যায়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দিতে চায়। জামায়াতে ইসলামীকে ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ভোট দিতে চায় ৪ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ। আর কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চান ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ।

ইনোভিশনের প্রথম পর্বের জরিপ পরিচালিত হয়েছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে। সারা দেশ থেকে দ্বিতীয় পর্বের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্বের ফলাফলের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে ৪ শতাংশ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির ভোট প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ না নিলে বিএনপিকে ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও জামায়াতে ইসলামীকে ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ভোট দেবেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন ৮ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ।

দেশের ৬৪ জেলায় চালানো ইনোভিশনের এ জরিপে অংশ নিয়েছেন ১০ হাজার ৪১৩ জন। এর মধ্যে আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং কোন দলকে ভোট দেবেন সেটি বলতে চেয়েছেন এমন ৫ হাজার ৬৭৩ জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।

যোগ্যতা দেখে ভোট দিতে চায় ৬৫ শতাংশ

ইনোভিশনের জরিপে অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দিতে চান। পাশাপাশি প্রার্থীর পূর্ববর্তী কাজের ভিত্তিতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং দলের নির্বাচনী প্রতীকের বিবেচনায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। আর দলের ইশতেহার দেখে ভোট দিতে চায় ৫ শতাংশ মানুষ।

সন্তুষ্টি জামায়াতে, অসন্তুষ্টি আওয়ামী লীগে

রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে সন্তুষ্টির বিষয়টিও তুলে আনা হয়েছে জরিপে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন। আর বেশি সন্তুষ্টি অর্জন করেছে জামায়াতে ইসলামী।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ৩৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দলটি উচ্চ সন্তুষ্টি পেয়েছে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী উচ্চ সন্তুষ্টি পেয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। উচ্চ অসন্তুষ্টির হার ১৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিএনপির ওপর উচ্চ সন্তুষ্টি ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, অসন্তুষ্টির হার ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

আওয়ামী লীগকেও নির্বাচনে চায় ৪৫ শতাংশ

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগসহ সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায়। আবার জরিপে অংশ নেওয়াদের ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ চান বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়। তবে জরিপে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই চান বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে হবে, এই সংখ্যাটা ৬৩ দশমিক ০৫ শতাংশ।

ভবিষ্যৎ সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা

ইনোভিশনের জরিপের প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারীরা ভবিষ্যত সরকারের কাছে অর্থনৈতিক উদ্বেগ থেকে উত্তরণের প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় পর্বে উঠে এসেছে, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে তাঁদের মূল প্রত্যাশা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ।

এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তরদাতাদের বড় অংশ চেয়েছেন ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ এম শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান ও দ্য ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাইমা ইসলাম।

ইনোভিশনের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত এ জরিপে সহায়তা করেছে ব্রেইন এবং ভয়েস ফর রিফর্ম।

জরিপে অংশ নেওয়া ১০ হাজার ৪১৩ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। বাকিরা ৬৪টি জেলার ৯ হাজার ৩৯৮ পরিবার থেকে অংশ নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ গ্রামের এবং ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ শহরের। অংশগ্রহণকারীদের ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী।

Ad 300x250

সম্পর্কিত