বহুল আলোচিত নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় অবৈধ ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ে দিলেও এই রায় আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নয়, পরবর্তী নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এই রায় ঘোষণা করেন।
আপিল বিভাগের অপর ছয় সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি ও অপর ছয় বিচারপতি এজলাসে আসেন। পরে রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। রায়ে বলা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সম্পর্কিত বিধানাবলি এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হলো।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত বিধানাবলি ভবিষ্যৎ প্রয়োগ যোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে বলেও রায়ে ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের শুনানি শুরু হয়। পরে গত ২২ অক্টোবর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়। এ দু’দিন রিটকারী বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে শুনানি শেষ করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। এরপর গত ২৩ অক্টোবর তৃতীয় দিনের মতো মামলাটির শুনানি হয়।
আপিলের চতুর্থদিন গত ২৮ অক্টোবর শুনানি করেন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শুনানি শেষ করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এরপর গত ২৯ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের ৫ম দিন, গত ৩ ও ৪ নভেম্বর ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম দিনের মতো শুনানি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
নবম দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
পরে গত ১০ দিনের মামলার সব পক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে গত ১১ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রায়ের দিন ধার্য করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ১৯৯৬ সালে সংসদে গৃহীত হয়। পরে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন হলে, দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে দেন। ওই রায়ের পর ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি বিলুপ্ত করা হয়।
তবে আপিল বিভাগের সেই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক পৃথক আবেদন করেন। গত ২৭ আগস্ট সর্বোচ্চ আদালত সেই রিভিউ আবেদনগুলো মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) দেন। সেই আপিলের শুনানি নিয়ে আজ রায় ঘোষণা করলেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।