leadT1ad

লিবিয়ায় গুলিতে মাদারীপুরের তিন যুবকের মৃত্যু, পরিবারের মাতম

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
মাদারীপুর

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩১
লিবিয়ায় নিহত মাদারীপুরের তিন তরুণ। ছবি: পরিবার থেকে পাওয়া

লিবিয়ায় মাফিয়াদের গুলিতে মাদারীপুরের তিন যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা মাদারীপুর সদর, রাজৈর ও ঘোষলাকান্দির এলাকার বাসিন্দা। দালালদের মাধ্যমে তারা এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দালালদের বরাত দিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় হামলার ঘটনায় প্রাণ হারান এই তিন তরুণ। তাদের মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম। দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ভালো জীবনের আশায় গত ৮ অক্টোবর বাড়ি ছেড়েছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামের হাজী মো. তৈয়ব আলী খানের ছেলে ইমরান খান। ২২ লাখ টাকায় স্থানীয় মানবপাচারচক্রের সদস্য শিপন খানের সঙ্গে তার ইতালি পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি হয়। কিন্তু পরে লিবিয়ায় আটকে রেখে পরিবার থেকে আরও ১৮ লাখ টাকা আদায় করা হয়। ১ নভেম্বর লিবিয়া থেকে নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হলে ভূমধ্যসাগরে মাফিয়াদের গুলিতে নিহত হন ইমরান। মঙ্গলবার তার মৃত্যুর খবর পরিবারে পৌঁছায়।

একইদিন মাফিয়াদের গুলিতে রাজৈর উপজেলার দুর্গাবদ্দী গ্রামের ইমারাত তালুকদারের ছেলে মুন্না তালুকদার এবং একই উপজেলার ঘোষলাকান্দি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে বায়েজিত শেখ নিহত হন। তিন যুবকের লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না শোকাহত স্বজনরা। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে দালালচক্রের পরিবারের সদস্যরা লাপাত্তা হয়ে বাড়িতে তালা ঝুলিয়েছেন। তবে দালাল শিপনের স্বজনরা দাবি করেন, শিপন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এবং তিনি কাউকে জোর করে পাসপোর্ট করতে বলেননি।

নিহতদের স্বজনের আহাজারি। স্ট্রিম ছবি
নিহতদের স্বজনের আহাজারি। স্ট্রিম ছবি

স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে লিবিয়ায় অবস্থান করছেন শিপন। আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে এলাকার যুবকদের সহজে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ আদায় করেন তিনি। এর আগেও এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

নিহত ইমরানের বড়বোন ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘শিপন দালাল আমার ভাইকে মেরে ফেলছে। এই দালালের কঠিন বিচার চাই। আর সরকারের কাছে দাবি, ভাইয়ের লাশ যেন একবার দেখতে পারি।’ ইমরানের আত্মীয় সাজ্জাদ মাতুব্বর বলেন, ‘শিপনের হাত অনেক লম্বা। এর আগেও কয়েকজন মারা গেছে। টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে। কঠিন বিচার চাই।’

নিহত মুন্নার খালা খাদিজা আক্তার বলেন, ‘দালাল শিপনকে ধারদেনা করে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছি। ভাগিনার মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পাশাপাশি মুন্নার মরদেহ দেশে আনার আবেদন জানাচ্ছি।’

লিবিয়ায় নিহত মাদারীপুরের তিন তরুণের স্বজনদের আহাজারি। স্ট্রিম ছবি
লিবিয়ায় নিহত মাদারীপুরের তিন তরুণের স্বজনদের আহাজারি। স্ট্রিম ছবি

বায়েজিতের বাবা কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘এত টাকা দিয়ে ছেলের লাশ সাগরে! কীভাবে সহ্য করবো? প্রথমে দালাল স্বীকার করেনি, পরে লিবিয়া থেকে জানানো হয়েছে। এখন সবাই গা ঢাকা দিয়েছে।’

শিপনের চাচি সেতারা বেগম বলেন, ‘শিপন অনেক মানুষ নেয়। কিন্তু গুলিতে কেউ মারা গেছে, বা সে কাউকে মেরেছে—এমন কিছু জানি না। সে লিবিয়ায় আছে। পরিবারের লোকজনও বাড়িতে নেই।’

এদিকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, লিবিয়ায় গুলিতে তিন যুবকের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। নিহতদের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দালালদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Ad 300x250

সম্পর্কিত