দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কনস্টেবল পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগে মাফতুল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাবেক সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল আকবরের পরিচয় দিয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে তদবির করছিলেন।
আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য জানান।
মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুদকের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা ২০২৫-কে কেন্দ্র করে দুটি মোবাইল নম্বর থেকে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মোবাইল নম্বরে ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। ফোন করা ব্যক্তি নিজেকে জেনারেল আকবর পরিচয় দিয়ে শরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ জুয়েল হোসেন নামীয় দুটি অ্যাডমিট কার্ড পাঠিয়ে তাদের নিয়োগ পরীক্ষায় সহায়তার জন্য অনৈতিক তদবির করেন এবং বিভিন্ন সময়ে ফোন ও এসএমএসের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
তিনি জানান, অনুসন্ধানকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের হোতা মাফতুল হোসেনকে শনাক্ত করা হয়। এরপর গত ৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) বিকালে রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম কাজীপাড়ার ভাড়াবাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকালে তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি সিমসহ মোট চারটি মোবাইল ফোন, দুদক কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার দুটি অ্যাডমিট কার্ড এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শরিফুল ইসলাম নামীয় হিসাবের ৬ লাখ টাকার একটি তারিখবিহীন স্বাক্ষরিত চেক জব্দ করা হয়।
দুদক আরো জানায়, মাফতুল হোসেন চাকরি দেওয়ার নামে শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে ছয় লাখ এবং মোহাম্মদ জুয়েল হোসেনের কাছ থেকে তিন লাখ টাকার স্বাক্ষরিত চেক গ্রহণ করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত মাফতুল হোসেনের বিষয়ে দুদক মহাপরিচালক বলেন, তিনি বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত ছিলেন এবং বিভিন্ন অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের পর তিনি বিভিন্ন প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।
আক্তার হোসেন আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাফতুল হোসেন জানান যে, তিনি চাকরিতে পুনর্বহালের জন্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর (পরিচয় ব্যবহার করে) ডিজি পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে তদবির ও বিভিন্ন উপায়ে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি ডিজি (এনআইডি), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানেও জেনারেল আকবরের মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে অনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন।’
সংবাদ সম্মেলনে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সব চাকরিপ্রার্থীকে প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকতে এবং সব প্রকার তদবির ও আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।
মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া প্রতারক চক্রের অনেকে জামিনে বের হয়ে এসে একই ধরনের প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছেন।’