leadT1ad

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক নিয়োগে ‘প্রশ্ন ফাঁসের’ কল রেকর্ড, আছে সাবেক শিবির নেতার নাম

চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে। তিনি নাট্যকলা বিভাগের সভাপতির সঙ্গে তাঁর একটি ফোনকল রেকর্ডও সামনে এনেছেন। অবশ্য বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলমের দাবি, এই ফোনকল রেকর্ড প্রযুক্তির সাহায্যে বানানো।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সংগৃহীত ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের বিষয় ও ধরন জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাহাত ইসলাম হৃদয় নামে একজন চাকরিপ্রার্থী।

ওই চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে। তিনি নাট্যকলা বিভাগের সভাপতির সঙ্গে তাঁর একটি ফোনকল রেকর্ডও সামনে এনেছেন। অবশ্য বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলমের দাবি, এই ফোনকল রেকর্ড প্রযুক্তির সাহায্যে বানানো।

বিষয়টি তদন্তের জন্য উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের কাছে আবেদন করেছেন ওই চাকরিপ্রার্থী। উপাচার্য বলছেন, অভিযোগের কোনো পয়েন্ট ‘তদন্তযোগ্য’ মনে হলে তারা তদন্ত করে দেখবেন।

এটা ম্যানুপুলেটেড। প্রযুক্তির যুগে এটা তো তৈরি করা যায়। (কল রেকর্ডের বিষয়ে), মীর মেহবুব আলম, সভাপতি, নাট্যকলা বিভাগ, রাবি

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর নাট্যকলা বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা হয়। ওই দিনই নেওয়া হয় মৌখিক পরীক্ষা। এরপর তিনজনকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের পরবর্তী সভায় তাঁদের নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার কথা।

নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ২৪ জন। তিনিও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি পরীক্ষার পরদিনই তিনি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবকে ই-মেইল করে জানান।

তবে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাহাত ইসলাম গত ২১ সেপ্টেম্বর ডাকযোগে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এরপর আজ রোববার উপাচার্যকে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছেন তিনি।

‘কল রেকর্ডে’ কী আছে

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের বিষয়ে একটি কথোপকথনের অডিও সামনে এনেছেন রাহাত। তার ভাষ্য, কথোপকথনটি নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে হয়েছে তাঁর।

২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের ওই কল রেকর্ডটি স্ট্রিমের হাতে এসেছে। এতে শোনা যায়— সভাপতি মেহবুব আলমের মতো কণ্ঠের এক ব্যক্তি রাহাতকে বলছেন, ‘তোর যদি মনে হয় যে ঢুকতেই চাস, তাহলে তোর মতো করে ভাব। যদি ভাবস যে আমি ইনভলভ আছি, এনগেইজ এসবে আমি, তবে কোরআন শরীফ অবমাননার মতো পাপ হবে।’

রাহাত বলেন, ‘জ্বী স্যার’।

–‘কি বুঝলি?’

–‘স্যার আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি এখানে নাই, কিন্তু ওদের একটা পার্ট আছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না।’

–‘আমি নাই মানে কি, এটা যদি কেউ স্বপ্নেও ভাবে তবে কোরআন শরীফ অবমাননার মতো পাপ হবে।’

–‘আমি তো ভাবতেই পারি নাই, বিধায় এইখানে আসছি (কথা বলছেন)।’

–‘আমার কথা কি বলছে ওরা?’

–‘না স্যার, আপনার কথা বলে নাই। কিন্তু আমি বুঝলাম আপনার সঙ্গে কথা বলা উচিত। ওনারা যেটা বলল, একটা বিষয় আছে না, টাকার কথা মুখে হয় না।’

–‘এটা আসলেই বিষয় আছে। প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আছে না, ওদের সংগঠন আছে না, ওখানে পার্টিসিপেট করতে হয়। বুঝা গেছে? এটা সত্য।’

–‘নবাব ভাই বলে না, নবাব ভাই দূরে ছিল। আলামিন ভাই বলল।’

–‘নবাব বলে না। নবাব আলামিনকে দিয়ে বলায়। এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ নাই। এটা প্র্যাকটিস না করে রিস্ক হয়ে যাবে।’

–‘জ্বী স্যার’।

–‘তারেককে (প্রভাষক পদে মনোনীত তিনজনের একজন) যখন এখানে ইনভলভ করে, শুরু হয়েছে ওই ওটা দিয়েই। আমি আমার ইনফরমেশনগুলো দিলাম। বাপের কাছে কিন্তু আমার কথা বলবি না, বা কারও কাছে না। তুই ভাব, তুই তোর সিদ্ধান্ত নে। তুই বড় হইছিস, রেসেনালি তুই এনালাইসিস করে যা করা দরকার, তাই কর।’

এই ফোনকলের রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার দুপুরে নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলম বলেন, ‘এটা ম্যানুপুলেটেড। প্রযুক্তির যুগে এটা তো তৈরি করা যায়।’

নবাব ও আলামিন কে

ওই ফোনকল রেকর্ডে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নবাব ও আলামিন নামের দুজনের কথা উঠে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবাবের পুরো নাম নবাব নাসির। তিনি নাট্যকলা বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। আর আলামিন ছিলেন একই বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

ছাত্রজীবনে নবাব ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির পরিচালিত ‘বিকল্প’ নামের একটি সংগঠনের পরিচালক ছিলেন।

অভিযোগকারী রাহাত ইসলাম স্ট্রিমকে বলেন, নবাব ও আলামিনের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাঁর দেখা হয়েছিল। আলামিন তাঁকে জানিয়েছিলেন, নিয়োগের জন্য প্রার্থী আগেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তিনি কত টাকা দিতে পারবেন তা তাঁরা জানতে চান। তিনি বেশি টাকা দিলে তাঁকেই বিবেচনা করা হবে। তবে তিনি কিছু না জানিয়ে বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সভাপতি তাদের কথাই শুনতে বলেছিলেন।’

এ বিষয়ে কথা বলতে আলামিনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। আর নবাব নাসির বলেন, ‘ছাত্রশিবির করার কারণে আওয়ামী লীগ আমাকে ১৫ বছর ক্যাম্পাসেই ঢুকতে দেয়নি। মাস্টার্স করতে পারিনি। তবে এবারের রাকসু নির্বাচনের সময় আমার একটা ভূমিকা ছিল। সে কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে।’

বিভাগের সভাপতি মীর মেহবুব আলম স্ট্রিমকে বলেন, বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি নবাব ও আলামিনকে চেনেন। কিন্তু এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেন। বলেন, ‘কেউ নির্বাচিত না হলে এ ধরনের অভিযোগ করতেই পারেন। অভিযোগ সঠিক না।’

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব স্ট্রিমকে বলেন, ‘এ ধরনের অনিয়ম হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তবে লিখিত অভিযোগটা পেয়েছি। আজ ডাকযোগে নোটিশটাও পেয়েছি। আমি এটা রেজিস্ট্রারকে দিয়েছি পর্যালোচনার জন্য। যদি এ রকম কোনো পয়েন্ট থাকে, যেটার তদন্ত করা প্রয়োজন- তাহলে আমরা অভিযোগ তদন্ত করে দেখব।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত