leadT1ad

খাগড়াছড়ির ঘটনায় যা বলল সেনাবাহিনী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১: ০৮
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)

দেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে চলমান অস্থিতিশীলতা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। জেলাটির গুইমারা উপজেলায় রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিনজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে থেকেই সেখানে ১৪৪ ধারা বলবৎ আছে।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতি রোববার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে প্রচার করা হয়েছে। বিবৃতিটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও পোস্ট করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফলশ্রুতিতে তিনজন নিহতসহ বেশ কিছু এলাকাবাসী আহত হন। ঘটনার এক বছর পূর্তি হিসাবে এ বছর ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা করে।’

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগকে আমলে নিয়ে ইউপিডিএফের (মূল) দাবিকৃত সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় এবং পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ঘটনাটির সত্যতা বিচারে আইনি প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে। শয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করা সত্ত্বেও ইউপিডিএফের অঙ্গসংগঠন পিসিপি’র নেতা উখ্যানু মারমা “জুম্ম ছাত্র জনতার” ব্যানারে ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রতিবাদী মানববন্ধনের ডাক দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের আহ্বানে খাগড়াছড়িতে অর্ধবেলা হরতাল পালিত হয়। একই সময় দেশে বিদেশে অবস্থানরত ব্লগার এবং পার্বত্য অঞ্চলের কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কর্তৃক অনলাইনে বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বলেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফের কর্মী উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে এবং সামাজিক মাধ্যমে দেশি ও প্রবাসী ব্লগারসহ পার্বত্য জেলার কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির উসকানিমূলক প্রচারণার প্রভাবে সমগ্র খাগড়াছড়িতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে এক পর্যায়ে ইউপিডিএফের প্ররোচনায় উশৃঙ্খল এলাকাবাসী টহলরত সেনাদলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। ফলশ্রুতিতে তিনজন সেনাসদস্য আহত হন। সার্বিক পরিস্থিতি এবং উসকানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য, সংযম ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ইউপিডিএফ এবং অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা আবারো দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় এবং বিভিন্ন স্থানে বাঙালিসহ সাধারণ মানুষের ওপর গুলি, ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ এবং রাস্তা অবরোধসহ নাশকতা করে সমগ্র খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটায়। ওইদিন দুপুর নাগাদ সামগ্রিক বিষয়টি পাহাড়ি-বাঙালির একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। অবস্থা বিচারে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।’

এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘চরম ধৈর্যের সঙ্গে সারা রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে এবং একটি অবশ্যম্ভাবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিহত করা সম্ভবপর হয়’ বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

রোববারের ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ রোববার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ জনগণকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে গুইমারা-খাগড়াছড়ি রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় ইউপিডিএফ কর্মী এবং সন্ত্রাসীরা এলাকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, ইট-পাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর তিনজন অফিসারসহ ১০ জন সদস্য আহত হন। একই সময় তারা রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করে এবং বিজিবি সদস্যদের আহত করে।

‘সংঘর্ষ চলাকালে আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে, ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর টহল দল দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় গমন করে। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় উক্ত সশস্ত্র দলটি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।’

‘সমসাময়িক সময়ে রামসু বাজার এবং ঘরবাড়িতে ইউপিডিএফের (মূল) বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ করে এবং বাঙালিদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রামসু বাজার এবং গুইমারা এলাকায় অতিরিক্ত সেনাদল নিয়োগ করা হয় এবং বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলেও জানানো হয়েছে।

বিগত কয়েক দিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিবৃতিতে বলেছে, এটি স্পষ্ট যে, ইউপিডিএফ এবং তার অঙ্গসংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে এলাকার মহিলা এবং স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদের বিভিন্ন পন্থায় তাদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধ্য করছে। একইসাথে পার্বত্যাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের লক্ষ্যে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রোববার বিকালে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন কর্তৃক স্থাপিত চেকপোস্টে ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসী সংগঠন কর্তৃক পরিবহণকৃত বিপুল পরিমাণ দেশিয় অস্ত্র যাত্রীবাহী বাস হতে জব্দ করা হয়।

সেনাবাহিনী এ-ও উল্লেখ করেছে, বিগত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি এবং গুইমারা এলাকায় বিভিন্ন ঘটনাকে পুঁজি করে আইনের আশ্রয় না নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের বিষয়টি একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। এ বিষয়ে প্রমাণাদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট সংরক্ষিত আছে।

বিগত কয়েক দিনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণকে সংযত আচরণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্যও বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী বলেছে, সকল ধরনের অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচারণা, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য এই অংশের অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতিগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনী যে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত