leadT1ad

শীতকালীন ঝড়ে গাজাবাসীদের দুর্দশা চরমে

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪০
বন্যার কারণে গাজাবাসীদের শিশুদের শুষ্ক রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। ছবি: বিবিসি।

প্রবল শীতকালীন ঝড়ের কারণে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা মানুষের দুর্দশা আরও বেড়েছে। জাতিসংঘ জানায়, বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন আট লাখেরও বেশি মানুষ। প্রবল বৃষ্টিতে শরণার্থী শিবিরগুলো প্লাবিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভবনও ধসে পড়েছে।

গাজা সিটির একটি তাঁবুতে স্বামী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে থাকেন ঘাদির আল-আধম। যুদ্ধের পর থেকে তার পরিবার বাস্তুচ্যুত, এখনো পুনর্গঠনের অপেক্ষায়। তাঁবুর ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘আমরা অপমানজনক জীবন কাটাচ্ছি। আমরা কাভার্ড ভ্যান বা অস্থায়ী ঘর চাই। আমাদের ঘরবাড়ির পুনর্নির্মাণ চাই। কংক্রিটের ঘর ছাড়া উষ্ণতা পাওয়া যায় না। প্রতিদিন সন্তানদের কথা ভেবে আমি কাঁদি।’

মার্কিন মধ্যস্থতায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও গাজা এখনো শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে আটকে আছে। এলাকা এখনো বিভক্ত। মানুষ এখনো বাস্তুচ্যুত। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ পড়ে রয়েছে।

অচলাবস্থার কারণ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের কথা থাকলেও এসব কার্যক্রম থমকে আছে। কারণ, ইসরায়েলের সর্বশেষ নিখোঁজ জিম্মি র‌্যান গিভিলিকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, সব জিম্মি, জীবিত বা মৃত, ফেরত না আসা পর্যন্ত শান্তি পরিকল্পনার পরের ধাপে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপে বহু তল্লাশি চালিয়েও র‌্যান গিভিলির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি ছিলেন ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় আটক হওয়া ব্যক্তিদের একজন। পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা।

তার বাবা-মা গত বছর জানতে পারেন তিনি আর বেঁচে নেই। দক্ষিণ ইসরায়েলের মেইতার শহরে তাদের বাড়ির প্রবেশপথ এখনো তার স্মরণে সাজানো। সর্বত্র জিম্মিদের স্মরণের প্রতীকী হলুদ পতাকা উড়ছে।

তাদের বিশ্বাস, জীবিত বা মৃত অন্য সব জিম্মি ফেরত দেওয়ার পরও হামাস র‌্যানকে ভবিষ্যৎ আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার হিসেবে ধরে রাখতে চাইছে।

হামাস অবশ্য বিবিসিকে জানায়, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাদের দাবি, ইসরায়েলই চুক্তি বাস্তবায়ন বিলম্বিত করছে।

কিন্তু র‌্যানের কোনো খোঁজ না পাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি চাপের মুখে তার বাবা-মা ইসরায়েলি নেতৃত্বের ওপর আস্থা রেখেছেন। তারা আশা করেন, সন্তানকে পাওয়া না পর্যন্ত ইসরায়েল শান্তি পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হবে না।

র‌্যানের বাবা বলেন, ‘ইসরায়েল সরকারের সবাই আমাদের বলেছেন, র‌্যান ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা দ্বিতীয় ধাপে যাব না। এটাই তাদের প্রতিশ্রুতি।’

ইসরায়েলের অনেকেই মনে করেন, গাজা থেকে আরও পিছু হটার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিকভাবে কঠিন হবে। বিশেষত যখন একজন জিম্মি এখনো নিখোঁজ।

গাজায় বন্যায় চরম দুর্ভোগ। ছবি: সংগৃহীত।
গাজায় বন্যায় চরম দুর্ভোগ। ছবি: সংগৃহীত।

সময় ফুরিয়ে আসছে

চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে হলে ইসরায়েল ও হামাস, দুই পক্ষকেই কঠিন ছাড় দিতে হবে। হামাসকে ক্ষমতা ও অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। আর ইসরায়েলকে নিরাপত্তার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক অপারেশনস ডিরেক্টরেট প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ইসরায়েল জিভ মনে করেন, দুই পক্ষই এই ধাপে যেতে ইতস্তত করছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষেরই স্বার্থ রয়েছে দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত অগ্রসর না হওয়ার। হামাস নিয়ন্ত্রণ হারাতে চায় না। আর ইসরায়েল রাজনৈতিক কারণে গাজায় থাকতে পছন্দ করছে, কারণ নিজের সমর্থকদের সামনে প্রত্যাহারের ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন।’

তিনি মনে করেন, দুই পক্ষকে এগিয়ে নিতে একমাত্র সক্ষম ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।

জিভ সতর্ক করে বলেন, ‘অপেক্ষা করলে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। কারণ হামাস পুনর্গঠিত হচ্ছে এবং তাদের শক্তি ফিরে আসছে। আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং পরিকল্পনাটিকে এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমান অবস্থায় আটকে থাকা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি।’

হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং তা এমনভাবে করা যাতে উভয় পক্ষই গ্রহণযোগ্য মনে করে—এটাকে প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটা সম্ভব না হলে কোনো দেশ গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠাতে আগ্রহী হবে না। আর হামাস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পুনর্গঠন কার্যক্রমও শুরু হবে না।

সপ্তাহের শুরুর দিকে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দেন যে আন্তর্জাতিক বাহিনী ইসরায়েলকে ছাড়া এই দায়িত্ব সফলভাবে পালন করতে পারবে কি না তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মার্কিন মিত্ররা একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের চেষ্টা করছেন। কিছু কাজ তারা করতে পারবে। তবে সবই নয়। হয়তো মূল কাজটিও তারা করতে পারবে না। দেখা যাক।’

গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকায় এখনো ইসরায়েলি সৈন্যদের উপস্থিতি আছে। ছবি: বিবিসি।
গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকায় এখনো ইসরায়েলি সৈন্যদের উপস্থিতি আছে। ছবি: বিবিসি।

ট্রাম্প দ্রুত এগিয়ে যেতে চান

বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ অনুযায়ী গাজা একটি ‘হলুদ রেখা’ দিয়ে বিভক্ত। এই রেখা ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান সীমা নির্দেশ করে। সম্প্রতি ইসরায়েলের সামরিক প্রধান এ সীমাকে ‘নতুন সীমানা’ বলে উল্লেখ করায় দীর্ঘমেয়াদে দখল বজায় রাখার ইঙ্গিত নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্র করা হবে তা সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এই মাসের শেষ দিকে ফ্লোরিডায় নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের বৈঠকে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তার শান্তি পরিকল্পনা পাশ করানোয় ট্রাম্প আরও দ্রুত অগ্রগতি চান।

তিনি জানান, আগামী বছর শুরুর দিকে তিনি নতুন গঠিত ‘গাজা শান্তি বোর্ড’-এর সদস্যদের নাম ঘোষণা করবেন। তার ভাষায়, ‘এটি হবে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড। সবাই এতে থাকতে চাইছে।’

ওয়াশিংটনের চাপের মুখে ইসরায়েল গাজার দক্ষিণাঞ্চল রাফাহ এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত অংশে ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে অস্থায়ী আবাসন প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করেছে, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এই আবাসনে কয়েক হাজার গাজাবাসীকে আশ্রয় দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শর্ত হলো, তাদের ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশ করতে হবে এবং হামাসের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা থাকা যাবে না।

অনেকে মনে করেন, এটি হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ। ইতোমধ্যে কিছু লোক এসব এলাকায় প্রবেশ করেছে, যেখানে ইসরায়েলের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো শিবির স্থাপন করেছে। তবে গাজার বহু মানুষ হামাসের বিরুদ্ধে হলেও ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের অধীনে বসবাস করতে রাজি নন।

এটি গাজার সম্ভাব্য এক বিকল্প ভবিষ্যতের চিত্র তুলে ধরে। যদি শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ ব্যর্থ হয়, তবে ইতোমধ্যে বিভক্ত গাজা আরও গভীর বিভাজনের দিকে যেতে পারে।

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250

সম্পর্কিত