leadT1ad

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাশিয়াসহ একজোট এশিয়ার সব আঞ্চলিক শক্তি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ৪৯
৭ অক্টোবর ২০২৫ ‘মস্কো ফরম্যাট অফ কনসালটেশনস অন আফগানিস্তানে’র অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠানের আগে একসাথে ছবি তোলেন। এই ফোরামের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ ও আঞ্চলিক শান্তি নিয়ে আলোচনা ও সমন্বয় করা হবে। ছবি: এএফপি।

ভারতসহ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো এক বিরল ঐক্য প্রদর্শন করেছে। তারা একযোগে দেশটিতে কোনো বিদেশি সামরিক স্থাপনা স্থাপনের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনরায় দখলের ঘোষণার প্রেক্ষিতে তারা এই অবস্থান নেয়।

মঙ্গলবার মস্কো ফরম্যাটের সদস্যদেশগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্তানকে ‘স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা’ করার প্রতি অবিচল সমর্থন জানায়। এই ফোরামে ভারত ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ছাড়াও রাশিয়া, চীন, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে—যারা সবাই পুনরায় আফগানিস্তানে প্রবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যে কোনো দেশের আফগানিস্তান বা এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সামরিক অবকাঠামো স্থাপনের প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।’ যদিও এ ভাষা গত বছরের বিবৃতির অনুরূপ, তবে এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে ট্রাম্পের বাগরামে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক ঐক্যমতের।

পাঁচ বছর আগে ট্রাম্প তালেবানের কাছে বাগরাম ঘাঁটি হস্তান্তর করেছিলেন। সেটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাবুল ত্যাগের প্রথম পদক্ষেপ। এবার বিবৃতিতে ভারতের অবস্থান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিনের মার্কিন মিত্র হলেও, দেশটি এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সামলে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।

এই কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে ঐতিহাসিক সফরে যাচ্ছেন। মস্কো ফোরাম শেষে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তান একটি স্বাধীন দেশ। ইতিহাসে কখনো বিদেশি সামরিক উপস্থিতি মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।’

গত মাসে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, আফগানিস্তান যদি বাগরাম ঘাঁটি ফেরত না দেয়, তাহলে ‘খারাপ কিছু ঘটবে।’ তিনি যুক্তি দেন, ঘাঁটিটি চীনের কাছাকাছি কৌশলগত স্থানে অবস্থিত। তবে তালেবান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

বাগরাম চীনের সীমান্ত থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার এবং শিনজিয়াংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা থেকে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে। ট্রাম্পের ভাষায়, এটি ‘চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কারখানা মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে।’

তবে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে অবাস্তব বলে মনে করছেন। তাদের মতে, বাগরাম পুনর্দখল কার্যত আফগানিস্তানে পুনঃআক্রমণের মতো হবে, যার জন্য ১০ হাজারেরও বেশি সেনা ও উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে হবে।

জেনেভাভিত্তিক সেন্টার অন আর্মড গ্রুপসের সহ-পরিচালক অ্যাশলি জ্যাকসন বলেন, ‘পুনরায় সেনা মোতায়েন ও পুনঃহস্তান্তরের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি। এটি দুই পক্ষের কারও কৌশলগত স্বার্থেই উপকারী হবে না।’

বাগরাম ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ঘাঁটি। দুই দশকের এই যুদ্ধে ঘাঁটিটিতে বহু মানুষকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই বছরের পর বছর আটক রাখা হয় এবং অনেকের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই এই প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসনের সময়ে আফগান সরকারের পতনে গিয়ে শেষ হয়।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত