leadT1ad

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০০

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৮
আফগানিস্তানে ভূমিকম্প। সংগৃহীত ছবি

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতিমধেই তা ৮০০ জন ছড়িয়ে গেছে। আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বরাতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই এই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০০ জন ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আড়াই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, শুধু কুনার প্রদেশেই এখন মৃতের সংখ্যা অন্তত ৮০০ জন এবং আহতের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ জন। উদ্ধার কাজ চলার কারণে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এর আগে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুফতি আবদুল মতিন জানান, কুনার প্রদেশে অন্তত ৬১০ জন নিহত হয়েছেন। আর নানগারহার প্রদেশে নিহত হয়েছেন আরও ১২ জন। কুনার প্রদেশে আহতের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন। অন্যদিকে নানগারহারে ২৫৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন। দুই প্রদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাড়িঘরও বিধ্বস্ত হয়েছে।

উদ্ধারকারী দলগুলো এখনো অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) অনুমান করছে যে হতাহতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়াতে পারে।

ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় রোববার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬। আর এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার গভীরে, যা ক্ষয়ক্ষতি বাড়িয়েছে। এরপর অন্তত ১০টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যাদের মাত্রা ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ২ এর মধ্যে।

ভূমিকম্পটি কেন্দ্রস্থল ছিল পাকিস্তান সীমান্তবর্তী প্রদেশ নানগারহারের কুজ কুনার জেলায়। জালালাবাদের প্রায় ২৭ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর-পূর্বে। কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী কাবুল এবং প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকেও। এমনকি ভারত থেকেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুনার প্রদেশের নুর গাল, সাওকি, ওয়াটপুর, মানোগি এবং চাপা দারা জেলা। ভূমিধসের কারণে অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, যেমন সাওকি জেলার দেওয়া গুল এবং নুর গুল জেলার মাজার দারা। ফলে উদ্ধারকারী দলগুলোকে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হচ্ছে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রত্যন্ত সব এলাকায় যোগাযোগ না হওয়ায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন এবং ভূমিধসের কারণে অনেক এলাকায় প্রবেশ করা যাচ্ছে না।

‘কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে’

আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে এবং কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, নিহত ও আহতের সংখ্যা পরিবর্তিত হচ্ছে। কুনার, নানগারহার ও রাজধানী কাবুল থেকে চিকিৎসক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে অনেক এলাকা এখনো হতাহতদের তথ্য জানাতে পারেনি। ফলে মৃত্য ও আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আফগান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (এআরসিএস) জানিয়েছে, নুর গাল জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং তারা সেখানে জরুরি সাহায্য পাঠাচ্ছে। এই ভূমিকম্পের পরও আফটারশক চলছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। তাদের এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য দরকার, বিশেষ করে চিকিৎসা, আশ্রয় এবং খাদ্য সরবরাহে।

আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী তালেবান প্রশাসনের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, দুঃখজনকভাবে, গত রাতের ভূমিকম্পে পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি প্রদেশে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকারী দলগুলো স্থানীয় কর্মকর্তা ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কাজ করছে, এবং জীবন রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। উদ্ধার অভিযানে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে, কারণ ভূমিধস এবং বন্যার কারণে রাস্তাগুলো বিচ্ছিন্ন।

আফগানিস্তান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ, কারণ এটি ভারতীয় এবং ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ২০২৩ সালে পশ্চিমাঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজার এর বেশি মানুষ মারা যায়। ২০২২ সালে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১ হাজার জন নিহত এবং ৩ হাজার জন আহত হয়েছিল।

২০১৫ সালে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বে ভূমিকম্পে দেশটিতে এবং পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ২০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০০২ সালে ৬ দশমিক ১ মাত্রার এক ভূমিকম্পে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার জন নিহত হন। ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের দুর্গম উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প ও পরবর্তী কম্পনে অন্তত ৪ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়।

এই ধরনের বিপর্যয়ে দেশটির দুর্গম এলাকা এবং দুর্বল অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি বাড়ায়। কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ভূতত্ত্বের অধ্যাপক ক্রিস এলডার্স বলেন, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকা এবং তুলনামূলক ঘনবসতি স্থানগুলোকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।

তার মতে, শুধু ভবনই নয়, পাহাড়ও কেঁপে ওঠে এবং অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এর ফলে ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হয়। ভূমিধস রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে এবং ত্রাণ পৌঁছাতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত