leadT1ad

হঠাৎ লাদাখে সহিংস বিক্ষোভ ছড়ানোর কারণ কী

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ১৩
লাদাখে আন্দোলন চলাকালীন একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে লাদাখের রাজ্য মর্যাদা ও চাকরিতে কোটার দাবিতে গত ১৫ দিন ধরে অনশন করছিলেন জলবায়ু আন্দোলন কর্মী সোনম ওয়াংচুক। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভও চলছিল। কিন্তু সেই বিক্ষোভ গতকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ সহিংসতায় রূপ নেয়। অসংখ্য তরুণের অংশ নেওয়া ওই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নিতে শেষ পর্যন্ত পুলিশ গুলি চালায়। এতে ৪ জন নিহত ও অন্তত ৯০ জন আহত হন।

এদিকে, এই সহিংসতার ঘটনায় কংগ্রেসকে দায়ী করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ইতোমধ্যে কংগ্রেস কাউন্সিলর ফুন্টসগ স্ট্যানজিন সেপাগের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। যদিও এই ব্যাপারে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—জলবায়ু আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিক্ষোভকে উসকে দিয়েছেন। ওয়াংচুক বিক্ষোভকারীদের সাম্প্রতিক নেপালের জেন-জি বিক্ষোভ ও আরব বসন্তের কথা মনে করিয়ে দিয় বিক্ষোভকে উসকেছেন বলে অভিযোগ সরকারে।

অন্যদিকে, বিক্ষোভের জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাদাখের লেহ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় পুলিশ ও সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া, লাদাখকে রাজ্য এবং সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়ার দাবিতে ডাকা অবরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কার্গিলেও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।

এর আগে গতকাল বিক্ষুব্ধ জনতা লাদাখের বিজেপি অফিস এবং লাদাখ হিল কাউন্সিল সেক্রেটারিয়েট পুড়িয়ে দেয়। বিজেপি এই সহিংসতার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করছে। এর প্রমাণ হিসেবে বিক্ষোভে কংগ্রেস কাউন্সিলর সেপাগের অংশগ্রহণের একটি ছবিও সামনে এনেছে বিজেপি।

লাদাখে বিক্ষোভের কারণ

গত তিন বছর ধরেই লাদাখে সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছিল। বাসিন্দারা বার বার তাদের জমি, সংস্কৃতি এবং সম্পদ রক্ষার জন্য লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন।

লাদাখে আন্দোলন চলাকালীন একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত
লাদাখে আন্দোলন চলাকালীন একটি চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৯ সালে লাদাখকে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে পৃথক করে সরাসরি দিল্লির অধীনে নিয়ে গেলে বৌদ্ধ-মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটি স্বায়ত্তশাসন হারায়।

সেই সময় ওয়াংচুকসহ লেহ জেলার অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই, লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হওয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে। সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে ওই অসন্তোষ থেকে অনশন এবং শেষে বড় ধরেনের বিক্ষোভে রূপ নেয়।

এর আগে এই প্রথম বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ লেহ এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি একটি যৌথ প্ল্যাটফর্মের অধীনে জোটবদ্ধ হয়। গোষ্ঠীগুলো জোট বাধার পর নয়া দিল্লি লাদাখের দাবি-দাওয়া যাচাই করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল। তবে, বেশ কয়েক দফায় আলোচনার পর কোনো ফল আসেনি। চলতি বছরের মার্চে লাদাখের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতের পর পরই দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা ভেস্তে যায়। লাদাখের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের মূল দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বৈঠকে উপস্থিত স্থানীয় এক নেতা বলেন, বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বলেছিলেন লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ভাগ করে তিনি ভুল করেছেন। তবে তিনি আমাদের লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিলের যে দাবি ছিল তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের ভাষ্য

লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্ত এই সহিংসত বিক্ষোভকে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন। এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন তিনি। এর পর পরই পুলিশ কংগ্রেস কাউন্সিল সেপাগের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করে। তার বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

লাদাখে আন্দোলন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত
লাদাখে আন্দোলন চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সহিংসতার জন্য সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনতাকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

গত ১৫ দিন ধরে লাদাখের সাংবিধানিক সুরক্ষা ও রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে ওয়াংচুক অনশন করছিলেন। যদিও গতকাল লেহ জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে তিনি অনশন কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ান।

সরকার অভিযোগ করছে, অনশনের সময় ওয়াংচুক জনতাকে উত্তেজিত করতে সাম্প্রতিক নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করেছিলেন।

এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, অনেক নেতা ওয়াংচুককে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ সত্ত্বেও, তিনি আরব বসন্তের মতো বিক্ষোভ এবং নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওয়াংচুকের উসকানিমূলক বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ জনতা অনশনস্থল থেকে বেরিয় গিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের অফিসের পাশাপাশি লেহ’র সিইসির সরকারি অফিসে আক্রমণ করে। ‘এটা স্পষ্ট যে সোনম ওয়াংচুকের উসকানিমূলক বক্তব্যেই জনতা অনুসরণ করছিল।

সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Ad 300x250

সম্পর্কিত