leadT1ad

তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান: ১৯ সেনা ও ৪৫ তালেবান নিহত

পাকিস্তান বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে ভারত টিটিপি এবং বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দিচ্ছে। তবে ভারত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৯
পাকিস্তান তালেবানের এক যোদ্ধা। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রতি আফগান সীমান্তের কাছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর তিনটি আস্তানায় অভিযান চালায়। এতে তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ১৯ সেনা ও ৪৫ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়। এতো বেশি সেনার মৃত্যু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দমনে পাকিস্তান সরকার যে হিমশিম খাচ্ছে সেটাই স্পষ্ট করে।

দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মালকান্দ বিভাগের বাজাউর জেলায় ২২ জন তালেবান জঙ্গি নিহত হয়েছে। দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে আরেক অভিযানে আরও ১৩ জন নিহত হয়। এসময় সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে ১২ সেনা শহীদ হন।

লোয়ার দির এলাকায় আরেক সংঘর্ষে ৭ সেনা ও ১০ তালেবান নিহত হয়। সেনাদের অভিযানে সেখানে একটি জঙ্গি আস্তানা ধরা পড়ে।

টিটিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই হামলার দায় স্বীকার করে। ইসলামাবাদ দাবি করে, টিটিপির ঘাঁটি আফগানিস্তানে। তারা আফগান তালেবান থেকে পৃথক সংগঠন হলেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযোগ, টিটিপি আফগান মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে। তারা কাবুল সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে— নিজের ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে।

সেনাবাহিনী নিহত তালেবান যোদ্ধাদের ‘খারেজি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। পাকিস্তান সরকারও সেদেশের তালেবানদের খারেজি বলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আরও অভিযোগ করেছে, টিটিপি ভারতের সহযোগিতা পাচ্ছে। তবে এই অভিযোগের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

পাকিস্তান বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে ভারত টিটিপি এবং বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা দিচ্ছে। তবে ভারত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান কিংবা নয়াদিল্লি— কোনো পক্ষই এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি।

খাইবার পাখতুন খাওয়া পাকিস্তানের একটি পাহাড়ি এলাকা। ছবি: সংগৃহীত
খাইবার পাখতুন খাওয়া পাকিস্তানের একটি পাহাড়ি এলাকা। ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে সশস্ত্র হামলা বেড়েছে। অধিকাংশ হামলার দায় স্বীকার করেছে টিটিপি। ২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এই গোষ্ঠী আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন বহু টিটিপি নেতা ও যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয়।

শনিবারের হামলা সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে ধরা হচ্ছে। একসময় টিটিপি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। তবে ২০১৪ সালে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের পিছু হটতে হয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রদেশটির বিভিন্ন জেলায় ভবনে টিটিপির নামে গ্রাফিতি দেখা গেছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, আবারও ওই গোষ্ঠীর শাসন ফিরে আসতে পারে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ প্রভাবে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

একজন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিটিপি যোদ্ধা এবং হামলার সংখ্যা বেড়েছে।

এএফপির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬০ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। নিহতরা খাইবার পাখতুনখোয়া ও দক্ষিণের বেলুচিস্তান প্রদেশে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার শিকার।

ইসলামাবাদভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ২০২৪ সাল সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর ছিল পাকিস্তানের জন্য। সে বছর ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ছিলেন সেনা ও পুলিশ সদস্য।

Ad 300x250

সম্পর্কিত